আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইতিহাসের স্বর্ন যুগ (পড়লে পুরাই পইড়েন)

যদিও তুমি ধ্রুবতারা তবুও আমি দিশেহারা রুপসা ব্রিজের উপর থেকে একলাফে রুপসা নদীতে পড়লাম, সেখান থেকে এক ডুবে গিয়ে উঠলাম কুমারখালীর কোল ঘেসে ভেসে যাওয়া পদ্মা নদীর কূলে। তখন রাত্রির প্রথম প্রহর। কবিতা লেখার মক্ষম সময়, নদীতে আকাষী চাঁদ, পায়ের নীচে পানি, পানির নীচে বালি আর “সেন্টু” গেঞ্জি পরা আমি। কি এক অপুর্ব মহেন্দ্রক্ষন ও মিশ্রন! সঙ্গে খাতা-কলম নেই তাই চিন্তা করলাম কবিতাদের বালির উপরেই লিখে ফেলিনা কেন! লিখেও ফেললাম দুই লাইন, “বুক পানে চাহিনু অনিমেষ, বাজিল বুকে সুখের মতন ব্যাথা। ” এরপর লিখতে যাব, কিন্তু বাতাসে খুব পরচিত কিছুর অস্তিত্ব ভেসে আসছে খুবই পরিচিত কিছু, কিছু একটা যা আত্নার সাথে একাত্ব, নিশ্বাষের উপাদান, জন্ম থেকে মৃত্যু অব্দি গন্ডি বৃত্তের ভেতরে ঘুর্নায়মান ঘোর।

ঘোর...... ঘোর...... হ্যা এইত আরো কাছে চলে আসছে ............... হ্যা এইবার বুঝতে পারছি, আরেহ বাহ! এত গঞ্জিকা, এত গাঁজা!!! ......... ওম্মাই গুড গড, হোয়াট এ্যা কো-ইন্সিডেন্স! আমি, চাঁদ, নদী, ঢেউ, বালুকাবেলা আর গাঁজা একসাথে!!! (আনন্দে চঊখ লাল হয়ে যাওয়ার ইমো)। কিন্তু কোথা থেকে আসছে! দম বন্ধ হয়ে যাওয়া জীবন্মৃতের মত আশে-পাশে তাকালাম, এর মধ্যে কাধে হাত রেখে কে যেন বলল, “হেলো ড্যুড” তাকিয়ে দেখি চুল, দাড়ি, গোফে সমৃদ্ধ এক বৃদ্ধ, এক হাতে একতারা, অন্য হাতে কলকি আর তার পিছনে দুই রমনী, মনে ধরার মত রমনী। আমি কিছুটা আতঙ্ক, কিছুটা আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কে আপনি? পিছন থেকে রমনীগণ খিলখিল করা হেসে উঠে বলল, সাধু রে চিনলানা! করলা কি বাছা! এতো আমাগো সাধু, আমাগো শাই জি। আমি বিষ্ময়ের চোটে রমনীদিগকের একজনকে জড়িয়ে ধরে বললাম, পেন্নাম গো সাধু, সহস্রাধিক পেন্নাম। শাইজি তখন হেসে মাথায় হাত দিয়ে বলল, “আগে বইসা সুধায় টান দিয়া আত্নারে সুধায়িত কইরা নেরে বাছা, পরেক্ষন এইসব দেখা যাবি”।

আমি বসে পড়লাম......... পুরাই সিরাম ফিলিংস, নদীতে আকাষী চাঁদ, পায়ের নীচে পানি, পানির নীচে বালি “সেন্টু” গেঞ্জি পরা আমি আমার হাতে কল্কি পাশে দুই ঊর্বশী সামনে একতারা হাতে শাইজি, আমার প্রাণের সাধু  শাইজি গান ধরল সে কি সুর সে কি গলা সে কি সাধু! সাধু! গান শুনে মনে হচ্ছে আমি অনন্ত নক্ষত্র ছায়া বীথিকার ভিত্রে হারিয়ে যাব, হারিয়ে যাতে না যাই এইজন্য অবশ্য আমি বুদ্ধি করে দুই ঊর্বশির দুই হাত শক্ত করে চেপে ধরে রাখলাম, শাইজি গাইতে থাকল......... “The flower has a stem, but no roots; It has leaves, but no branches. This story is true, But who can I tell it too? Who would believe me? The flower floats From bank to bank In the waters of creation. A white bee hankers after its honey। ” গান শুনে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গেলাম। কিন্তু এও জিজ্ঞেস করলাম শাইজি আপনারে যতটুকু জানছি আপনি তো বাংলার বাউল কিন্তু আপনি এ কি করলেন আইজ-কাইলকার চ্যাংড়া পুলাপাইনের মত বাউল সুরে ইংরেজী গাইলেন! ব্যাপারটা কেমন হয়ে গেলনা!?! শাইজি তখন বললেন “আরে বোকা এইডাওতো আমারই গান ক্যারোল সাহেব ইংরাজী ভাষায় লেইখা দিছে এই জুন্যি তার পরতি শরদ্ধা রাইখা মাঝে মাঝে গাই। তাছাড়া ভাষায় কি আসে যায়রে পাগলা, ভাব হইল আসল, ভাবই জগত”। আমি হু বলে নিমাই টান দিলাম।

দূর থেকে বাইকের আওয়াজ শুনতে পেলাম, জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে শাইজির দিকে তাকালাম, শাইজি মুচকি হাসি দিয়ে বললেন “আইলেই দেখতি পাবি মন, অস্থির হইসনা”। কিছুক্ষনের মধ্যই বাইকটি এসে আমাদের কাছে থামল, হেড লাইটের আলোতে বাইকার কে দেখতে পারলাম না, কিন্তু যখন আলো নিভে গেল তখন চাঁদের আলোয় যাকে দেখলাম তাকে দেখে পুরাই টাস্কিত হয়ে গেলাম। সিল্কি পাকা বাবরি চুল, তা দেয়া গোফ, তার সাথে মিল রেখে এগিয়ে আসা দাড়ি। সাদা ধব ধবে ধুতি আর ফতুয়া। ওম্মাই গুড গড এ্যাগেইন , হোয়াট এ্যা ফাকিং নাইট! এ যে বিশ্ব কবি, রবীন্দ্রনাথ, প্রাণনাথ! কবিগুরু এসে বললেন, “কেমন চলিতেছে এইখানে?” রমনীদ্বয় আবারো হেসে উত্তর দিল “হেলো রবিদা”, কবিগুরুও প্রতি উত্তরে বলল “হ্যায় (Hey) ............ হায় হায় ইহারা কাহারা! কত দিবস বাদে সাক্ষাত হইল!” বলেই দুজনকে সে কি হাগ আর কিস।

এরপর শাইজিকে নমস্কার করলেন। আর আমার দিকে তাকিয়ে সৌজন্য হাসি দিলেন। এরপর আলোচনা চলতে লাগল, দেশ-বিদেশ, নারী-নক্ষত্র ইত্যাদি বিষয়ে। এক পর্যায়ে আমি বললাম, আপনাদের দুজনের ভেতর সখ্যতা দেখে ভালো লাগছে অনেক। তখন শাইজি বলল, আসলে রবীবাবুর কাছে আমার মেলা ঋন আছেগো, জনম থাকতে শুধাইতে পারিনা, মরনেও পারবনা।

আমি বললাম তাতো বটেই আসলে কবিগুরুই তো আপনাকে মুলত লোকচক্ষুর আওতায় এনেছিল। শুধু আপনাকে না, হাসন রাজাকেও আমরা মুলত তার কাছ থেকেই চিনতে পেরেছি, তার কাছে আসলে আমরা পুরো জাতী কৃতজ্ঞ। এমন সময়, মীর মোশাররফ স্পিডবোটে হাজির। তিনি এসেই বললেন “হু তাতো ঠিকই অনেক কাজ তিনি করেছেন আবার অনেক অকাজও করেছেন”। আমি সালাম দিয়ে বললাম সে কেমন? তখন তিনি বললেন, “ লালন হচ্ছে গ্রামের ছেলে, সেই লালনরে আমার পত্রিকার রাইচরন উপাধি দিল “মহাত্না” দিছিল কিনা বল”? আমি বললাম হ্যা সেইরকমই তো জানতাম কিন্তু তাতে কবি গুরু কি করল? “আরে উনি যে খালি কবি গুরু তা না, উনি নটের গুরুও বটে।

উনি লালুর উপাধিরেতো স্বিকৃতি দেয়ই নাই আবার তার ২৫ বছর পর যাইয়া অন্য দেশের ছেলে গান্ধীরে মহাত্না উপাধি দিল। আমি বলি কেন এমন করল উনি, কেন, কেন, কেন? আমার মতে সে একজন দেশদ্রোহি”। কবিগুরু তেড়ে আসবেন এমন সময় শাইজি বললেন, “ওরে তোরা থাম, ওরে মোশাররফ থাম পাগলা থাম, ইশটপ ইওর ফাকিং ক্যাচাল। এত উপাধি দিয়া কি হইবরে! কত কিছুইতো করছিরে, সারাদিন বইয়া বইয়া কলকি খাইছি, আমারে যে লোক-জন কলকি বাবা হিসাবে চেনেনা এইডাইতো আমার কাছে কত। আর আমারতো জাতেরই ঠিক ছিলনারে, তার মহাত্বা উপাধি দিয়া কি হবেরে”! তখন কুষ্টিয়ার আরেকজন সাধকের দেখা পেলাম, দেখলাম, একটা ট্রাকে চেপে পাগলা কাঁনাই আর তার সাঙ্গো পাঙ্গোরা আসল।

পাগলাকেও আমার বিনিতো সালাম জ্ঞাপন করলাম। এরপরে বললাম, আপনারা হয়ত ধারনাও করতে পারেননি যে আপনাদের সমসাময়িকতা আপনাদের সময়কাল, যুগ বাংলা সাহিত্যে কি পরিমান প্রভাব ফেলেছে। আপনাদের সময়টা আসলে স্বর্ন যুগ, আপনাদের আগেও এরকম ছিলনা এবং আমাদের সময়ে অথবা পরবর্তিতেও আপনাদের মত এমন কেউ আর আসবেনা। দেখলাম শাইজি মাথা নাড়ছেন আমি তাকাতেই বললেন, “ওরে নারে না, সময় অসময় কইয়া কোন কথা নাই, অনন্তকাল একই, একইরকম অবয়বে আসবি যাবি, কালের সোনা রুপা বইলা কোন কথা নাই। মানুষের ইচ্ছা নাই তাই পারেনা।

কবিগুরু এইসময় অত্যান্ত বিজ্ঞের মত বললেন, “পারিবে কিভাবে? তাহার সারাদিন থাকে ব্রাজার্স আর পর্নহাভ লইয়া, তাহাদের এত সৃষ্টির সময় কোথায়! সমস্ত ক্ষয়তো ওইখানেই। অবশ্য একালের দোষ তেমনটা দেয়া উচিত হইবেনা, আমার কালে যদি থাকিত তবে কিনা আমিও হয়ত নটি আমেরিকায় কিছুটা সময় অতিবাহিত করিতাম, হয়তবা তাহাদের মায়ায় আবদ্ধ হইয়া আমার সৃষ্টি সূমুহও ক্ষয়প্রাপ্ত হইয়া যাইত। জিনিষ গুলা যে খাসা হইতেছে ক্রমতর, সেই কথা অস্বিকার করা নীতি বিবর্জিত হইবে। ” এই সময়ে পাগলা কানাই দলবল নিয়ে গান ধরলেন...... “আরেহ শুনেন শুনেন শুধি জনে শুনেন মিলে সবই, ঠিকই বচন বকিয়াছেন আমাগো এই রবী। এই কালের জিবুত সকল ক্যামনে কবি হবি, হায়রে ক্যমনে পাগল হবি? টিফির ভিত্রে চউখ ফুটাইয়া কাটায় দিবা রাত্রি, খুজ নিলি পারা দেখা যাবি দুই মিনিটের যাত্রি।

ভার্চুয়াল জগতে তারা দেখে সবই চেক্সি, আকাষ চেক্সি বাতাস চেক্সি, চেক্সি জরিনারে দেখচি, হায়রে জরিনারে দেকচি। ” এহেন সঙ্গিত শুনে কিঞ্চিত সংকোচ বোধ করতে লাগলাম। যাইহোক কথা ঘোরানোর জন্য বললাম যে, আমি খুবই ভাগ্যবান যে আপনাদের মত গুণীজনদের একসাথে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে, কিন্তু আসলে ব্যাপারটা কি!?! আপনারা সবাই একসাথে মিলিত হয়েছেন কেন? এটা কি কোন বিশেষ কিছু উপলক্ষে? তখন কবিগুরু বললেন, এইবার পথে আসিয়াছ, আসলে আমরা সকলেই একটা বিশেষ কারনে উদ্বিগ্ন। সাম্প্রতিক কিছু কার্য সাধণ আমাদের খুবই বিমর্ষিত করিয়া চলিয়াছে, আমরতা মৃত বলিয়া আসহায় লোচনে অবলোকন বিনে আর কিছুই করিবার সামর্থ নাই। অতঃপর বিশেষ চেষ্টা চরিতার্থ করিয়া তোমার ফেবুর ষ্ট্যাটাস দেখিয়া জানিতে পারিলাম যে তুমি অদ্য নিশীথে এইখানে আসিবা, সেই খবরেই আমরা সবাই এইখানে মিলিত হইয়াছি তোমার দ্বারা আমাদিগকের কিছু বার্তা ইহজগতে পৌছাইয়া দেবার প্রয়াসে।

আমি বললাম, এত আমার সহস্র জনমের ভাগ্য, বলুন কবিগুরু, এমন কি নিয়ে আপনাদের মত গুণীকূল এত সংকায়ীত? তখন মোশাররফ সাহেব বললেন, আমরা শুনতে পাচ্ছি ইভারহমান নান্মি কোন এক (?)কন্ঠী শিল্পি নাকি রবীবাবুর গান নিয়ে কি একটা খেলা খেলতে যাচ্ছে, এই সংকাতেই রবীবাবু কয়েকদিন যাবত নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়েছেন। শাইজিও গঞ্জিকা ছাড়া আর তেমন কিছুই খেতে পাচ্ছেনা, উনিও যঠেষ্ট ভয়ে আছেন কখন আবার ঊনাকে নিয়েও ছ্যানা-ছ্যানি আরম্ভ করে দেয়। তখন পাগলা কানাই আবারও গান ধরলেন, “সকল কিছুর সাথে সাথে ছ্যানা-ছ্যানিরও একটা নীয়ম আছে, হাত না ধুইয়া ছ্যানলি পরে মুখে ক্যামনে রোচে?” তার সঙ্গিরাও ধরল, “মুখে ক্যামনে রোচে হায়রে মুখে ক্যামনে রোচে” ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।