আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রিতা-মিতা ২০০৫ এবার সেই রিতা-মিতা ২০১৩

রাজধানীর মিরপুরের মানসিক বিকারগ্রস্ত চিকিত্সক-প্রকৌশলী সেই দুই বোন সাহারা হেলেন ফেরদৌস সুজানা ওরফে মিতা এবং সাহারা জয়ী ফেরদৌস ওরফে রিতাকে উদ্ধার করা হয়েছে। গত রোববার বগুড়ার একটি আবাসিক হোটেল থেকে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। প্রায় চার মাস ধরে তাঁরা ওই হোটেলে ছিলেন। গত ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে দুই বোন পরিচয় গোপন করে বগুড়া শহরের সদর থানাসংলগ্ন আকবরিয়া আবাসিক হোটেলের একটি কক্ষে ছিলেন। আগের ঘটনা এর আগে ২০০৫ সালের ৭ জুলাই মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের সি-ব্লকের ৯ নম্বর রোডের একটি বাড়ি আমার পিছনের বাসা থেকে তাঁদের উদ্ধার করা হয়েছিল।

সেখানে তাঁরা দীর্ঘ নয় বছর রহস্যময় জীবনযাপন করে আসছিলেন। তাঁদের বিশ্বাস ছিল, সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে তাঁদের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। সব নাগরিক সুবিধাহীন বাড়িটি এতটাই ভগ্ন আর মনুষ্য বসবাসের অনুপযোগী ছিল যে এলাকাবাসী এটিকে ভূতের বাড়ি বলত। তবে শুরু থেকেই মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলে আসছিলেন, দুই বোন জটিল মানসিক রোগে আক্রান্ত। মিতা-রিতার উদ্ধার-কাহিনি হোটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসান আলী জানান, এ বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টার দিকে পুলিশের একজন সদস্য ওই দুই বোনকে হোটেলে পৌঁছে দেন।

হোটেলের নিবন্ধন খাতায় (রেজিস্টার) তাঁরা নিজেদের নাম আইনুন্নাহার (৪৯) ও নুরুন্নাহার (৪৫) এবং বাবা মৃত শরফুদ্দিন খান উল্লেখ করেছেন। ঠিকানা মণ্ডলগ্রাম, নাসিরনগর, বি-বাড়িয়া। হোটেলের তিনতলার ২১ নম্বর কক্ষে থাকতেন তাঁরা। এ পর্যন্ত তাঁরা ভাড়া বাবদ প্রায় ৭০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন। হোটেলের ম্যনেজার লিটুনুর রহমান বলেন, তাঁরা প্রায় সারা দিন হোটেলকক্ষে অবস্থান করতেন।

কারও সঙ্গে কথা বলতেন না। কারও সাহায্যও নিতেন না। মাঝেমধ্যে একজন বাইরে এসে খাবার নিয়ে যেতেন। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে হোটেলের ভাড়া পরিশোধ না করায় তাঁদের খোঁজ করা হয়। এ সময় তাঁরা অসংলগ্ন ও আধ্যাত্মিক কথাবার্তা বলেন।

কয়েক দিন ধরে দরজা বন্ধ করে দিলে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। বগুড়া সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন বলেন, আজ সকালে হোটেলে গিয়ে ওই দুই নারীকে অনেক ডাকাডাকি করলেও কক্ষ খোলেননি। পরে বিষয়টি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির নেতাদের জানানো হয়। মহিলা আইনজীবী সমিতির জ্যেষ্ঠ সদস্য শাহাজাদী লায়লা ওই দুই নারীর সঙ্গে কথা বলেন। তাঁরা যে রাজধানীর মিরপুরের সেই দুই বোন রীতা ও মিতা, সেটা নিশ্চিত হন।

শাহাজাদী লায়লা বলেন, অনেক ডাকাডাকির পরও তাঁরা হোটেলকক্ষের দরজা খোলেননি। তাঁদের অনুরোধ করে বলা হয়, ‘আপনারা কিছু খান। ’ তাঁরা বলেন, ‘হোটেলের সব শয়তান, সব দোজখে যাবে, বাংলাদেশ শয়তানে ভরে গেছে, সব দোজখে যাবে। আল্লাহর হুকুম ছাড়া দরজা খোলা যাবে না। ’ প্রায় পাঁচ মিনিট পরে দরজা খুঁলে মিতা বলেন, ‘ম্যাডাম, ওনার হুকুম হয়েছে, আপনার সঙ্গে যাওয়ার, চলুন, আমরা যাব।

একটু দাঁড়ান ও (বড় বোন) ছাত্রী পড়াচ্ছে, পড়ানো শেষ হলেই যাব। ’ আইনজীবী সমিতির ওই নেত্রীর সহযোগিতায় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দুই বোনকে হোটেল থেকে শহরতলির বারপুর সামাজিক প্রতিবন্ধী পুনর্বাসনকেন্দ্রে নেওয়া হয়। কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আবদুল মানিক বলেন, ‘দুই বোন অত্যন্ত ক্লান্ত ও অসুস্থ ছিলেন। এ জন্য তাঁদের বিশ্রামে রাখা হয়েছে। তবে দুপুরের দিকে সামান্য খাবার খেয়েছেন তাঁরা।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।