"জাতের কী রুপ দেখলাম না এই মাঝারে" কিছুদিন আগে জাফলং গিয়েছিলাম স্টাডি টুরে। কুয়েট থেকে ইলেকট্রিকাল ৪র্থ বর্ষের আমরা ৪৫ জন , ২ জন শিক্ষক সহ। হই হই রই রই করে নেমে পড়লাম নদীতে , পানি ছোঁড়াছুড়ি আর ছবি তোলা। আর সানগ্লাসের ভিতর দিয়ে আড়চোখে স্বল্প বসনা ললনাদের অবলোকন করা।
জায়গা টা ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন , তাই বি জি বি আর বি এস এফ ২ দলের অবস্থান ই বেশ সতর্ক ! একটা ব্যাপার দেখে কেমন কেমন লাগল আর তা হল , বি এস এফ এর অন্তত এক ডজন সদস্য উপস্থিত আর বি জি বির মাত্র ২/৩ জন উপস্থিত।
বি এস এফ এর যেখানে একজন ক্যাপ্টেন সেখানে সর্বচ্চ কর্মকর্তা , বি জি বির শুধু ২/৩ জন সৈনিক বাদে কোন অফিসার নেই। মাঝে মাঝে বি এস এফের ক্যাপ্টেন বি জি বির সৈনিক গুলারে কি যেন বলতেছে আর সৈনিক গুলা গোলামের মত শুনে যাচ্ছে, যেন নিজেদের ক্যাপ্টেন!
যাই হোক , গোসল সেরে উঠছি এমন সময় বি এস এফের সেই ক্যাপ্টেন আমার আর আমার এক বন্ধুর দিকে এগিয়ে এলেন সদলবলে। প্রত্যেকের হাতে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল, এমন একটা ভাব যেন যুদ্ধে যাচ্ছে।
ক্যাপ্টেন বেটা বলে উঠল - তুম লোগ কাহাসে আ রাহে হ ?
হিন্দিতে কথা শুনে মেজাজ গরম হয়ে গেল। যেন আন্তর্জাতিক ভাষা বলে কিছু নেই বা হিন্দি শিখে রাখতে আমরা বাধ্য।
-- উই আর কামিং ফ্রম খুলনা ইউনিভার্সিটি অভ ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি।
ব্যাটা প্রথমে ভেবেছিল আমরা ও সেই সব গ্রামের সহজ সরল মানুষ যাদেরকে তারা নিত্য গুলি করে মারে। 'ইউনিভার্সিটি' কথাটা শুনে একটু দমে গেল মনে হল। আসছিল ভাব নিতে , কিন্তু আমাদের সাথে সুবিধা করে উঠতে পারবে না - এটা ভেবেই মনে হয়।
একটু নরম সুরে বলল , বাংলাদেশ ছে আয়ে হ অউর ইন্ডিয়া মে ঘুম রাহে হ ? ( হালায় এখনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যাতে আমরা হিন্দি তে উত্তর দিই আর হিন্দিকে একটু যাতে উঠিয়ে দিই )
-- লুক ক্যাপ্টেন , উই সি নো বর্ডার পিলার অর ফেন্স হিয়ার , সো উই জাস্ট থট দ্যা বর্ডার লাইজ এহেড অভ আস আপন দ্যা হিলস।
উই থট দিস ইজ নো ম্যান্স ল্যান্ড। ( বাস্তবিক আমরা জানি ইন্ডিয়ার সব সীমান্তে কাঁটা তারের বেড়া দেয়া , কিন্তু ওখানে কোন বেড়া না দেখে আমরা ভাবলাম বেড়া আরও সামনে , পাহাড়ের উপরে । তাই আমরা যেখানে আছি সেটা বাংলাদেশের অংশ বা সর্বচ্চ নো ম্যান্স ল্যান্ড)
এতক্ষণ সানগ্লাস পরেই ছিলাম , কিন্তু ক্যাপ্টেন কুত্তাটা যা বলল উত্তরে , সানগ্লাস খুলে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম !
-- ইয়ে জামিন ইন্ডিয়াকা ইন্ট্রিগাল পার্ট হে , হোয়াট ইজ নোম্যান্স ল্যান্ড ? দেয়ার বিন নো নোম্যান্স ল্যান্ড সিন্স ইন্দ-পাক ওয়্যার ইন 71 !! (বেটা পুরা খেপে গেছে , কিন্তু খেপার কি হল তাই বুঝালাম না )
আসে পাশে তাকিয়ে দেখলাম আমাগো বলদ বি জি বি গুলা কি করছে , দেখি ওরা দূরে দাঁড়িয়ে অসহায় চোখে আমাদের কথোপকথন দেখছে। এই দেখে নিজেকে আর সিকিউরড মনে হল না , তাই কথা বাড়ালাম না। বি জি বির চোখের সামনে ধরে নিয়ে গেলেও ওরা কিছুই বলবে না , এই আশঙ্কায়।
বি জি বির দিক থেকে একটু সাহস পেলে ওর "ইন্ডিয়াকা ইন্ট্রিগাল পার্ট" ধুয়ে দিতাম। স্বল্প শিক্ষিত বা অশিক্ষিত বাংলাদেশী দের মেরে মেরে স্পর্ধা বেড়ে গেছে শুয়োরদের।
কিন্তু আমাদের নতজানু পররাষ্ট্র নীতির জন্য আমাদের ও মনের ক্ষোভ মনে চেপে বলতে হল , ওকে ক্যাপ্টেন , উই আর লিভিং দিস প্লেস।
এই ঘটনায় ২ তা জিনিস খেয়াল করুন।
১।
ইন্ডিয়ান দের দাম্ভিকতা ( ওরা আমাদের পিঁপড়া মনে করে )
২। বি জি বির নিস্ক্রিয়তা ( ওরা দাঁড়িয়ে দেখছিল আমাদের অহেতুক হয়রানী করছে বি এস এফ , কিন্তু ওরা একটু এগিয়ে ও এল না। পরে মনে হয়েছিল , আমরা এ কোন দেশে বাস করি ? যে রাষ্ট্র আমাদের বিদেশি রাষ্ট্রের হাত থেকে নিরাপত্তা ও দিতে পারে না। আজ এ দেশে একজন আমেরিকান নাগরিক মারা যাক , কাল ড্রওন হামলা হবে । এই হল না দেশ , দেশের মাটিতে এবং বিদেশে সব সময় বন্ধুর মত পাশে থাকবে ! ) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।