হৃদয়ের কাছে বুদ্ধির বাস ভাল কথা। কিন্তু মাঝে মঝে হৃদয়ের ওপর থেকে বুদ্ধির শাসন তুলে দিতে হয়, হৃদয়কে স্বাধীন করে দিতে হয়, মুক্ত করে দিতে হয়। স্বাধীন মুক্ত হৃদয়ের ধর্মকে সব সময় বুদ্ধি দিয়ে বিচার করতে নেই প্রথম পর্ব (ইতিহাসের হারিয়ে যাওয়া জাতি ( মিতান্নী জাতি)
উনিশ শতকের আগে হিতাইতদের সম্পর্কেও বিশেষ কোন ধারনাই ছিল না। পন্ডিতরা শুধু জানত ওরা বাইবেলে বর্নিত ‘হেথের সন্তান’ ‘Sons of Heth’। ইহুদীদের আদি পিতা ইব্রাহীমের প্রিয়তম স্ত্রী সারার আকস্মিক তিরোধানের পর তাকে এদের কাছ থেকে কেনা জমিতে কবর দিয়েছিলেন।
বাইবেলে আবার দেখা যায় আইজাক ও রেবেকার ছেলে ইসাউ র বাপ মায়ের অমতে দুই হিতাইত রমনীকে বিবাহ করেছে।
রাজা ডেভিড ও হিতাইত রমনীদের আকর্ষন থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেনি। হিতাইত দলপতি উরায়ার সুন্দরী স্ত্রীর সঙ্গে গোপনে অভিসার করা ছাড়াও তার স্বামীকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে অঙ্কশায়িনী করে। এসব পড়ে সাধারন মানুষদের হিতাইতদের সন্মন্ধ্যে কিছুটা বিরুপ ধারনা হওয়া স্বাভাবিক।
যদিও বাইবেলের ভবিষ্যতবক্তা ইজকিয়েলের মুখ থেকে জানা যায় জেরুজালেমের পত্তনে হিতাইতদের অবদান ছিল।
তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারার উচুভূমিতে হালিস নদী কৃষ্ণসাগরের দিকে বাক নেবার মুখে বোগাজকিউই গ্রামে ১৯০৫ সালে জার্মানী আসিরীয়বিদ অধ্যাপক হুগো উইঙ্কলার বেশ কিছু ‘কিউনিফর্ম’ এবং অদ্ভূত ধরনের ‘হায়ারোগ্লিফিক্স’ লিখন থেকে হিতাইতদের বিস্তৃত সম্রাজ্যের সন্ধান পেয়ে জ্ঞানের জগতে আলোড়ন তৈরী করেন।
সেই প্রথম জানা গেল ডেভিডের পূর্ব পুরুষরা আশ্রয়ের খোজে যখন পাহাড় মরুভূমিতে ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন তখন হিতাইতদের সাম্রাজ্য পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর রীতিমত সম্ভ্রম আদায় করেছে। বছর দুয়েক বাদে বার্লিনের আর্কিওলজিক্যাল ইনিষ্টিটিউট বোগাজ কিঊই গ্রামের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে হিতাইতদের রাজধানী চাত্তুসাসের সন্ধান পেল। প্রাচীন রাজধানীর পরিধি ছিল ৪২৫ একর- মধ্যযুগের নুরেমবার্গ বা দিল্লীর মত।
হিতাইতদের তথ্য অনুযায়ী সাম্রাজ্যের শুরু হয় খ্রীষ্ট পূর্ব ষোল শতকে- অর্থ্যাৎ ভারতবর্ষের কৌরব- পান্ডবদের সমকালে।
পতন ১২০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে। মিতান্নীদের মত এরাও সম্ভবত ভারতীয় আর্য গোষ্ঠীর লোক। পরবর্তীকালে সিরিয়ার বিভিন্ন স্থানে হিতাইতদের ছোট ছোট গোষ্ঠী নিজেদের অধিকারে রাখে। এদেরই কোন উত্তরসূরী বাইবেলে বর্নিত উরায়া।
হিতাইত সাম্রাজ্য বিস্তারে যিনি বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি হলেন রাজা ‘শুপ্পিলুলিউম’।
১৩৭০ খ্রীষ্টাব্দে তিনি মিতান্নী যোদ্ধাদের পরাভূত করে কানানের অর্থ্যাৎ আধুনা জর্ডান ইস্রাইলের উত্তারাঞ্চলের লেবানন পর্যন্ত রাজ্য বিস্তার করেন। তিনি এত পরাক্রান্ত ছিলেন মিশরের ফারাও তুতানখামুনের বিধবা পত্নী আনচেস-এন আমুন স্বামীর অকাল মৃত্যুর পর তার পূত্রদের কাউকে বিবাহ করতে ম রিয়া হয়ে উঠছিলেন যাতে মিশরের সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে না যায়।
ঘটনাটি আমরা জানতে পারি শুপ্পিলিউমের পুত্র রাজকুমার মুরসিলিসের লিখিত জীবনী থেকে। এটিই পৃথিবীর প্রথম আত্মজীবনী। মুরসিলিস ঘটনার বিবরন এইভাবে দিয়েছেন- যখন মিশরীয়রা আমকার ওপর (হিতাইতদের) আক্রমনের কথা শুনল, তারা আতঙ্কিত হল।
পরিস্থিতি আরো ঘোরালো হল যখন ঠিক এই সময়ে তুতানখেমন মারা গেলেন। তার বিধবা মিশরের রানী আমার পিতার কাছে দূত পাঠিয়ে এই মর্মে চিঠি দিল-
‘আমার স্বামী এখন মৃত এবং আমার কোন পুত্র নেই। আমি শুনেছি আপনার অনেক পূত্র আছে, আমি রানী হয়ে অধীনস্ত কোন কর্মচারীকে বিবাহ করে পতিত্বে বরন করতে পারি না’।
আমার পিতা যখন এই কথা গুপ্তচর মারফত শুনলেন, তখন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের মন্ত্রনাসভা ডাকলেন। তাদের বললেন আমি আমার জীবনে এই ধরনের ব্যাপার দেখিনি।
তিনি তার মূখ্য পরিচালক হাত্তু-জিতিস কে ডেকে বললেন, যাও ওখানে যেয়ে দেখে আস ঘটনা সত্যি কিনা? ওরা বোধ হয় আমাকে প্রতারিত করার চেষ্টা করছে। হয়ত ওদের দেশে কোন রাজকুমার আছে। আমাকে সঠিক খবর এনে দাও।
মিশরের দূত মহামান্য হানিস বার্তা নিয়ে পিতার আছে এল। কিন্তু আমার পিতা যেহেতু হাত্তু-জিতিস কে ইতিমধ্যে মিশরে প্রেরন করছে, তিনি তাই মিশরে ফিরে গেলেন।
কিছুদিন বাদে মিশরের রানী পিতাকে আর একটি চিঠি প্রেরন করলেন, তিনি লিখলেন-
‘আপনি কি করে ভাবলেন ওরা আমার সঙ্গে প্রতারনা করতে চায়? আমার যদি পূত্র থাকত আমি কি এভাবে কোন বিদেশী রাজা কে লিখতাম যা ব্যাক্তিগত ভাবে আমার আর আমার দেশের জন্য অপমানজনক, আপনি আমাকে বিশ্বাস করেন না একথা বলতে পারলেন? যিনি আমার স্বামী ছিলেন তিনি এখন মৃত এবং আমার কোন পুত্র নেই। আমি কি আমার বেতনভুক কাউকে গ্রহন করব এবং আমার স্বামী বানাব? আমি অন্য কোন রাজাকে পত্র দেইনি কেবল আপনাকে দিয়েছি। আমাকে আপনার একটি পুত্র দিন যে আমার স্বামী হবে এবং মিশরের ওপর কর্তৃত্ব করবে’।
যেহেতু আমার পিতা মহান তাই এই মহিয়সী মহিলার অনুরোধ রক্ষা করে তার একজন পূত্রকে মিসরে পাঠালেন।
কিন্তু বিধি বাম, মাঝপথে গুপ্তঘাতকের হাতে নিহত হলেন হিতাইত রাজকুমার।
রানী আনচেস এন আমুনের ইচ্ছা আর পূরন হলনা। হিতাইত রাজকুমার ও নেফ্রেটেটের মেয়ে আনচেসের মত অসামান্য সুন্দরী ও বিশাল সাম্রাজ্য অধিকারীনি রাজ দূহিতার প্রেম থেকে বঞ্চিত হলেন। এই গুপ্তহত্যার পিছনে কোন মিশরীয় রাজপুরুষের হাত ছিল কিনা সেটা জানা যায়না
এই ঘটনার পচাত্তর বছর পর অবশ্য কাকতলীয় ভাবে দুই রাজপরিবারের মধ্যে বৈবাহিক সূত্র স্থাপিত হয়। সেই সময় মিশরীয় ফারাও দ্বিতীয় রামসেস হঠাৎ করে হিতাইত সম্রাজ্য আক্রমন করেন। ভেবেছিলেন শত্রুর শেষ রাখবেন না।
কিন্তু যুদ্ধে তিনি জয়ী তো হলেনই না কোনক্রমে বন্দী হওয়া থেকে বেঁচে গেলেন। পৃথিবীর ইতিহাসে সেই প্রথম ১২৮০ খ্রীষ্টাব্দে কোন দুটি দেশের মধ্যে আক্রমন এবং অনাক্রম চুক্তি সম্পাদিত হল। চুক্তি দৃঢ় করার জন্য রামসেস হিতাইত রাজকন্যা পরমা সুন্দরী আমুন কে বিয়ে করে মহাসমারোহে রাজধানীতে নিয়ে আসলেন। নগরীর নতুন নাম করন করলেন ‘পের-রামসেস-মেরি-ইমেন’ যার অর্থ হল ‘আমুনের প্রিয়তম রামসেসের আবাস-গৃহ’।
সূত্রঃ Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।