আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈশর বাংলাদেশ ও বাংলাদেশিদের উপর হইতে তাহার দায়িত্ব ছাড়িয়া দিয়াছেন

কার্ণিশ ভাঙ্গা জানালার ফাঁক দিয়ে রাতের আকাশের যেটুকু অংশ দেখা যায়, অইটাই আমার পৃথিবী। ঈশ্বর জিজ্ঞাসিলেন; এই জীবন নিয়ে তুমি কী করিয়াছিলে, এতোদিন? আমি ভয়ার্ত কণ্ঠে বলিলাম, হে দয়ালু ঈশ্বর, আমি আমার একদিনের কর্ম হিশেব পেশ করিলে, আপনি সারা জীবনের হিশেব সহজেই মিলাইতে পারিবেন। ঈশ্বর দয়াপরবশ হইয়া, আরো কথা না বাড়াইয়া বলিলেন; ঠিক আছে, বল- আমি বলিতে আরম্ভ করিলাম, স্নাতক শ্রেণীতে অধ্যয়ন করিবার সময় হইতে শুরু করিয়া আমৃত্যু; আমার গৃহ হইতে কর্মস্থলে যাতায়াত বাবদ প্রতিদিন সাড়ে ছয় ঘন্টা সময় ব্যয় করিতে হইয়াছে। পেটের ভাত যোগাড় করিবার জন্য প্রতিদিন আট ঘন্টা সময় ব্যয় করিয়াছি। ঘুমাইয়াছি দৈনিক সাড়ে পাঁচ ঘন্টা।

গজল শোনা, লেখালেখি, ব্লগিং, সিনেমা দেখা ও পড়াশুনার পেছনে ব্যয় হইয়াছে চার ঘণ্টা। প্রতি সন্ধ্যে বেলা উস্তাদের বাসায় মদ্যপানে ব্যয় হইয়াছে তিন ঘণ্টা। আপনার অস্থিত্ব আছে কী নাই তাহা ভাবিতে ব্যয় হইয়াছে আরো দুই ঘন্টা। বন্ধু-বান্ধব, মা, পরিচিতজন, মেয়ে মানুষ পটানোতে ব্যয় হইয়াছে দৈনিক দুই ঘন্টা। পেচ্ছাব-পায়খানা, গোসল, কাপড় ধোওয়া খাতে ব্যয় দুই ঘন্টা।

প্রত্যহ মোট তেত্রিশ ঘন্টা সময় ব্যয় করিয়াছি। ঈশ্বর রাগতস্বরে হুংকারিয়া জিজ্ঞাসিলেন; তুমি তেত্রিশ ঘন্টা সময় কোথায় পাইয়াছ? সময় তো দৈনিক চব্বিশ ঘন্টা। আমি বলিলাম প্রিয় ঈশ্বর; আমি যখন মতিঝিলে, তখন কেউ ফোনে আমার অবস্থান জানিতে চাহিলে বলি, জাহাঙ্গীরনগর। যদি থাকি ঢাকায়, কেউ জিজ্ঞাসিলে বলি অফিসের কাজে বগুড়ায়। এতে আমার কোথাও পৌঁছিবার পুর্বনির্ধারিত সময়ের পরে পৌঁছিলেও সমস্যা হয় না।

এই ফাঁকে আমি অন্যান্য আকাম আর কামগুলি করি। ইহাতে আমার শৈশবের হিসাব না দেওয়া সময়গুলোও হিশেবের আওতায় চলিয়া আসে। তখন আবার ঈশ্বর জিজ্ঞাসিলেন, প্রেম কিংবা বিয়ে? তখন আমি অতীব বিনয় ও আকুতির সহিত বলিলাম, সময় দিতে না পারিবার দরুণ আমার এইকাজে সিদ্ধি লাভ ঘটে নাই। এবং যিনি আসিয়াছিলেন তিনিও সময় দিতে না পারিবার অযুহাত তুলিয়া চলিয়া গেলেন। অথচ তাহার জন্যেই আমি বড় বেতনের কিন্তু ব্যক্তিগত সময় না থাকিবার চাকরি করিয়াছিলাম।

তিনি তাই করিতে বলিয়াছিলেন। ঈশ্বর বলিলেন, যাও। তোমাকে মাফ করিয়া দিলেম। তৎক্ষণাৎ, আমার মনে একটা প্রশ্নের উদ্রেক হইল (বাংলাদেশী তো!), এবং আমিও সাহস নিয়া ঈশ্বরকে জিজ্ঞাস করিলাম, দয়ালু ঈশ্বর, সারাজীবন তো আপনার কোন ইবাদত বন্দেগী করি নাই, তবু তুমি মাফ করিয়া দিলে? ঈশ্বর স্বভাব বিরুদ্ধ মুচকী হাসি দিয়া বলিলেন, ওহে আমার প্রিয় বাংলাদেশী বান্দা, তোমরা বাংলাদেশীরা যানজটের যে যাতনা ভোগ করিয়াছ, তাহার বিপরীতে তোমাদের কে দোযখে দাখিল করিয়া আমি দোযখের জায়গার অপব্যবহার করিব না। তাছাড়া, তোমরা যেভাবে অন্যায় অত্যাচার আর সরকারের নিপীড়ন ও বেকায়দা পরিস্থিতির জঘন্য শাস্তিরর সহিত অভ্যস্থ হইয়া পড়িয়াছিলে, তাহাতে আমি নিজেই তোমাদের উপর আমার যে দায়িত্ব ছিল তাহা ছাড়িয়া দিয়াছিলাম।

সুতরাং, তোমাদের তরফ হইতে কোন প্রকার ইবাদত বন্দেগী আমি কামনা করি নাই। তারপর আমি বেহেশতে চলিয়া আসিলাম। তখন আমার এক প্রিয় বন্ধু আমাকে তার রুমে (বেহেশতে) আড্ডা দিতে ডাকিলেন। তাহাকে আমি বলিলাম, দোস্ত আমি রওয়ানা দিলাম, কিন্তু কিঞ্চিত দেরী হইবে, কারণ এইখানে খুব যানজট চলিতেছে। তিনি মুচকী হাসির সহিত বলিলেন, ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান বান্ধে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।