জানতে চাই জানাতে চাই বহুল আলোচিত সাত যমজ সন্তানের মা-বাবা বলে দাবিদার পুলিশের সাবেক (ডিআইজি) উপমহাপরিদর্শক আনিসুর রহমান ও তার স্ত্রী আনোয়ারা রহমানকে শিশু পাচার মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
গতকাল ঢাকার ৪ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আরিফুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন। এ মামলা দায়েরের ছয় বছর পর রায় ঘোষণা করা হলো। রায়ে আসামিদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয়া হয়।
মামলার প্রধান আসামি পুলিশের সাবেক ডিআইজি আনিসুর রহমান জামিনে গিয়ে পলাতক।
অপর আসামি তার স্ত্রী আনোয়ারা রহমান আদালতে হাজির ছিলেন। রায় ঘোষণার পরে তাকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় মামলার বাদী বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সাবেক নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, ‘রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। হাইকোর্টের নির্দেশে ওই শিশুদের ডিএনএ টেস্ট করা হয়। ওই টেস্টে প্রমাণিত হয়েছে বাচ্চাগুলো একে অপরের ভাই-বোন নয়।
তারা প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা বাবা-মায়ের সন্তান। তারপরও এ মামলায় পুলিশ তিনবার আসামিদের অব্যাহতি দিয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। ’
আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কাজী মো. সাজাওয়ার হোসেন বলেন, ‘এ রায়ে আমরা সংক্ষুব্ধ। আমরা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করব। ’
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা দাবি করেছিলেন তাদের মোট ১৪ সন্তান।
তাদের মধ্যে সাতজনের জন্ম তারিখ ২৪ অক্টোবর ২০০৪। জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী ওই সাতজনের বয়স ১৯ মাস ২২ দিন। ২০০৬ সালের ২ জুন বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর পেয়ে সাংবাদিকরা তাদের বাসায় গেলে অভিযুক্তরা সঠিক তথ্য সরবরাহ না করে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম তথ্য দেন। এতে বিতর্ক তৈরি হয়। প্রকৃতপক্ষে ওই শিশুরা তাদের সন্তান নয়।
আসামিদের কর্ম ও জীবন ইতিহাস বলে তারা বেআইনি নীতিগর্হিত উদ্দেশ্যে এসব শিশুকে বিদেশে পাঠানো বা পাচার বা ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য বেআইনিভাবে বিভিন্ন শিশু হাসপাতাল, ক্লিনিক বা শিশুদের অভিভাবকদের হেফাজত থেকে দখলে ও জিম্মায় রেখে অপরাধ করেছেন।
কিন্তু পরবর্তীতে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে হাইকোর্ট রায় দেন যে, সন্তানগুলো যমজ নয় এবং একই মায়েরও সন্তান নয়।
এ ব্যাপারে ২০০৬ সালের ২ জুন মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার তত্কালীন নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট এলিনা খান রাজধানীর বাড্ডা থানায় একটি জিডি করেন। পরবর্তীতে শিশুগুলোকে পাচারের উদ্দেশে এনে জড়ো করা হয়েছিল এমন অভিযোগ এনে তিনি আদালতে মামলা দায়ের করেন।
২০০৬ সালের ১০ নভেম্বর গোয়েন্দা পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর মামলার ঘটনাটি নিছক একটি তথ্যগত ভুল মন্তব্য করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল ও অভিযুক্তদের মামলার দায় থেকে অব্যাহতির আবেদন করেন।
২০০৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি মামলার বাদী আদালতে দাখিল করা ওই চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন করলে আদালত ওই আবেদন মঞ্জুর করেন এবং বিচারক মামলাটি বিচারের জন্য আমলে নেন। ওই বছরের ৮ জুন আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
মামলার নথিসূত্রে জানা যায়, সাত শিশুর মধ্যে জান্নাতুল মারিয়াম নাজিফা চিকিত্সাধীন অবস্থায় মারা যায়। অপরদিকে জান্নাতুল মারিয়াম নাফিসা, জান্নাতুন আনিসা রহমান নাবিলা এবং চার ছেলে শিশু আয়মান রহমান আনিস (উসাম), নাফিস আকন আনিস, আনাস আকন আনিস ও দায়ান রহমান (ওসাত) জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির আগারগাঁওয়ের আশ্রয় কেন্দ্র ‘প্রশান্তি’তে রয়েছে।
বাদীপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বর্তমানে হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অ্যাডভোকেট এলিনা খান, অ্যাডভোকেট মাহমুদা আক্তার ও সংশ্লিষ্ট আদালতের পিপি ফোরকান মিয়া।
আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট কাজী মো. সাজাওয়ার হোসেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।