এটা আমার জন্য অনেক সুখকর যে, আমি এখন ব্লগ ও ফেইসবুক থেকে নিজেকে আসক্তিমুক্ত রাখতে পারছি। পরিবার ও পেশাগত জীবনের কর্মব্যস্ততা অনেক আনন্দের। ... ব্লগে মনোযোগ দিতে পারছি না; লিখবার ধৈর্য্য নেই, পড়তে বিরক্ত লাগে। ১
এটা তোর জীবনের এমন এক ট্র্যাজেডি, যা কেবল আমার আত্মতুষ্টির জন্য ঘটেছিল। এটি এক পক্ষে একটি মর্মন্তুদ নিষ্ঠুরতার কাহিনি, অপরপক্ষে নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগের কিসসা, যা কেউ কোনওদিন শোনে নি, এমনকি স্বপ্নেও ভাবে নি।
এটা কোনও মেয়ে কোনোদিনই করে নি তার প্রেমিকের জন্য, তুই সেটিই করেছিলি। অথচ এ গল্পটি আমাকে কাঁদায় না। তোর এ বলিদান আমার অহমকে আরো ক্ষুরধার ও বিধ্বংসী করে তোলে। তোর অন্তর্নিহিত বেদনা পাঠকের মর্মস্পর্শ করে না। পাঠকের কাছে এটি এক নির্জনতম বটবৃক্ষের মতো দুর্বোধ্যতর হয়ে উঠতে থাকে।
এতে লুকায়িত আছে এমন এক রহস্য, সাধারণের কাছে যে-স্বাদ সহজলভ্য নয়।
মার্চে পারলারে গিয়ে তুই চুল ছেঁটেছিলি; আর কোনওদিনই চুল ছাঁটবি না, আমার ইমোশন দেখে এ কথা বলেছিলি- ২০০৭-এর মে মাসে, সায়েন্স ল্যাবরেটরির দক্ষিণ মোড়ে দোতলার রেস্টুরেন্টে বসে। আমার চোখে পানি ছিল। জুলাই ২০০৮-এ স'কে নিয়ে তোর সাথে দেখা করতে গেলে আমার সন্দিহান চোখ কুঞ্চিত হয়- দেখি, তোর চুল ছাঁটা, আর ভ্রু প্লাক করেছিস। আমি আশ্চর্য হই।
সেদিনও আমার চোখে পানি আসে; তুই কথা রাখলি না!!
প্রথমে অস্বীকার করলি, পরে চাপের মুখে বললি, স’র চেয়ে সুন্দর আর স্মার্ট দেখাবে তোকে, সেজন্য এটা করেছিস। যদি আমাকে বলে করতিস! ধরে নিতে পারি, অন্য কোনও উদ্দেশে এটা করেছিলি!
তুই চুল ছাঁটবি, এ কথার প্রতিবাদ না করে বরং আমি সর্বমোট চারবার কেঁদেছিলাম তোর সামনে। তুইও তোর মৃত্যুর কসম খেয়ে বলেছিলি, জীবনে আর কোনওদিনই চুল ছাঁটবি না। সেই তুই আমার অবর্তমানে- যখন ২৮ দিন ধরে অভিমানে সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রেখেছিলাম, সেই সময়ে ২৯ মার্চে পারলারে গিয়ে চুল ছেঁটে এলি। আমার বিশ্বাস ছিল, এ কাজটা তুই করতে পারিস না।
তুই বলেছিলি- 'আমার মৃত্যুর পর এসে দেখে যাস পাখি, আমি আর কোনওদিন চুল কেটেছিলাম কিনা। ' আমার আবেগ তুঙ্গে ছিল- সেই তুই এ কাজটা করলি! চোখের পানির কোনও দামই দিলি না! তুই বললি, মোবাইল বন্ধ রেখেছিলাম বলে রাগ করে চুল কেটেছি, এ’ সাক্ষী। রাগ করে চুল ছেঁটে সুন্দরী না সেজে পুরো মাথাটাই ন্যাড়া করে ফেলতিস- তাহলে বুঝতাম!
গতকাল দুপুরে ব্যাপারটা বুঝতে পারছিলি। তাই বললি, আজ আমি একটা কাজ করবো।
মোবাইল ঘরে রেখে আমি তখন বাইরে।
এসে দেখি তোর আর এ’র শ' খানেক মিস্ডকল, গোটাকতক মেসেজ। এ’র কল ধরতেই সে বলে, এটা আপনি কী করলেন? ও যে মাথা ন্যাড়া করে ফেললো! কাজটা কি ঠিক করেছেন?
আমি অনেক গল্প শুনেছি, আজ নিজ জীবনে ঘটতে দেখছি- এমন ভালোও বাসতে পারে কেউ!
তুই বললি, হাসতে হাসতে- কী রে, তোর ভালো লাগছে না? আমার তো খুব ভালো লাগছে!
আমার মুখে কথা সরে না।
আমি অবশ্য তখনো পুরোটা বিশ্বাস করি নি। তবে কাজটি যে তোর দ্বারা ঘটানো সম্ভব তা বিশ্বাস করি।
বুড়ি, তোকে আমি খুব খুব খুব ভালোবাসি...
২
একটা কনফারেন্সে যাবো বলে খুব তাড়াহুড়ো করে রেডি হচ্ছিলাম, তুই পাগলের মতো আমাকে কল করছিস।
তোর ওপর রেগে ছিলাম। কারণ, গতরাত থেকে তুই বড্ড অপরাধ করছিস। নিয়ম ভঙ্গের চেয়ে বড় কোনো অপরাধ নেই আমার আদালতে। তোর উচিত ছিল আমাকে জানানো, অতঃপর অনুমতি নেবার প্রয়োজন ছিল। এ ব্যাপারে আমি আপসহীন তা তুই জানিস।
সকাল ৯টায় কল দিলি। আমি বললাম, দুই মোবাইলে দুই সিম ইউস করছিস যে! তোর সাহস দেখে অবাক হই!
তুই বললি, গতরাতে অন্যটা সারিয়ে আনা হয়েছে। তুই-ই তো বলেছিলি দুটো সিম ইউস করতে পারবো।
-ইউস করবার আগে আমি কেন জানলাম না? জানিস না, আমার অনুমতি ছাড়া এটা তুই পারিস না?
-তাহলে কোন্টা বন্ধ রাখবো?
-এক কাজ কর, পুরোনো ভাঙা সেটটা, বাকি সিমগুলো, তোর ন্যাড়া মাথার চুল আর ছবিগুলো আজ বিকেলে কুরিয়ার করে পাঠিয়ে দে। পারবি না?
তুই হুট করে বললি- আমার সার্টিফিকেটগুলো আজই ফেরত দে।
-আমি এখন চিটাগাং। বৃহস্পতিবারে ঢাকা গিয়ে শুক্রবারে পাঠাবো।
লাইন কেটে যায়। আবার কল করলি। বললি, সঙ্গে ফ’র দেয়া শাড়িটাও পাঠিয়ে দিবি।
আমি ঠাণ্ডা স্বরে স্বাভাবিক জবাব দিই- ঠিক আছে। আর যা যা বললাম, সবই কিন্তু আজকের মধ্যে পাঠিয়ে দিবি।
-তার কি আর দরকার আছে?
-তুই ওগুলো দিয়ে কী করবি?
-তুই সার্টিফিকেটগুলো আজই পাঠিয়ে দে। আমার খুব দরকার।
-শুক্রবারের আগে পাঠাতে পারবো না।
এখন রাখি। আমি জরুরি কাজে যাচ্ছি।
লাইন কেটে দিলাম। এরপর তুই অনেকগুলো কল দিলি, পাগল হয়ে গেলি। আমি মোবাইল বন্ধ করে দিলাম।
বৃহস্পতিবার ঢাকা এলাম। ট্রাঙ্ক খুলে দেখি তোর শাড়ি নেই। ল’ নিয়ে গেছে। ওর সাথে রাগারাগি করলাম। বাসায় তোর দেয়া সর্বশেষ চিহ্ন একটা সাদা ফতুয়া ছিল।
বের করলাম। তোর ভার্সিটির সার্টিফিকেট, হাইকোর্টের আইডি, তোর দুটো বাংলালিংক আর একটা গ্রামীণ ফোনের সিম- একদিন আমাকে পাঠিয়েছিলি- এসব পুড়িয়ে আকাশে ছাই উড়িয়ে দেব- বিনিময়ে 'সোনাপাখি, বাবু'টাকে চাই, তোর মতো করে।
তোর আমানত, তোর দেয়া মায়াময় গিফ্টগুলো শনিবারে কুরিয়ারে ফিরিয়ে দিলাম।
৩
২৬ এপ্রিলে তোর কুরিয়ার পাই। খুলতে গিয়ে এক্সাইটেড হয়ে গেলাম।
তোর ছবি। শুধু মাথার, চোখের অর্ধেক, একপাশ থেকে তোলা; মুখের অংশ নেই। ছবি দেখে প্রথম ধাক্কায়ই মনে হলো, আমি তোর উপর খুব অত্যাচার করে ফেলেছি। আমি খুব নিষ্ঠুর, চোখের পানিতে মানলাম। সাথে সাথেই কল দিতে চেয়েছিলাম।
যখন মনে হলো সার্টিফিকেটগুলো পেলে আমাকে আর খুঁজবি না, উৎসাহ হারিয়ে ফেললাম। তোর চুলগুলো প্যাকেটে ভরা, আমি ওগুলোর উপর হাত বুলিয়ে খুব আদর করলাম। তোর জন্য অনেক কাঁদলাম, অযথাই কষ্ট দিয়েছি তোকে- এ কারণে। তুই কি কোনওদিন আমার এই কান্নার কথা জানবি, আমার অন্তরের নিধি, পাগলি বুড়ি? কুরিয়ারে তোর চিঠি, প্রুডেক্স প্যাডের উপর লিখেছিস :
অনেক অপমান, অবহেলা, কঠিন সব শর্ত মেনে নিয়ে তোর সাথে সম্পর্ক টিকিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু কী পেয়েছি? অনেক বেশি অবহেলা, অপমান, কঠিন সব শর্ত।
তুই বলেছিস, তোর কাছে বার বার ফিরে যাই বেহায়ার মতো... চলে যাচ্ছি, আমার এ ন্যাড়া মাথা নিয়ে আর আসবো না। আমার খুব কষ্ট হবে রে! বুক ভেঙে যাবে। যতোবার আয়নায় নিজেকে দেখবো, মনে হবে তোর দেয়া শাস্তি মনের শান্তি হিসাবে মেনে নিয়েছিলাম। প্রতিটা শাস্তি পার করতাম আর ভাবতাম- এটাই হয়তো শেষ। শুধু শাস্তিই দিয়েছিস, শাস্তির কখনো শেষ হয় নি।
সার্টিফিকেটগুলোর দরকার, কারণ একটা চাকরি আমার না হলেই নয়। নয়তো আমার আমিকে বাঁচিয়ে রাখতে পারছি না।
ভালো থাকিস।
আরেকটা টকুরোয় :
আমি ভুল করেছি, তোর মতো মিথ্যাবাদীর কথা বিশ্বাস করে। তোর জন্য সব হারিয়েছি।
তবু তোকে পথে আনতে পারি নি। তুই একটার পর একটা শর্ত দিয়েছিস, আমি মেনে নিয়েছি। আর আমাকে বোকা বানাতে পারবি না। আমি তোকে চিনে ফেলেছি।
বিঃ দ্রঃ তুই আমার সাথে প্রতারণা করেছিস।
নোট : গল্পটা বুঝতে অসুবিধা হলে দয়া করে ৫ম বার পড়ুন। সিকোয়েল ১ আর ৩ আগে পড়ে নিতে পারেন।
৪ আগস্ট ২০১০ বিকাল ৫:৫১ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।