ভুমিকম্প জিনিসখানা কি তাহা আগে বুঝিতাম না। খালি নাকি মাটি কাঁপিয়া যায় । ছোট্ট ভাই জিজ্ঞাসা করিলে বলিতাম আরে গাধা ভুমিকম্প হইল মাটির নড়াচড়া, এমনভাবে নড়িবে তুই আর ঠিক থাকিতে পারবিনা। ধপাস করিয়া পড়িয়া যাবি। হয়তো তোর হাত পা খানাও ভাঙিয়া যাইতে পারে।
তো সাবধান ভুমিকম্পের সময় কখনও খেলবিনা। তখন কি করিবে তা জানতে চাইলে বলিতাম “তুই বড্ড বাড়িয়া গেছিছ, এইসব দুর্যোগের কথা মুখেও আনিতে হয়না, যদি চাস তো আকাশের দিকে মুখ করিয়া চিত হইয়া শুইয়া থাকবি, দেখবি মাটি কাঁপিলে আকাশখানা দেখিতে কেমন লাগে”। ইহা শুনিয়া আমার ছোট্ট ভাই মনে মনে ভুমিকম্পের কল্পনা করিত। আর আমি শুখনো মুখে ভাবিতাম “ইস আমার যদি একবারের জন্য হইলেও ভুমিকম্প দেখিবার সুযোগ আসিত”।
একবার মা তাহাকে বলিয়াছিলেন ইহাতে নাকি আবার মৃদু শব্দ অনুভুত হয়।
তাহা শুনিয়া আমিও মৃধু শব্দের প্রতিক্ষা করিতাম। এরপর জীবনে অনেক ভুমিকম্প দেখিয়াছি তাহা নিয়া অনেক মজার স্মৃতি আছে। তাহারই কয়েকটি ঘটনা তুলিয়া ধরিতেছি।
ঘটনা-১ঃ
তখন আমি ক্লাস সিক্স এর বার্ষিক পরীক্ষা দিতেছিলাম। দিনটি কি বার ছিল তাহা মনে নাই, কিন্তু সেইদিন ছিল আমার ধর্ম পরীক্ষা।
জান্নাত জাহান্নাম নিয়া বিশদ লেখিলাম। এমনভাবে লেখিলাম যেন আমি নিজে গিয়ে অডিট করিয়া আসিয়াছি। এসবের সব ঘটনাই আমার জানা। জান্নাতের এমন সুমধুর বর্ননা আমি লেখিলাম স্যার ভাবিয়াবসিতে পারেন ফেরেশতা রেদওয়ান আমাকে নিয়া গিয়া চা বিস্কুট টাইপের কিছু খাওয়াইয়াছে। আর দোযখের এমন বর্ননা দিলাম, তাহাতে যেকেউ বলিবে সেই আজাবভোগ করা লোকটি আর কেউ নয় আমি।
মালেক ফেরেশতাতার সব রাগ যেন আমার উপর ঝারিয়াছে। এভাবে মনমুগ্ধকর বর্ননা লিখিতে লিখিতে হটাত মনে হইতে লাগিল কোথাও যেন যন্ত্র বাজিতেছ,আর বেঞ্চখানা কাঁপিতেছে । মনে হইল ভুমিকম্প নয়ত, দেখিলাম সবাই ছোটাছুটি করিতেছে। এমন সময় আমার ছোট্ট মনে উদয় হইল আরে আজতো ধর্ম পরীক্ষা তো চিন্তা কি? মরিয়া গেলে খোদা নিশ্চয়ই আমাকে জান্নাতে দাখিল করিবেন । আহা।
ভাবিতে লাগিলাম আমার কোন দেনা নাইতো? আল্লাহ নাকি শহীদের সব গুনাহ মাফ করিয়া দেন শুধু দেনা ব্যতীত। মনে পরিল আমার একজনের কাছে ২ টাকা দেনা আছে। না, মরিলে চলিবেনা। বাঁচিতেই হইবে ,এই ভাবিয়া বাহির হইতে যাইব এমন সময় গালে প্রচণ্ড এক শব্দ সাথে ব্যথা অনুভুত হইল। বুঝিলাম আমি চড় খাইয়াছি।
পাশে মৌলভী স্যার দাঁড়ানো। সাথে ইহাও শুনিলাম “হারামজাদা এইরকম করিলে তোর চামড়া তুলে নিব”। বুঝিলাম ভূমিকম্পের সময় ঘরে থাকা উচিত হয়নাই। সেই সাথে ইহাও বুঝিলাম স্যারদের অনেক মায়া আমাদের জন্য। সেই স্যার এখন খুব অসুস্থ , সবার কাছে দোয়া কামনা করছি।
ঘতনা-২ঃ
ঘটনা আজ দুপুরেই ঘটিয়াছে। জানালা দিয়া শব্দ করিয়া দক্ষিনা বাতাস আসিতেছে। আমি কেবল টেক্সটবই ছাড়িয়া ফেসবই(ফেসবুক) লইয়া বসিয়াছি। এক ললনার সাথে আমার ------- চলিতেছে । হটাত মনে হইল আমার তড়িৎপাখা(ফ্যান) খানা স্টান সমেত কাঁপিতেছে।
ভাবিলাম ইহা আর নতুন কি? “মীনক্ষোভাকুল কুবলয়” মাছের তাড়নে পদ্ম যদি কাঁপিতে পারে তবে এই দক্ষিনা বাতাসে আমার ফ্যানখানা খুব সুন্দর করিয়াই নাচিতে পারে। সাথে মনে হইল কে যেন আমার কোমর ধরিয়া নাচাইতাছে । মনে মনে বলিলাম , না এই বেয়াড়া বাতাসটার সাথে আর পারা গেলনা। এমন মুহূর্তে কেউ একজন ডাকিয়া বলিল পলাশ বাহিরে আয় নইলে মারা পড়বি । আমি বলিলাম দোস্ত ও কেবল লাইনে আসিয়াছে কেমন করিয়া যাই।
ও বলিল “আরে ব্যাটা ভুমিকম্প হচ্ছে বুঝিস না, দেখ হল কেমন করে কাপছে”? তাই নাকি আমি সশব্দে বাইরে চলিয়া আসিলাম। দেখি সবাই আমার মতন অভাগা। আমিতো কেবল লুঙ্গি আর গেঞ্জি গায়ে দিয়া আছি। অনেকে তো ঘুম থেকে উঠিয়া আসিয়াছে। মনে হইল ললনা রাগ করিয়াছে, ভাবিলাম মন্দ কি? জীবনে বাচিয়া থাকিলে বহুত ললনা পাওয়া যাইবে।
পুনশ্চ, ললনা আমার মতই ভুমিকম্পভয়ে ভীত ছিল, সে কিছুই মনে করেনাই। বরঞ্চ বলিয়াছে আমি নাকি ভালোয় ভালোয় সরিয়া যাওয়াতে সে অনেক স্বস্তিবোধ করিতেছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।