মানুষ নিদ্রিত এবং মৃত্যুর পরপরই সে জেগে উঠবে। সী অব গ্যালিলি (Sea of Galilee) ও ইয়াজুজ-মাজুজ
বাহারাতুত্ তারাবিয়া কিংবা লেক কিনারেতের অপর প্রসিদ্ধ ইংরেজী নাম ‘দ্য সী অব গ্যালিলি’ (The Sea of Galilee)। বিগত ১৪০০ বছর ধরে এই সী অব গ্যালিলি পৃথিবীবাসীদের একটি বিশেষ দুঃসংবাদ ও সতর্কবাণী দিয়ে আসছে। এই সতর্কবাণী এখন পূর্ণতার পথে। সী অব গ্যালিলি শুকিয়ে যাচ্ছে বিস্ময়করভাবে।
সারা পৃথিবীতে এটি এক ব্যতিক্রম। এই সী অব গ্যালিলি শেষ যুগের সংকটকালের একটি মাপকাঠি। অর্থাৎ কেয়ামত-পূর্ববর্তী অবস্থার এক নিদর্শন।
এই লেক তাইবিরিয়াস বা লেক কিনারেত হলো পবিত্রভূমির জন্য সবচাইতে বড় কিংবা একমাত্র পানির উৎস। ইসরাইল, প্যালেষ্টাইন, জর্ডান এই দেশগুলোকে পূর্ণভাবে এই বিশাল হ্রদের পানি সরবরাহের উপর নির্ভর করতে হয়।
নবীজী সাঃ এর হাদীছ অনুযায়ী এই হ্রদটি শুকিয়ে যাবে। এই হ্রদ শুকিয়ে যাওয়ার সঙ্গে দু’টি শব্দের সম্পর্ক নির্ধারিত হয়েছে হাদীছে - ইয়াজুজ-মাজুজ। এই পৃথিবী যখন ইয়াজুজ মাজুজ দ্বারা আক্রান্ত হবে - এই আক্রমনের তীব্রতা ও শেষযুগের সময়ের সংক্ষিপ্ততা এই হ্রদ গ্যালিলির পানির মওজুদ দ্বারা পৃথিবীর মানুষ সহজভাবে সনাক্ত করতে সক্ষম হবে। “আল নওয়াজ বিন সাম’আন রাঃ হতে উদ্ধৃত - ”
………… পরিস্থিতি এমন হবে যে আল্লাহ হযরত ঈসা আঃ কে এই তথ্যটি অবগত করবেন - “আমি সৃষ্টি করেছি আমার দাসদের মধ্য হতে এমন এক সম্প্রদায় (মানুষ অবশ্যই) যাদেরকে আমি ভিন্ন অন্য কেউ ধ্বংস করতে সক্ষম হবে না, কোন সম্প্রদায় তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কৃতকার্য হবে না। (এ সময় প্রকৃত বিশ্বাসীর সংখ্যা হবে অতি অল্প)।
আল্লাহ ইয়াজুজ মাজুজকে প্রেরণ করবেন - ‘তারা সকল উচ্চতা’ হতে লাফিয়ে লাফিয়ে নেমে আসবে।
তাদের প্রথম দলটি বুহাইরাত তাবারিয়া, লেক কিনারেত, তাইবিরিয়াস সাগর কিংবা সী অব গ্যালিলির পার্শ্ব দিয়ে গমন করবে এবং তা’ হতে চুমুক দিয়ে পানি শোষণ করবে। যখন ইয়াজুজ মাজুজের শেষ দল এই কিনারেত অঞ্চলে আসবে, তারা বলবে- এখানে এক সময় পানি ছিল। ঈসা আঃ ও তার সঙ্গীরা ইয়াজুজ মাজুজ কর্তৃক বেষ্টিত ও বন্দীদশায় অবস্থান করবে তুর পর্বতে। এ সময় একটি ষাঁড়ের মাথা একশত স্বর্ণমুদ্রার চেয়ে মূল্যবান বস্তু হবে তাদের কাছে।
আল্লার নবী হযরত ঈসা আঃ আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানাবেন। আল্লাহপাক ইয়াজুজ মাজুজ ধ্বংসের জন্য ক্ষুদ্র একটি পতঙ্গদল প্রেরণ করবেন, যারা তাদের ঘাড়ে কামড়িয়ে আক্রমণ করবে। পরদিন তারা এমনিভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে। হযরত ঈসা আঃ তুর হতে নেমে আসবেন। পৃথিবীর বুকে কোথাও তখন মনে হবে একটি পা ফেলার স্থান নেই।
সর্বত্র মৃত ও লাশ। তারপর নবী ঈসা আঃ আবার প্রার্থনা করবেন, আল্লাহ্ বড় আকৃতির পাখি প্রেরণ করবেন যাদের ঘাড় হবে যেন উট (Camel) সদৃশ। তারা মৃতদেহগুলোকে থাবায় তুলে নেবে ফেলার জন্য আল্লাহ যেখানে ইচ্ছা পোষণ করবেন। অতঃপর বৃষ্টি এসে পৃথিবী ধৌত করে দেবে। পৃথিবীতে অবশিষ্ট থাকবে মাত্র একটি জাতি - “মুসলমান” (সহিহ মুসলিম)।
এই হাদীছটি একটি ইতিহাসের ডকুমেন্টারির মত। তার মধ্যে বেশ কিছু সামঞ্জস্যহীনতা রয়েছে বলে মনে হতে পারে। ইয়াজুজ মাজুজ যদি আজকের চিহ্নিত গড-লেস্ পশ্চিমের টেকনোলজি দানব হয় - তবে তারা তুর পর্বতে উঠে হযরত ঈসা আঃ এর অনুচরগণকে আক্রমন করতে সক্ষম হবে না কেন? লেক কিনারেতের পাশ দিয়ে আসা ইয়াজুজ মাজুজের প্রথম দলটি তখন আসবে যখন হযরত ঈসা আঃ তুরে আরোহন করবেন? বর্ণনায় যেন মনে হয় যে মুসলমানরা যখন তুরে আরোহন করবে তখনই প্রথম দলটি লেক তাইবিরিয়াস অতিক্রম করবে। অপরদিকে পতঙ্গ আক্রমণকে অনুমোদন করা গেলেও উট পাখির ন্যায় গলা বিশিষ্ট অতিকায় পাখি যেগুলো মানুষের মৃতদেহ বহন করে নিয়ে যাবার যোগ্য - সে ধরণের পাখি আসবে কোথা হতে?
মোটকথা সৌর পরিবেশ ও পৃথিবী আমাদের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন এই জন্য যে এর মাঝে দৃশ্য ও অদৃশ্য ব্যবস্থাসমূহ এক অদৃশ্য কারণে সদা নিয়মানুবর্তী। আল কোরআন বিষয়টিকে পেশ করেছে এভাবে - “ তোমরা কি প্রত্যক্ষ কর না আল্লাহ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যাহা কিছু আছে সমস্তই তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করিয়াছেন।
এবং তোমাদের প্রতি তাঁহার প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অনুগ্রহকে পূর্ণ করিয়াছেন? মানুষের মধ্যে কেহ কেহ অজ্ঞতাবশত আল্লাহ্ সম্পর্কে বিতন্ডা করে - তাহাদের না-আছে পথ নির্দেশক, আর না-আছে কোন দীপ্তিময় কিতাব” (৩১:২০)। স্রষ্টা চাইলেই ঐগুলোকে ব্যবহার করতে পারেন যার চূড়ান্ত একটি তিনি করেছিলেন ৬৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে ডাইনোসরদের ইতিহাস হতে মুছে দেয়ার জন্য এবং পৃথিবীবাসীগণের আজকের সুখের সরবরাহ জৈবিক তৈল (Fossil Oil) সরবরাহ করার জন্য। আজকের ইলেকট্রিসিটি, রান্নার গ্যাস কিংবা গাড়ীর জ্বালানি মূলত ছিল সেই ৬৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে ডাইনোসরদের আত্মাহুতির দান।
আমাদের প্রস্তাব - ইলেকট্রনিক কিংবা ডিজিটাল ফিজিক্স যুগের অবসান হতে পারে অন্ততপক্ষে এমন কিছু উপায় যে পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে আমরা অবগত হয়েছি।
উপরোল্লিখিত উপায়গুলো ছাড়াও কখনো কোন অজানা মাত্রা সংযোজিত হয়, তবে সে অজানা মাত্রাগুলো অজানা ফলাফল নিয়ে আসতে পারে।
“ সেই সত্তাই আকাশসমূহ এবং পৃথিবীকে সৃষ্টি করিয়াছেন সঠিক সমতায়। তিনি যখন বলেন ‘হও’ - তখনই তা’ হইয়া যায়” (৫:৭৩)। স্রষ্টা তার আদেশ ‘কুন’ জারি করেন - অমনি তা’ হতে বাধ্য; অমনি তা’ অস্তিত্বে আসতে বাধ্য। “ৰল পৃথিবী পরিভ্রমণ কর (অনুসন্ধান ও গবেষণার্থে) এবং অনুধাবন কর কিভাবে তিনি সৃষ্টি আরম্ভ করিয়াছেন। ” (২৯:১০)।
বস্তুর মধ্যে এক নাজুক ভারসাম্য ব্যবস্থা কাজ করে যার চুলচেরা (Critical) চারিত্রিক পরিবর্তন একটি বস্তুর অস্তিত্বকে অপর বস্তুতে কিংবা ভিন্ন চরিত্রে রূপান্তর করে দেবার জন্য যথেষ্ট, যা আমরা রসায়ন শাস্ত্রের পাতা খুললেই বুঝতে পারি। “ তাহার হাতেই সকল বস্তুর কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ” (৩৬:৮৩)। যে জ্বালানি ব্যবহার করে একটি কপ্টার কিংবা ফাইটার প্লেন তুর পাহাড়ের চূড়ায় আক্রমণ চালাতে আসবে - এটা সম্ভব যে জগৎ স্রষ্টার ইচ্ছায় সেই জ্বালানির রাসায়নিক গুণাগুণ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। আমার প্রতিপালক সকল বস্তুর নিয়ন্ত্রণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করেন (১১:৫৭)। আমাদের প্রতিপালক তিনি যিনি প্রত্যেক বস্তুকে তাহার যথাযোগ্য আকৃতি দান করিয়াছেন অতঃপর তার কার্যপদ্ধতি নির্ণয় করিয়াছেন।
(২০:৫০)।
আল্লাহপাকের পক্ষে এ কাজগুলো সম্ভব কি-না, তার বিচার করা নিষ্প্রয়োজন। “ ইন্না যালিকা আলাল্লাহি, ইয়াসিরুন ” - এটা আল্লাহর জন্য সহজ। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বস্তুর ধর্ম অপ্রত্যাশিতভাবে পরিবর্তন হয়। এমন পরিস্থিতির মোকাবেলা না-হওয়া পর্যন্ত মানুষ এই পরিবর্তিত পরিস্থিতি সম্পর্কে অনুধাবন করতে সক্ষম হয় না।
নেপাল হতে প্রায় ৮০ জন পর্যটক সহ একটি এয়ারক্রাফট্ হিমালয়ের রজতশৃঙ্গ “অন্নপূর্ণার” বিরাট গুহা সদৃশ অংশে গমন করে। ঘটনাটি ঘটেছিল ৯০ দশকের শুরুর দিকে। সেখানে ছিল জমাটবাঁধা অকল্পনীয় শীতলতম স্থান, যার বিষয়ে ইতোপূর্বে মানুষের কোন ধারণা ছিল না। কৌতুহলবশে বিমানটি অন্নপূর্ণার মৃত্যু গহ্বরের মৃত্যুশীতল সুবিশাল গিরি গহ্বর (রি-এনট্রেন্ট)-এ গমন করে সম্ভবত ইতিহাস সৃষ্টির নেশায়। আর তা-ই ছিল শেষ ইতিহাস।
বিমানটি কোন দূর্ঘটনা সৃষ্টি করেনি - এতদসত্ত্বেও সহসা তার সমস্ত ইলেকট্রনিক সার্কিট ‘ফেল’ করে এবং এক পর্যায়ে বিমানটি সভ্যতার চক্ষু হতে হারিয়ে যায়। অন্নাপূর্ণার গহ্বর নিয়ে বিজ্ঞানীগণ গবেষণা শুরু করেন। ফলাফল আসে যে, অনুমানের অতীত শৈত্য বা ঠান্ডার কারণে বিমানে ব্যবহৃত ফিউলের ক্যামিক্যাল কম্পোজিশন পরিবর্তন হয়ে যায় ও ব্যবহৃত জ্বালানি মূলত বর্জ্য পদার্থে রূপান্তরিত হয়, যে-কারণে বিমানটি শক্তিহীন ও নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে এমনি এক রাজ্যে হারিয়ে যায় যেখান হতে কোন তথ্য উদ্ঘাটন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। রেসকিউ মিশন একই কারণে হারানো বিমানের হতভাগ্য যাত্রীদের উদ্ধারকার্য বাতিল করতে বাধ্য হয়।
ইয়াজুজ মাজুজের যে দলটি লেক কিনারেত বা সী অব গ্যালিলির পাশ দিয়ে গমন করবে এবং পানি চুষে নেবে বলে কথা এসেছে - বক্তব্যের ভঙ্গিতে মনে হয় যেন হযরত ঈসা আঃ তুরে গমন করবার পর ইয়াজুজ মাজুজের প্রথম দলটি সী অব গ্যালিলির পানি চুষে নেবে।
মূলত এমন ধারণা কোনভাবেই সঙ্গত হবে না এ জন্য যে ইয়াজুজ মাজুজ কোরআন ও হাদীছ অনুযায়ী আমাদের মতই মানুষ এবং তারা পৃথিবীর কর্তৃত্ব নিয়েছে হযরত ঈসা আঃ এর আগমনের বহু পূর্বে। “ ওয়াই লুল্লিল আরাব, মীন শাররী ক্বাদিক তারারা। ফুতিখাল ইয়াওমা মীন বাদমী ইয়াজুজ মাজুজ ওয়া মাজুজ …. ” ভীতি ও দুঃসংবাদ হে আরব অধিবাসীরা ! আজ ইয়াজুজ মাজুজের প্রাচীরে ফাটল (ছিদ্র) সৃষ্টি হয়েছে। উম্মুল মুমিমীন হযরত যয়নব বিনতে জাহশ এর ঘরে নিদ্রিত নবী সাঃ সহসা ঘুম হতে জেগে এই হাদীছ প্রকাশ করেন। তার মুখমন্ডল রক্তাত্ত বর্ণে রঞ্জিত ছিল।
নবীজী সাঃ এর জীবদ্দশাতে ইয়াজুজ মাজুজের মুক্তির সনদ এ হাদীছ হতে পেয়ে যাই। এই ধারণাটি আরো শক্তিশালী হয়ে আসে হাদীছের অবশিষ্ট অংশে হতে - “ যয়নব বিনতে জাহশ বললেন - “ তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রসুল সাঃ আমাদের মাঝে সৎ ও সত্যনিষ্ঠ লোকেরা বেঁচে থাকতেও কি আমরা ধ্বংস হয়ে যাবো?”। তিনি জবাব দিলেন “হ্যাঁ”, যখন ঘৃণ্য ও গুনাহর কার্যকলাপ অতিমাত্রায় বেড়ে যাবে”। হাদীছের এই বক্তব্য ইয়াজুজ মাজুজের আবির্ভাবের সময় মানচিত্র প্রদান করে। বর্তমান কালকে মাঝখানে ধরে আমরা পূর্ব ও পরের সময় নিয়ে ভাবতে পারি।
বর্তমানে ঘৃণ্য ও গুনাহের চিত্রের অংশ হিসেবে বলা যায় লেসবিয়ান (Lesbian) ও হোমোসেক্সের (Homosex) মত ঘৃণ্য জগন্য যৌনচরিত্র এখন বিশ্বের বিভিন্ন সরকারের আইন দ্বারা সমর্থিত এবং সমাজে গ্রহণযোগ্য সামাজিক সম্পর্ক। এ যুগ অবশ্যই ইয়াজুজ মাজুজের ‘ফ্যাসাদ-বন্যার যুগ। ’
সুতরাং প্রস্তাবিত হাদীছে ইয়াজুজ মাজুজের সী অব গ্যালিলি উপকন্ঠে পৌঁছা ও পানি শোষণ করাটি হযরত ঈসা আঃ এর যুগ নয় - বরং বর্তমান যুগ ও তার কিছু পূর্বের সময়ের প্রতি এর ইঙ্গিত প্রসারিত। ইয়াজুজ মাজুজ কি পানি “চুমুক” দিয়ে চুষে নেবে? মূলত সমস্ত পৃথিবী জুড়ে মুসলমানদের সুবিশাল অংশ এমনিভাবে বিশ্বাস করে। কিন্তু তার এমন চরিত্র থাকার সুযোগ নেই এই কারণে যে ইয়াজুজ মাজুজ মানুষের জাতি; ওরা অতিপ্রাকৃতিক জীব বা দানব নয়।
প্রকৃতপক্ষে হাদীছের ইঙ্গিত অন্য রকম। ইয়াজুজ মাজুজের আত্মপ্রকাশ ঘটবে “সী অব গ্যালিলির” অববাহিকায়। সী অব গ্যালিলি বা সী অব তাইবিরিস কিংবা লেক কিনারেত কিংবা বুখাইরাতুত্ তারাবিয়া বর্তমান উত্তর পূর্ব ইসরাঈলে অবস্থিত সুবিশাল হ্রদ। দৈর্ঘ্যে ২১ কিঃ মিঃ এবং প্রস্থে ১২ কিঃ মিঃ এবং আয়তনে ১৬৬ বর্গ কিঃ মিঃ, সমুদ্রতল হতে তা’ ২১২ মিঃ নিচে অবস্থিত। গভীরতম স্থানের গভীরতা ৪৮ মিটার বা ১৫০ ফুট।
সমুদ্রতলের এতটা নিচে অবস্থিত থাকা সত্ত্বেও বিস্ময়করভাবে এই হ্রদ শুকিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন।
মূলত ইসরাঈল সৃষ্টি হবার পর এই হ্রদের পানিকে তারা যথেচ্ছায় ব্যবহার করছে বিশেষভাবে কৃষি ও শিল্প কারখানায়। বাইবেলের নতুন নিয়মে এই সী অব গ্যালিলি-র ঐতিহাসিক মর্ঝাদা রয়েছে। যীশু খৃষ্ট এই সী অব গ্যালিলির অববাহিকায় পবিত্র ভূমি ও অন্যান্য স্থানে ধর্ম প্রচার করে গেছেন এবং কথিত রয়েছে যে তিনি এই সুবিশাল হ্রদ হেঁটে পার হয়েছেন পানির উপর দিয়ে।
ইসরাঈল, প্যালেষ্টাইন ও জর্ডান - সকলেই এই সী অব গ্যালিলি-র ওপর সার্বিকভাবে নির্ভরশীল।
বর্তমানে সী অব গ্যালিলির মাত্রা ইতিহাসের সকল রেকর্ড হতে কম। Uri Saguy, [Chairman of Mekorot, the National Water Company Board of the State of Israel]) একটি সাম্প্রতিক বোর্ড মিটিং-এ যে-বক্তব্য রাখেন তাতে সী অব গ্যালিলির পানি-মওজুদ চিত্রটি ফুটে উঠে - “The country’s water resources are on the verge of catastrophe and the government is not doing enough to avert the crisis” । দেশের পানি সম্পদ বলতে তিনি সী অব গ্যালিলির কথাই বিশেষভাবে বলেছেন। হ্রদটির পানির মওজুদ এতটা নেমে এসেছে যে পানি কর্তৃপক্ষ Mekorot পাম্পের ব্যবহার বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছে এ জন্য যে এই উচ্চতায় বসানো পাম্পগুলো আর কাজ করার যোগ্যতা রাখে না। এই পাম্প দ্বারা সী অব গ্যালিলি হতে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে পানি প্রেরণ করা হতো কলকারখানা ও কৃষিকাজের জন্য।
ইসরাঈল সরকার নির্বিচারে এই পানিকে অপব্যয় করেছে (চুষে নিচ্ছে)। এই পানির অপব্যয় দ্বারা সী অব গ্যালিলিকে শুকিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়াটিই হাদীছে প্রস্তাবিত হয়েছে - “তাদের প্রথম দলটি ইসরাঈলের তাইবিরিয়াস সাগরের পার্শ্ব দিয়ে গমন করবে এবং পানি চুষে নেবে” এ হাদীছ ইয়াজুজ মাজুজের প্রথম উন্মেষ ও উৎসকে চিহ্ণিত করে। ‘ইয়াজুজ মাজুজ’ কে বা কারা, তাদের চরিত্র, তাদের অবস্থানিক স্থান ইত্যাদি সবই নির্ণীত হয়ে যায়। বর্তমান ‘ইসরাঈল’ এই হাদীছে উন্মুক্ত হয়ে প্রকাশ পায়।
সমুদ্র তলের ২১২ মিটার নিচে অবস্থিত সুবিশাল হ্রদ সী অব গ্যালিলি পৃথিবীর সব নিয়ম-কানুনের বিপরীতে শুকিয়ে যাচ্ছে তাদের অন্যায় পানি সেচ করে নেয়ার ফলশ্রুতিতে।
এই লেক কিনারেত সাক্ষী দেয় - আমরা এখন ইয়াজুজ মাজুজের পরিচয় জানি।
সী অব গ্যালিলি’র পানির উচ্চতা এখন কতটা?
Yitzhak Gal, লেক কিনারেত কর্তৃপক্ষ, ঘোষণা দেন - From research we have carriedout this is the lowest level in the lake in the past 150 years. We also checked archaeological data as far back as the Roman period and it appears that the lake has never been as depleted as it is today.” -
আমাদের গবেষণালব্ধ হতে নিশ্চিত হয়েছি যে বিগত ১৫০ বছরের মধ্যে সী অব গ্যালিলির পানি-মওজুদ বর্তমানে সবচাইতে কম। আমরা প্রত্নতাত্ত্বিক সূত্রসমূহও পরীক্ষা করেছি- রোমানদের সময় হতে এ পর্যন্ত পানি মওজুদ হ্রাসের রেকর্ড এ সময়েই সবচেয়ে বেশী।
লেক কিনারেত ক্রমে ক্রমে শুকিয়ে যাচ্ছে - এটাই সুস্পষ্ট তথ্য। Saguy সাবধান করে দেয় - “ যদি শীঘ্রই (সরকারী) নীতিতে মৌলিক পরিবর্তন না-আনা হয়, তবে অনতিবিলম্বে জরুরী প্রয়োজন মিটানোর পানি পাওয়া দুষ্কর হবে”।
লেক কিনারেত কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান Zvi Orenberg বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘ভয়ানক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন - ‘যদি আমরা অনেক বৃষ্টির পানি না-পাই, তবে এটি হবে এক মহা দুর্ঘটনা। (লেক কিনারেতের পানি বৃদ্ধির জন্য) সকলেই বৃষ্টির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন এবং প্রার্থনাও করছেন। লেক কিনারেত ইতোমধ্যে লবণাক্ততায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছে এবং খুবই অল্প পানির উচ্চতার কারণে শেওলা (Fungus/moss) দ্বারা ঢেকে গেছে। লেক কিনারেত শুকিয়ে যাচ্ছে - একটি সুনির্দিষ্ট সূত্র যা’ দ্বারা ইয়াজুজ মাজুজ এবং বর্তমানকালের কাঠামোকে সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায়।
তবে হাদীছটিতে ‘পানি চুষে নেয়ার’ যে উপমাটি দ্বারা ইয়াজুজ মাজুজকে সনাক্ত করার পদ্ধতি প্রদান করা হয়েছে - তা’ সমভাবে সারা পৃথিবীতে ইয়াজুজ মাজুজের অনুসারীগণ বা “ আহলে ইয়াজুজ মাজুজের ” পরিচয় প্রদান করে। বর্তমান পৃথিবীতে যে কয়টি সংকট প্রকটতর তার একটি হলো সুস্বাদু বিশুদ্ধ পানি। কোটি কোটি মানুষ এই বিশুদ্ধ পানি হতে বঞ্চিত হবার কারণে নিরন্তর দুঃখভোগ করে থাকে। অথচ পৃথিবীর মানুষের এক উল্লেখযোগ্য অংশ পানি ব্যবহারে মাত্রাতিরিক্ত অপচয় করে। বর্তমান সভ্য জগতে ফ্লাশিং ওয়াটার যা’ টয়লেট পরিষ্কারের জন্য ব্যবহৃত হয়, তা’ সামগ্রিকভাবে ব্যবহার্য পানির প্রায় ত্রিশ হতে পঞ্চাশ গুণ।
‘শাওয়ারে’ গোসল প্রবর্তন করার ফলে এই পানির অপব্যয়ের আরো একটি মাত্রা সংযোজিত হযেছে। এই মাত্রাটি হট-বাথ দ্বারা আরো বিপুলভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তা’ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে ওয়াশিং মেশিনে কাপড় ধৌত করা এবং হাঁড়ি-পাতিল ধৌত করার ডিশ ওয়াশারের ব্যবহারে। আহলে ইয়াজুজ মাজুজের ব্যবহার মুসলমান চরিত্রেও প্রচন্ডভাবে ছায়াপাত করেছে। মুসলমানদের নবী (সাঃ) নির্দেশ দিয়ে গেছেন - “ প্রবাহমান নদীর পার্শ্বে বসেও এক ফোঁটা পানির অপচয় করো না” - এই জন্য যে ‘পানি’ হলো শ্রেষ্ঠ নিয়ামত।
কিন্তু মুসলমান এখন অজুর সুন্নত বাদ দিয়ে পানির টেপ ব্যবহার করছে। এমন একটি অজুর জন্য যে পরিমাণ পানির অপব্যয় ঘটে - তা’ সাধারণত সুন্নত অনুগামী অজুর দশ বিশ গুণ বেশী। মুসলমান নামাজ সম্পন্ন করার মত মৌলিক কর্তব্য পালনের বিষয়ে আহলে ইয়াজুজ মাজুজের চরিত্রে প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমান দুনিয়াতে এখন ইয়াজুজ মাজুজের স্বভাবে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আহলে ইয়াজুজ মাজুজের সৃষ্টি হচ্ছে, যাদের মধ্যে মুসলমানদের একটি অংশ এবং সুবিশাল সংখ্যায়!
বামেঃ অজুতে পানির অপচয়। ডানেঃ অজুর সুন্নত তরিকা।
প্রথমে উল্লিখিত হাদীছের শেষ অংশ “উটের গলা সম্পন্ন” পাখির কথা বলা হয়েছে যার প্রাকৃতিক উদাহরণ বর্তমান। ডাইনোসরের মধ্যে বিরাট প্রজাতির পাখি তারই একটি সম্ভাব্যতার উদাহরণ। ডাইনোসর প্রজাতি একটি গল্পের মধ্যেই থাকতো যদি বিজ্ঞানীরা তাদের দেহের অস্থিকঙ্কাল আবিষ্কার না-করতে পারতো। “ উহারা কি লক্ষ্য করে না আল্লাহ কিভাবে সৃষ্টিকে অস্তিত্বে আনয়ন করেন? অতঃপর পুনরায় সৃষ্টি করেন? ইহাতো আল্লার জন্য সহজ” (২৯:১৯)। যে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়েছে - তাদেরি সমগোত্রীয় একটি পাখি হয়তো আল্লাহ্ আবার সৃষ্টি করবেন।
কথাটি শুনতে গ্রহণযোগ্য মনে হয় না। কিন্তু যে যুক্তিতে মানুষ এবং অপরাপর জীবজন্তুর পৃথিবীতে অবস্থান, তেমনি যুক্তিতে সৃষ্টি হতে পারে সেই প্রজাতির পাখি যারা দুনিয়াজোড়া মৃত ইয়াজুজ মাজুজ ও আহ্লে ইয়াজুজ মাজুজকে সরিয়ে নেবে। বিশেষভাবে আল্লাহ্ তার নবী হযরত ঈসা আঃ এর পারিপার্শ্বিকতাকে হয়তোবা এভাবে দোষ-মুক্ত করবেন। অলৌকিকতাই হবে সে সময়ের বৈশিষ্ট্য।
চলবে …….
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।