আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাধ্যগত অন্তুর কথা শোনা ... অতঃপর ...

এই ব্লগের সব লেখা সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত আমার উপরে অনেকেই ক্ষ্যাপা ... কারনটা বড় কিছু না ... তাদের সকলের অভিযোগ - আমি নাকি কথা শুনি না ... নিজের মন মত চলি ... আর এটাই নাকি সব সমস্যার মূল ... এবার দেশে গিয়ে এই কথাটাই বেশ ক'জন কাছের মানুষদের মুখে বার বার শোনার পর ঠিক করলাম ... নাহ ! ক'টা দিন সবার সব কথা শুনেই দেখি কি হয় ... অতঃপর ----- সকাল সকাল আব্বু আমার মতি গতি ভালো দেখে বললেন -- যাও বাজার থেকে বড় দেখে মাছ কিনে আনো ... শুনে তো আমার চোখ আকাশে উঠে গেল ... আরে , আমি আসলাম ক'দিন বেড়ানোর জন্য আর আমাকে পাঠাচ্ছে বাজারে ? তাও এমন একটা জিনিস কিনতে যা কিনা আমি একেবারেই খাই না আর জীবনে কিনি ও নাই ... মনে মনে প্রচন্ড গতির না উত্তর নির্গত হলেও মুখে আচ্ছা বলে সোজা চলে গেলাম বাজারে ... মাছের বাজারে ঢুকতেই উটকো গন্ধ ( আমি কাঁচা মাছের গন্ধ একেবারেই সহ্য করতে পারি না) আর হরেক রকম অজানা মাছের ভীড়ে নিজেকে কেমন জানি অসহায় হয়ে পড়ে শেষ মেষ কোন কিছু খুজে না পেয়ে গলদা চিংড়ী কিনে সোজা বাসায় এসে হাজির হতেই আব্বুর পিন খাইলাম -- দেখসো দেখসো , অন্তু খুজে পেতে ঠিকই তার পছন্দের জিনিস , যেটা শুধু ও বেশী খায় সেইটা নিয়ে হাজির হইসে আব্বুর এই কথা শুনে মনটা খারাপ ই হয়ে গেল , যাহ ! ভাল হওয়ায় প্রথম চেষ্টা টা এমন ভাবে বুমেরাং করবে ভাবতেই পারিনি ... যাই হোক , ক'দিন পরে আব্বু বললো -- চলো খুলনা যাই , আমি ও বললাম - চলেন যাই ... দু জন মিলে সোজা খুলনা হাজির হয়ে গেলাম ... এক দিনে কাজ শেষ করে ফেরার পথে বাসে ঢুকেই খেলাম ধাক্কা ... সীটের উপরের বক্সে যেখানে আমরা নিজেদের ব্যাগ রাখবো সেখানে দেখি কেউ একজন অনেকগুলো মিষ্টির বাক্স রেখেছে ... এখন আমরা কৈ রাখি ? .... পিছনের দিকের যাত্রীকে বলে তাদের মাথার উপর আমার ব্যাগ রাখতে রাখতে আমার পাশের সীটের রাশভারী লোকটাকে জিজ্ঞেস করলাম -- মিষ্টির প্যাকেট গুলো কি আপনার ? ওগুলো আপনার মাথায় উপরের যায়গাতে রাখলে ভালো হতো না ? .... উনি বেশ গুরুগম্ভীর ভাবে জবাব দিলেন , ঢাকায় শশুরবাড়ী যাচ্ছি , এপাশের জায়গাটা ফুল হয়ে গিয়েছে দেখেই ওপাশে রেখেছি ... আমি কিছু একটা বলতে যাবো এমন সময় আব্বু বললেন -- থাক উনাকে আর কিছু বলো না ... আমি ও নিরব হয়ে গেলাম ... ড্রাইভার পুরাই উরাধুরা টাইপ বাসা চালায় , একবার ডানে যায় তো একবার বামে , কারো দেখি সেদিক খেয়াল নেই ... চারিদিক প্রায় অন্ধকার, এর মাঝে টিভিতে বেশ হাসির একটা নাটক দেখাচ্ছিলো ... হঠাৎ দেখি কোথা থেকে উড়ে এসে দুইটা মিষ্টির বাক্স আমার কোলে এসে পড়েছে ... আড়-চোখে তাকিয়ে দেখি পাশের সীটের মানুষটার উপরের বক্সের ডালাটা খুলে গিয়েছে আর সেখান থেকে মিষ্টির বক্স পড়েছে ... একবার মনে হলো তাকে কিছু বলি , কিন্তু আমার তো চুপ থাকার কথা ... তাই চুপচাপ মিষ্টির বক্স টা তার পায়ের পাশে রেখে নাটকে মনোযোগ দিলাম ... একটু পরেই হৈ হুল্লোড় শুরু ... বাস এর পর যখনই একটু একে-বেকে গিয়েছে হুড়মুড় করে উপর থেকে আরো কয়েকটা বক্স পড়বি তো পড় সোজা বেচারার মাথায় ..... তাড়াহুড়ো করে দাড়িয়ে উপরের ডালাটা বন্ধ করতে যেতেই জামাই বাবু বুঝলেন ততক্ষনে আরেক কাহিনী তার পায়ের নীচে ঘটে গিয়েছে ... ঢাকায় ফিরেই আপুর বাসায় ডাইনিং টেবিলে বসতেই সে এক বক্স ছানার মিষ্টি সামনে দিয়ে বললো -- ভাইয়া তুমি তো অনেক পছন্দ করো তাই আনিয়েছি , একটু পরে সবাই মিলে খাবো , আচ্ছা ? ছানার মিষ্টি আমি আর আমার বড় ভাগ্নী দুইজনেরই অসম্ভব প্রিয় , আমাদের সামনে মিষ্টি থাকবে আর আমরা খাবো না এমনটা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না ... তাই রান্না ঘরে যাওয়ার সময় আপুনি বলে গেল .... তুমি ( আমার ভাগ্নী) কিন্তু কালকে অনেক খাইসো আজকে তুমি একটাও খাবা না , আর আমাকে বললো -- তুমি কিন্তু আমি না আসা পর্যন্ত একটাও ধরবা না .... আমরা দুজন একেবারে সুবোধ এর মত মাথা দুলিয়ে হ্যা বলতেই ও চলে গেল রান্না ঘরে ... আর আমি ভাগ্নীকে বললাম -- এমন বড় বড় ছানার মিষ্টি সামনে থাকলে কেউ না খেয়ে থাকতে পারে ? ... ভাগ্নী বলে -- মামা কাল আমি একলাই হাফ প্যাকেট সাবাড় করেছি বলে আমায় বকা দিয়েছে , এইটা কি ঠিক বলো ? ... অতঃপর কিছুক্ষন দুজনের চোখা-চোখি কথপোকথনের পর সিদ্ধান্ত নেয়া হলো -- কিছু একটা করা চাই .... সুতরাং শুরু হলো মামা-ভাগ্নীর হাত-মুখের কম্বাইন অভিযান .... কিছুক্ষন পর আপুনি টেবিলে এসে দেখে মিষ্টির বাক্স প্রায় খালি ... আর আমরা চুপচাপ ভালো মানুষের মত বসে আছি ... মুহুর্তের মধ্যে হুংকার দিয়ে আপুনি বলে উঠলো --- এই কাজটা কে করসে এক্ষুনি বলো --- সাথে সাথে আমার উত্তর -- আমি কিন্তু একটা মিষ্টিও ধরি নাই আর আমার ভাগ্নীর উত্তর -- আম্মু আমি একটা মিষ্টিও খাইনি  

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।