একজন নির্বোধের বয়ান শিফাতের মনে প্রেম ছিল। অদৃশ্য প্রেম। কিন্তু ভয় ছিলো ৯৯% দৃশ্যমান। কোন কালেই সে ‘ভয়কে জয়’ করতে পারেনি। আমার ভালোবাসাকে গলা টিপে টিপে হত্যা করেছে শিফাতের ভয় নামক জুজুটা।
সোজা কথা বলা চলে, ভয়ের চোটেই প্রেমটায় জট লেগে গেল। একদিন সাহসের ট্যাবলেট খেয়ে ওর সামনে দাঁড়ালাম-
-মেয়ে তোমাকে আমি ভালোবাসি, এই কথাটা তোমার জানা দরকার।
-সোহাগ ভাই!!! আপনি কি বলেন? আপনার ভয় নাই?
-ভালোবাসায় কিসের ভয় শিফাত?
-আমার তো শুনেই ভয় করছে। আববা জানলে তো আমি শেষ!
-এখনই তোমার আব্বা জানবে কেমন করে? তুমি না বললেই হল।
-কি বলেন? আব্বা তো আমার মুখ দেখেই বুঝে ফেলবে! আপনি আমাকে প্রেম-ভালোবাসার কথা বলেছেন।
-তোমার আব্বার কথা পরে, তুমি আমাকে ভালোবাস কিনা বল?
-ভালো তো আমি সেই কবে থেকেই বাসি।
-তাহলে আর ভয় কি? ভালোবাসায় ভয়-ডর থাকতে নেই মেয়ে।
শিফাতের সহজ উত্তরের পর। গোলাপী পাখায় ভর করে উড়ছি। ওকে নিয়ে একের পর এক প্লান করছি।
কাল দেখা হলে কি কি বলব?
-এই শোন, শিফাত তুমি আমাকে প্রতিদিন একটি করে চিঠি লিখবে কেমন?
-কি বলেন? ভয়েই আমি কলম ধরতে পারবো না, লেখা তো পরে..। আর আব্বা যদি...
-ঠিক আছে চিঠি লেখার দরকার নেই। কলেজ থেকে আমরা গিলাতলা ক্যান্টনমেন্ট চিড়িয়াখানার পার্কে যাব।
-ওরে বাবা, আমি যাব না। আমি কোনদিন কোথাও যাইনি।
শেষ পর্যন্ত অনেক বলেকয়ে, টেনেটুনে একপ্রকার বলপ্রয়োগে ‘উহাকে নিয়া পার্কে হাজির হইলাম । ’ কিন্তু মহারাণী পার্কের গেটে বসে গো ধরে দাঁড়িয়ে রইল, ‘আমি আর এক পাও যাবনা। বাড়ি ফিরে যাব। ’ পরে যাও পার্কে ঢুকল কিন্তু একটা কথাও আমার সাথে বলল না। ঐ যে তার মনে ভয় ছিল।
তারপরও নাকি সে আমাকে ভালবাসে। এরপর, সে বাসায় যাওয়ার পরে খবর পেলাম, তার বাবা নাকি পার্কে আসার কথা জেনে গেছে। পরের দিন...
-তুমি না বললে তোমার বাপ কি করে জানবে? কে তাকে বলতে যাবে বল?
-আমিইই বলে দিয়েছে। কেউ যদি বলে দেয়? যাতে আমার দোষ না হয়, তাই...
-আজব। তুমি নিজ থেকে বলতে গেলে কেন?
-আরে থাক তাতে কিছু হবে না।
এই প্রথম শিফাতের কথায় ভরসা পেলাম। শেষে ওকে বললাম,
-তোমাকে বিয়ে করতে চাই। তোমার বাসায় প্রস্তাব নিয়ে যাব?
-না না আপনাকে বলতে হবে না। আমি বড় আপুকে তোমার কথা বলব। আপুই আব্বাকে বলবে।
এই প্রথম শিফাত আমাকে তুমি করে বলেছে।
ঠিকই একদিন শিফাতের আপু আমাদের বাসায় হাজির। উদ্দেশ্য, আমার বাসা ও পরিবারকে দেখা। রাতে ওর সাথে মোবাইলে কথা বলে সুসংবাদটা শোনা।
-তোমার আপু বাসায় গিয়ে কি বলল?
-হুম তোমার মাকে আপু’র খুব ভাল লেগেছে।
পেয়ারা গাছটাও তার মনে ধরেছে। তোমাদের পেয়ারা নাকি অনেক মিষ্টি। চারটা পেয়ারা নিয়েও এসেছে।
-ধুর, পেয়ারার কথা কে শুনতে চেয়েছে। বিয়ের কথা কি বলল?
-বাসার সবাই রাজি।
আমার কাছে আব্বা সরাসরি শুনতে চেয়েছে...
-হ্যালো শিফাত, চুপ করে আছো কেন?
-আব্বা আমাকে বলেছে, ‘আমি কলেজে গিয়ে প্রেম-ভালোবাসা করলাম কখন? আবার কোন সাহসে নিজের বিয়ের কথা নিজেই বলছি। আমার কি কোন লজ্জা নেই?’
-তারপর?
-আমার কাছে জানতে চেয়েছে, ‘আমি বিয়েতে রাজি কিনা?’
-তুমি কি বললা?
-আমি কোন কথা বলিনি। চুপ করে ছিলাম। আব্বা মেজাজ খারাপ করে ফেললেন। এখন কেন কথা বলছি না, দেখে মারতে এলেন।
-তোমাকে তো মারাই উচিত। শেষে কি হল?
-আমি বলেছি, ‘আমি বিয়ে করবো না। ’
ফোনের লাইনটা কেটে যায়। পরে শুনি, ভয়ে নাকি অমনটা বলেছিল। বাসার সবার কাছে বলে,‘ আমি বিয়ে করব।
’ কিন্তু বাবার কাছে বলে, ‘আমি বিয়ে করব না। ’ কারণ একটাই, ভয়। শেষে ওর বাবা বলে, ‘কই, মেয়ে নিজের মুখে বলল, সে বিয়ে করবে না। তোমরা বলছ, বিয়ে করবে। ’ সেদিনের মত বিয়েটা ভেঙ্গে গেল।
-তুমি তোমার বাবাকে সত্যি কথাটা বললে না কেন শিফাত?
-ভয়ে বলতে পারিনি, বিশ্বাস কর।
-তোমার ভয়ের গুষ্টিকিলাই।
শিফাতের বাবা ঘোষনা দিয়েছেন, ‘যেহেতু মেয়ে বিয়ে করতে চায় না। সেহেতু সে আবার নিয়মিত পড়াশুনা করতে কলেজে যাবে। পড়াশুনা শেষ করার পরেই বিয়ের কথা ভাবা যাবে।
’ তারপর একদিন শিফাতের সাথে দেখা।
-শিফাত কি হল ব্যাপারটা? তুমি ফাজলামি করলা কেন?
-ও মা ফাজলামি করলাম কখন? আমি তো বাবার ভয়েই...। তাই পড়াশুনা শেষ করেই বিয়ে করব। আপনাকে ততোদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। করবেন না অপেক্ষা?
-না।
সেইদিনের ঘটনার পর একটি বছর পেরিয়ে গেছে। একদিন পথে যেতে দেখি, শিফাত এক শক্তিশালী লোকের পাশাপাশি হাঁটছে। লোকটা তার বাম হাত দিয়ে শিফাতের ডান হাতটা ধরছে। একটু পর আবার হাতটা ছাড়িয়েও নিচ্ছে। বুঝতে পারা গেল না, লোকটা ভয়ে হাত ছেড়ে দিচ্ছে? নাকি শিফাতই ভয়ে হাত ছাড়িয়ে নিচ্ছে? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।