ঘুম শেষে বালিশের ডান পাশে রাখা মোবাইলটা হাতে নিয়ে দীপা বহু কষ্টে চোখটা খুলে দেখে অনেকগুলো মেসেজ এসে জমা হয়ে আছে মেসেজ বক্সে। কতক্ষণ ঘুমিয়েছে সে স্মরণ করার চেষ্টা করে। এখন বিকেল ৫টা। তার মানে ২ ঘন্টা ঘুমিয়েছে সে। কে দিতে পারে এসব মেসেজ? জয়ন্ত ছাড়া আর কেইবা।
প্রায়ই সে অমন পাগলামী করে। পুরা পাগল একটা! এযুগে এমন ছেলে হয় বুঝি! দীপা একে একে মেসেজ পড়া শুরু করে।
১. দীপা, আজ তোমাদের কলেজে দীপাবলী অনুষ্ঠান। আমার পাগলামীতে তুমি বাধ্য হয়েছ প্রোগ্রামে না গিয়ে আমার প্রতি তোমার ভালবাসার প্রমান দিতে। আমি তোমাকে বলেছি, আজ তোমাদের আনন্দ ঊৎসবে না গিয়ে আমাকে প্রমান দিতে যে তুমি আমার জন্য সব আনন্দ ত্যাগ করতে পার।
তাই তুমি আজ না যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছ।
২. পড়াশুনার জন্য আমাদের অবস্থানগত দূরত্ব এখন অনেক। তবু আমি চাই মনের দিক থেকে আমরা সবসময় কাছাকাছি থাকি। যেমনটা আগে ছিলাম। কিন্তু তুমি ওখানে পড়তে যেয়ে অনেক বদলে গেছ।
তুমি স্বীকার না করলেও এখন আমি বুঝি, তুমি কেমন জানি হারিয়ে যাচ্ছ আমার থেকে। অনেক দূরে চলে যাচ্ছ। সারাক্ষণ ব্যস্ত থাক তুমি। তোমার পড়াশোনা নিয়ে, তোমার ফ্রে›ডসদের নিয়ে। আমি একটু সময় নিয়ে তোমার সাথে কথা বলতে চাইলে তুমি তোমার পড়ার কথা বলো, পরীক্ষার কথা বলো।
রাতে আমার সাথে কথা বলতে বলতে হঠাৎ ঘুমিয়ে পড় তুমি। সকালে বল ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলে। অথচ আগে এমন হতো না।
৩. জানো? আমি সারাক্ষণ তোমার কথা ভাবি। যখন যে কাজ করি না কেন, তুমি সারাক্ষণ আমার মনের মধ্যে থাক।
টেনশনে থাকি, তোমার পড়া হচ্ছে কিনা। অতো দূরে একাকী হোস্টেলে থাক তুমি। ঠিকমতো খেয়েছ কিনা। ভোর বেলা তোমাকে ডেকে দিব বলে রাতে ঘন্টায় ঘন্টায় ঘুম ভেঙে যায় আমার। নিজের পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারি না আমি।
আসছে পরীক্ষাটায় মনে হয় পাশ করা হবে না আমার।
৪. পরীক্ষায় পাশ না করি, কোন দু:খ নাই আমার। শুধু তুমি যদি একটিবার আমার পরীক্ষার কথা জিজ্ঞেস করতে। একটিবার যদি জিজ্ঞেস করতে আমি খেয়েছি কিনা। আমার কোন কষ্টই থাকতো না তবে।
৫. তোমার অবহেলা, তোমার ব্যস্ততা আমাকে একধরনের ইনসিকিউরড অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। মেকবেথ বুঝেছিল, নিরাপত্তার নিশ্চয়তা মানুষের সবচেয়ে বড় শত্র“। আমি বুঝেছি, প্রেমের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ঠিক উল্টো। তাইতো এখন আমি শুধু তোমার সাথে ঝগড়া করি। তোমার অবহেলা আমি সহ্য করতে পারি না বলেই ঝগড়া করি, তোমাকে বকাঝকা করি।
আর তুমি বলো, তোমার সাথে এরকম আচরণ করি বলেই তুমি আগের মতো আমাকে আর শতভাগ দিতে পার না! ঠিক যেন, ডিম আগে এসেছে , না মুরগী আগে এসেছে - এ বিষয়ের মতো বিতর্ক দুজনের।
৬. তুমি ওখানে যাওয়ার পর থেকে আমি কোন আনন্দ করতে পারি না। আমার খুব বাঁধে। মনে হয়, তোমাকে ফেলে আমি আনন্দ করব একা একা, এ কেমন কথা! তাই আমি এখন একাই থাকি বেশির ভাগ সময়। যদি জানতে পাই তুমি সকালে না খেয়ে কলেজে গিয়েছ, আমিও নাস্তা করি না ঐ সকালটা।
তোমাকে এ কথা বললেই বল, এঁ স্রেফ পাগলামী। তবে তো রিয়েলিস্টক যা না, তার সবটাই তো পাগলামী। প্রেমটাও তো তাই। ভবিষ্যতে একসাথে থাকা হবে কি হবে না, না জানার পর ও তো মানুষ প্রেমে পড়ে। আমাদের মূল ব্যপারটাইতো তবে পাগলামী।
৭. পাগলামী হলেও আমি জানি, বুঝতে পারি, আমার এ পাগলামীগুলা তুমি পছন্দ কর। তোমার ভাল লাগে। এ ভালোলাগাটুকু যদি আমিও চাই, তবে আমার অন্যায়টা কোথায়? ভালো লাগার এ অনুভূতি পাই না বলেই তো, তোমাকে বকা দেই, তোমাকে তোমার অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিভিন্ন কাজ করতে বাধ্য করতে চাই। এই যেমন আজ বলছি, তুমি যে আমাকে ভালবাস সে প্রমাণ দাও, আজ দীপাবলী অনুষ্ঠানে যেও না।
৮. জানি বাধ্য হয়ে কিছু কিছু কাজ যেমন করে করা থেকে বিরত থাক, আজও তেমনি হয়তো অনুষ্ঠানটিতে যাবে না তুমি।
তোমার মন খারাপ হওয়ার মতো একটি কাজ করে আমাকে ভালবাসার প্রমাণ দিবে তুমি। তোমার তীব্র ইচ্ছেটাকে দমিয়ে তুমি আমাকে খুশী করতে চাইবে।
৯. তোমার এ ত্যাগে আসলেই কি আমি খুশী হতে পারব? মন ভরে যাবে আমার? কাউকে জোর করে কিছু করিয়ে আসলেই কি সুখ পাওয়া যায়? তুমি ভাববে দীপাবলীতে না গিয়ে তুমি আমাকে অনেক সুখী করবে। আমি কি আসলেই তাই চাই? তুমি কি আমাকে বাধ্য করে এরকম আনন্দের অনুষ্ঠান থেকে আমাকে বঞ্চিত করো? তুমি নাস্তা না করলে, আমিও যে করি না, তুমি কি বাধ্য করো আমাকে? আমি তো চাই তুমিও আমার মতো মন থেকে করতে পারবে না কোন আনন্দ আমাকে ছাড়া। তখনই তো আমি তোমাকে জোর করে আনন্দ করতে, তোমার ভালো লাগার কাজগুলো করতে বলতে পারবো।
তোমার অনন্দ দেখে আমার আর কষ্ট হবে না তখন। তখন তুমিও আর মনে করতে পারবে না যে আমি তোমাকে বন্দী করে রেখে দিচ্ছি।
১০. তাই আমি আর জোর করে তোমার কাছ থেকে আনন্দ পেতে চাই না। আমি চাই না তুমি আজকের অনুষ্ঠানে না যাও। আমি চাই তুমি ঘুম থেকে উঠবে।
আর সবার মতো কমলা শাড়ী পড়বে। তারপর অনুষ্ঠান থেকে সর্বোচচ মজা আহরণ করবে।
১১. আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা কর না আর। আমি তোমার থেকে হারিয়ে যাচ্ছি। এ মেসেজটার ডেলিভারি রিপোট পৌছার সাথে সাথের্ আমার মোবাইলটা চিরতরে বন্ধ করে দিচ্ছি।
এভাবে জোর করে তোমাকে কিছু করতে বাধ্য করতে চাচ্ছি না আমি আর। এভাবে শর্ত দিয়ে, তোমার প্রেমের প্রমান পেতে চাইছি না আর। আমার মতো খারাপ মানুষটা আর তোমার সামনে দাড়াবে না। আমাকে ক্ষমা করে দিও তুমি। বাই।
.............
মেসেজগুলা পড়া শেষে দীপা রজত কে কল দিয়ে বলল, ১০ মিনিটের মধ্যে সে যেন এসে পল্টনের মোড় থেকে দীপাকে অনুষ্ঠানে নিয়ে যায়। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।