প্রতিদিন সকাল বেলা জহির সাহেবের পেপার পড়ার অভ্যাস। আজ পত্রিকার পাতায় চোখ খুলেই আগে হেড লাইনগুলো পড়ার পর একটা খবরের ওপর তাঁর দৃষ্টি পড়ল, “২০ বোতল ফেন্সিডিলসহ ফেন্সি কুইন মর্জিনা গ্রেফতার, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ২০ বোতল ফেন্সিডিলসহ ফেন্সিকুইন মর্জিনাকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃত মর্জিনা সে তাদের ফেন্সিডিল সরবরাহকারী হিসেবে জনৈক জাহিদের নাম বলেছে, জাহিদকে পুলিশ হন্য হয়ে খুঁজছে পুলিশের ধারণা জাহিদকে পেলে শহরে মাদক ব্যবসার রাঘব-বোয়ালদের মুখোশ উম্মোচিত হবে। ” খবরে পাশাপাশি দু’টা ছবি ছাপানো আছে একটা মর্জিনার এবং অপরটা জাহিদের, জহির সাহেব ভালভাবে নিরীক্ষা করলেন, হ্যাঁ সত্যিই তো জামালের ম্যানেজার জাহিদের ছবি। জহির সাহেবের মন সন্দেহের দোলায় দোলে উঠল।
তিনি জোরে বউমা বউমা বলে ডাকলেন, সঙ্গে সঙ্গে অনন্যা সামনে এসে দাঁড়াল, জি বাবা।
জহির সাহেব বললেন, নিউজটা পড়ে দেখ তো।
অনন্যা নিউজটা পড়ল এবং ছবি দু’টা দেখল জাহিদের ছবি সম্পর্কেও সে নিশ্চিত হলো। অনন্যার মুখ কালো মেঘে ঢেকে গেল। অনন্যা বুঝতে পারল নিশ্চয়ই কোন সমস্যা হয়েছে নইলে জামাল গতকাল রাতে এমন অস্বাভাবিক আচরণ করবে কেন? কিন্তু মুখে কিছু বলল না।
জহির সাহেব বললেন, বউমা জামালের ঘুম ভেঙ্গেছে।
না বাবা।
জহির সাহেব গম্ভীর স্বরে বললেন, ওর সঙ্গে কথা না বলা পর্যন্ত আমি বের হচ্ছি না, ও ঘুম থেকে উঠলে আমার সঙ্গে কথা বলতে বলবে এখন যাও।
জহির সাহেব আনমনা হয়ে পেপারের পাতা উল্টাতে থাকলেন। তাঁর মাথায় অনেক চিন্তা ঘুরপাক করছে।
জামাল ছোটবেলা থেকে ডানপিটে, চঞ্চল, একথা সত্য, ছাত্র জীবনেও ছিল বেপরোয়া কিন্তু ব্যবসা শুরু করার পর থেকে তার উত্তোরত্তর উন্নতিতে জহির সাহেব অনেক আগেই সন্দেহ করেছিলেন আজ বুঝি তাঁর ধারনাটা সত্য হলো। জামাল ঘুম থেকে উঠে জহির সাহেবের সামনে এসে দাঁড়াল।
জামালের মুখের দিকে তাকিয়ে জহির সাহেব যেন চমকে উঠলেন, কিরে তোর এ অবস্থা কেন?
কিছু না বাবা।
জামাল সোফায় বসলে জহির সাহেব বললেন, আজকের পেপারে একটা খবর বেরিয়েছে, দেখেছিস্?
না বাবা।
এই পড়ে দেখ্ বলে জহির সাহেব জামালের দিকে পেপারটা এগিয়ে দিলেন।
জামাল পেপারটা পড়ে চুপ করে বসে রইল।
জহির সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, এখন বুঝতে পাচ্ছি এত তাড়াতাড়ি তুই এত উন্নতি করলি কীভাবে?
জামাল প্রতিবাদ করে বলল, বাবা তুমি আমাকে ভুল বুঝছ জাহিদের ফেন্সিডিল ব্যবসার সঙ্গে আমি জড়িত না, সে যে ফেন্সিডিলের ব্যবসা করতো একথা আমি জানতাম না বাবা, জানলে অনেক আগেই আমি চাকরি থেকে বিদায় করে দিতাম। ও আমার সঙ্গে বেঈমানি করেছে, ও একটা বিশ্বাস ঘাতক, গাদ্দার।
জহির সাহেব জামালের কথা বিশ্বাস করলেন না, তিনি বললেন, তোর কর্মচারী কি করে তা তুই জানিস্ না? এটা বিশ্বাসযোগ্য কথা?
বাবা তুমিও পুলিশের মতো কথা বলছ?
পুলিশের মতো কেন? এটা খুব স্বাভাবিক কথা, পেপারে লিখেছে জাহিদকে ধরতে পারলে মাদক ব্যবসার রাঘব- বোয়ালদের মুখোশ উম্মোচিত হবে। তাহলে রাঘব-বোয়াল কারা?
সেটা পুলিশ বলতে পারবে।
পুলিশ বলতে পারবে আর তুই বলতে পারবি না, আমি আর তোর সঙ্গে তর্ক করতে চাই না। রাঘব-বোয়াল হিসেবে তোর নাম বেরিয়ে না আসুক এটাই আমি চাই। মনে রাখিস্ আমি কোন রাঘব-বোয়ালের বাবা হতে চাই না, বলে জহির সাহেব চলে গেলেন।
জামাল বাসা থেকে বের হয়ে অফিসের দিকে যাচ্ছিল, মোবাইলের রিং বেজে উঠল। জামাল মোবাইল রিসিভ করে বলল, হ্যালো বড়ভাই।
অপর পাশ থেকে মোস্তফা সাহেবের গম্ভীর কন্ঠস্বর ভেসে এলো, জামাল তুমি আমার বাসায় এসো তো।
জামাল মোবাইল অফ করে সোজা মোস্তফা সাহেবের বাসায় চলে গেল। মোস্তফা সাহেবের ড্রয়িংরুমে পাশাপাশি সোফায় বসে ছিলেন মোস্তফা সাহেব এবং বেলায়েত সাহেব জামালকে ঢুকতে দেখে গম্ভীর স্বরে বললেন, বসো জামাল।
জামাল সোফায় বসে দু’জনের মুখের দিকে তাকিয়ে শংকিত হয়ে পড়ল। জামাল, মোস্তফা সাহেব এবং বেলায়েত সাহেবের হাসিমাখা মুখ দেখেছিল কিন্তু গম্ভীর রাগান্বিত মুখ দেখেনি তাই আজ দু’জনের মুখের দিকে তাকিয়ে জামাল আঁতকে উঠল।
মোস্তফা সাহেব প্রথম জিজ্ঞেস করলেন, জামাল আজকের পেপার পড়েছ?
জি ভাই।
মাদক ব্যবসায় জাহিদের নাম বেরিয়ে এসেছে জাহিদ তোমার কর্মচারী, তোমার কর্মচারী মাদক ব্যবসায়ী হলে প্রসঙ্গক্রমে তোমার নাম চলে আসে।
কিন্তু বড়ভাই-
তুমি কী বলবে আমি বুঝছি। একটা কথা খেয়াল রাখো জাহিদ যদি পুলিশের কাছে ধরা পড়ে আর তোমার নাম বলে দেয় তবে কী হবে জানো?
জামাল অপরাধীর মতো মাথা নত করে নীরবে বসে রইল।
মোস্তফা সাহেব আবার বলতে শুরু করলেন, মাদক ব্যবসায় তোমার নাম বেরিয়ে এলে তুমি যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হবে, তেমনি দলের ভাবমূর্তি নিয়েও প্রশ্ন উঠবে।
বেলায়েত সাহেব জামাল সাহেবের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বললেন, সামনে নির্বাচন এ সময় এমন একটা দুর্ঘটনা দলের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে, জেলায় দলের বিপর্যয় হলে আমরা সেন্ট্রাল লিডারদের কাছে মুখ দেখাতে পারবো না।
জামাল সভয়ে বলল, বড়ভাই পুলিশ যদি জাহিদকে খুঁজে না পায় কিংবা জাহিদ যদি পুলিশের কাছে আমার নাম না বলে।
মোস্তফা সাহেব বললেন, পুলিশ যদি তাকে না পায় তবে কোন কথাই নেই, দুর্ভাগ্যক্রমে জাহিদ যদি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে তবে পুলিশের রিমাণ্ডে সব কথা বেরিয়ে পড়বে।
বড়ভাই আপনারা আমাকে হেল্প করুন।
বেলায়েত সাহেব বললেন, কী হেল্প করবো বলো?
আমার অফিসে পুলিশ এসেছিল জাহিদকে খুঁজতে, আমার কথা হলো পুলিশ জাহিদকে খুঁজবে কিন্তু আমার অফিসে পুলিশ যাওয়াটা আমার জন্য এবং দলের জন্য অপমানজনক।
মোস্তফা সাহেব বললেন, জামাল একটা কথা জেনে রাখো আগে আমাদের তদবিরে যেভাবে কাজ হতো এখন সেভাবে কাজ হবে না।
কেন?
বুঝ না সামনে ইলেকশন দলের ক্ষমতা শেষের দিকে এই মুহূর্তে যে কোন অফিসে টেলিফোন করলেই কাজ হবে এমন আশা করা যায় না। আবার যদি দল ক্ষমতায় আসে তবে তখন আমাদের কথায় কাজ হবে। একটা কথা খেয়াল রেখো জাহিদ পুলিশের হাতে ধরা পড়লে সর্বনাশ হবে।
জি বড়ভাই জাহিদ যেন পুলিশের হাতে ধরা না পড়ে আমি সে ব্যবস্থা করছি তবে আপনাদের সহযোগিতা আমার একান্ত প্রয়োজন।
চলবে..
গডফাদার-০১ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।