আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এটা একটা ভূতের গল্পও হতে পারতো!!

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! আমার ভাতিজাটা চরম বদ হয়েছে । একেবারে নাম্বার ওয়ান দুষ্টু । কারো কথা শোনে না । কাউকে দেখে ভয় পায় না । যা ইচ্ছা তাই করে ।

এবার ঈদের ছুটিতে বাড়িতে গিয়ে দেখি বাড়ির চেহারাই বদলে ফেলেছে । বাড়ির উঠান জুড়ে হাজার রকমের জিনিস পত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে । মাকে বললাম "এসব সরাচ্ছ না কেন" ? মা বলল "সরানোর উপায় আছে ? তোর ভাইয়ের ছেলে চিল্লিয়েপাল্লিয়ে একাকার করে ফেলবে" ! বাড়ির উঠানের মধ্যে হাটাও দুষ্কর হয়ে উঠেছে । সারা উঠান জুড়ে ভিডিও ক্যাসেটের ফিতা বেঁধে রেখেছে । দেখতেই যেন কেমন লাগছে ।

ছিড়তে গিয়েও ছিড়তে পারলাম না । ছোট বেলায় আমিও এরকম কত আকাম করেছি । সারা দিন অনেক জার্নি করে বাড়ি গিয়েছি শরীরটা বেশ ক্লান্ত ছিল । ফ্রেস হয়ে পেট ভরে খেয়ে নিলাম । তারপর একটা লম্বা ঘুম দিলাম ।

সন্ধ্যা হয়ে গেছিল । ভেবেছিলাম এই ঘুমেই রাত পার করে দেবো । কিন্তু রাত পার হল না । মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেল । মোবাইলে টাইম দেখলাম ।

আড়াইটা বেজে কিছু বেশি । এতো রাতে ঘুম কেন ভাঙ্গল বোঝার চেষ্টা করলাম । আমার ঘুম এমনিতে খুব বেশি । একবার ঘুমালে পুরো পার হয়ে যায় । তাহলে ঘুম কেন ভাঙ্গল ? কোন উত্তর পেলাম না ।

নিজে নিজে বললাম হয়তো বাধরুম চেপেছে । বাধরুমে যাওয়া দরকার । বিছানা থেকে নামলাম । ঘুমানোর আগে মা বলেছিল রাতের বেলা যেন বাইরে না বের হই । ভিতরের বাধরুমে যাই ।

সাপখোপে ভয় আছে । কিন্তু আমার কেন জানি বাইরের বাধরুম টাই বেশি পছন্দ । এটা আমার একেবারে নিজেস্ব । আর কেউ এটা ব্যবহার করে না এটা । আমি যখন বাড়িতে থাকি না তখন এটা তালা মারা থাকে ।

আর বাইরের বাধরুম বলতে যা বোঝায় এটা অতোটা দুরে না । আমার ঘরটার ঠিক জানলার পাশে । আর আমার ঘরটার একটা আলাদা দরজা আছে । বাড়ির মেইন দরজা বাদ দিয়েও আমার ঘর দিয়ে বাইরে বেরনো যায় । আর তাছাড়া ঘরের ভিতর যে দুইটা বাধরুম আছে তা বেশ দুরে ।

দুরে মানে আমার ঘর থেকে দুরে । এটা তো ভাইয়া দের রুমের সাথে এটাস্ট আর একটা বাবামার ঘরের পাশে । তাই আমি সব সময় বাইরের টাই ব্যবহার করি । বিছানা ছেড়ে নামি । চশমাটা পরতে গিয়েও পরি না ।

কোন দরকার আছে কি এখন চশমা পরার ? দরজা খুলতেই মনটা শান্তিতে ভরে গেল । চারিদিকে গাড় অন্ধকার । পুরো বাড়ি আধারে ডুবে আছে । বিল বেশি আসে বলে ঘুমানোর আগে সব লাইট গুলো অফ করে দেওয়া হয় । কেবল সিড়ি বারান্দার লাইটটা জ্বলে ।

আমাদের বাড়ি আর সবার বাড়ি থেকে একটু দুরে । বাড়ির শেষ সীমানার পর অল্প একটু খাস জমি তার পর থেকে একটা বিশাল বড় কাঁনা পুকুর । ডান দিকটাতে একজনের আম বাগান রয়েছে । আমবাগানটার পিছনে দুতিনটা বাড়ি আছে । তাও সব অন্ধকারে ডুবে আছে ।

কেবল একটা বাড়ি থেকে একটু আলো আসছে যা অন্ধকার দুর করা তো দুরের কথা আরো ঘন করছে । আর বাঁ দিকে যে দিকে বাথরুমটা রয়েছে তার পিছন থেকে বাশ ঝাড় উঠে গেছে । বাড়ির এই দিকটা সব ভয়ের । মা এই জন্যই আমাকে রাতের বেলা বাইরে বের হতে নিষেধ করে । কিন্তু ছোট বেলা থেকেই তো এমন পরিবেশে বড় আজ পর্যন্ত কোন অস্বাভাবিক কিছু চোখে পড়ে নি ।

কিন্তু আজ কেন জানি বুকের মধ্যে কু ডেকে উঠল । অনেক দিন বাড়িতে আসি নি তো বাড়ির এই অন্ধকার পরিবেশটা খানিকটা বেমানান লাগছে । একবার মনে হল বাইরে গিয়ে লাভ নাই । ভিতরের টাতেই যাই । কথাটা মনে হতেই নিজের মনেই হেসে উঠল ।

আমি বলছি না আমি চরম সাহসী কিন্তু আমি ভীতু না । বিনা কারনে আমি আজ পর্যন্ত কিছুতেই ভয় পাই নি । আমার কথা হল যতদিন না অশরীরি কোন কিছু আমি যত দিন না কিছু নিজের চোখে দেখবো ততদিন তাতে ভয় পাবার প্রশ্নই আসে না । যেদিন দেখবো সেদিন না হয় ভয় পাবো । আর কিছু না ভেবে বাথরুমের দিকে পা বাড়ালাম ।

বাথরুম থেকে বের হয়ে আমি খানিক হাটাহাটি করলাম । হঠাৎ‍ একটু যেন বাতাস প্রবাহিত আরাম্ভ করল । আর ঠিক তখনই একটা অদ্ভুদ আওয়াজ শুনতে পেলাম । আওয়াজ কেমন জানি অপরিচিত । স্বাভাবিক কোন আওয়াজ না ।

ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজ না । কারন ঐ আওয়াজ আমি খুব ভাল করে চিনি । আর বাশ ঝাড়ের কোন পাখি অথবা কোন পোকা মাকড়ের আওয়াজও না । আমি খানিকটা ইতস্তত করলাম । এরকম আওয়াজ তো আমার পরিচিত না ।

আওয়াজটা কেমন জানি । মনে হচ্ছিল কিছু একটা কোন কিছুর সাথে আটকে আছে । বাতাসে উড়ছে আর ঐ জায়গা থেকে ছোটার চেষ্টা করছে । আমার একটু একটু ভয় ভয় করতে লাগল । আমার আর হাটাহাটি করতে মন চাইলো না ।

দরজার দিকে পা বাড়ালাম । যখন দরজার কাছে পৌছে গেছি ঠিক তখন আমার চোখ গেল ডান দিকের আম বাগানটার দিকে । চারিদিকে ঘুরঘুটে অন্ধকার । যদিও আমার চোখে চশমা নাই তবুও আমি স্পষ্ট দেখলাম আম বাগানটার একটু সামনে গুচ্ছ গুচ্ছ কিছু আলো নড়া চড়া করছে । আগুনের দলা বলা যাবে না কারন আলো গুলো অতো উজ্জল না ।

বেশ নমনীয় । আর ঐ শব্দটা আসছে । আমি কিছুক্ষন নড়া চড়া করতে ভুলে গেলাম । তাহলে সত্যি সত্যিই কি আমি তাদের দেখা পেলাম ? আমি আরো একবার তাকিয়ে দেখলাম আলোটার দিকে । নাহ ! চোখের ভুল না ।

এখনও আলোর গুচ্ছগুলো নাচানাচি করছে । আমি লক্ষ্য করলাম আমার আসতে আসতে ভয় লাগা শুরু হয়েছে । বুকের মধ্যে একটা সুক্ষ আতংকের অনুভূতি অনুভব করছি । আর এখানে থাকা যাবে না । এক দৌড় দিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে গেলাম ।

টেবিলে রাখা পানির গ্লাসটা আগে খালি করলাম । বুকে হাত দিয়ে দেখি বুকটা তখনও লাফাচ্চে । বারবার মনে হচ্ছে কি দেখলাম ? সত্যি কি দেখলাম ? এই রকম হাজার টা প্রশ্ন মনের মধ্যে উকি দিতে লাগল । কিছুক্ষন পর ভয়টা একটু কমে এল । ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলাম যে কি দেখলাম ? বারবার মনে হতে লাগল যা দেখলাম ঠিক দেখলাম তো ! নাহ ! এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর না পেয়ে শান্তি নাই ।

দেখতেই হবে কি দেখলাম । চশমাটা পরে নিলাম । সাথে নিলাম টর্চ লাইট । তারপর আল্লাহর নাম নিয়ে দরজা খুললাম । প্রথমেই চোখ গেল ঐ আম বাগানের দিকে ।

ঐ তো এখনও আছে । একই জায়গায় আলোর গুচ্ছটা নড়াচড়া করছে । বুকের মধ্যে ভয়টা আমার উকি মারল । আল্লাহর নাম নিলাম । সত্যিই কি ঐ টা কিছু ? কোন জিন ? কিন্তু এতো জায়গা থাকতে বেটার আম গাছে এসে নাচানাচি করার দরকার কি ? এখন চশমা পরা আছে তাই আলোটা আরো পরিস্কার দেখা যাচ্ছে ।

সত্যি সত্যি দেখা যাচ্ছে । আর শব্দটাও আসতেছে । লাইট মারতে যাবো ঠিক তখনই আমি ব্যাপারটা ধরে ফেললাম । এতোক্ষনের আতংক মুহুর্তের মধ্যে গায়েব হয়ে গেল । আলোটার উপর টর্চের আলো ফেলে নিশ্চিত হলাম ।

সত্যিই কি গাধা আমি ! ঠিকঠাক মত না দেখে কি ভয়টাই পেলাম । শব্দের রহস্য: আমার ভাতিজা সারা বাড়ি জুড়ে যে ভিডিও ক্যাসেটের ফিতা বেঁধে রেখেছিল আওয়াজ টা ঐখান থেকে আসছিল । বাতাস হচ্ছিল আর সাথে সাথে ঐ শব্দটা হচ্ছিল । আর চারিদিকে সুনসান নিরবতা শব্দটাকে আরো ভৌতিক করে তুলেছিল । আলো রহস্য: এটার পেছনেও ঐ ভিডিও ক্যাসেটের ফিতাই দায়ী ।

আমাদের সিড়ি ঘরে যে লাইট টা জ্বলছিল সেইটাই ঐ ফিতা প্রতিফলিত হয়ে আসছিল । তাই ঐ গাঢ় আধারের মধ্যে আলো দেখা যাচ্ছিল । বাতাসে ফিতা নড়ছিল সেই সাথে আলোও নড়ছিল । আর আমি ভাবছিলাম কোন জিন বোধহয় ঐ আমগাছে নাচানাচি করতেছে । এসব দেখার পিছনে সব থেকে বড় হাত ছিল যে আমার চোখে চশমা ছিল না ।

তাই একটু দুরের জিনিস আমি স্পষ্ট দেখতে পাই নি । কেবল আলোটাই দেখেছি । আর ভয় পেয়েছি ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।