সত্য অথবা মিথ্যা দুটোই হতে পারে। বিশ্বাস করা আর না করা আপনার ব্যপার। একদিন দুইদিন করতে করতে শেষ পর্যন্ত এই বিশেষ দিনটা চলেই আসল। শুরু হয়ে গেল আমাকে বিদায় দেয়ার আয়োজন। সবাই যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে আর বেশি সময় নেই।
চলে যেতে হবে। অনেক তো হল এখানে। বাড়ি ভর্তি মানুষ। সবাই যার যার কাজে খুব ব্যস্ত। মাঝে মাঝে একটু উকি দিয়ে যাচ্ছে সবাই।
যেন চোখে চোখে রাখা। মা একবারও আসল না সামনে। সামনে পরলেই আর নিজেকে সামলে রাখা যাবে না। তাই যেন এই এড়িয়ে চলা। খুব একটা কেউ কথা বলছে না।
আমার ভীষণ মন চাইছে কেউ এসে বসুক আমার পাশে। হাত টা ধরে সব ভয়ের রাস্তা গুলো পার করে দিক। না কেউ আসবে না। এইরে, চলে আসল আমার বেহায়ার দল। মানে বান্ধবির দল।
একটার চেয়ে একটা বেশি শয়তান। এসেই শুরু দিবে, কেমন লাগছে? কি কথা হল? আমাদের ও একটু বল। জামাই পছন্দ হয়েছে আরও কি কি সব কথা। আমি এখনও বুঝতেই পারছি না আমার সেই মানুষটিকে পছন্দ হয়েছে কি না।
প্রথম দিন যখন সবার সামনে গেলাম, দেখলাম একটু ঝুকে বসে আছে।
আমি রুমে ঢুকতেই একটু চমকে উঠে দাঁড়াল। ভাল করে একবার তাকাল ও না। সবাই কথা বলছিল আমার সাথে। তখন একটা মেয়ে তাকে কি যেন বলে। তখন সে আমার দিকে তাকায়।
একদম আমার চোখের দিকে। বলে, আপনি ভাল আছেন? আমি একটু ঘাবড়ে যাই। কারন এই কথাটা কেউ আমাকে জিগেস করেনি। আমি বললাম, হ্যাঁ। এই পর্যন্তই।
আর কোন কথা হয় নি। সেও কারো সাথে খুব একটা কথা বলল না।
আমি কিছুটা হতাশ হয়ে গেলাম। কারন এমন মানুষ আমি কখনও আশা করি নি। তবুও কিছু বলার তো নাই।
আমি চাইতাম এমন কেউ আসবে যে আমাকে বুঝতে চেষ্টা করবে। কিন্তু এ তো আমার দিকে ভাল করে তাকাবেই না। কম কথা বলা এই আমি একটা চঞ্চল মানুষ চাইতাম। যে সারাখন বক বক করে আমার মাথা খারাপ করে দিবে। কিন্তু একে তো আমিই সারাক্ষণ জ্বালাব।
এতো কথাই বলতে জানে না।
কিছুক্ষণ পর আপা এসে বসল আমার পাশে। বলল, তোমার কেমন লেগেছে? তোমাকে ওদের খুব পছন্দ হয়েছে। আমি একদম ঠাণ্ডা হয়ে গেলাম। শুধু বলতে পারলাম, তোমাদের যা ইচ্ছা।
আপা চলে গেলেন। আমি ধরেই নিলাম আমার আর কোন শখ করা ঠিক হবে না। আজন্ম রক্ষণশীল পরিবারে বেরে উঠে আমার নিজের সেই মতামত দেয়া হয় না আর। ধরে নিতে হয় যাই হবে ভালর জন্যই হবে। একটু পর আনুষ্ঠানিক ভাবে আংটি পরানো হল।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই চলে গেল।
পরের কিছুদিন তেমন কিছু হয় নি। মাঝে মাঝে ফোন করে অন্যরা কথা বলতে নিলে আমাকে দিত কথা বলতে। আমি ফোন ধরলেই কেমন আছেন, ভাল আছি এমন একটু কথা হত। খুব বেশি কোন কথা হয় নি।
কথা হল গতকাল মানে গায়ে হলুদের আগের রাতে। রাতে হঠাৎ করেই একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসল। রিসিভ করতেই বুঝলাম এটা তার কণ্ঠ। আমি না চেনার মত করে বললাম, কে বলছেন? সে হঠাৎ করেই বলে বসল, আমার তো মনে হয় আপনি আমাকে চিনতে পেরেছেন। তবুও আমার পরিচয় দিচ্চি।
বলে নিজের নামটা বলে। এবার চিনতে পেরেছেন? আমি বললাম, বলেন কেন কল করেছেন? বলল, আমি একটা কথা জানতে চাই। আপনার কি আমাকে আসলেই পছন্দ হয়েছে? আমার তো সেরকম মনে হচ্ছে না। আমি বললাম, কেন মনে হচ্ছে না? সে বলল, আপনার কথা শুনে সে রকমই মনে হয়। আমি বললাম , সে রকম কিছু না।
আচ্ছা রাখি বলেই সে রেখে দিল। আমি কি করব বুঝতে পারচিলাম না।
বর্তমানে ফিরে আসি। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
সবাই বৃষ্টির উপর রেগে আছে। আমি খুব খুশি। এই একটা জিনিস খুব ভাল লাগে। নিজের মত অনুভব করা যায়। এখন আবার কে কল দিল?
--- হ্যালো, কে বলছেন?
-- আজ ও কি পরিচয় বলবো?
--- না।
বলেন কি বলবেন?
-- বলব অনেক কিছু।
--- বলেন।
-- বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। দেখেছ ??
---হ্যাঁ। দেখেছি।
-- বারান্দায় যাও।
--- কেন?
-- আরে আজব মেয়ে তো। যেতে বলছি একটু যাও।
--- এই যে এসেছি। বলেন।
-- ভেব না দারিয়ে আছি তোমাকে দেখতে। বাইরে একটু হাত টা বাড়াও। যেন বৃষ্টির পানি তোমার হাত ভিজিয়ে দেয়।
--- কেন বলেন তো?
-- আমি দারিয়ে আছি বাইরে। হঠাৎ মনে হল তোমার হাত টা ধরি।
তাতো সম্ভব না। তাই বলছি হাত টা বাড়াও। ধরে নেব বৃষ্টি তোমার স্পর্শ এনে আমাকে ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে।
অদ্ভুদ একটা ভাল লাগা মন টাকে ছুঁয়ে গেল। আমি বাইরে হাত বারিয়ে তাকে আমার ছোঁয়া পোঁছে দিলাম।
আর সে আমার মনটাকে ছুঁয়ে দিয়ে গেল। মনে হচ্ছে মানুষটা খুব একটা খারাপ না। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।