বল আমায় সেই সময়ের নেই কেন অস্তিত্ব, বোঝাও আমায় সেই কল্পনার নেই কোন সমাধান.....আমারি স্বপ্ন আজো জেগে রয় আধারো শুন্য চোখে ... টেক জায়ান্ট অ্যাপল বরাবরই প্রযুক্তি পণ্যে নিয়ে এসেছে নতুন নতুন চমক। বিশেষত ‘আইপ্যাড’ নামক ট্যাবলেট পিসি নিয়ে তারা মাতিয়ে দেয় বিশ্বকে। বিশ্বব্যাপী নতুন যুগের সূচনা করা এই ‘আইপ্যাড’-এর দ্বিতীয় সংস্করণ ‘আইপ্যাড-২’ বাজারে আসে গত বছর। আর এবার এলো এর তৃতীয় সংস্করণ। সকলে ‘আইপ্যাড-৩’ এর প্রতীক্ষায় থাকলেও অ্যাপল এর নাম দিয়েছে ‘দ্য নিউ আইপ্যাড’।
নতুন এই আইপ্যাডে যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন সব ফিচার আর হার্ডওয়্যার। জানাচ্ছেন তরিকুর রহমান সজীব
গত ডিসেম্বর থেকেই প্রযুক্তি বিশ্ব অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে ‘আইপ্যাড-৩’-এর জন্য। আইপ্যাড-২’-এর পরের এই সংস্করণটি ঘোষণা সেই সময়েই দিয়ে রাখে অ্যাপল। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সকলের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে গত বুধবার অ্যাপল’র সিইও টম কুক আনুষ্ঠানিকভাবে সকলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন নতুন সংস্করণের এই ট্যাবলেট পিসিকে। ডিভাইস হিসেবে নানান চমকের পাশাপাশি সকলের সামনে চমক হয়ে দাঁড়ায় এর নামটিও।
সকলের পূর্বানুমানকে ভুল প্রমাণ করে ‘আইপ্যাড-৩’-এর বদলে একে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় ‘দ্য নিউ আইপ্যঅড’ বা ‘নতুন আইপ্যাড’ নামে। আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচিত হলেও এর বিক্রি শুরু হয়নি এখনো। ১৬ মার্চ থেকে বিক্রির জন্য অনলাইনে অর্ডার নেওয়া শুরু করেছে অ্যাপল।
নতুন আইপ্যাডে নতুন ফিচার
নতুন আইপ্যাডের ঘোষণার পর থেকেই ছিল প্রযুক্তি বিশ্বে নানান জল্পনা-কল্পনা। আগের সংস্করণের চাইতে নতুন কী সব ফিচার এতে যুক্ত হবে, সে নিয়ে আলোচনার সীমা ছিল না।
এমনিতেই সকলের ধারণা ছিল তৃতীয় এই সংস্করণটি হবে সম্পূর্ণরূপে এইচডি বা হাইডেফিনেশন সমর্থিত। তাদের সে অনুমান মিথ্যা হয়নি। আগের দুইটি সংস্করণের আইপ্যাডকে ছাপিয়ে এর হার্ডওয়্যারে এসেছে পরিবর্তন। নতুন এই আইপ্যাডের ফিচারগুলো আলোচনা করা হলো।
ডিসপ্লেতে নতুন মান
নতুন এই আইপ্যাডে ব্যবহার করা হয়েছে অ্যাপল’র বিশেষ রেটিনা ডিসপ্লে।
৯.৭ ইঞ্চি এই ওয়াইডস্ক্রিন মাল্টিটাচ এলইডি-ব্যাকলিট ডিসপ্লে সমর্থন করে ২০৪৮ বাই ১৫৩৬ পিক্সেলের রেজ্যুলেশন। এই রেজ্যুলেশন এইচডি টিভিগুলোর চেয়েও বেশি! এর প্রতি ইঞ্চিতে পিক্সেল সংখ্যা ২৬৪। হাতের আঙুলের ছাপ যাতে না পড়ে, তার জন্য এতে ব্যবহার করা হয়েছে ‘ওলিওফোবিক কোটিং’। একইসাথে এই ডিসপ্লেতে একাধিক ভাষা ব্যবহার করার সুবিধা রয়েছে।
ক্যামেরা, ছবি এবং ভিডিও
নতুন আইপ্যাড হাতে থাকার অর্থ হচ্ছে হাতের মাঝে একটি পূর্ণাঙ্গ ভিডিও স্টুডিওকে ধারণ করা।
এতে রয়েছে দুইটি ক্যামেরা। রেয়ার ফেসিং বা অ্যাপল’র ভাষায় ‘আইসাইট’ ক্যামেরাটি ৫ মেগাপিক্সেলের। ছবি এবং ভিডিও ধারণ করার জন্য এটি চমত্কার একটি ক্যামেরা। এটি সেকেন্ডে ৩০টি ফ্রেম গতিতে শব্দসহ হাইডেভিনেশন ভিডিও ধারণ করতে পারে ১০৮০ পিক্সেল রেজ্যুলেশন পর্যন্ত। ছবির জন্য যেমন রয়েছে অটোফোকাস, তেমনি ভিডিওর জন্যও রয়েছে ‘ভিডিও স্ট্যাবিলাইজেশন’ ফিচার।
ভিডিও ধারণের পর ভিডিও সম্পাদনার জন্য রয়েছে ‘আইমুভি’ অ্যাপ্লিকেশন, যার মাধ্যমে ভিডিও সম্পাদনার সব কাজই করা যায় প্রফেশনাল মানের। পাশাপাশি রয়েছে ‘ফেসটাইম’ ক্যামেরা। ভিজিএ মানের এই ক্যামেরাতে সেকেন্ডে ৩০ ফ্রেমের ভিডিও ধারণ করা যায়।
নতুন প্রসেসরে নতুন গতি
নতুন আইপ্যাডে ব্যবহার করা হয়েছে নতুন প্রসেসর। ‘আইপ্যাড-২’তে ব্যবহার করা হয়েছিল অ্যাপল’র ‘এ ৫’ প্রসেসর।
আর তৃতীয় সংস্করণের নতুন আইপ্যাডে ব্যবহার করা হয়েছে ‘এ৫এক্স’ চিপসেটের প্রসেসর। এতে রয়েছে কাস্টম ডিজাইনের ডুয়েল কোর প্রসেসর যা নিশ্চিত করবে হাই পারফরম্যান্স এবং এর শক্তির খরচ হবে কম। আর এর সাথেই বিল্ট-ইন রয়েছে একটি কোয়াড-কোর গ্রাফিক্স প্রসেসর। যার ফলে কাজের গতি আর গ্রাফিক্স মানে এটি পৌঁছে গেছে নতুন উচ্চতায়।
রয়েছে নানান ধরনের সংযোগ
নতুন আইপ্যাড বলতে গেলে সব ধরনের ওয়্যারলেস সংযোগের সুবিধার জন্য একদম প্রস্তুত।
ওয়াই-ফাইয়ের পাশাপাশি এটি সমর্থন করে চতুর্থ প্রজন্মের তারবিহীন নেটওয়ার্ক। অর্থাত্ এলটিই বা এইচএসপিএ-সব নেটওয়ার্কই সমর্থন করবে এটি। পাশাপাশি এতে ব্লুটুথ প্রযুক্তিরও সর্বশেষ সংস্করণটিই ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাত্, সব জায়গায় যখন চলছে ব্লুটুথ ৩.০, তখন এতে রয়েছে ব্লুটুথ ৪.০।
আরও যত ফিচার
‘আইপ্যাড-২’-এর মতো নতুন আইপ্যাডের আকারেও তেমন পরিবর্তন হয়নি।
পরিবর্তনের মধ্যে এর পুরুত্ব বেড়েছে ০.৬ মিলিমিটার আর ওজন বেড়েছে প্রায় ৫০ গ্রাম। ১৬, ৩২ আর ৬৫ জিবি স্টোরেজে বাজারে নিয়ে আসা হচ্ছে নতুন এই আইপ্যাড। বরাবরের মতোই এতে ব্যবহার করা হয়েছে ৪২.৬ ওয়াটের লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি, যার একবার পূর্ণ চার্জ দিলে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত টানা ভিডিও দেখা, গান শোনা বা ওয়েব ব্রাউজিংয়ের সমর্থন দিতে সক্ষম। বাড়তি সেন্সর হিসেবে এতে রয়েছে অ্যাকসেলারোমিটার, অ্যামবিয়েন্ট লাইট সেন্সর এবং গাইরোস্কোপ। রয়েছে ডিজিটাল কম্পাস এবং ৪জি মডেল রয়েছে জিপিএস প্রযুক্তি সমর্থন।
আর অ্যাপল’র বিশাল অ্যাপ্লিকেশনের ভান্ডারতো রয়েছেই। আর রয়েছে ক্লাউডের সুবিধা। ম্যাক সিস্টেমের পাশাপাশি উইন্ডোজের বিভিন্ন সংস্করণেও সিনক্রোনাইজেশন করা যাবে নতুন এই আইপ্যাড।
অ্যাপ্লিকেশনের খবর
অন্যান্য অ্যাপল ডিভাইসের মতই নতুন আইপ্যাডেও রয়েছে নানান ধরনের অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারের সুবিধা। অ্যাপল’র অ্যাপ স্টোর থেকে ব্যবহার করা যাবে এসব অ্যাপ্লিকেশন।
তবে অ্যাপ স্টোর ছাড়াও এতে যুক্ত রয়েছে বিল্ট-ইন নানান ধরনের অ্যাপ্লিকেশন। এসব অ্যাপ্লিকেশনের মধ্যে রয়েছে ওয়েব ব্রাউজার সাফারি, ইমেইল যোগাযোগের জন্য মেইল, ভিডিও চ্যাটিংয়ের জন্য ফেসটাইম, গান শুনতে আইটিউনস, গেম খেলার জন্য গেম সেন্টার, ছবি সম্পাদনার জন্য ফটো বুথ প্রভৃতি। এর বাইরেও ম্যাসেজ, ফটো, ম্যাপস, মিউজিক, ইউটিউব, ক্যালেন্ডার, রিমাইন্ডার, নোটস, কনটাক্টস, ভিডিওস, ক্যামেরা প্রভৃতি অ্যাপ্লিকেশনও এতে রয়েছে বিল্ট-ইন হিসেবেই। এসব বিল্ট-ইন অ্যাপ্লিকেশনসহ অ্যাপ স্টোরের নানান অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে এটি পরিণত হয়ে উঠেছে একটি পূর্ণাঙ্গ ডিভাইসে।
নতুন আইপ্যাড নিয়ে প্রতিক্রিয়া
নতুন আইপ্যাড উন্মোচনের সাথে সাথেই প্রযুক্তি বিশ্বে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
আইএমএস রিসার্চ ইন্সটিটিউট তাদের গবেষণা থেকে জানায়, ২০১১ সালে অ্যাপলের দখলে ছিল বিশ্বের ট্যাবলেটের বাজারের প্রায় ৬২ শতাংশ। আর তারা ধারণা করছে নতুন আইপ্যাডের কারণে চলতি বছরে তা বেড়ে হবে ৭০ শতাংশ। প্রযুক্তি বিশ্লেষক গার্টনারের মতামতও একই রকম। তাদের রিসার্চ ডিরেক্টর মাইকেল গার্টেনবার্গ নতুন আইপ্যাডকে ‘বৈপ্লবিক কিছু অভিজ্ঞতা লাভের জন্য নতুন এক ডিভাইস’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। অনেকেই অবশ্য নতুন আইপ্যাডের ফিচারে যেমন একটা খুশি হতে পারেন নি।
যেমন, গ্রিনউইচ কনসালটিং ফার্মের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ফ্রেড হিউয়েট বলেছেন, ‘যেহেতু ব্যক্তিগত ব্যবহারে মাল্টিমিডিয়ার ক্ষেত্রে ট্যাবলেটের ব্যবহার অনেক বেশি হচ্ছে, তাই এর স্ক্রিন রেজ্যুলেশন এবং ডিসপ্লের মান নিয়ে অনেক ভাবতে হবে। ’ নতুন আইপ্যাডের ডিসপ্লে এর স্ক্রিন রেজ্যুলেশন অনেক ভালো হলেও তা শেষ পর্যন্ত বাজার ধরে রাখতে যথেষ্ট হবে না বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি।
বিক্রির আগেই শেষ নতুন আইপ্যাড
প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা যতই সন্দেহ প্রকাশ করুক, বাজারে এটি যে আরও একটি সফল অ্যাপল পণ্য হতে যাচ্ছে, তা বোঝা গেল শুরুতেই। অনলাইনে প্রি-অর্ডারের সুযোগ পাওয়া মাত্র নি:শেষ হয়ে গেছে প্রাথমিক স্টকের নতুন আইপ্যাড। এমনকি অ্যাপল ১৬ তারিখে এটি সকলের হাতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বললেও সে তারিখ পিছিয়ে যাচ্ছে বলেই জানিয়েছে তারা।
যেসব দেশে এটি বিক্রি শুরু হওয়ার কথা ছিল, সবগুলো দেশেই শেষ হয়ে গেছে এর স্টক। অ্যাপল জানিয়েছে, কোনো কোনো স্থানে দুই থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত দেরি হতে পারে নতুন আইপ্যাড সরবরাহে। অর্থাত্, আইপ্যাড আর আইপ্যাড২-এর ধারাবাহিকতায় এটি পরিণত হতে যাচ্ছে ব্যবাসফল পণ্যে।
ইত্তেফাক ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।