০
০
০
০
০
০
০
০
০
০
০
০
০
যে বিদেশি বন্ধুরা মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলিতে বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নিয়ে নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা দিয়ে বাঙালির স্বাধীনতার সংগ্রামে প্রেরণা যুগিয়েছিলেন- পুরো জাতির পক্ষ তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ ও ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিদেশি অতিথিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আজ আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, আমরা জাতি হিসেবে কিছুটা দেরিতে হলেও আপনাদের সেই অমূল্য অবদানের স্বীকৃতি দিতে পারছি। আমি আমার নিজের এবং দেশবাসীর পক্ষ থেকে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সকল নাম জানা-অজানা বিদেশি বন্ধুর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। ”
এই অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে একাত্তরের সেই বিদেশি বন্ধুদের হাতে সম্মাননা পদক তুলে দেন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বক্তব্যের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে যেসব বিদেশী নাগরিক, প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সাহায্য-সহযোগিতা দিয়েছিলেন, তাদের কাছে আমাদের ঋণের শেষ নেই।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সেই দুঃসময়ের বন্ধুদের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আজকের এই আয়োজন। ”
একাত্তরের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকায় বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালানোর পর শুরু হয় মুক্তির জন্য বাঙালির চূড়ান্ত সংগ্রাম। ভারত সরকার, মিত্রবাহিনীসহ বিভিন্ন দেশের রাজনীতিক, কূটনীতিক, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন সংগঠন সে সময় নানাভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সহযোগিতা করেন। বিশ্বের কাছে তারা তুলে ধরেন পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বর গণহত্যার কথা, বাঙালির স্বাধীকারের দাবির কথা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয় যে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অনেক বিদেশি বন্ধু আমাদের সমব্যাথী হয়েছিলেন, অংশীদার হয়েছিলেন।
”
বক্তৃতায় এসে বাঙালির স্বাধীকারের সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটও স্মরণ করিয়ে দেন শেখ হাসিনা।
“আমাদের জনগণ যখন স্বাধীনতা অর্জনের লড়াইয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, তখন আমরা বিদেশি বন্ধুদের কাছ থেকে পেয়েছি অকুণ্ঠ সমর্থন। বিদেশি বন্ধুরা, বাংলাদেশের জনগণের উপর অবর্ণনীয় নির্যাতনের প্রতিবাদ করেছেন। তারা আমাদের আশা-আকাক্সক্ষা এবং মানবিক মর্যাদা এবং আর্থ-সামাজিক ন্যায় বিচারের দাবীর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। তারা মানসিক, নৈতিক, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সমর্থনসহ সামরিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
”
“আমরা সমর্থন পেয়েছিলাম প্রতিবেশীর কাছ থেকে। সাহায্য পেয়েছিলাম কাছের এবং দূরের দেশ থেকেও। সাহায্য এসেছিল ব্যক্তি থেকে, সংগঠন থেকে। সেখানে কোন জাতি, ধর্ম, বর্ণ বা রাজনৈতিক ভেদাভেদ ছিল না। এই সমর্থন ছিল সার্বজনীন এবং বাছ-বিচারহীন।
আমাদের জাতীয় পরিচয়, আমাদের একটি জাতীয় পতাকা এবং জাতীয় সংগীত অর্জনের এই সংগ্রামে আমরা আপনাদের কাছে চিরঋণী,” বলেন তিনি।
চার দশক পর বাংলাদেশ যখন ‘গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের সংগ্রামে’ লিপ্ত তখনও বিদেশি বন্ধুদের কাছ থেকে একই ধরনের ‘প্রেরণা এবং মনোবল’ প্রত্যাশা করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধে আমাদের যারা সহযোগিতা করেছেন, তাদের হিসাব করা এবং তাদের ব্যক্তিগত ভূমিকা নিরূপণ করা দুঃসাধ্য। তাদের অবদান এবং আত্মত্যাগ পরিমাপ করা তাই অর্থহীন। কাজেই একজনকে সম্মানিত করার মধ্য দিয়ে সবাইকে সম্মানিত করা হচ্ছে- এটা মনে করাই যুক্তিসঙ্গত হবে।
”
“ভবিষ্যতে আমরা অন্যদেরও সম্মানিত করার চেষ্টা করব। তবে আমি বিশ্বাস করি, আজকের সম্মান প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির ইতিহাসের কঠিনতম সময়ে আমাদের পাশে যারা অবিচল ছিলেন, তাদের সকলকেই সম্মান করা হচ্ছে”, যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠান মঞ্চে ওঠেন সকাল সোয়া ১০টায়। এরপর একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং বিদেশি বন্ধুদের ভূমিকা নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান। বেলা ১১টা ২৫ এ অনুষ্ঠান স্থলে পৌঁছান রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান।
অনুষ্ঠানে সবার আগে নেপালের প্রেসিডেন্ট রাম বরণ যাদবের পক্ষে দেশটির রাষ্ট্রদূত ‘মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে গ্রহণ করেন। এরপর একে একে আটজন সাবেক ও বর্তমান রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের প্রতিনিধিরা নেন এই সম্মননা।
মুক্তিযুদ্ধের সময় যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নানাভাবে বাংলাদেশকে সমর্থন ও সহযোগিতা যুগিয়েছিলেন- সেই বন্ধুদের হাতে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ তুলে দেওয়া শুরু হয় এরপর।
প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান এবং সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারাও এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত আছেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।