নড়তে চড়তে ভাল লাগে না। পাথর হয়ে বাঁচতে চাই। সুখ কী? বেঁচে থাকা? মানুষের মত? একটা মানুষ সুখে থাকার জন্য যা যা দরকার তাই নিয়ে বেঁচে থাকা? স্রেফ মানুষ হয়ে জন্মেছি, এটাই কি সুখের নয়? চারপাশে কত দুঃখ, কত কষ্ট, কত পাওয়া না পাওয়া, হতাশা, আরো কত যোগ বিয়োগের অংক নিয়ে আমাদের জীবন। তারপরও মুদ্রার উল্টো পিঠ রয়ে যায়। দুঃখ কষ্ট আর হাজার হাজার না পাওয়ার ঠিক অপর পাশেই তো সুখ।
সুখ দুঃখ পাশাপাশি তো আরি দিয়ে বসে থাকে। খুঁজে দেখুন, দৃষ্টি প্রসারিত করুন। দুচোখ মেলে দেখুন, বের করে আনুন অধরা সুখকে।
ব্যাক্তিজীবনে আমি অসম্ভব আশাবাদী একজন মানুষ। সবকিছু থেকে যেটুকু সুখের সেটা খুঁজে বের করি।
আমি আমার কিছু চিন্তাভাবনা আজ লিখবো। অনেকের সাথে হয়তো মিলবে না। তাই যারা নৈরাশ্যবাদী তারা ঠিক এপর্যন্তই পড়ুন। না হয় আমার এই লেখা পড়ে আরো একবার হতাশ হবেন।
দেশকে নিয়ে ভাবে না, দেশের মঙ্গলকামনা করে না এরকম মানুষ খুব কম আছে।
দেশের জন্য কিছু করি আর না করি দেশের খারাপ কোনো পরস্থিতে আমরা বিচলিত হয়ে পড়ি। কিন্তু এর ব্যাতিক্রমও দেখা যায়। কিছু মানুষ আছে যারা দেশের মঙ্গল চায় না। বরং বিগলিত হয় দেশের খারাপ পরিস্থিতিতে, অমঙ্গলে। এরা কারা? আমরা সবাই জানি।
এরা কি শুধুই রাজাকাররা? কিন্তু কয়জন রাজাকার এখনো বেঁচে আছে?
না শুধু রাজাকাররা না। পিশাচগুলা ওদের সমমনা কিছু প্রজন্ম তৈরি করেছে। এদের সংখ্যা খুব বেশি না হলেও এরা তাদের উদ্দেশ্যে এতটাই অটল যে এরা চাইলেই যেকোন অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারে। তার বড় প্রমান সারা দেশে সিরিজ বোমা হামলা, ২১ আগস্ট, রমনা বটমূলের হামলাসহ আরো কিছু ঘটনা। এই হামলা গুলো আরো প্রমান করে এসব ঘটনার নেপথ্যে যারা আছে তারা স্বাধীনতা বিরোধী, প্রগতির বিরুদ্ধে এবং ধর্ম ব্যাবসায়ী।
একটা হিসাব করা যায়। ধরুন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য কোনো একটা কারনে পিছিয়ে গেলো। তাহলে কী হবে ব্যাপারটা? অধিকাংশ যুদ্ধাপরাধীরই স্বাভাবিক মৃত্যু হবে। এ প্রসংগে শুধু একটা কথাই বলবো, বাগানে যখন বিষবৃক্ষ সনাক্ত হয়, তখন সাথে সাথে তাকে উপড়ে ফেলতে হয়। তা নাহলে বিষবৃক্ষের শেকড় আর বীজ এমন বিস্তৃতি লাভ করে যে এর নির্মূল সম্ভব নয়।
ভুল আমাদের আগেই হয়েছিলো। যার মাশুল প্রজন্মের পর প্রজন্ম বয়ে বেড়াচ্ছি। তবে নিউটনের তৃতীয় সূত্রের প্রতি আমার অগাধ আস্থা রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি সব কিছুর ক্রিয়া এবং প্রতিক্রিয়া রয়েছে।
আর কিছুর পরিবর্তন হোক আর না হোক মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন হচ্ছে।
তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু সমাজের সব ধরনের মানুষ সারদিনে অন্তত একবার দেশকে নিয়ে ভাবে। মাঠে ঘাটে বাসে রাস্তায় স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আড্ডা বা জটলাগুলোতে একটু ঢুঁ মেরে দেখুন। ওরা দেশের কথা বলছে। সরকারের এটা হয়নি, ওটা হয়নি, এটা কি করলো, কেন করলো, এভাবে না হয়ে ওভাবে হতে পারতো ইত্যাদি ইত্যাদি কথা রাস্তাদিয়ে হাঁটার সময় একটু কানা খাড়া করলেই আপনি শুনতে পাবেন।
আজকের তরুন প্রজন্মদের দেখুন।
আমি তো মনে করি ওরাই সামনের দিনগুলোর হাতিয়ার। ফেইসবুক খুলে দেখুন। কত হাজার হাজার পেইজ খোলা হয়েছে দেশকে ভালোবেসে, আর এইসব পেইজের ভেতরে ঢুকে দেখুন কী তুমুল সৃস্টিশীল আড্ডা হচ্ছে। ইতিহাসের দিকে একটু তাকান। বায়ান্ন, ঊনসত্তর, একাত্তর বা নব্বইসহ বাকি সবগুলো অর্জনের কোনটিকে আপনি তরুণদের বাদ দিয়ে হিসাব করতে পারবেন? পারবেন না।
আজ আমার সোনার বাঙলা সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সেটা এবছর যেমন আছে সামনের বছর আরো খারাপ হবে। এক্ষেত্রে কোন সরকার আসলো এটা কোনো ব্যাপার না। ঠকছে জনগণই। তাই আমার দৃঢ় বিশ্বাস এভাবে চলতে থাকলে বায়ান্ন, ঊনসত্তর, একাত্তর অথবা নব্বইয়ের ঘটনাগুলো আবার বুমেরাং হয়ে আসবে।
আর সেই পরিবর্তনের ঝান্ডা থাকবে তরুনদের হাতে।
সবকিছুর পরও কিছু কিছু তরুনরাই আবার জাতিকে হতাশার জন্ম দিচ্ছে। সেদিন ঢাকার গাউছিয়া মার্কেটের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। চারপাশের অনেক হট্রগোলের মধ্যে একটা কথা কানে এসে যন্ত্রনা দিচ্ছিলো। একটা আঠারো ঊনিশ বছরের ছেলে চিৎকার করে হেঁটে যাওয়া এক…টা মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বলছে, আফা আসেন বাইচ্চা লন, বড় সাইজের আছে।
মেয়েটি মুখ নিচু করে চলে গেলো। ওই ছেলেটি যতগুলো মেয়ে তার সামনে দিয়ে যাচ্ছিলো সবাইকে উদ্দেশ্য করে কুরুচিপূর্ন কথা বলে যাচ্ছিলো। আমার কয়েকজন পরিচিত বাংলাদেশের বেশ নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। এবং আশ্চর্যজনক ভাবে এরা প্রায় সবাই নিয়মিত বা অনিয়মিত ভাবে গাঁজা মদ সেবন করে।
আরো একটি ঘটনা বলি, আমার এলাকার এক বড় ভাই এক বিয়েতে গিয়েছিলো বরযাত্রী হয়ে।
যাওয়ার পথে ডাকাতের দল আক্রমন করে বাসে। কিন্তু বাসের লোকজন তাদের প্রতিহত করে এবং একজন ডাকাতকে ধরে বেশ মারধর করে। গণধোলাইয়ের এক পর্যায়ে ওই বড়ভাই ডাকাতের পকেট থেকে একটা মোবাইল বের করে নিজের পকেটে পুরে রাখলো। পরদিন এলাকায় এসে বেশ গর্বের সাথে তার মোবাইল চুরির বীরত্বের কাহিনি শোনাতে লাগলো। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ওই ডাকাতের সাথে আমার উচ্চশিক্ষিত ভাইটির নৈতিকতা এবং মানসিকতার কি কোনো পার্থক্য আছে?
না কোনো পার্থক্য নেই।
তাহলে কেন একটা উচ্চশিক্ষিত ছেলের এই ধরনের মানসিকতা? হ্যাঁ এর উত্তর খুঁজে পাওয়া সম্ভব। উন্নত দেশগুলোতে একটা গাছ বাঁকা হয়ে উঠলেও সেটা নিয়ে গবেষনা করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষগুলো যে দিন দিন মূলস্রোতের বাইরে চলে যাচ্ছে সে বিষয়ে তথাকথিত গবেষকদের কোনো মাথাব্যাথা নেই। কেন সর্বোচ্চ শিক্ষা গ্রহন করেও অনৈতিক কাজগুলো সংগঠিত হচ্ছে তাদের দ্বারা। এটা কি সামাজিক অবক্ষয়ের জন্য? আকাশ সংস্কৃতির জন্য নাকি আমাদের দেশের শিক্ষিত বেকার প্রসবকারী শিক্ষানীতির জন্য? সময় এসেছে এগুলো নিয়ে ভাববার।
আমাদের দেশের রাজনীতির দিকে তাকান। এ যেন একটা পরিবার নীতি, রাজতন্ত্র। মসনদের জন্য দুটি পরিবারের কামড়াকামড়ি। কে কাকে কামড়ে কলকাঠি হাতে নিতে পারবে তারই মহড়া। হ্যাঁ জনগন চাইলেই যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচন করতে পারে।
কিন্তু যারা যোগ্য, যারা সত্যিকারের দেশপ্রেমিক তারা রাজনীতিতে আসতে চায় না। বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজগুলো থেকে যে নেতা তৈরী হবে তারও পরিবেশ নেই। আমার তো মনে হয় এরকম পরিস্থিতিতে যদি আবার মুক্তিযুদ্ধের মত আরো একটি সংগ্রামের প্রয়োজন হয় তাহলে লেজেগোবরে অবস্থা হবে। তার মানে এই নয় যে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে দেশপ্রেমের অভাব, অভাব যোগ্য নেতৃত্বের, সত্যিকারের দেশপ্রেমিক নেতার।
অনেকের অভিযোগ আমরা বাঙালিরা ইতিহাসের ভালো টুকু নিতে পারিনা, এক শতাংশ খারাপ থাকলে সেটাই নিই।
এ ব্যাপারে হরতালের প্রসংগ টানা যেতে পারে। হরতাল শব্দটির সাথে জড়িয়ে আছে মহাত্মা গান্ধি নামটি। তিনিই সর্বপ্রথম হরতাল নামক এক আন্দোলনের সৃষ্টি করেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি বুঝতে পারেন হরতাল ভালো কিছু দিতে পারে না। তাই তিনি হরতাল বাদ দিয়ে শান্তিপূর্ন আসহযোগ আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটান।
কিন্তু মজার ব্যাপার হলো হরতাল আমাদের রাজনীতে এখন একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাড়িয়েছে। আমরা হরতালকে গ্রহন করেছি। একের পর এক হরতাল ডেকে একপা এগিয়ে থাকা অর্থনীতিকে দুপা পিছিয়ে দিচ্ছি।
এদল ওদলকে দোষারোপ করে। এ ভালো তো ও ভালো না।
আমরা পেরেছি তোমরা পারোনি। ছোট ছোট বাচ্চাদের মতো আচরণ তাদের। নিজের মনমতো না হলেই, ‘খেলবো না’। এধরনের কথাবার্তাই বেশী শোনা যায় নেতাদের মুখ থেকে। দেশটাকে শুষে খাচ্ছে তারা।
আজ এর সাথে রাজনীতি করবেনা তো আবার কালই তাকে নিয়ে মঞ্চে উঠবে। যেভাবে স্বার্থ উদ্ধার সম্ভব সেভাবেই সব কিছু করছে বড় বড় দলগুলো। আর জনগন যারা নাকি গনতন্ত্রের নিয়ন্তা তাদের ভাগ্যের আর পরিবর্তন হয় না। তারা আমজনতা, তাই আমে দুধে বার বার মিশে যায়, আমরা পড়ে থাকি আমের আঁটি হয়ে। এর সমাধান কী? এর শেষ কোথায়? কে আসবে পান্জেরী হয়ে? কোনো উত্তর নেই।
সোমালিয়া ও নাইজার নামে দুটি দেশ আছে। এক সময় এরা বেশ সমৃদ্ধশালী ছিলো। আজ দেশ দুটি দুর্ভিক্ষপীড়িত। নূন্যতম মানবতার চিহ্ন নেই সেখানে। আমার ভয় হয়।
আমি আতংকিত আমার সোনার বাংলাকে নিয়ে, আমি চাই না আমার দেশের অবস্থাও এ দুটি দেশের মত হোক।
আর লিখতে ভালো লাগছে না। দেশের জন্য কিছু করতে পারিনি। পাঠকরা আমার লেখার শুরুর সাথে মিল খুঁজে পাচ্ছেন না নিশ্চই। আসলে দেশের জন্য যারা ভাবে তাদের মতো আমিও বিভ্রান্ত।
কিছু করা উচিত্ এই ভাবনাটা আমাকে খুব তাড়িত করে। কিন্তু ভেতর থেকে বল পাই না।
এত এত হতাশার মাঝেও আমার স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছে করে। হাজার হাজার বছর ধরে বেজন্মা বর্গীরা এদেশ লুটপাট করেছে। যে যেভাবে পেরেছে বলাত্কার করেছে এই বাংলাকে।
কিছুই অবশিষ্ট রাখেনি। তারপরও গর্ব করার মতো অনেক কিছু পেয়েছি আমরা। আমার আমাদের ভাষা কেড়ে নিয়েছি, স্বাধীনতা পেয়েছি। ছোট্ট একটা দেশে ১৬ কোটি মানুষ কী দারুন সৌহার্দ্য আর সম্প্রীতি নিয়ে বাস করছি। অথচ আমেরিকার দিকে তাকান, নিজেদের এতটা সভ্য দাবি করেও সাদা কালোর বিভেদ এখনো ঘোচাতে পারেনি।
ভারতে প্রায় প্রতিদিনই ভিন্ন সংস্কৃতির জাতির যাতাযাতির ঘটনা ঘটছে। ইউরোপের দেশগুলোতে একটার পর একটা অভ্যুত্থান চলছে। ইরাক-পাকিস্থান-আফগানিস্থানে চলছে আত্মঘাতী বোমা হামলার মত ভয়ংকর পরিস্থিতি। অথচ আমাদের এরকম কোনো সমস্যা নেই। আমাদের দরকার একটু নড়ে ওঠা।
তথাকথিত চিন্তা ভাবনা থেকে একটু সরে আসা। আমি বিশ্বাস করি না- এদেশের মানুষের মেধা আর সততার অভাব আছে। শুধু দরকার বহিঃপ্রকাশ।
আসুন দেশের কথা ভাবি, যার যার অবস্থানে থেকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করি, পাশের মানুষটিকে বুঝাই বাঙালি এখনো শেষ হয়ে যায়নি। আসুন ‘সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ’ এই তকমা শুধুমাত্র ঋনাত্বক উদাহরন না করে ধনাত্বক করি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।