স্পেনকে হারাতে হলে মাঠে অতিরিক্ত একটা বল নিয়ে খেলতে হবে! সেমিফাইনালের আগে রসিকতা করে বলেছিলেন ইতালি কোচ সিজারে প্রানদেল্লি। তখন কি আর জানতেন, বল নয়, ঠিকঠাক পেনাল্টি নিতে পারেন এমন ‘সাতজন’ খেলোয়াড় লাগবে?
ছয়জন পারলেন, পারলেন না কেবল লিওনার্দো বোনুচ্চি। প্রায় ৬০ হাজার দর্শকের অপলক দৃষ্টি, পুরো ইতালির প্রত্যাশার চাপ, ৪-০ গোলে হারের স্মৃতি এবং সামনে একজন ইকার ক্যাসিয়াস। হূৎক্রিয়া বন্ধ হওয়ার মতো স্নায়ুচাপ নিয়ে বোনুচ্চি যে শট নিলেন সেটা উড়ে গেল বারের ওপর দিয়ে। নষ্ট হলো টাইব্রেকারে ইতালির সাত নম্বর শট!
ইস্পাত-স্নায়ুর হেসুস নাভাস কিন্তু ভুল করলেন না।
জিয়ানলুইজি বুফনকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে পাঠিয়েই স্প্যানিশ মিডফিল্ডার বোল্টের গতিতে দৌড়ালেন, এ যেন বিশ্বজয়! উচ্ছ্বাসটা বাড়াবাড়ি ছিল না মোটেও। দুই ঘণ্টার প্রাণপণ লড়াইয়েও যে ম্যাচে ফল আসেনি, সেই ম্যাচে শেষ পর্যন্ত স্নায়ু ধরে রেখে ভাগ্যের খেলায় জিতে গেল স্পেন। ৭-৬ ব্যবধানে টাইব্রেকারে ইতালির হারের ‘খলনায়ক’ যদি বোনুচ্চি হন, তাহলে নায়ক নিঃসন্দেহে নাভাস। তাঁর শেষ শটেই তো নিশ্চিত হয়েছে কনফেডারেশনস কাপে স্পেন-ব্রাজিল স্বপ্নের ফাইনাল।
টাইব্রেকারে ফল এলে রেকর্ড বই ম্যাচটাকে ধরে রাখে ড্র হিসেবে।
পরশু রাতে শেষ পর্যন্ত জয়ের মালা স্পেনের গলায়, কিন্তু ইতালি হেরেছে বললে সেটা কি অন্যায় হবে না? বরং প্রথম ৪৫ মিনিটে আজ্জুরিরা যা খেলেছে তাতে বিরতির বাঁশি বাজার আগেই তাদের গোটা চারেক গোলে এগিয়ে যাওয়ার কথা। সেটা হয়নি বলেই মারিও বালোতেল্লির না থাকাটা বেশি অনুভব করেছে ইতালি। আলবার্তো জিলার্দিনো একের পর এক সুযোগ নষ্ট করে গেছেন। ১৭ মিনিটে ক্রিস্টিয়ান মাজ্জো কিংবা তার মিনিট খানেক পরেই ড্যানিয়েলে ডি রসির হেডগুলোও খুঁজে পায়নি আসল ঠিকানা। আন্দ্রেয়া পিরলো নিজের সেরা খেলাটা খেলেছেন, এমন বলা যাবে না।
কিন্তু দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন ইতালির তিন জুভেন্টাস ডিফেন্ডার জর্জো কিয়েল্লিনি, আন্দ্রেয়া বারজাগলি ও লিওনার্দো বোনুচ্চি। আগের তিন ম্যাচে ৮ গোল হজম করলেও এদিন ফার্নান্দো তোরেসের সামনে প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁরা।
প্রথমার্ধে স্পেনকে নিষপ্রভ মনে হওয়ার আরেকটা কারণ পেদ্রো ও ডেভিড সিলভার বিস্ময়কর নিষ্ক্রিয়তা। বলতে গেলে মাঠে তাঁদের অস্তিত্বই বোঝা যায়নি। দ্বিতীয়ার্ধে তাই সিলভার বদলে হুয়ান মাতা আর শেষের দিকে পেদ্রোর বদলে নামেন নাভাস।
প্রথমার্ধে ইতালির দাপটে ম্লান হয়ে যাওয়া আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা আর জাভি হার্নান্দেজরা ততক্ষণে স্বরূপে ফিরতে শুরু করেছেন। তবে নিজেদের পুরোপুরি মেলে ধরলেন অতিরিক্ত সময়ে। বাড়তি ৩০ মিনিটের খেলার শুরুতেই পোস্টে লাগিয়ে গোলের সুযোগ নষ্ট করেছেন ইতালির মিডফিল্ডার ইমানুয়েলে জাকেরিনি। ১১৫ মিনিটে জাভির শটও ফিরে এসেছে বুফনের হাত ছুঁয়ে পোস্টে লেগে। তার আগে তোরেসের বদলি জাভি মার্টিনেজকে পেয়ে চাঙা হয়ে ওঠে স্পেন।
তবে এত কিছুর পরও যেকোনো দলই গোল করতে পারেনি, সেই কৃতিত্ব দুই গোলরক্ষকের। ক্যাসিয়াস ও বুফন দুজনেই প্রমাণ করেছেন তাদের বিকল্প হতে হলে এখনো সহজপ্রাপ্য নয়। ১২০ মিনিট পরে তাই ম্যাচটা হয়ে গেল শুধুই এ দুজনের।
আসলে হতে পারত। কিন্তু স্নায়ুর লড়াইয়ে না হারার পণ করেই যেন নেমেছিলেন এদিন দুই দলের ফুটবলাররা।
১৪টি শট হলো, বিস্ময়করভাবে এর একটিতেও হাত লাগাতে পারলেন না কোনো গোলরক্ষক। এতটাই ঠান্ডা মাথায়, এতটাই ভেবেচিন্তে শট নিয়েছেন সবাই।
না, সবাই তো নন। উত্তেজনা, স্নায়ুচাপ সব যে পেয়ে বসল বোনুচ্চিকে!
বারের ওপর তুলে দেওয়া সেই শটে ক্যাসিয়াসকেও তো হাত ছোঁয়াতে হয়নি!।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।