জামাল চোখ খুলল, তারপর চেয়ার থেকে উঠে একটা সিগারেট টানতে টানতে রুমের মধ্যে পায়চারী করতে লাগল, তার চোখের সামনে জাহিদের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠল, আমার মাদক ব্যবসার একমাত্র সাক্ষী জাহিদ। বিভিন্ন মহল্লার ফেন্সিকুইনরা জাহিদকে চিনে, যারা ফেন্সি ক্যারি করে তারাও শুধু জাহিদকে চিনে। জাহিদ আমার ফার্মে চাকরি করে একথা সবাই জানলেও মাদক ব্যবসার সঙ্গে আমার সম্পৃক্তার বিষয় কেউ কেউ আঁচ করতে পারলেও তা অনুমান ভিত্তিক, ষ্পষ্ট করে কেউ জানে না। জাহিদকে পুলিশ হণ্য হয়ে খুঁজছে, জাহিদ যে কোন মুহূর্তে পুলিশের হাতে ধরা পড়তে পারে। জাহিদ যদি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে আর রিমাণ্ডে আমার নাম বলে দেয় তবে আমিও মামলায় জড়িয়ে পড়ববো তখন জনগণের কাছে আমার মুখোশ খুলে যাবে।
সামনের জাতীয় সংসদ নির্বাচন দল ক্ষমতায় আসতে না পারলে মামলায় দলীয় প্রভাব কাজে লাগাতে পারবো না। কাজেই জাহিদের উপরই এখন আমার স্ট্যাটাস, ব্যবসা-বাণিজ্য ও রাজনীতি নির্ভর করছে, জাহিদকে সাক্ষী হিসেবে বাঁচিয়ে রাখা নিরাপদ নয়। হ্যাঁ জামাল একরকম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল যে কোন মূল্যে জাহিদকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে হবে। তাছাড়া জামালের নিরাপদ থাকার উপায় নেই। জাহিদকে সরিয়ে দিতে পারলে তার মা বোন একেবারে অসহায় হয়ে পড়বে, তারা পুরোপুরি আমার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে।
ফলে আমার এক ঢিলে দু'পাখি না, না বহুপাখি মারা হবে ভাবতে ভাবতে জামাল আপন মনে হো হো করে উদ্মাদের মতো হেসে উঠল।
জামালের চোখে ঘুম নেই, বিছানায় শুয়ে দুশ্চিন্তায় ছট্ফট্ করছে। সাধারণত জামাল গভীর রাতে বাসায় ফিরে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। হাজার রকমের কাজ কিংবা কোন দুশ্চিন্তা কিংবা আনন্যার সঙ্গে দু'একটা কথা বলার মতো সামান্যতম সময়ও সে জেগে থাকে না। আজ বিছানায় অস্বাভাবিক আচরণ করতে দেখে অনন্যা জিজ্ঞেস করল, তোমার কি শরীরটা ভাল নেই?
জামাল উত্তর দিল, না, ঠিক তা না, কেন জানি ঘুম আসছে না।
তুমি ঘুমিয়ে পড়, আমিও ঘুমাবার চেষ্টা করছি।
অনন্যা আর কোন কথা বলল না বিছানায় চুপ করে শুয়ে পড়ল।
জামাল জাহিদকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে সাধারণত ছোট-খাট অপারেশন হিটলারই করে থাকে কিন্তু এতবড় অপারেশন সে পারবে কি? আবার এ ব্যাপারে মোস্তফা সাহেব বা বেলায়েত সাহেবের সঙ্গে পরামর্শ করার সুযোগ নেই কারণ তাতে জাহিদকে হত্যার সাক্ষী থেকেই যায়, এসব কাজে সাক্ষী রাখতে নেই। আবার আজ যে মোস্তফা সাহেব তাকে ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করে রাজনৈতিক কারণে কাল সেই মোস্তফা-ই যে শত্রু হবে না তারই বা কী নিশ্চয়তা আছে? না না জামাল কাউকে জিজ্ঞেস করবে না যা করার একাই করবে।
জামাল বিছানা ছেড়ে উঠল, পাশের রুমে গিয়ে জাহিদের নামে কেনা মোবাইলের সিমকার্ডটা তার মোবাইল সেটে সেট করল।
জামাল সাধারণত হিটলারসহ তার অপরাধ জগতের সমস্ত লোকের কাছে এই সিমকার্ড দিয়েই মোবইল করে থাকে এবং সকলের কাছে এ নাম্বারটাই সেভ করা আছে। জামাল হিটলারকে মোবাইল করল।
অপরপাশ থেকে হিটলারের কন্ঠস্বর ভেবে এলো, হ্যালো বস্।
হিটলার তুমি একবার আমার সঙ্গে দেখা করো তো।
বস্ আপনি কোথায়?
আমি যেখানেই থাকি তুমি তিন নম্বর পয়েন্টে এখনই চলে এসো, মোটর সাইকেল নিয়ে আসবে না।
খেয়ার রাখবে তোমাকে যেন কেউ দেখে না ফেলে।
জি বস্ আসছি।
জামাল বাসা থেকে বের হয়ে হাঁটতে হাঁটতে তিন নম্বর পয়েন্টে গেল।
হিটলার জিজ্ঞেস করল, বস্ হঠাৎ কী এত জরুরি প্রয়োজন? কোন কেইস্ আছে?
জামাল গম্ভীর স্বরে বলল, হিটলার বেশি কথা বলবা না, তুমি তো জানো কেইস ছাড়া আমি তোমাকে ডাকি না।
হিটলার বিনয়ের স্বরে বলল, জি বস্ বলুন।
একটা ট্রান্সফার করতে হবে।
জি বস্ নাম, ঠিকানা দিন। তো-
তো কী?
হিটলার মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল, বস্ খরচ একটু বেশি পড়বে।
বুঝছি, তুমিও খুব কমার্শিয়াল হয়ে গেছ।
হিটলার ঘাবড়ে গেল, বস্ কি মাইণ্ড করলেন?
না, মাইণ্ড করবো কেন? বলো কত দিতে হবে?
লাখ খানেক দিবেন।
ঠিক আছে, পাবে।
বস্ নাম ঠিকানা দিন?
জামাল হিটলারকে জাহিদের নাম এবং তার অবস্থানের কথা বলল, হিটলার একটা কাগজে জাহিদের অবস্থানের ঠিকানাটা লিখে নিয়ে আম্তা আম্তা করে বলল, বস্ কিছু--
জামাল পঞ্চাশ হাজার টাকা হিটলারের হাতে দিয়ে বলল, এই নাও খুব সাবধানে অপারেশন করবে।
জি বস্ আপনি কোন চিন্তা করবেন না।
আর শোন অপারেশন সাকসেস্ফুল হলে এই নাম্বারে একটা মিস্ কল দিবা।
জি বস্, বলে হিটলার চলে গেল।
হিটলারকে বিদায় দিয়ে জামাল হাঁটতে হাঁটতে বাসায় ফিরল। তার চুলগুলো এলোমেলো আর মেজাজটা রুক্ষ্ণ হয়ে গেছে। বাসায় ঢুকে নিজে গেট বন্ধ করে বেড রুমে ঢুকতেই অনন্যা জিজ্ঞেস করল, কোথায় গিয়েছিলে?
বাইরে।
এত রাতে আবার বাইরে কী জন্য?
জামাল রাগান্বিত স্বরে বলল, এত রাতে কি জন্য বাইরে গিয়েছিলাম সেকথা তোমাকে বলতে হবে?
তুমি এভাবে বলছ কেন? আমার জানতে চাওয়াটাই কি দোষ হয়েছে?
হ্যাঁ দোষ হয়েছে আর কখনো জানতে চাইবে না। আমি কখন কোথায় যাই? কী করি? এসব তোমার জানার বিষয় না।
তুমি আমার বাবা-মা'র বেঁধে দেওয়া বউ, তুমি সংসার দেখাশুনা করবে এটাই তোমার কাজ। তোমাকে আমি অনেকদিন বলেছি আমার ব্যবসা, রাজনীতি এসব নিয়ে কোনদিন কথা বলবে না।
দেখ তোমার ব্যবসা, রাজনীতি এসব নিয়ে আমি কোনদিন কিছু বলিনা, বলতেও চাইনা কিন্তু আজ হঠাৎ তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে তাই জিজ্ঞেস করলাম। আমি তোমার স্ত্রী, তোমার সুখ-দুঃখের সঙ্গী আমাকে বলো তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? তোমার কি কোন সমস্যা হয়েছে?
অনন্যা আমি এখন ঘুমাবো আর কোন কথা বলবে না বলে জামাল বিছানায় শুয়ে পড়ল। কিন্তু তার চোখে ঘুম নেই, একটা অজানা আশংকা তাকে তাড়া করছে? তার চোখের সামনে বার বার ভেসে উঠছে জাহিদ হিটলার আর পুলিশ অফিসারের মুখ।
হিটলার জাহিদকে ট্রান্সফার করতে পারবে তো? জাহিদকে ট্রান্সফার করতে গিয়ে হিটলার পুলিশের হাতে ধরা পড়বে না তো? জাহিদ কিংবা হিটলার যে কেউ পুলিশের হাতে ধরা পড়লেই তার পরিচয় বেরিয়ে পড়বে। এমনিভাবে বিভিন্ন রকমের চিন্তা করতে করতে জামাল এক সময় ঘুমিয়ে পড়ল।
চলবে..
গডফাদার-০১ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।