জিয়াউর রহমানের বেড়ে উঠা পাকি¯-ানের করাচিতে। ১৯৫৩ সালে করাচির ডি.জে কলেজে পড়ে যোগ দেন কাকুল মিলিটারি একাডেমিতে একজন ক্যাডেট অফিসার হিসেবে। এদেশে জন্ম হলেও বাংলা জানতেন না জিয়া। উর্দু জানাই তার জন্য শাপেবর হয়। ১৯৫৫ সালে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেব কমিশনপ্রাপ্ত হন।
১৯৫৭ তে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে বদলি হন তবে ১৯৫৯ থেকে ১৯৬৪ সাল পযšর্- একটানা তিনি পাক সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করেন , এসময়েই তার আইএসআইয়ের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। এর মাঝেই ১৯৬০ সালে তার খালেদা বেগম খানম এর (খালেদা জিয়া) সাথে বিয়ে হয়। আইএসআইয়ের বিশ্ব¯- হিসেবে পাক-ভারত যুদ্ধে জিয়া অংশগ্রহণ করেন। পাকি¯-ান মিলিটারি প্রশাসন তাকে পুরস্কৃতও করে, বিদেশে জামানির্তে ট্রেুনিংএও যান। তারপর ’৭০ সালে মেজর হন আর চট্ট্রগ্রামে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড হন।
১৯৭১ সালে দেশের উত্তাল সময়ে চট্ট্রগ্রামেই দ্বায়িত্বে ছিলেন জিয়া। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের ২৫ তারিখ অপারেশন সার্চলাইটের নামে যে গণহত্যাযজ্ঞ ঢাকাসহ সারাদেশে চালানো হয় পাক বাহিনার দ্বারা তখনই যুদ্ধ অনিবার্য হয় বঙ্গবন্ধু সেই রাতেই স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। উল্লেখ্য ১৯ মাচর্ই রাতেই গাজীপুরের জয়দেবপুরে মেজর শফিউল্লার নেতৃত্বে ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট বিদ্রোহ করে, তারা যুদ্ধ ঘোষণা করে। এদিকে মেজর খালেদ মোশাররফ আর কর্নেল তাহের বাঙালিদের নিয়ে যুদ্ধ শুরু করে পাকি¯-ান আর্মির বিরুদ্ধে। চট্ট্রগ্রামেও ক্যাপ্টন (পরে মেজর) রফিকুল ইসলাম সৈন্য নিয়ে বিদ্রোহ শুরু করে আর ইপিআরের অবাঙালি সৈন্য আর অফিসারদের জীবিত অব¯'ায় বন্দী করে।
২৪ তারিখ সন্ধায় পর রাতে পাকবাহিনী অস্ত্র খালাসে যেতে গেলে জনতার সাথে পাকবাহিনীর কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়, নিহত হয় বিপুল সংখ্যক বাঙালি। তখন ২৫ তারিখ হয়ে যায়আর ২৫ তারিখে চট্ট্রগ্রামের ডক শ্রমিকরা এমভি সোয়াত হতে অস্ত্রশসত্র খালাসে অস্বীকৃতি জানালে পাকবাহিনী ৪৫ জন শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করে। এরপর ২৬ মার্চ জিয়াকে বাঙালি অফিসার হিসেবে পাঠানো হয় চট্টগ্রাম পোর্টে এমভি সোয়াত জাহাজ হতে অস্ত্র খালাসে। আইএসআইয়ের নিদের্শে এই জাহাজভরা অস্ত্র আনা হয় সারা দেশে হত্যাকান্ড চালানোর জন্য। আর আইএসআইয়ের একজন বিশ্ব¯- হিসেবে বাঙালি হয়েও জিয়া সেই জাহাজ হতে অস্ত্র খালাসে যান।
এদিকে ২৫ তারিখেই ক্যাপ্টন রফিকের বাহিনী যুদ্ধ শুরু করে আর চট্টগ্রামের আশপাশ ও অন্যান্য সীমাš-বর্তী এলাকা হতে বাঙালি সৈন্যরা রফিকের বাহিনীতে যোগ দিতে আসলে মেজর জিয়া রহস্যজনকভাবে তাদের রফিক বাহিনীর সাথে যোগদানে বাধা দেয়। ফলে রফিক বাহিনী আর পরে চট্ট্রগাম ধরে রাখতে পারেনি। অস্ত্র খালাসে য্ওায়ার পথে রফিক বাহিনীর বাধার মুখে জিয়া অস্ত্র খালাসে ব্যর্থ হয়ে ক্যান্টনমেন্টে ফিরে আসে। আবার ২০ বালুচ রেজিমেন্ট অবাঙালি সৈন্যরা বিহারীদের সাহায্যে সহস্রাধিক বাঙালি অফিসার আর সৈনিকদের সপরিবারে হত্যা করে। জিয়ার অসহযোগিতার কারণে মুক্তির সাধ থেকে, স্বাধীনতার লাল সূর্য হতে বঞ্চিত হয় দেশপ্রেমিক সহস্রাধিক অফিসার,সৈনিক আর তাদের আপনজন।
জিয়াকে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে পাহারা দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ নেতা এম এন হান্নানের নেতৃত্বে বাঙালি সেনা সদস্য হিসবে নিয়ে আসেন, এম এ হান্নান, বেলাল মোহাম্মদসহ অন্যরা ২৬ মার্চ থেকেই বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা বেতারের মাধ্যমে প্রচার করছিলো। সেসময় বেলাল মোহাম্মদ জিয়াকে ঠাট্টার ছলে কয়েকবার আর্মিসদস্য হিসেবে ঘোষণাটা পাঠ করার কথা বলেন, জিয়া প্রথমে রাজি না হলেও পরে রাজি হয়ে ২৭ মার্চ ঘোষণাপত্র পাঠ করেন, জিয়া তখনই বুঝে যান যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে, পরে জিয়া নিজেও যুদ্ধে যোগদান করেন।
জিয়া জীবিত অব¯'ায় কোনদিন নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবী না করলেও তার মৃত্যুর পর মোহাসেবীর চরমে পৌছে জিয়ার সাঙ্গপাঙ্গরা তাকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে জাতির সামনে উপ¯'াপন করতে শুরু করে। আর কিছু লোক তা মেনে নিয়ে সত্য হিসেবে জাতিকে জানান দেয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে জিয়া সব বেতন-ভাতা পেয়েছেন মুজিবনগর সরকার হতে কিš'ু পাকি¯-ান প্রীতির কারণে তিনি কয়েকবার সরকারের সাথে ঝামেলা করেন যদিও মতাš-রে অনেকে বলেন জিয়া যুদ্ধে পাকি¯-ানের পক্ষে কাজ করতেই বেশী আগ্রহী ছিলেন।
এদিকে খালেদা জিয়া ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে আইএসআইয়ের আরেক অন্যতম প্রধান বিশ্ব¯- ব্যক্তি জেনারেল জানজুয়ার হেফাজতে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়। ইতিহাস বড়ো নির্মম। এই জিয়াই পরে খালেদাকে ঘরে তুলতে চায়নি, পরে বঙ্গবন্ধুর অনুরোধে জিয়া খালেদাকে ঘরে তুলে। উল্লেখ্য জিয়াউর রহমান ১৯৭৪ সালে সাপ্তাহিক বিচিত্রায় তার একটি লেখায় ”একটি জাতির জন্ম” স্বীকার করেন বঙ্গবন্ধুই স্বাধীনতার ঘোষক। অথচ বিএনপি জিয়াকে ঘোষক বানানোর হাস্যকর খেলায় আজো লিপ্ত।
হায় বিএনপি নেতৃবৃন্দের নৈতিকতা আর মানসিকতা!
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে ইতিহাসের নির্মম হত্যাকান্ডে জিয়ার সরাসরি সংশ্লিষ্টতাও প্রমাণিত। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। জিয়া ক্যুর মাধ্যমে ক্ষমতায় বসে পাকি¯-ানে জিয়াউল হকের সাথে আবার পুরানো বন্ধুত্বের যোগাযোগ শুরু করেন। জিয়ার আমলে সশস্ত্র বাহিনীতে ১৯ টির মতো ক্যু হয়। জিয়া হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা আর্মি অফিসারকে বিনাবিচারে ক্যাঙ্গারু কোর্টের মাধ্যমে হত্যা করেন।
১৯৮৭ সালে বিমানবাহিনী কতৃর্ক প্রকাশিত ’বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ইতিহাস’ গ্রšে' বলা হয়,্ এক বিমানবাহিনীতেই জিয়া ৫৬১ জন অফিসার হত্যা করে। জিয়া মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের হত্যার ফাইলে সই না করে সকালের না¯-া করতেন না। ঢাকা কুমিল্লা, বগুড়া, রাজশাহী সহ বিভিন্ন ক্যান্টমেন্টে হাজার হাজার সেনাসদস্যদের জিয়া ক্যু অপচেষ্টার অপরাধে হত্যা করে। তার সময়ে মুক্তিযোদ্ধা দেশপ্রেমিক অফিসারদের হত্যা তিনি করতেন আইএসআই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ নির্দেশেই। দীর্ঘদিনের আইএসআই কানেকশন তাকে বর্হিবিশ্বে সুবিধা পেতে সাহায্য করে, তার ক্যুর বৈধতা পেতে সহায়তা করে।
পাকি¯-ানের দি হেরাল্ড (করাচি) পত্রিকায় ১৯৯১ সালের ডিসেম্বর সংখ্যায় সেসময়ের একজন আইএসআই কর্মকর্তার বরাতে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিলো যে জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত প্রথমে জাগদল ও পরে বিএনপি গঠনে মুখ্য ভূমিকায় ছিলো আইএসআই।
জিয়া হত্যার পর বিএনপির দ্বায়িত্ব খালেদা জিয়া নিলেও তিনিও সেই আইএসআই কানেকশন অব্যাহত রাখেন। ১১৯১ সালে খালেদা জিয়া সাধারণ নির্বাচনে আইএসআইয়ের কাছ থেকে ৫০ কোটি রূপী নেন। ১৪ মার্চ পাকি¯-ানের সুপ্রীম কোর্টে আইএসআই ইস্যুতে এক মামলার শুনানিতে সাবেক আইএসআই প্রধান আসাদ দূররানী এই অর্থ প্রদানের কথা স্বীকার করেন। পাশাপাশি স¤প্রতি লন্ডন হতে প্রকাশি ডেইলি মেল পত্রিকার অনলাইন প্রতিবেদনে বলা হয়, আইএসআই সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ৫০ কোটি রুপী দেয়।
এ তহবিল ব্যবহার করে বিএনপি নির্বাচনে জয়লাভ করে ও সরকার গঠন করে। প্রকাশিত সংবাদে আরো বলা হয়, ১৯৯১-১৯৯৬ ও ২০০১-২০০৬ সাল পযšর্- বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় আইএসআই বাংলাদেশে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। আদালতে জানানো হয়, বিএনপি শাসনা বলে আইএসআই জামাত, বিএনপিকে সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশে বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্র“প গুলোর সাথে যোগাযোগ রাখে ও সহায়তা করে। দুবাই থেকে প্রকাশিত খালিজ টাইমস ৩ মার্চ এই প্রতিবেদনে এমনই তথ্য প্রকাশ করে। পাকি¯-ানের সাবেক সেনা প্রধান জেনারলে আসলাম বেগও সুপ্রীম কোর্টে হলফনামাতেও এসব বলেন।
আইএসআইয়ের শুধু ১৯৯১ সালের নির্বাচনের অর্থ সহযোগিতা প্রদানের কথা প্রকাশিত হয়েছে তবে বিএনপি আর জিয়া পরিবার আরো কত অর্থ নানাভাবে আইএসআই থেকে পেয়েছে বা পাচ্ছে তাও প্রকাশ পাওয়া জরুরি। অদৃশ্য কতো অর্থ ও সুবিধা বিএনপি আইএসআ্ই থেকে পায় জাতির কাছে তা উন্মোচিত হওয়া দরকার। ২০০১ সালের নির্বাচনেও এমন ঘটাও অস্বাভাবিক নয়। ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর জিয়া পরিবার আইএসআইয়ের সাথে সম্পর্ক রেখেছে কারণ আইএসআইয়ের অন্যতম ঘনিষ্ঠ দাউদ ইব্রাহীমের সাথে দুবাইতে তারেক রহমান যে দেখা করেছেন তা দেশবাসী জানে। আইএসআই, জিয়া পরিবার বিএনপির মাঝে সুসম্পর্ক অচ্ছেদ্য।
গত জোট আমলে দেশে ধর্মান্ধ মৌলবাদী শক্তির ব্যাপক উত্থান, বোমাবাজি, জেএমবির অপকর্ম, মানুষ হত্যা, চট্ট্রগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র আটক, ২১ আগস্ট ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নেতাকর্মী হত্যা, ২০০৫ সালে ১৭ আগস্ট ৬১ জেলার ৫০০ ¯'ানে একযোগে বোমা হামলা ঘটনাসমূহের সাথে জঙ্গিসংগঠন, বিএনপি আর আইএসআইয়ের সংশ্লিষ্টতা ছিলো বলে মনে করতো দেশের জনগণ।
দেশে যুদ্ধাপরধীদের বিচার চলছে, সমগ্র জাতি চায় একাত্তরের ঘৃণিত কুখ্যাত রাজাকার আলবদর আলশামসদের বিচার হোক। যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে, গণহত্যা চালিয়েছে তাদের বিচার জাতির দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা। সরকার বিচারের জন্য ট্রাইবুন্যাল গঠন করে যুদ্ধাপরাধীদের গ্রেফতার করে বিচার করছে। আর বিএনপি ও বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া সরাসরি যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিয়েছেন, তাদের ছেড়ে দিতে বলছেন।
ট্রাইবুন্যাল বন্ধ করে দিতে বলছেন, বিএনপির সিনিয়র আইনজীবীরা যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে মামলা লড়ছেন। বিএনপি জামাতের এসব কর্মকান্ডের সাথে আইএসআইয়ের যোগসূত্র আছে বলে অনেকে মত দেন। জামাত বিএনপির জোটই তার প্রমাণ। বিএনপি জামাত জোট দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ধ্বংসে তৎপর-জাতির কাছে আজ তা পরিস্কার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।