আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গডফাদার-৩৬

টেলিফোনের রিসিভার রেখেই জামালের মন দুশ্চিন্তায় ভরে গেল। সমস্ত শরীর ঘামতে লাগল। ফেন্সিডিল, গাঁজা, হেরোইনের ব্যবসা জামাল অনেকদিন থেকে চালিয়ে আসছে কিন্তু কোনদিন কোন দুঃসংবাদ শুনেনি তাই আজ টেলিফোনে এমন দুঃসংবাদ শুনে সে ভেঙ্গে পড়ল। সে চেয়ার ছেড়ে উঠে পায়চারী করতে লাগল। এমনসময় জাহিদ তার চেম্বারে ঢুকলো।

তার মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, চুলগুলো এলোমেলো, মুখ শুকনো যেন ঝড় পেরিয়ে আসা এক বিধ্বস্থ পাখি। ডানা ঝাপটে জামালের চেম্বারে ঢুকলো। জাহিদের মুখের দিকে তাকিয়ে জামালের বুক কেঁপে উঠল। একটা অজানা আশংকায় গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল। জামাল কোনকিছু না জানার ভান করে জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে জাহিদ? তোমার এ অবস্থা কেন? জাহিদ একটা ঢোক গিলে বলল, ভাইজান ফেন্সিকুইন মর্জিনা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে, সে পুলিশের কাছে আমার নামও বলে দিয়েছে, আমার মনে হয় পুলিশ আমাকে খুঁজছে।

জামাল কয়েকমুহূর্ত চুপ করে রইল। সে নিজেই ভেঙ্গে পড়েছে জাহিদকে সে কী বলে সান্ত্বনা দিবে? তবু জাহিদকে আশ্বস্থ করার জন্য বলল, জাহিদ তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে মর্জিনা তোমার নাম বলল আর পুলিশ এসে তোমাকে ধরে নিয়ে গেল, তোমার জেল হলো, এত ভীরু হলে তো চলবেনা। একটা কথা মনে রেখো তুমি ক্ষমতাসীন দলের লিডারের সঙ্গে কাজ কর। পুলিশ আমার এখান থেকে তোমাকে নিয়ে যাওয়ার সাহস পাবে না। জাহিদ বলল, ভাইজান আমি বলছিলাম পুলিশের সঙ্গে কিছু একটা সিস্টেম করা দরকার তা না হলে তারা ঝামেলা করবে।

সিষ্টেম করতে করতেই তো এমন দুর্ঘটনা ঘটল। তুমি বরং কয়েকদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকো, অফিসে আসার দরকার নেই, বাসায় কিংবা আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে না, আমি নিজেই প্রতিদিন তোমার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করবো। জি ভাইজান। জামাল ড্রয়ার থেকে একটা এক'শ টাকার নোটের বান্ডিল বের করে জাহিদের হাতে দিয়ে বলল, তুমি এবার এসো জাহিদ। জাহিদ বের হয়ে গেলে জামাল আবার গভীর চিন্তার মধ্যে ডুবে গেল, সে জীবনে এই প্রথম এত জটিল সমস্যার মধ্যে পড়ল।

অনেকক্ষণ পর একটা সিগারেট টানতে লাগল। চিন্তার ব্যাঘাত ঘটল জাকিরের দরজা খোলার শব্দে, ভাইজান পুলিশ এসেছে আপনার সঙ্গে দেখা করতে চায়। জামালের হৃৎপিন্ড দ্রুতগতিতে চলতে লাগল। একবার সিলিংয়ে ফ্যানটা দেখল ফ্যানটা বেশ জোরে চলছে তবু তার শরীর থেকে ঘাম ঝরছে। জামাল তোয়ালে দিয়ে একবার মুখের ঘাম মুছে বলল, আসতে বলো।

জাকির চলে গেলে একজন পুলিশ অফিসার ভিতরে ঢুকে তার পরিচয় দিল। জামাল জিজ্ঞেস করল, হঠাৎ আপনি আমার চেম্বারে কী মনে করে? পুলিশ অফিসারে কণ্ঠস্বর কিছুটা কর্কশ, জাহিদ আপনার ফার্মে চাকরি করে? হ্যাঁ। ওর বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। জামাল না জানার ভান করে বলল, জাহিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ? কী অভিযোগ? জাহিদ ফেন্সিসিডিল, হেরোইন ও গাঁজার ব্যবসার সাথে জড়িত। কিন্তু ওতো আমার ফার্মে আমার ব্যবসা দেখাশুনা করে।

তারমানে কি এই নয় যে আপনার মাদক ব্যবসাটাও সে-ই দেখাশুনা করে? জামাল রেগে গেল, দেখুন না জেনে কথা বলবেন না আমার ধান চাউলের ব্যবসা, বাস-ট্রাকের ব্যবসা, ঠিকাদারী ব্যবসা আছে, জাহিদ এসব দেখাশুনা করে এর বাইরে ও যদি কিছু করে থাকে সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। পুলিশ অফিসার দাঁত কড়মড় করল, জানেন কী না সেটা রিমাণ্ড নিলেই জানা যাবে। দেখুন পুলিশে চাকরি করেন দেখে সবাইকে ক্রিমিনাল ভাববেন না, আমি একজন ব্যবসায়ী, সমাজ সেবক, রাজনীতিবিদ এসব কিছুই যদি বাদ দেই, যদি মনে করি আমি একজন সাধারণ নাগরিক তারপরও আমার সঙ্গে আপনার ভদ্রভাবে কথা বলা উচিত। একটা গণতান্ত্রিক দেশে পুলিশকে জনগণের সঙ্গে কীভাবে ব্যবহার করা প্রয়োজন তা আপনার জানা উচিত। আমার কোন অপরাধ নেই, জাহিদের অপরাধের সঙ্গে আমার সংশ্লিষ্টতার কোন প্রমাণ নেই তারপরও আমাকে রিমাণ্ডের ভয় দেখাচ্ছেন।

আপনার ধারণা আপনি বললেন আর আমি স্বেচ্ছায় আপনার সঙ্গে চলে গেলাম। এত সহজ না মিঃ বুঝলেন? ইচ্ছা করলে আমি আপনাকে এখনই ফিফটি ফোরে এ্যারেস্ট নিয়ে যেতে পারি কিন্তু তা আমি করবো না। জামাল প্রচণ্ড রেগে গেল, দেখুন আবারো আপনি আমাকে আইনের ভয় দেখাচ্ছেন? এখন আমার কি মনে হচ্ছে জানেন? কী মনে হচ্ছে, বলুন? আসলে জনগণ ঠিকই আইন মানে আপনারা যারা আইন প্রয়োগের দায়িত্ব পালন করেন তারাই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন। পুলিশ অফিসার এবার বিনয়ের সঙ্গে বললেন, সরি কিছু মনে করবেন না, দেখুন জাহিদ অপরাধী, আর একজন অপরাধীকে আইনের কাছে সোপর্দ করা সকলের দায়িত্ব। দয়া করে বলবেন কী জাহিদ এখন কোথায়? জামাল গম্ভীর স্বরে বলল, জাহিদ অসুস্থ তিনদিন আগে ও ছুটি নিয়ে বাসায় বিশ্রাম নিচ্ছে, এখনো সে সুস্থ কি না তা আমি জানি না।

আমি যদি বলি জাহিদ অসুস্থ নয় এবং আজকেও সে এখানে এসেছিল আপনি তাকে সরিয়ে দিয়েছেন। তবে আপনি তখন তাকে ধরলেন না কেন? দেরিতে জানতে পেরেছি। বেশ তো এখনো তাকে ধরুন, অপরাধীকে খুঁজে বের করা পুলিশের দায়িত্ব, সেজন্য জনগণ মাসে মাসে পুলিশকে বেতন দেয়। বুঝেছি আপনি সহযোগিতা করবেন না। পুলিশকেই খুঁজে বের করতে হবে, সরি টু ডিসটার্ব ইউ, বলে পুলিশ অফিসার চলে গেলেন।

পুলিশ অফিসার চলে যাবার পর জামাল চোখ বুজে চেয়ারে বসে রইল। তার চোখের সামনে ভেসে উঠল জাহিদের প্রতিচ্ছবি। জামাল স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে পুলিশ অফিসার জাহিদকে এ্যারেস্ট করে রিমান্ডে নিয়েছে। রিমাণ্ডে পুলিশকে তার মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকাসহ জামালের সম্পৃক্ততার কথাও বলে দিয়েছে, পুলিশ হন্য হয়ে জামালকে খুঁজছে। চলবে.. গডফাদার-০১  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।