বাংলাদেশের মানুষ চিকিত্সা-ব্যয়ের ৬২ শতাংশ নিজেই বহন করে। এই ব্যয় মেটাতে গিয়ে মধ্যবিত্তরা দরিদ্র হয়ে পড়ে। আর যারা দরিদ্র, তারা নিঃস্ব হয়ে যায়। এ দেশে দারিদ্র্যের অন্যতম কারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। এই সমস্যা উত্তরণে সহজ পথ নেই।
আজ শনিবার স্বাস্থ্যসেবা-ব্যয়, দারিদ্র্য এবং সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিষয়ক সেমিনারে অর্থনীতিবিদ ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এ কথা বলেন। রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে বেসরকারি সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এই সেমিনারের আয়োজন করে।
পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান অনুষ্ঠানের শুরুতে বলেন, অসুস্থ হয়ে পড়লে ধনী-দরিদ্র সবাইকে খরচের ধাক্কা সামলাতে হয়। এই ধাক্কায় দারিদ্র্যের ঝুঁকি আছে। বাংলাদেশের মানুষ স্বাস্থ্য-ব্যয়ের ৬২ শতাংশ নিজেই বহন করে।
তিনি বলেন, থাইল্যান্ড ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা’ (ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ) কর্মসূচি বাস্তবায়ন করায় সে দেশে ব্যক্তির খরচ ১৯ শতাংশে নেমে এসেছে।
সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার ধারণা ও পৃথিবীব্যাপী এ বিষয়ে কী কর্মকাণ্ড হচ্ছে, তা তুলে ধরেন ব্র্যাকের ভাইস-চেয়ার চৌধুরী মোস্তাক আহমেদ। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতে অদক্ষতা ও অপচয় কমানো, ব্যক্তির পকেটের খরচ কমানো এবং স্বাস্থ্যসেবার জন্য তহবিল বাড়ানো সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে মূল তিনটি চ্যালেঞ্জ।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক বলেন, শতাংশের হিসাবে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ প্রতিবছর কমছে। এ বছরও তিনি ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আমলারা এই বরাদ্দ বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়েছিলেন, লাভ হয়নি।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়াতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, জনস্বাস্থ্যবিদ ও অর্থনীতিবিদদের একজোট হয়ে সরকারের ওপর মহলে চাপ দিতে হবে।
পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের পুষ্টির নিশ্চয়তার জন্য সরকারের পক্ষে রেশন চালুর সুপারিশ করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আদালত ভবন যেমন সুবিচারের নিশ্চয়তা দেয় না, হাসপাতাল থাকলেই তা সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে না। ’
বাংলাদেশে ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দীন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সূচকের চেয়ে স্বাস্থ্য সূচক এগিয়ে। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি ও এনজিওদের সম্পৃক্ত করার সুপারিশ করেন তিনি।
বিশিষ্ট চিকিত্সক রশীদ-ই-মাহবুব বলেন, এ দেশে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার ধরন কী হবে, তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্ক হওয়া দরকার।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ে এটি ছিল প্রারম্ভিক সেমিনার। এ বিষয়ে আরও সেমিনার ও আলোচনা হবে। দিশারি প্রকল্পও হাতে নেওয়ার সম্ভাবনা আছে। এই কাজে আর্থিক সহায়তা করছে রকেফেলার ফাউন্ডেশন।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন হেলথ ইকোনমিকস ইউনিটের মহাপরিচালক আশাদুল ইসলাম, পিপিআরসির পরামর্শক এ এম এম নাসিরউদ্দীন, ব্র্যাক ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের পরিচালক সৈয়দ হাসমী, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু শল্য বিভাগের চিকিত্সক তাহমিনা বানু। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।