আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ড. ইউনূস যদি একটি বিশ্বমানের বিদ্যাপীঠ গড়তেন!

ড. ইউনূস যদি একটি বিশ্বমানের বিদ্যাপীঠ গড়তেন! ড. মোঃ শ ফি কু ল ই স লা ম আমার জানা মতে, সব নোবেল লরিয়েট ছোট-বড় যাই হোক না কেন জ্ঞান চর্চার জন্য একটি আদর্শ বিদ্যাপীঠ তৈরি করেছেন। সেই বিদ্যাপীঠে হচ্ছে তাদের গবেষণা বিষয়ক নতুন চিন্তা-চেতনা ও ধ্যান-ধারণা তৈরি করার চর্চা কেন্দ্র। প্রজš§ থেকে প্রজš§ সাহিত্য, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, চিকিৎসা ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে এ বিদ্যাপীঠ পালন করছে অগ্রণী ভূমিকা। দেশের ক্রান্তিলগ্নে এ বিদ্যাপীঠ পালন করবে শান্তির দূতের ভূমিকা। আমাদের ড. মুহাম্মদ ইউনূস যদি আন্তর্জাতিক মানের একটি বিদ্যাপীঠ গড়ে তুলতেন! ছোটবেলায় পড়েছি শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড।

শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি মেরুদণ্ড বা ভিত সোজা করে দাঁড়াতে পারে না। পৃথিবীর সব উন্নত দেশের শতভাগ জনগণই শিক্ষিত। আমাদের দেশে শিক্ষার হার অক্ষরজ্ঞান পর্যন্ত ধরলে দাঁড়াবে শতকরা প্রায় ৬৫ ভাগ। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পড়ার বিষয়টি ধরলে এ হার হবে শতকরা ১০ ভাগের কম। দেশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৬২টি সদ্য অনুমোদন প্রাপ্তসহ।

মেডিক্যাল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে রয়েছে আরও ৭৫টি। গবেষণা প্রতিষ্ঠান আছে কয়েক ডজন মাত্র। বিশ্ববিদ্যালয় যে হারে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে সে হারে গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে না বললেই চলে। আমাদের দেশের মানুষের ধারণা, গবেষণা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে শ্বেতহস্তী। এসব প্রতিষ্ঠান সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কোন কাজে আসছে না ইত্যাদি নেতিবাচক অনেক কথা।

যদিও কৃষি গবেষণায় উল্লেখযোগ্য সাফল্যের ফলে জনবহুল ছোট এ দেশে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়নি। এ কথা সর্বজনবিদিত যে, শিক্ষার পাশাপাশি গবেষণায় অগ্রসর না হলে জাতি কখনও উন্নতির শিখরে পৌঁছতে পারে না। হঠাৎ করে আঁতকে উঠি যখন দেখি, সরকারি-বেসরকারি মিলে মেডিকেলসহ দেশে প্রায় ১২৯টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। খানিকক্ষণ পর আবার ভাবি, ১৬ কোটি মানুষের জন্য চিন্তা করলে তা খুব বেশি নয়। গুণগত মানের কথা চিন্তা করলে সংখ্যার কথা নাইবা উল্লেখ করলাম।

কিন্তু বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান কোথায় তা সচেতন জনগণের কারোরই অজানা নয়। দিনে দিনে আমরা কোন দিকে ধাবিত হচ্ছি তাও বোধগম্য না হওয়ার কথা নয়। ড. মুহাম্মদ ইউনূস শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। তিনি একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদ। আমি বিনম্রভাবে বলব, তিনি একজন জ্ঞানপিপাসু দূরদর্শীসম্পন্ন ব্যক্তি।

আমার মতো ক্ষুদ্র ব্যক্তির পক্ষে তার সম্পর্কে মূল্যায়নসূচক কোন কথা বলা সমীচীন হবে না। অর্থনীতি থেকে শুরু করে সাহিত্য, বিজ্ঞান, প্রযুক্তিÑ সব ক্ষেত্রে তিনি পারদর্শী। একটা অনুন্নত জাতিকে জ্ঞান-বিজ্ঞানে কিভাবে উন্নত জাতির সঙ্গে সমন্বয় সাধন করতে হয় তিনি ভালোভাবেই জানেন। এ প্রসঙ্গে আমি দু’একটা উদাহরণ টানতে চাই। পাকিস্তানের নাগরিক প্রফেসর আবদুস সালাম পদার্থবিদ্যায় নোবেল পান ১৯৭৯ সালে।

পাকিস্তানের দুর্ভাগ্য যে, তিনি সেখানে বিশ্বমানের কোন বিদ্যাপীঠ তৈরি করতে পারেননি। তিনি পেরেছেন ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ঈবহঃৎব ভড়ৎ ঞযবড়ৎবঃরপধষ চযুংরপং (আইসিটিপি) নামক বিশ্বমানের একটি প্রতিষ্ঠান ইতালিতে গড়তে। আইসিটিপি হচ্ছে পদার্থবিদ্যার সব তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক শাখার আধুনিক জ্ঞান উৎকর্ষ সাধনের অন্যতম চর্চা কেন্দ্র। ইতালির নাগরিকদের গর্বের প্রতিষ্ঠান আজকের এ আইসিটিপি। আইসিটিপিতে সব সময়ই সেমিনার, ওয়ার্কশপ, কনফারেন্স নোবেল লরিয়েটদের আনাগোনায় মুখরিত থাকে।

সেখানে বিশ্বের সব দেশের বিজ্ঞানীরা পদার্থবিজ্ঞান ও সংশ্লিষ্ট সব শাখায় মাস্টার্স, পিএইচডি ও পোস্ট ডক্টরাল বিষয়ক গবেষণা করছেন। আজ কলকাতায় শান্তিনিকেতন আছে বলে রবীন্দ্র চর্চা হচ্ছে এবং বহু রবীন্দ্র শিল্পী তৈরি হচ্ছে। আবহমানকাল ধরে এ শান্তি নিকেতন রবীন্দ্র আলো জ্বালিয়ে যাবে দেশ থেকে দেশান্তরে। রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকবে বিশ্বের মানসপটে। কে বলতে পারে, এ শান্তিনিকেতন থেকেও সৃষ্টি হতে পারে আরও অনেক রবীন্দ্রনাথ।

আমার জানা মতে, সব নোবেল লরিয়েট ছোট-বড় যাই হোক না কেন জ্ঞান চর্চার জন্য একটি আদর্শ বিদ্যাপীঠ তৈরি করেছেন। সেই বিদ্যাপীঠে হচ্ছে তাদের গবেষণা বিষয়ক নতুন চিন্তা-চেতনা ও ধ্যান-ধারণা তৈরি করার চর্চা কেন্দ্র। প্রজš§ থেকে প্রজš§ সাহিত্য, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, চিকিৎসা ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে এ বিদ্যাপীঠ পালন করছে অগ্রণী ভূমিকা। দেশের ক্রান্তিলগ্নে এ বিদ্যাপীঠ পালন করবে শান্তির দূতের ভূমিকা। আমাদের ড. মুহাম্মদ ইউনূস যদি আন্তর্জাতিক মানের একটি বিদ্যাপীঠ গড়ে তুলতেন! গ্রামীণ ব্যাংকের দারিদ্র্য-বিমোচন কাজকে আরও কার্যকরী ও শক্তিশালী করতেও এ ধরনের বিদ্যাপীঠের প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি।

দলমত নির্বিশেষে সবার কাছে এ বিদ্যাপীঠ হবে দেশের আলোকবর্তিকা, অর্থনীতির নিত্যনতুন ধ্যান-ধারণা ও কলাকৌশলের তথ্যভাণ্ডার। বিশ্বের সব খ্যাতিমান বিজ্ঞানী সেখানে আসবেন, জ্ঞান চর্চা করবেন। নোবেল লরিয়েটরা আসবেন এবং দেবেন নিত্যনতুন তথ্য। ধীরে ধীরে দেশ আধুনিক অর্থনীতির তথ্যভাণ্ডারে আলোকিত হয়ে উঠবে এবং দেশ পাবে অনেক ইউনূস। আমার বিশ্বাস, তিনি যদি চেষ্টা করেন, এ মানের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা অসম্ভব নয়।

এ ধরনের প্রতিষ্ঠান আমাদের আজ বড়ই প্রয়োজন। আমার শুভ কামনা থাকবেÑ ড. ইউনূস সুস্থ থাকবেন ও দীর্ঘায়ু লাভ করবেন এবং দেশ-বিদেশের মেধাবীদের জন্য আমাদের মতো অনুন্নত দেশে এমআইটি/হার্ভার্ড/অক্সফোর্ড/ক্যামব্রিজের মতো বিদ্যাপীঠ তৈরি করে জ্ঞানচর্চার সুযোগ করে দিয়ে যাবেন। ফলে দেশ ও জাতি তাকে আজীবন স্মরণ রাখবে। ড. মোঃ শফিকুল ইসলাম : মুখ্য প্রকৌশলী, নিউক্লিয়ার সেইফগার্ডস ও সিকিউরিটি বিভাগ, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশ Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।