জুঁইয়ের বিয়ে হয়েছে ধুমধাম করে। বিয়ের যাবতীয় খরচ বহন করেছে জামাল। অবশ্য জুঁইয়ের বিয়েতে অর্থ ব্যয় করার কাজটা মহৎ হলেও এর মধ্যে জামালের কয়েকটা অসৎ উদ্দেশ্যে প্রচ্ছন্নভাবে লুকিয়ে ছিল। জামালের উদ্দেশ্য ছিল জুঁইকে একটা নিম্নবিত্ত বা স্বল্প আয়ের কিংবা কোন বেকার ছেলের সাথে বিয়ে দিতে পারলে এবং জুঁইয়ের স্বামীকে তার ফার্মে চাকরি দিয়ে অথবা কিছু টাকা দিয়ে ছোট খাট ব্যবসার কাজে লাগিয়ে দিলে সে তার অধীনস্থ হয়ে থাকবে এবং জুঁই নিজেও সারা জীবন তার উপপত্নী বা রক্ষিতা হয়ে থাকবে। সেজন্য জুঁইয়ের স্বামীর যোগ্যতা ও সামর্থ্য নিয়ে জাহিদ বা তার মা প্রশ্ন তুললেও জামাল হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলেছে, জাহিদ তুমি আসলে আমার উপর আস্থা রাখতে পারছ না, তুমি বলো একটা ছেলেকে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষমতা কি আমার নেই?
জামালের কথায় জুঁই তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে কিছুটা অনুমান করতে পারলেও মুখে কিছুই বলেনি আর জামালের কথায় জাহিদ এবং তার মা বেশ খুশি হলো।
তাছাড়া জুঁইয়ের বিয়েতে জামালের আরো একটা অসৎ উদ্দেশ্য ছিল তা হলো জুঁইয়ের বিয়ের পর যুথির সঙ্গে অবাধ মেলামেশার বাধাও অপসারিত হওয়া।
জুইঁয়ের বিয়ের পর জামালের আরো সুবিধা হলো। সেদিন জামাল যুথিদের বাসায় দরজা নক করতেই যুথি দরজা খুলে দিয়ে বলল, ভাইয়া মা তো বাসায় নেই, বাসায় আমি একা।
যুথির ধারণা ছিল তার একা থাকার কথা শুনে জামাল বাসায় ঢুকবে না কিন্তু জামাল তা করল না সে বাসায় ঢুকতে ঢুকতে বলল, কোথায় গেছে?
পাশের বাসায়, চাচী অসুস্থ তো তাই দেখতে গেছে।
খালা নেই তো কী হয়েছে? তুমি তো আছ।
বলতে বলতে জামাল রুমে ঢুকল। যুথি জামালের কাছে গেল না একা বাসায় থাকা অবস্থায় জামালের সঙ্গে গল্প করা সমীচিন মনে করেনি। তাই সে পাশের রুমে চলে গেল।
কয়েকমিনিট পরেই একরকম হঠাৎ করে শুরু হলো মেঘের গর্জন, বিদ্যুতের ঝলকানি। মেঘের গর্জনের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো প্রলয়ংকরী ঝড়।
কাছেই হয়ত কোথাও বজ্রপাত হলো তারপর বিদ্যুত বন্ধ। সমস্ত শহর জুড়ে নেমে এলো গাঢ় অন্ধকার। পাশের রুমে অন্ধকারে যুথি চুপচাপ বসে তার মা আসার জন্য অপেক্ষা করল আর পাশের রুম থেকে জামাল কখন যেন এসে পড়বে, যুথির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তার অনেকদিনের কামনাকে চরিতার্থ করবে সে ভয়ে যুথি ঘরের এক কোনে জড়সড় হয়ে বসে রইল।
দরজা ঠেলে কে যেন যুথির রুমে ঢুকল। বিদ্যুতের ঝলকানিতে যুথি ষ্পষ্ট চিনতে পারল, হ্যাঁ জামালই তো।
জামাল তার দিকে এগিয়ে এলো। ভয়ে যুথি যেন কাঁপতে শুরু করল, সর্বস্ব হারাবার ভয়ে তার হৃৎপিন্ড যেন দ্রুতগতিতে চলতে শুরু করল।
যুথি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো। সে একবার দরজার দিকে তাকালো কিন্তু জামাল এমনভাবে দাঁড়িয়েছে যে তার রুম থেকে বের হওয়ার কোন পথ নেই, সে কাঁপা কাঁপা স্বরে বলল, ভাইয়া আপনি বসুন প্লিজ, আমি মাকে ডাক দিচ্ছি।
জামাল যুথির একটা হাত শক্তভাবে ধরে ফেলল, বসো, তোমাকে কাউকে ডাকতে হবে না।
তাহলে আপনি বসুন, আমি নাস্তা তৈরি করছি।
এই ঝড় বৃষ্টিতে তোমার কিছু করার দরকার নেই।
জামালের চোখ দু'টো লোভে চিকচিক করছে, এ চোখ যেন কোন মানুষের চোখ না, মানুষের মাংস ভক্ষণ করা কোন ক্ষুধার্ত বাঘের চোখ। যুথি হাত ছাড়াবার চেষ্টা করল কিন্তু পারল না।
যুথি কোন কথা বলল না, সে মাথা নত করে দাঁড়িয়ে রইল।
জামাল ডান হাত দিয়ে যুথির চুলগুলো পিছনের দিকে সরিয়ে দিয়ে থুতনি উঁচু করে ধরে চোখে চোখ রাখল, রুপের অহংকার না? আমাকে এভয়েড করো?
যুথি কোন কথা বলল না, অপরাধ না করেও অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে রইল।
জামাল আবার বলতে শুরু করল, আমার কী নেই বলো? টাকা, ক্ষমতা সব আছে তারপরও আমি শুধু তোমার মতো একটা মেয়ের কাছে হাত পাতছি কীসের জন্য তুমি বোঝ না? আর তুমি! তুমি আমাকে অহংকার দেখাচ্ছ, না? তুমি জানো আমি ইচ্ছা করলে, আমি জোর করলে তোমার সব অহংকার দুমড়ে-মুচড়ে দিতে পারি কিন্তু আমি জোর করি না, আমি জয় করার চেষ্টা করি। জোর করার মধ্যে আনন্দ নেই, তৃপ্তি নেই।
যুথি মাথা নত করে পাঁয়ের আঙ্গুল দিয়ে মেঝে টিপতে লাগল।
জামালের কণ্ঠস্বর একটু নরম হলো, আমি তোমাকে জয় করতে চাই, তুমি কী চাও বলো? টাকা? অর্নামেণ্টস? বলো কী চাও? আমি শুধু তোমাকে চাই।
তুমি আমাকে প্রেম দিবে, ভালোবাসা দিবে। তুমি বিশ্বাস করো, আমি কাউকে কিছু বলবো না, কেউ কিছু জানবে না, শুধু তুমি আর আমি জানবো।
জামাল যুথির হাতে মৃদু চাপ দিল, থুতনি একটু ডানে-বাঁয়ে ঝাকালো, বলো কী চাও বলো?
যুথি বুক এখনো তোলপাড় করছে, আতঙ্কে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। সে কিছু বলতে গিয়ে একটা ঢোক গিলল।
জামাল অগ্রহের সঙ্গে বলল, বলো, বলো।
যুথি কাকুতির সুরে বলল, আমার কিচ্ছু চাই না, আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ!
জামাল যুথিকে একটা ঝাঁকি মেরে বলল, তোমাকে ছেড়ে দেব না?
যুথি মাথা নেড়ে সায় দিল।
এতক্ষণ আমি তোমার সঙ্গে খুব ভালো আচরণ করেছি, তুমি আমার খারাপ আচরণ দেখোনি, এখন দেখবে, বলে জামাল যুথির ওড়না কেড়ে নিয়ে মেঝেতে ফেলে দিল। মুহূর্তেই সে যেন হিংস্র হয়ে উঠল।
যুথি কাঁপতে লাগল, তার দাঁতে দাঁত ঠকঠক করছে।
জামাল যুথিকে জোর করে বুকে জড়িয়ে ধরে বুকের মধ্যে দলিত-মোথিত করতে লাগল।
যুথি নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করল কিন্তু জামাল তাকে শক্তভাবে বুকে চেপে রেখেছে। যুথি নিজেকে মুক্ত করার কৌশল খুঁজতে লাগল। না তার মাথায় কোন বুদ্ধি এলো না। সে মনের মধ্যে সাহস সঞ্চয় করে রাগান্বিত স্বরে বলল, আমিও আপনার সঙ্গে অনেক ভালো আচরণ করেছি, আমাকে ছেড়ে দিন নইলে আমি চিৎকার করবো, সবার সামনে আপনার মুখোশ খুলে দিবো।
জামাল চাপাস্বরে বলল, চিৎকার করবে, না? চিৎকার করলে আমার মুখোশ খুলে যাবে, না? আর তোমার কিছু হবে না?
হোক, আমার যা হয় হোক আপনি ভেবেছেন আমি মান-সম্মানের ভয়ে চুপ করে থাকবো? আর না হয় ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করবো? চুপ করে থাকা কিংবা আত্মহত্যা করা দুটোই তো হেরে যাওয়া, আমি হেরে যাবো না, আপনার মতো মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা শয়তানগুলোকে সবার চেনা উচিত।
আর সে কাজটা আমিই করবো, আমাকে ছেড়ে দিন নইলে এখনি আমি চিৎকার করবো, বলে যুথি জোরে জামালকে একটা ধাক্কা দিল।
জামাল কিছুটা দূরে সরে গেল।
সে আবার কাছে আসতেই যুথি জোরে বাঁচাও শব্দের বাঁ-উচ্চারণ করতেই জামাল যুথির মুখে হাত দিয়ে বলল, প্লিজ চিৎকার করে নিজের সর্বনাশ করো না, আমি চলে যাচ্ছি তবে এতটা করা তোমার ঠিক হয়নি। নিজের জীবনকে এতটা রিস্কি করে তোলা তোমার ঠিক হয়নি।
আমারটা আমি বুঝবো, আপনি আর একটা কথাও বলবেন না, আপনি এই মুহূর্তে বেরিয়ে যান।
জামাল চলে যাবার পর যুথি বাইরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে তার বিছানায় বসে হাঁপাতে লাগল।
জামাল প্রভাবশালী, ক্ষমতাবান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী তাই প্রতিবেশীদের মধ্যে কানাকানি হলেও জামালের বিষয়ে কথা বলার মতো সাহস কারো নেই। উল্টো যুথিকেই সবাই চরিত্রহীন বলে কলংকের বোঝা ঘাড়ে চাপাবার চেষ্টা করবে। হুঁম আসলে যুথি নিজেকে রক্ষা করেছে অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে। তাহোক তার একটা আত্মতৃপ্তি আছে সে কোনকিছুর বিনিময়ে আপোষ করেনি।
নিজেকে রক্ষা করার জন্য সে যা করার তাই করেছে।
এতদিন জুঁইয়ের সাথে জামালের মেলামেশার জন্য যুথি শুধু জামালকেই দোষারোপ করেছে। জামাল দোষ করেনি এমন না, হয়ত তার মতো জুঁইকেও জামাল লোভ দেখিয়েছে, জোর করে ভোগ করার চেষ্টা করেছে কিন্তু জুঁই যদি প্রতিরোধ করার চেষ্টা করতো তবে হয়তো নিজেকে রক্ষা করতে পারতো। আজ একটা কথা ভেবে যুথির গর্ব হচ্ছে অন্য মেয়েরা যেখানে আপোষ করে যুথি সেখানে জয়ী হয়েছে।
যুথি একটা তৃপ্তির নিঃশ্বাস নিল।
চলবে..
গডফাদার-০১ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।