আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে মশিউর মামার রবিবার রাতের ঘটনার কিছু বিশ্লেষণ ......

আমি মতিঝিলে এক অফিসে কাজ করি । রবিবার রাতে কাজ শেষ হতে হতে বেশ দেরি হয়ে যাওয়ায় আর অফিস থেকে বের হইনি । বাইরের পরিস্থিতি বেশ খারাপ । বাসা থেকেও বলা হল অফিসে থেকে যাওয়াটাই নিরাপদ । তাই অফিসের চেয়ারটাকে খাট আর টেবিলটাকে বালিশ বানিয়ে ঘুম দেয়ার এক নিষ্ফল প্রচেষ্টা ।

কেউ কেউ সিগারেট শেষ হয়ে যাওয়ায় বেশ বিমর্ষ। তারা চাতকের মত অপেক্ষায় থাকছে কেউ কখন একটা সিগারেট ধরাবে আর তারা ভাগ বসাবে । বেশ কজন খুজে পেতে পুরনো এক পেটি তাস বের করে নিয়ে টুয়েন্টি নাইন খেলায় মশগুল । ডাক উঠছে - আঠারো ......উনিশ......বিশ । সবার মাঝে আলোচনা কি হবে এখন ।

আগুন দেখা যাচ্ছে বিমান অফিস থেকে ডাচ বাংলা ব্যাংকের সামনে পর্যন্ত । শাপলা চত্বর ঘিরে অবস্থান নিয়েছে হেফাজতের কর্মীরা । মতিঝিলের মেইন রাস্তার উপর কোন আলো নেই । শুধু এখানে ওখানে আগুন জ্বলছে । তার আলোয় যা দেখা যায় ।

রাত বারটার দিকে আমরা জেনে গেলাম শাপলা চত্বর খালি করার জন্য যে কোন ধরনের শক্তি প্রয়োগের নির্দেশ এসেছে । আধ ঘণ্টার মধ্যে একশন শুরু হবে । সবাই উৎকণ্ঠা বোধ করছে । কিন্তু সাড়ে বারটায় একশন শুরু হয় না । একটা বাজে - দেড়টা বাজে - দুইটা বাজে ।

একশন শুরু হয় সোয়া দুইটার দিকে । দশ হাজার পুলিশ - RAB - বিজিবি আক্রমন করে মতিঝিলের শাপলা চত্বর । বৃষ্টির মত তারা গুলি - টিয়ার সেল - রাবার বুলেট - সাউন্ড গ্রেনেড ব্যাবহার করতে থাকে নিরস্র কিছু ঘুমন্ত ক্লান্ত মানুষের উপর । সে সময়ের ঘটনা প্রবাহ - *মতিঝিলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছিল । *সারাদিন মিছিল মিটিঙের পর হেফাজতের কর্মীরা ছিল ক্লান্ত ।

*রাত ২ টার পর আক্রমন শুরু হয় । *আক্রমনে অংশ নেয় ১০ হাজার প্রশিক্ষিত পুলিশ - RAB - বিজিবি । *বৃষ্টির মত তারা গুলি - টিয়ার সেল - রাবার বুলেট - সাউন্ড গ্রেনেড ব্যাবহার করতে থাকে । *অধিকাংশ হেফাজত কর্মীর কাছে ঢাকা অপরিচিত । অন্ধকারে আচমকা এ বিকট আক্রমনে তারা হতভম্ব হয়ে পড়ে ।

*সব টিভি চ্যানেলে বলা হচ্ছে তারা দশ মিনিটে শাপলা চত্বর ছেড়ে পালিয়ে গেছে । কথা সত্য । *কিন্তু কেউ বলেনি পালিয়ে যাবার আগে তারা প্রায় ১ ঘণ্টা দাঁতে দাঁত কামড়ে লড়াই করে গেছে । খালি হাতে ১০ হাজার অস্রের বিরুদ্ধে এর বেশি কিছু করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় । *এর পরও তারা ফাইট করেছে আরও ১ ঘণ্টা মতিঝিলের অলিতে গলিতে ।

*ভোর সাড়ে চারটার দিকে মতিঝিলে সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রন কায়েম হয় । *সকাল সাতটার মধ্যেই রাতের ধ্বংসযজ্ঞ এর অধিকাংশ পরিষ্কার করে ফেলা হয় সিটি কর্পোরেশনের বড় বড় গাড়ি আর বুল ডোজার দিয়ে ( হেফাজত - পুলিশ উভয়ের ধ্বংসযজ্ঞ ) । ব্লগ ফেসবুকে ওইদিন রাতের উপর কিবোর্ড ভেঙ্গে ফেলছে সবাই কিন্তু ৯৯% আসলে সেদিন সেখানে অনুপস্থিত ছিল । কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শী আসলে খুবই কম । আমার কিছু নিরপেক্ষ বিশ্লেষণের চেষ্টা ............ মৃতের সংখ্যাঃ মৃতের সংখ্যা নিয়ে এক ধরনের লুকোচুরি চলছে সব পক্ষে ।

কেউ বলছে ২০ জন আবার কেউ বলছে ২৫০০ । তবে আমার বিশ্বাস মৃতের সংখ্যা ৫০-১০০ এর মধ্যে হবে । ২৫০০ একটি অতিরঞ্জিত নাম্বার । ২৫০০ মানুষকে খুন করার মত গাটস আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর নেই আর আরও ২৫০০ লাশ বহনের জন্য শক্ত কাঁধ ও সাহস এখন সরকারের নেই । এমনিতেই রানা প্লাজার ৭০০ লাশে তারা কাদায় দেবে আছে ।

কোরআন শরিফ পোড়ানঃ একজন আওয়ামী লীগ সাপোর্ট করা কর্মীর কাছে প্রশ্ন - আপনি কি পারবেন বঙ্গবন্ধুর ছবিতে আগুন দিতে । ঊত্তর - না । কিন্তু একজন লীগ কর্মী যদি রাস্তার ধারের একটা পোস্টারের দোকানে আগুন দেয় তবে কি ওই আগুনে দোকানে রাখা বঙ্গবন্ধুর ছবি পুড়বে । উত্তর - হ্যাঁ পুড়বে । এখন এই বঙ্গবন্ধুর ছবি পোড়ান নিয়ে কেউ যদি রাজনীতি করে তবে তাকে কি বলা যায় ? - বলা যায় - এদের বিচির চেয়ে ব্রেইনের সাইজ ছোট ।

এদের সাথে রাজনৈতিক আলোচনা করা যায় না । একজন মুসলমান ব্যক্তি জীবনে যত খারাপ হোক প্রান থাকতে সে জেনে বুঝে কোরআন শরিফে আগুন দেবে না । এখন এই নিয়ে যে বা যারা রাজনীতি করে তাদের কি বলা যায় ? স্বল্প মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্তঃ স্বল্প মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিএনপি । হেফাজতকে পাশে নিয়ে সরকার পতনের যে প্লান তারা করেছিল তাতে তাদের আশাভঙ্গ হয়েছে । স্বল্প মেয়াদে লাভবানঃ আওয়ামীলীগ সরকার ।

কারন হেফজত - বিএনপিকে একসাথে মোকাবেলার জন্য তারা প্রস্তুত নয় । আপাতত একপক্ষকে তারা সরিয়ে দিতে পেরেছে । দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্তঃ দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লীগ । সামনের নির্বাচনে কওমি মাদ্রাসার এক বিশাল শক্তি লীগের বিপক্ষে আদাজল খেয়ে নামবে । একই সাথে সবাই একটা বিষয় ইগনোর করছে ।

বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনের আরেক ধারা হচ্ছে তাবলীগ । এই তাবলীগেও আল্লামা শফি একজন অতি সম্মানিত ব্যক্তি । এরা রাস্তায় নেমে হয়তো আন্দোলন করবে না তবে নিরবে ভোটটা কোথায় দিয়ে আসবে সহজেই অনুমেয় । দীর্ঘ মেয়াদে লাভবানঃ বিএনপি - কেন তা কি ব্যাখ্যা করার আর দরকার আছে ? স্বল্প ও দীর্ঘ উভয় মেয়াদে খতিগ্রস্থঃ কিছু সাধারন মানুষ যারা খুব স্বল্প পুঁজিতে ব্যবসা করে । রাজা যায় রাজা আসে কিন্তু এদের জন্য কেউ কিছু করে না ।

এদের জন্য আল্লাহ ছাড়া কেউ নেই .............................. ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।