শেষ বারের মতো সতর্ক করছি... ক্যামেরা কাঁধে নিয়ে একজন ভিডিও করে যাচ্ছেন। আর একজনের হাতে উজ্জললাইট, এটা কি নাম? আমি জানি না। আমার দশ হাতের মধ্যে আসতেই তার তাপমাত্রা অনুভব করতে শুরো করলাম। তিনটি রুমের দাঁড়াবার মতো কোন স্থান নেই। ছোট আন্ডা বাচ্চা থেকে বুড়ো , সব বয়সের মানুষ।
এটা একটা জন্ম দিনের অনুষ্ঠান। কার জন্মদিন আমি নিজেও জানি না। উপস্থিত হয়েছি দলের সাথে। আমাদের পুরো দলটাই নাকি আমন্ত্রিত। মনে হলো পাশের রুমে হৈচৈ বেশি।
উকি দিলাম। ঠিক, মূল অনুষ্ঠান তাহলে সেখানেই হচ্ছে।
বড় একটা টেবিলের মাঝে বড়সর একটা কেক। টেবিলের সামনে আর একটা ক্যামেরা স্টেন্ডের উপর রেখে ভিডিও করে যাচ্ছেন। টেবিলের অন্য প্রান্তে দল বেঁধে লোকজন দাঁড়াচ্ছে।
লোকজন বলতে মহিলাদেরই দেখলাম। কয়েক মিনিট পরে ক্যামেরার লাইট বন্ধ হয়ে যায়। একদলের সিডিওল শেষ। অন্যদল এসে দাঁড়ায়। ঘন্টা খানেক এভাবেই চলছে।
আমি কয়েক বার আসা যাওয়ার পরেও বুঝতে পারলাম না কার জন্মদিন। এত গুলো মানুষের একসাথে তো জন্মদিন থাকতে পারে না। যদি ধরে নেই সবার জন্মদিন একই তারিখে। এবং সেটা আজকে। তবু সমস্যা।
এক সাথে একটা কেক দিয়ে সবাই মিলেমিশে জন্ম দিন পালন করছে কিন্তু কোন ঝগড়া হচ্ছেনা তা কি করে হয়?
নিশ্চয় কোন একজন বিশেষ মানুষ আছে। কিন্তু কে সে?আমি যাদের সাথে অনুষ্ঠানে যোগ দিলাম। তাদের একজনকে প্রশ্ন করতেই,বল্ল অপেক্ষা করুন সময় হলেই দেখতে পারবেন। তার কথার সাথে অন্যরাও তাল দিচ্ছে, এবং মিটিমিটি হাসছে। আমিও মুখে আবুল টাইপের একটা হাসি ঝুলিয়ে বসে থাকলাম।
যা হয় হবে এতসব নিয়ে আমি ভাবতে রাজি নই। নাকটাকে সতর্ক করে, মনে মনে খুজতে লাগলাম ভাল কোন খাবারের গন্ধ আসে কিনা?
বেশি ক্ষন অপেক্ষা করতে হয় নি। ছোট্ট একটি বাচ্চা কোলে নিয়ে সাজুগুজো করে এক মহিলা টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলেন। বাচ্চাটা কেঁদেই যাচ্ছে। এত ভীড়, এত হট্টগোল,এত চিৎকার এসব হয়তো তার ভাল লাগে নাই।
বাচ্চাটা এখনো এই গিন্জি পরিবেশ মানিয়ে নিতে শিখেনি। একদিন এই বিভৎস সমাজে বসবাস করতে সেও অভস্ত হয়ে উঠবে।
বুঝলাম এই দুজনের মাঝে একজনের জন্ম দিন। সম্ভবত পিচ্চিটারই। এই মহিলার জন্মদিনের অনুষ্ঠান হলেও অবাক হবো না।
আমি দুইটার জন্যই মনে মনে প্রস্তুতি নিয়ে রাখলাম।
নিশ্চিত হলাম। এই বাচ্চাটার প্রথম জন্মদিন পালিত হচ্ছে। আমাদের যিনি দাওয়াত করেছেন তিনি পিচ্চিটার নানা। আমরা তাকে দাদা ডাকি।
তার মানে আমাদের নাতনীর জন্মদিন। মনটা খারাপ হয়ে গেল, নিজেকে হঠাৎকরেই বুড়ো মনে হচ্ছে।
পিচ্চিটা আসার পরে, আবার নতুন উদ্যামে কেমেরায় পোজ দিয়ে যাচ্ছেন। একবার পিচ্চিটাকে কোলে নিয়ে, একবার হাতে নিয়ে, একবার মাথায় নিয়ে.... নানা রকমের পোজ। বাচ্চাটা কেঁদেই যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানের নামে একটা পিচ্চিকে এভাবে অত্যাচার করা হচ্ছে। পিচ্চিটার জন্য বেশ মায়া হলো। ক্যামেরার অসভ্য ব্যবহার কতটা বিরক্তিকর হতে পারে আজকে বুঝলাম। প্রযুক্তির অপব্যবহারের শীর্ষে নিয়ে যাওয়ার আগে মনে হয় আমাদের নিস্তার হবে না।
বিয়ের আসরেও ভিডিও ক্যামেরা অত্যাবশ্যক।
বর না হলে বিয়ে হতে পারে কিন্তু ক্যামেরা না হলে সম্ভব নয়। অনেক গুলো মাইক্রোবাস লাইন দিয়ে যাবে। তার সামনে থেকে আর একটা মাইক্রাবাস থেকে ভিডিও করে যাবে। সামনে থেকে এই গাড়িগুলোর দীর্ঘ ভিডিও করলে কি হবে? আর না করলেই কি হবে? অনুষ্ঠান হলে একটা ভাল বলা যায় কিন্তু রাস্তায় গাড়ির ভিডিওটার যুক্তিকতা কি? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।