আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কেয়ামত-পূর্ববর্তী পৃথিবী ও ইলুমিনাতি (ILLUMINATI) এজেন্ডা ১

মানুষ নিদ্রিত এবং মৃত্যুর পরপরই সে জেগে উঠবে। মানুষ তার নিজের কৃতকর্মের ফলে এ পৃথিবী ধীরে ধীরে বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে যাবে। অতঃপর একদিন এই সুন্দর পৃথিবী সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। এর আর কোন অস্তিত্ব কোথাও থাকবে না। এ মহাধ্বংসযজ্ঞেরই নাম কেয়ামত।

সর্বশেষ নবী হজরত মোহাম্মদ (সাঃ) আল্লার পক্ষ থেকে আগত শেষ বার্তাবাহক। তারপর আর কোন নবী-রসুলের আগমন হবে না। তাই কেয়ামতকাল পর্যন্ত মানব জাতিকে কোন্ পথ অবলম্বন করে চলতে হবে, এ সম্পর্কে যেমন তিনি সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ দিয়ে গেছেন, তেমনি স্ব স্ব দুষ্কর্মের পরিণামে মানব জাতিকে যেসব বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে, সে সম্পর্কেও তিনি বিস্তারিতভাবে উম্মতের জন্য রেখে গেছেন। আমরা এখন যে দুঃসময় অতিক্রম করছি, সম্ভবত এ সময়কেই আখেরী নবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) "ফেতনার জমানা” রূপে আখ্যায়িত করে এ-সময়ে যা’ কিছু ঘটবে, তার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন। হাদীছ শরীফের সবকয়টি নির্ভরযোগ্য সংকলন গ্রন্থে এ সম্পর্কিত বর্ণনা বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে।

প্রতিদিন আমরা যেসব পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছি, সে সবের সাথে বর্ণিত হাদীছগুলো একটু মিলিয়ে দেখলে আমরা নিঃসন্দেহে যুগের সকল ফেতনা থেকে আত্মরক্ষা করে চলার পথ পেতে পারি। ধর্মীয় পরিভাষা 'ফেতনা’ হচ্ছে ব্যাপক রাজনৈতিক, সামাজিক, আর্থিক, নৈতিক বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য। শিরোনামে উল্লিখিত 'ইলুমিনাতি এজেন্ডা’ (ILLUMINATI AGENDA) এখানে কতটুকু প্রাসঙ্গিক তা’ এখানে পরবর্তীতে ঐ ব্যাপারে বিস্তারিত তুলে ধরলে যথাসময়ে পরিষ্কার হবে। কেয়ামত-পূর্ববর্তী পৃথিবীর অবস্থা সংক্রান্ত হাদীছ প্রচুর। তবে, এখানে বাছাই করা বা নির্বাচিত কিছু হাদীছ তুলে ধরা হয়েছে।

এরপর পরিশিষ্ট হিসেবে ইলুমিনাতি এজেন্ডা তুলে ধরা হবে, যা বর্তমান লেখায় খুবই যে প্রাসঙ্গিক তা’ ষ্পষ্ট হবে। হাদীছগুলোর শব্দ/বাক্য অনেকটা নিজের ভাষায় লেখা হলেও মূল ভাব অক্ষুণ্ন রয়েছে। এক এক করে হাদীছগুলো নিচে তুলে ধরা হলো। হজরত মোহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন - কেয়ামত-পূর্ববর্তী পৃথিবীর নানান অবস্থা/লক্ষণগুলো এমনভাবে প্রকাশ পাবে যেমন কোন মালার সূতো ছিঁড়ে গেলে একের পর এক গুটিগুলো খসে পড়তে থাকে, তেমনি কেয়ামতের লক্ষণগুলোও একের পর এক প্রকাশ পাবে। বলা হয়েছে এ সময় জ্ঞান বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার সাথে সাথে মূর্খতাও ব্যাপকতা লাভ করবে।

অন্যায় যুদ্ধের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে ও ঘনঘন ভূমিকম্প হবে। নিত্য নতুন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেবে। মানুষের শিষ্টাচার, আদব কায়দা প্রায় লোপ পাবে। পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন হবে, লোপ পাবে। পারিবারিক জীবনে স্বার্থপর সন্তানেরা মাতাপিতার চরম অবহেলা করবে এবং রূপকভাবে বলা হয়েছে, দাসী প্রভুকে জন্ম দেবে অর্থাৎ সন্তান মায়ের সাথে প্রভুর মতো আচরণ করবে।

ইসলাম ধর্মকে নিয়ে এসময় ঠাট্টা-তামাশা ও হাস্য-বিদ্রুপ করা হবে। মূর্তিপূজার প্রচলন হবে। ঈমান ও কুফুরী পালাক্রমে উঠানামা করবে। রাতে ঈমান থাকলে সকালে ঈমান থাকবে না। সকালে থাকলে রাতে থাকবে না।

খুবই সাধারণ ও নিম্নস্তরের লোকেরা উঁচু উঁচু দালানকোঠা তৈরী করবে। মসজিদসমূহ সুসজ্জিত করা হবে। মূর্খ লোকেরা নেতৃত্বে উঠে আসবে। মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে হামলা করা হবে এবং ধনসম্পদ লুণ্ঠন করা হবে। আকাশের চাঁদকে দেখতে বড় মনে হবে।

মহিলার সংখ্যা পুরুষের চাইতে বৃদ্ধি পাবে। একজন পুরুষের বিপরীতে ১০ থেকে ৫০ জন মহিলা হবে। বন্য জীবজন্তুরা মানুষের সাথে কথা বলবে। যেমন, সার্কাসের জীবজন্তুরা। সমুদ্রে ডলফিন ইত্যাদি।

সমস্ত মরুময় আরব সবুজে ঢেকে/ছেয়ে যাবে। ইরাকের ইউফ্রেতিস নদীর তলায় প্রাপ্ত স্বর্ণেভান্ডার দখলের জন্য ব্যাপক খুনোখুনি হবে। মানুষ ভ্রমনরত অবস্থায় দূরদূরান্ত থেকে পরিবারের সাথে হাতের রাখা যন্ত্রের সাহায্যে কথা বলবে। যৌনআবেদনময়ী সংগীত শিল্পীদের গান ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে। নিয়তি বা স্রষ্টা কর্তৃক পূর্বনির্ধারিত ভাগ্যকে অস্বীকার করা হবে।

হত্যা খুনোখুনি বেড়ে যাবে। মনে হবে যেন 'সময়’ খুব দ্রুত গতিতে অতিক্রান্ত হচ্ছে। মানুষ স্রষ্টা প্রদত্ত যে চেহারা নিয়ে জন্মেছে, তা’ সৌন্দর্য বা লোক দেখানোর জন্য পরিবর্তন করা হবে। যেমন COSMETIC বা VANITY SURGERY। মহিলারা পুরুষের মতো আচরণ করবে।

পুরুষ মহিলা একে অপরের পোষাক পরিধান করবে। মহিলারা এমন পোষাক পড়বে যা’ সমস্ত দেহের নগ্নতা ফুটে উঠবে। সংগীত, মাদকদ্রব্য ব্যবহার ও বিকৃত যৌনাচার ইত্যাদি এত বেড়ে যাবে যে তা’ স্বাভাবিক আচরণ হিসেবে গণ্য হবে। হজরত আলী (রা.) বর্ণনা করেন – রসুল সা. বলেছেন – শেষ জমানায় ভয়ানক ফেতনা হবে। সেসব ফেতনা থেকে মুনাফিক-কাফের থেকে ঈমানদারগণ পৃথক হয়ে যাবেন।

তাদেঁর সংখ্যা সীমিত হয়ে পড়বে। তবে তাদের ঈমান পূর্বের তুলনায় অনেক মজবুত হবে। হজরত আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রা.)-এর এক হাদীছে – হজরত নবী করীম (সা.) পবিত্র মক্কা নগরী সম্পর্কে বলেছেন – মক্কা মোকাররমার পেট চিরে নহরের ন্যায় অসংখ্য রাস্তা বের করা হবে। এই পবিত্র নগরীর দালান কোঠার উচ্চতা পাহাড়গুলোকে ছাড়িয়ে যাবে। যখন এরূপ অবস্থা তোমাদের দৃষ্টিগোচর হয়, তখন বুঝে নিও যে, ‘ফেতনার’ সময় নিকটবর্তী।

বিগত চৌদ্দ শতাধিক বছর যাবত এই আশ্চর্যজনক ভবিষ্যতবাণীটি হাদীছের কিতাব সমূহে সংরক্ষিত রয়েছে। ব্যাখ্যাকারীগণ ভেবে অবাক হতেন যে, পবিত্র মক্কা নগরীর পেট চিরে রাস্তা নির্মিত হওয়ার অর্থ কী? বর্তমানে পবিত্র মক্কা নগরীতে পাহাড়ের পেট চিরে বা মাটির বুক বিদীর্ণ করে অসংখ্য সুড়ঙ্গ পথ নির্মিত হওয়ার যেন বুঝে আসছে কিভাবে পবিত্র নগরীর পেট চিরে ফেলা হবে। হাদীছের দ্বিতীয় অংশে বলা হয়েছে যে, পাড়াড়ের চাইতেও উঁচু ইমারত নির্মিত হবে। বর্তমানে মক্কা নগরীতে এ ধরণের অসংখ্য বহুতল বিশিস্ট ইমারত নির্মাণ করা হয়েছে, যেগুলোর উচ্চতা মক্কার যে কোন পাহাড়ের চাইতে বেশী। আল্লাহ তা’য়ালার অসন্তুষ্টির যামানাঃ হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন – নবী করীম (সা.) ইরশাদ করেছেন – এমন একটা দুঃসময় আসবে যখন কোন মুমেন ব্যক্তি মুসলিম জনগণের জন্য দোয়া করলে তা’ কবুল হবে না; বরং জবাব আসবে, এদের জন্য দোয়া করো না, করলে কবুল করা হবে না।

কেননা এরা আমার অন্তুষ্টি অর্জন করেছে। (কিতাবুর রাক্বায়েক্ব) পকেট ও উদর পূজার যামানাঃ হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন – এমন একটা মন্দ সময় আসবে, যখন মানুষের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হবে উদরের পরিতৃপ্তি এবং যৌন সুখ আস্বাদন। (কিতাবুর রাক্বায়েক্ব: ইবনে মুবারক। তোষামোদ ও কপটতার যুগঃ হজরত মাআয ইবনে জাবাল (রা.) নবী করীম (সা.)-এর হাদীছ বর্ণনা করে বলেন যে, শেষ যামানায় এমন সব লোকজনের প্রাদুর্ভাব ঘটবে, যারা উপরে উপরে পরষ্পরের প্রতি বন্ধুত্ব ও সহমর্মিতা প্রকাশ করলেও ভিতরে ভিতরে একে অন্যের শত্রুতায় লেগে থাকবে। জিজ্ঞাসা করা হলো, কেন এমনটা হবে? বললেন, এরা একে অন্যের প্রতি ভয়ঙ্কর বিদ্বেষ পোষণ করলেও শুধু ভয় ও লালসার টানে পরষ্পর বন্ধুত্বের অভিনয় করতে থাকবে।

(আহামদঃ মেশকাত শরীফ) সমৃদ্ধ নগরী বিরান ও বিরান ভূমি আবাদঃ হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ এর কেয়ামত সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে রসুল সা. বলেন, এ সময় অনেক সমৃদ্ধ নগরী বিরান হয়ে যাবে এবং বিরান ভূমি আবাদ হয়ে যাবে। বিরান হয়ে পড়ে থাকা মায়া সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ। এরকম প্রচুর রয়েছে পৃথিবীজুড়ে। পক্ষান্তরে, বিরান ভূমি আবাদ হচ্ছে, তারও নজির প্রচুর। এমনকি চন্দ্রপৃষ্টে পর্যন্ত বসতি স্থাপন করার চিন্তাভাবনা চলছে।

ত্রিশজন ভয়ংকর মিথ্যাবাদীর (ভন্ডনবীর) আবির্ভার ঘটবে। আর এদের মধ্যে শেষ মিথ্যাবাদীটিই হবে কানা দাজ্জাল। ইতোপূর্বে ৩ বার দাজ্জাল আবির্ভূত হওয়ার ভূয়া সংবাদ প্রকাশিত হবে। আর যখন সত্যি সত্যিই দাজ্জাল আবির্ভূত হবে, তখন সে প্রথমে নেতারূপে, পরে নবী (ঈসা আ.) এবং সবশেষে খোদায়ী দাবী করবে। দাজ্জালের অধিকাংশ অনুসারী ও অনুগামী হবে স্ত্রীলোক (Women)।

ইহুদীদের একটি সশস্ত্র বাহিনী অত্যন্ত উন্নতমানের অস্ত্র, পোশাক ও সাজ-সরঞ্জামে সজ্জিত থাকবে। একটি জামাত সত্য ও ন্যায়ের পথে সংগ্রামরত থাকবে। এই জামাতটি কোন অবস্থাতেই কারো কোনো পরওয়া করবে না। এই সংগ্রামী জামাতের শেষ আমীর হবেন ইমাম আল মাহাদী, যিনি হজরত মোহাম্মদ সা. এর রক্তধারায় জন্মগ্রহণ করবেন। একটি ছোট শিশুও একজন বৃদ্ধকে শুধুমাত্র গরীব মনে করে লাঞ্ছিত করবে।

আর রাষ্ট্রিয় ক্ষেত্রে – নিতান্ত অযোগ্য বাজে লোকেরাও জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদিতে রায় দিতে শুরু করবেন। উক্ত হাদীসের সাবলিমিনাল (Subliminal) প্রকাশ। চলবে .....  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।