আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুই সমাবেশে দুই ধরনের চিত্র

আমি বাংলার গান গাই ঢাকায় বিরোধী দলের মহাসমাবেশের একদিন পর গতকাল বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগের জনসভার চিত্র ছিল ভিন্ন। জনসভায় আসা নেতাকর্মীরা কোথাও বাধার সম্মুখীন হননি। পুলিশ যেমন বাধা দেয়নি, তেমনি বাধা আসেনি দলীয় ক্যাডারদেরও। উপরন্তু পুলিশ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মিছিল প্রোটেকশন দিয়ে পৌঁছে দিয়েছে জনসভায়। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সেবায় সারাক্ষণ নিয়োজিত ছিল ঢাকা সিটি করপোরেশন।

ডিসিসি জনসভায় সরবরাহ করেছে বিশুদ্ধ পানি। তেমনি ডিসিসির মোবাইল টয়লেট ভ্যান বেশ কয়েকটি জায়গায় স্থাপন করা হয়। আওয়ামী লীগের জনসভায় নেতাকর্মীরা লগি-বৈঠা ও গজারি লাঠি নিয়ে হাজির হলেও পুলিশ এগুলো বহনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। নেতাকর্মীদের জনসভায় যোগ দিতে রাষ্ট্রীয় পরিবহন কোম্পানি বিআরটিসির অসংখ্য বাস নিয়োজিত ছিল। অন্যদিকে সরকার সমর্থক পরিবহন মালিকদের পক্ষ থেকে জনসভায় সরবরাহ করা হয় অসংখ্য বাস ও ট্রাক।

এসব বাস ও ট্রাক ভিআইপি রোডজুড়ে রাখা হলেও পুলিশ সরিয়ে দেয়নি। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বিটিভি জনসভা পুরোপুরি সম্প্রচার করে। অজস্র মাইক ব্যবহারেও পুলিশ আপত্তি করেনি। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের প্রধান ফটক বন্ধ করে জনসভার মূল মঞ্চ তৈরি করা হয়। কোনো মুসল্লিকে ওই গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি।

রাষ্ট্রীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাসেনসিয়াল ড্রাগস জনসভায় নেতাকর্মীদের মাঝে ট্রাকে বোতলজাত পানি, চকোলেট, বিস্কুট ও শুকনা খাবার বিতরণ করে। অপরদিকে দু’দিন আগের বিরোধী দলের মহাসমাবেশে আয়োজন ছিল জলকামান, রায়ট কার, টিয়ারশেলসহ মানুষ নিয়ন্ত্রণের নানা সরঞ্জাম। সরকারি দলের মহাসমাবেশ উপলক্ষে পুলিশ ১১টি নির্দেশনা দিলেও গতকাল তার অনেক ধারাই উপেক্ষিত হয়েছে। এমনকি বায়তুল মোকাররম মসজিদের প্রধান গেট বন্ধ করে জনসভার মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে। বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ কোনো বাধার সম্মুখীন হয়নি; বরং সব ধরনের সহযোগিতা পেয়েছে।

গতকাল সরকারি দলের সমাবেশ ঘিরে পুলিশের চেহারা ছিল ভিন্ন। গতকাল দুপুর ১২টার পর থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগসহ শরিক দলের নেতাকর্মী-সমর্থকরা বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে মূল সভামঞ্চের কাছে আসতে শুরু করেন। বিকাল ৩টার দিকে মূল সভামঞ্চ থেকে শিল্প ব্যাংকের সামনে, দক্ষিণে মহানগর নাট্যমঞ্চ, পশ্চিমে সচিবালয় গেট এবং উত্তরে পল্টন মোড় পর্যন্ত জনসমাগম হয়। বেলা পৌনে ৩টার দিকে জাতীয় শ্রমিক লীগের অন্তর্ভুক্ত বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা লাল কাপড়ের ব্যানার, ফেস্টুন এবং বাঁশের তৈরি লগি ও বৈঠা নিয়ে জনসভায় যোগ দেয়। পুলিশ তাদের বাধা না দিয়ে জনসভায় আসতে সহযোগিতা করেছে।

১২ মার্চ বিরোধী দলের মহাসমাবেশে আসা মিছিলগুলো রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঠেকিয়ে দিয়েছিল পুলিশ। এমনকি মিছিলকারীদের ওপর লাঠিপেটা এবং হামলা চালাতেও দেখা গেছে তাদের। ওইদিন নিরাপত্তার নামে সাধারণ পথচারীদেরও তল্লাশি ও নানাভাবে হয়রানি করতে দেখা গেছে। সায়েন্স ল্যাবরেটরি, কল্যাণপুর, মিরপুর, মহাখালী, মগবাজার, সদরঘাট, শঙ্কর, মত্স্যভবন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও গুলিস্তানসহ বিভিন্ন এলাকায় ১২ মার্চ বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা পুলিশের হয়রানি, লাঠিচার্জ ও মারধরের শিকার হন। যানবাহনে করে তো দূরের কথা, পায়ে হেঁটে আসতেও ওইদিন বাধার সম্মুখীন হন তারা।

অপরদিকে গতকাল বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে সরকারি দলের সমাবেশে যোগ দেন তাদের সমর্থকরা। বাসগুলো সারিবদ্ধভাবে সচিবালয়ের আশপাশে, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, রাজউক অ্যাভিনিউ, দৈনিক বাংলা, বিজয়নগর ও নয়াপল্টন এলাকায় দেখা যায়। এমনকি সরকারি সংস্থা বিআরটিসির বাসও সমাবেশে অংশ নিতে দেখা যায়। আর বিরোধী দলের মহাসমাবেশের তিনদিন আগে থেকেই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত যানবাহন বন্ধ রাখা হয়। বাইরের কোনো যানবাহন রাজধানীতে ঢুকতে দেয়া হয়নি ওই সময়ে।

গতকাল সরকারি দলের নেতাকর্মীরা ঢাকঢোল বাজিয়ে রাজপথ দিয়ে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে যোগ দেয়। এমনকি জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সচিবালয়ের সামনে দিয়েও মিছিল নিয়ে যেতে দেখা যায় তাদের। ১২ মার্চ বিরোধী দলের মহাসমাবেশে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ছিল রণপ্রস্তুতি। রায়ট কার, জলকামান, টিয়ারশেল, রঙিন পানিসহ নানা সরঞ্জাম ছিল প্রস্তুত। দরকার হলে এগুলো ব্যবহারের নির্দেশও ছিল।

অপরদিকে সেই পুলিশকেই গতকাল দেখা গেছে আগত মিছিলকে রাস্তা করে দিতে। ব্যস্ত সড়কের পাশে সমাবেশে আসা গাড়িগুলো রাখার ব্যবস্থা করে দিতে। সমাবেশে আগতদের যাতে কোনো কষ্ট না হয় সেজন্য কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে দেখা গেছে চকোলেট, চুইংগাম বিলি করছে। পানির ব্যবস্থা ছিল প্রতিটি মোড়ে। আরও ছিল ঢাকা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মোবাইল টয়লেটের ব্যবস্থা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।