শেষ বারের মতো সতর্ক করছি... আমরা ছয়জন বন্ধু মিলে ঘোরতে বের হলাম। কলেজ থেকে মাত্র ১৫কিলো মিটার পথ। সেখানে নাকি এক পুরাতন রাজার বাড়ি আছে। তো দল বেঁধে বেড়িয়ে পরলাম। গিয়ে দেখি সেখানে এখন আর কিছু নাই।
কিছু ঝোপ জঙ্গল এবং কিছু ইট,ভাঙ্গা দেয়াল পরে আছে। সবই দখল হয়ে আছে। আশে পাশে ঘুরে দেখার মতো আর কিছু নাই। ফিরে আসবার পরিকল্পনা করছি। মাথার উপর সূর্য,গরমে আমরাও ক্লান্ত।
হঠাৎ আমার মনে পড়লো এই বাজরের কাছেই রঞ্জনদের বাড়ি। একটু খোজ করে দেখে যেতে পারি। রঞ্জন আর আমি একই হোস্টেলে থাকি। সে থাকে দো-তলায় আমি নিচ তলায়। তার বিষয় পদার্থ বিজ্ঞান, আমার গণিত।
খুব ঘনিষ্ঠতা তার সাথে ছিলনা। তাই তার পরিবার সম্পর্কেও ভাল জানতাম না। তার বাবার নাম কিংবা বাড়ির নাম কিছুই জানি না।
লোকজনকে জিজ্ঞেস করে করে তার বাড়ি খুঁজে বের করার চিন্তা ভাবনা করলাম। অনেকের কাছে জিজ্ঞেস করলাম রঞ্জনদের বাড়ি কোনটা? তারা কেউ চিনলনা।
তার পর বলতে থাকলাম কলেজে পড়ে রঞ্জন। এবার সন্ধান পাওয়া গেল। বাজার থেকে কিছুটা দুরে হেটে যেতে হবে। আমরা রাজি হলাম আসছি যেহেতু তার বাড়িটা দেখেই যাই। আমাদের দু একজনের মোবাইল থাকলেও অনেকের ছিলনা।
রঞ্জনেরও তখন মোবাইল নেই , থাকলে এত ঝামেলায় পরতে হতো না।
বাড়িতে গিয়ে হাঁকডাক করতেই একজন মধ্য বয়স্ক বেরিয়ে আসলেন। আমরা রঞ্জনের সাথে পড়ি,এদিকেই যাচ্ছিলাম ভাবলাম রঞ্জনদের বাড়িটা একটু দেখে যাই। জানতে পারলাম তিনি রঞ্জনের বাবা। আমাদের দেখে খুব খুশি হলো।
ঘরে এসে বসো। রঞ্জন তো বাসায় নেই, সে তিন দিন হলো তার পিসির বাড়ি বেড়াতে গেছে আরো কয়েক দিন থাকবে। আমরা ইতস্ত করছিলাম বসবো কিনা কিন্তু তিনি বল্লেন রঞ্জন নেই তাতে কি হয়েছে। তোমরা তার বন্ধু বাড়িতে এসেছে দুপুরে না খেয়ে কেউ যেতে পারবেনা। আমার ছেলে থাকলে কি তোমাদের না খেয়ে যেতে দিত?
কঠিন যুক্তি।
আমাদের পেটেও ক্ষুধা আর তার বাবার ব্যবহারে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম দুপুরে খাবার খেয়েই যাব। আমাদের তো আর এমন কোন কাজও নাই যে গিয়ে করতে হবে। আর খাবারের লোভ সামলাতেও পারছিলাম না। বাড়িতে হৈ চৈ শুরো হলো, মুরগি ধরা হচ্ছে বাজারে যাচ্ছে একজন, আমাদের সরবত পানি দিয়ে যাচ্ছে আরেক জন। তাদের কর্মব্যস্ততা দেখে মনে হলো আমরা বর পক্ষ এই বাড়িতে মেয়েকে দেখতে এসেছি।
এক সময় অপেক্ষার অবসান হলো। অনেক দিন পরে বন্ধুরা মিলে একসাথে কোথাও দাওয়াত খেলাম। তোফা খাওয়া দাওয়া শেষে তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে শেষ বিকালের আলোয় হোস্টেলে ফিরলাম। অন্যরা যার যার বাড়িতে চলে গেল।
সন্ধায় ডাইনিং রুমে দেখি রঞ্জন।
কি ব্যপার তুই নাকি পিসির বাড়ি গেলি? আরো দুই দিন থাকবি। তাহলে চলে এলি কেন?
তোকে কখন বল্লাম আমি পিসির বাড়ি গেছি? ছাত্রের পরীক্ষা তাই নিয়মিত পড়াতে যেতে হচ্ছে। তাই কিছু দিন ধরে বাড়িও যাচ্ছিনা। আর তুই বলছিন পিসির বাড়ি?
কিন্তু তোর বাবা যে বল্ল?
আমার বাবা কবে আসলো? বাবা তো বিদেশে?
কি বলিস? আমরা গতকাল তোর বাড়িতে গেলাম,তোদের বাড়িতে দুটি বড় বড় টিনের ঘর। একটা পুবের দিকে একটা উত্তরে,বাড়ির সামনে একটা পুকুর।
তোর কি মাথা খারাপ হয়েছে? আমাদের বাড়ি তুই কখন গেলি আমাদের বাড়িতে কোন পুুকোর নাই। আর বাড়িতে একটি মাত্র বিল্ডিং। আমার সাথে ফাইজলামি করিস?
আমি চুপ মেরে গেলাম। পরের দিন তার বাড়ির ঠিকানা নিলাম। মহা ভুল হয়েছে।
আমরা রঞ্জনের বাড়িতেই গিয়েছি কিন্তু সেই রঞ্জন আমাদের বন্ধু রঞ্জন নয়। তাহলে কার বাড়িতে অতিথি হয়ে ছিলাম??? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।