আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যখন একটা জাতি অবাক হতেও ভুলে যায়...

যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি ১৯৮৮ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত হলেন বেনজির ভুট্রো। কুখ্যাত জুলফিকার আলী ভুট্টোর মেয়ে হিসাবে বাংলাদেশের মানুষ তাকে যতটা অপছন্দ করার কথা ছিলো - তার তুলনায় অনেক বেশী খুশী হয়েছিলো তার নির্বাচনে। তার কারন ছিলো অনেকগুলো - প্রথমত তখন বাংলাদেশের মানুষ এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছিলো - তাদের কাছে সামরিক শাসনের অব্সান ঘঠিয়ে একজন অক্সফোর্ট ডিগ্রীধারী নারী যখন পাকিস্তানের মতো বর্বর দেশের প্রধানমন্ত্রী হলেন - সবাই একটা সম্ভাবনা দেখলো - হয়তো দেশটা গনতন্ত্রের হাওয়ায় মানুষগুলো সভ্যতার আলো দেখবে। একদিন হয়তো ১৯৭১ এর গনহত্যার জন্যে ক্ষমা চাইবে আর যুদ্ধাপরাধের দায়ে পাকি-জেনারেলদের বিচারের কাঠ গড়ায় দাড় করাবে। স্বপ্ন বোধ হয়ে দেখেছিলো পাকিস্তানের নির্যাতিত মানুষেরাও।

বিশেষ করে পাঞ্জাবীদের হাত থেকে ক্ষমতা যখন একজন সিন্ধের নারীর কাছে গেলো - ওরাও নিশ্চয়ই পরিবর্তনের আশা করছিলো। কিন্তু হায় - বেনজির ভুট্রো যে সাপের বাচ্চা সাপই হয় তার প্রমান করলো ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ সফরে এসে। ৭১ নিয়ে এমন একটা ভাব দেখালো যে উনি এই সম্পর্কে কিছুই জানেন না। আর আটকে পড়া পাকিস্তানী (বিহারী)দে প্রত্যাবর্তনের কথাটা পুরো বাতিল করে বিহারীদের পাকিস্তানী নাগরিক হিসাবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করলো। স্বপ্ন ভংগ হলো গনতন্ত্রমনা বাংলাদেশীদের।

অন্যদিকে পাকিস্তানের সাধারন মানুষের স্বপ্ন ভংগ হলো দূর্নীতির প্রবল স্রোতে। একসময় বেনজির ভুট্টোর নাম বাদ দিয়ে যে নামটি ছাপিয়ে উঠলো - তা ছিলো আসিফ আলী জারদারী। যাকে বিশ্বের মিডিয়াগুলো মিস্টার টেন পার্সেন্ট হিসাবে পরিচিত করলো। দূর্নীতি আর অব্যবস্থাপনা প্রবল স্রোতে ভেসে গেলো গনতান্ত্রিক পাকিস্তানের সম্ভাবনা। ক্ষমতার পালাবদল হলো - এক সময় যে তিমিরে ছিলো সেই পাকিস্তান সেই সামরিক শাসনের তিমিরে নিয়ে গেলো জেনারেল পারভেজ মোশাররফ।

পাকিস্তানের মানুষে দুইটা দলের মধ্যে কয়েক বার ক্ষমতার পালাবদল করিয়ে নাওয়াজ শরীফ বা বেনজির কারো কাছ থেকে আশানুরূপ ফলাফল না পেয়ে হতাশ হয়ে অগতান্ত্রিক পারভেজ মোশাররফকেই মেনে নিলো। কিন্তু সামরিক শাসন যে কোনভাবেই একটা দেশকে সভ্যতার পথ দেখায় না - তা আবার প্রমানিত হলো। আবারো গনতান্ত্রিক পথে চলার চেষ্টা পাকিস্তানের। কিন্তু গনতান্ত্রিক ব্যবস্থার একটা মুল স্তম্ভ রাজনৈতিক দলগুলো গনতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করা এবং সেই লক্ষ্যে নিজেদের মধ্যে আবশ্যিক ভাবে গনতন্ত্রের চর্চা অব্যহত রাখা। তা না হওয়ার কারনে মানুষের খুব একটা সুযোগ অবশিষ্ট থাকলো না নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে।

তাই বিশ্বকে অবাক করে ক্ষমতায় চলে একসময়ে মিস্টার টেন পার্সেন্ট আসিফ আলি জারদারী - পরিবর্তন হিসাবে শুধুমাত্র গোঁফ ছেঁটে ছোট করলো। এখন পাকিস্তানের নাগরিকদের জিজ্ঞাসা করলে ওরা শুধু মাত্র নিজেদের নিয়তিকেই দোষারোপ করে। এরা একজন মহাদূর্নীতিবাজকে প্রেসিডেন্ট হিসাবে দেখেও অবাক হয় না। কারন তারা সামনে কোন আলো দেখে না। কথাটা এখনও পাকিস্তানীরা বুঝতে পারে নাই যে - আজ যা হচ্ছে তা অতীতের ভুলের বা না বুঝা বা আপোষের ফল।

পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো আঞ্চলিকতা। পাকিস্তানের সামরিব শাসক বা অন্য সব ক্ষমাশীনরা আঞ্চলিকতার কার্ড খেলে খুবই চতুরতা সাথে - আর পরষ্পরের ঘৃনা থেকেই এরা গোষ্ঠীবদ্ধ হওয়ার শক্তিসঞ্চয় করে। আজও পাকিস্তানে এক অঞ্চলের মানুষ আরেক অঞ্চলের মানুষকে ঘুনা করা ক্ষেত্রে দারুন ভাবে সংঘবদ্ধতা দেখায় - যা শাসক শ্রেনীর জন্যে শোষনের প্রধান অস্ত্র হিসাবে ব্যবহূত হচ্ছে। (২) বাংলাদেশেও একই ভাবে দেখছি পরষ্পরবিরোধী দুই শিবির ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যে একে অপরের প্রতি ঘৃনার কার্ড খেলছে। মানুষ শাসকদলের প্রতি হতাশ হয়ে অন্যদলকে ক্ষমতায় আনছে - সেই সুযোগে শাসক দল লুটপাট করে বিদেশে অর্থসম্পদের পাহাড় গড়ছে।

গত জোট সরকারের হাওয়া ভবন আর ক্রাউন প্রিন্সের ঘটনাগুলো রূপকথা মতো শুনায় এখন। রাজনৈতিদলগুলো নিজেদের মধ্যে গনতন্ত্র চর্চা অঘোষিত ভাবে নিষিদ্ধ করে রেখেছে। সেই সুবাদে বিএনপি হাওয়া ভবনের জন্যে কুখ্যাত তারেক রহমানকে প্রমোশন দিয়ে এমন এক গঠনতান্ত্রিক পদ্ধতি তৈরী করেছে যে - যে কোন সময় বিএনপির চেয়ারম্যান হিসাবে কুখ্যাত দূর্নীতিবাজ তারেককে দেখা যাবে। বিএনপি গত তিন বছর ধরে সরকারে ব্যর্থতার সমালোচনা করে হরতাল সমাবেশ লংমার্চ করে তার কর্মী সমর্থকদের চাঙ্গা করছে যাতে এরা বিরোধীপক্ষকে ঘৃনা করে। কিন্তু দলের ভিতরে এমন কি তার শাখা প্রশাখায়ও কোন গনতন্ত্রের চর্চা নাই।

অন্যদিকে আওয়ামীলীগ এক সভাপতি নির্ভর দল। সেখানেও যেহেতু গনতন্ত্রের চর্চা নাই - সুতরাং বিকল্প নেতৃত্ব গড়ে উঠিছে না। আর সরকারে থাকায় তাদের ব্যর্থতাগুলো মানুষকে হতাশ করার কারনে মানুষ বিকল্প খোঁজবেই। কিন্তু বিকল্প কোথায়? আওয়ামীলীগের ব্যর্থতার কারনে বিএনপি জামায়অত জোটকে ভোট দেওয়া মানেই তারেক রহমানের দূর্নীতিকে হজম করে নেওয়া। আর অতিরিক্ত প্রাপ্তি হিসাবে ৪০ বছর পরে শুরু হওয়া যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ করে স্বাধীনতা বিরোধীদের আবার ক্ষমতার ভাগ দেওয়া।

(৩) গনতন্ত্রের চর্চা থেকে সরে গিয়ে রাজনৈতিক দল দুইটা মানুষের সামনে আর কোন পথ খোলা রাখেনি - তাই ফকরুদ্দিন মইনউদ্দিনের আগমনে সাধারন মানুষ স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে। ১/১১ এর পর মানুষের আশা ছিলো হয়তো রাজনৈতিক দলদুইটা পরিবারতন্ত্র থেকে বেড়িয়ে এসে গনতন্ত্রের চর্চা শুরু করবে - হয়তো এরা ঘৃনার রাজনীতি থেকে বেড়িয়ে এসে ইতিবাচক রাজনীতির চর্চা করবে। হয়তো এরা দূর্নীতির বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান নেবে। কিন্তু একসময় দেশের চেয়ে দল - দলের চেয়ে ব্যক্তি - নিজের চেয়ে সন্তান বড় হয়ে উঠলো নেত্রীদের কাছে। তার ক্ষমতার লোভী - পদলোভী তাবেদরগন পুরোনো সুরে নেত্রীদের বন্দনা গাইতে লাগলো।

ফলে যে তিমিরে ছিলো বাংলাদেশ সেই তিমিরেই ফিরে যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে নেত্রীবর্গ এখনও উপলদ্ধি করতে পারছে না যে ১/১১ এর শক্তি কিন্তু সাময়িক বিরতি নিয়েছে। এরা এখনও শক্তিশালী এবং সক্রিয়। একজন পারভেজ মোশাররফ উদয় হওয়া কিন্তু সামান্য ব্যাপার। দুই নেত্রীর দায়িত্বহীন আচরন আর জনগনের হতাশার সীমা অতিক্রম করলে - আরেকজন মঈন উ আহমদেকে মানুষ হিরো হিসাবে গ্রহন করবে সাদরেই।

তখন আবার সামরিক শাসক দেখে পাকিস্তানীদের মতো অবাক হবে না - হয়তো তাদের নিয়তিকে দোষারোপ করবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।