আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মন যা চায়, তাই লিখি !

সেদিন ফেসবুকে একটা প্রোফাইলের ছবি’র লিংকে ক্লিক করে মনটা খারাপ হয়ে গেল নিজেকে প্রতারিতও মনে হলো। একটু পরেই আর একটা লিংকে বন্ধু রবু’র প্রোফাইলে ক্লিক করে মনটা ডবল ভাল হয়ে গেল, রবু’র হাসি মাখা মুখটা যেন স্বভাবমত বলছে, ” মামা ভাল আছ?” মনে মনে বললাম ভাল আছি। সাথে সাথে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালাম এবং অনলাইন চ্যাটে আমন্ত্রন জানালাম, উত্তর এলো সাথে সাথে, টুক টাক ভার্চুয়াল কথাবার্তা’র পর মোবাইল নম্বর দিয়ে বললাম ” ফোন কর”, সাথে সাথে ফোন আসলো ওর প্রথম কথাই হলো ” মামা ভাল আছ?” । অনেক দিন পর ওর সাথে কথা হলো, প্রোফাইলে ওর সাহেবের মত ফুটফুটে ছেলের ছবি দেখে বললাম, এত সুন্দর ছেলে তুই কোথায় পেলি, তোর বউ তাহলে খুব সুন্দর ? শুরু হয়ে গেল আমাদের স্বভাবগত ফাজলামি ! রাশেদের মা মারা গেছেন , রাশেদের ফেসবুক প্রোফাইলে ওর মা’র মৃত্যু সংবাদ পেলাম । ওর মার কথা আমার মনে পড়ছে।

রাশেদের সিরাজগন্জের খলিফা পট্টির বাসায় আমি দুই-তিনবার গিয়েছিলাম, সম্ভবত প্রথমবার, তখন আমরা ইউনির্ভাসিটিতে প্রথম বর্ষে পড়ি, খাবার টেবিলে গরুর মাংস থাকায় এবং আমার নাম জানার পর খালাম্মা রাশেদকে বকুনি দিয়ে বললেন, ” তুই আগে আমাকে বলবি না?” আমি হেসে বললাম, ” খালাম্মা, আরও অনেক খাবার আছে, আমি তা দিয়ে ভালই খেতে পারবো, তবুও তিনি তাড়াতড়ি করে ডিম মামলেট করে এনে আমার খাবার প্লেটে তুলে দিলেন । ওই সময় রাশেদের বড়ভাই বেলজিয়াম থেকে ভাবীসহ এসেছিল, তাই খাবার টেবিলে প্রচুর আয়োজন ছিল, তার পরেও খালাম্মা ডিম ভেজে আনলেন। এটা বললাম এই জন্য যে খুবই অল্প সময়ের পরিচয়ে আমার প্রতি তার যে সন্তানতুল্য স্নেহ ও আন্তরিকতার দেখা সেদিন আমি পেয়েছিলাম তা খুবই বিরল। কিছু কিছু ছোট জিনিস আছে যা কখনো ভোলা যায় না, স্মৃতিতে গেঁথে থাকে । সৃষ্টির্কতা তাকে স্বর্গবাসী করুন ! কয়েকদিন আগে রাশেদ দেশে এসেছিল ওর মাকে দেখতে, ব্যস্ততা, ঢাকার ভয়াবহ ট্রাফিক জ্যাম উপেক্ষা করে মতিঝিলে ওর সাথে দেখা করতে গেলাম, মোবাইলে ওর অবস্থান জেনে নিয়ে, স্ট্যাডার্ড ব্যাংকের মতিঝিল কর্পোরেট শাখায় ওর পুরোনো কলিগের রুমে ওর সাথে আমার অনেক দিন পরে দেখা হলো।

জানলাম ওর মা ভীষন অসুস্থ, ক্যানসার, মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেল। ওখান থেকে বের হয়ে, ওকে নিয়ে স্টক এক্্রচেন্জের একটেনশন বিল্ডিং-এর ৪র্থ তলায় এম সিকিরিটিসে আমার বিও একাউন্টে নতুন করে আবার কিছু টাকা জমা দিলাম, ওই প্রতিষ্ঠানের জেনারেল ম্যানেজার মাসুদ ভাই বললেন, দাদা এই ধসের সময় কি শেয়ার কিনবেন ? বললাম স্কয়ার ফার্মা, ২০ বছর পর মেয়ের বিয়ে দিব এটা বিক্রি করে ! সবাই মিলে হাসলাম। ওখান থেকে বের হয়ে রাশেদকে বললাম কি খাবি ? ও বললো কিছু না, বললাম চল তোকে একটা স্পেশাল চা খাওয়াই, এই বলে দুজনে শাপলা চত্বরের দিকে হাটতে শুরু করলাম, হকার, মানুষ, রিক্সা, প্রাইভেট কার, বাসের জট ঠেলে আমাদের প্রিয় ”ডিজিটাল চায়ের দোকানে” এলাম। চায়ের দোকানের এমন নাম শুনে ও খুব মজা পেল, বললাম এখন ডিজিটালের যুগ, সবকিছুতেই এখন এর ছোঁয়া চাই-ই, চা'তে পড়লে ক্ষতি কি? দেশটাই তো আজ ডিজিটাল ! দেখলি না শেয়ার মার্কেটে কি সুন্দর ডিজিটাল ডাকাতি হলো ! হুজুর সালমান, মিষ্টি হাসির ফালু ভাইরা রাজনৈতিক বিবাদ ভুলে দুই আপা-বেগমকে ব্যাকআপে রেখে লাখ লাখ শেয়ার ব্যবসায়ীকে ডিজিটালি ফালা ফালা করে দিলো আমি নিশ্চিত স্টিভ জবস্ও ওদের কাছে নস্সি । যাক, টাকা না থাক আমাদের গর্বের সি ডি বি এ’লে শেয়ারতো আছে পরবর্তিতে সময় সুযোগমত আবার ওদের প্রিয় হাতে সাইজ হওয়ার জন্য ! ১৯৯৬ হয়েছিলাম, ২০১১ তে হলাম এবং সম্ভবত আবার ২০২০ সালে ! সৃষ্টির্কতা ওদের অমর করুন! ডিসকভারী টিভি চ্যানেলে জাপানী মৌমাছির উপর একটি প্রামান্য চিত্র দেখেছিলাম, তাতে দেখানো হয়েছিল কিভাবে ভীমরুলের দল ক্ষুদ্র ও নিরীহ মৌমাছিদের হত্যা করে তাদের আহরিত মধু ও সন্তানদের ডাকাতি করে নিয়ে যায়, নিজে ও সন্তানদের খাওয়ানো এবং সংরক্ষণের জন্য।

ভীমরুলদের পদ্ধতিটি খুবই চমৎকার ! প্রথমে ভীমরুলরা দলবেধে কোন গাছের কোটরে বা মাটির গর্তে চাক করে বাসা বাধে আর লক্ষ্য রাধে কোথায় কোথায় মৌমাছিগুলো বাসা বাঁধছে, নিরীহ মৌমাছির কর্ষ্টাজিত মধুতে মৌচাকগুলো যখন পরিপূর্ন, বাচ্চাগুলো যখন প্রায় পূর্ণ মৌমাছি, তখন ওরা ডিম পাড়ে। প্রথমে একটা বা দুটা ভীমরুল একটা মৌচাককে টার্গেট করে নিরীহ ভাবে ঘুর ঘুর করে এবং মৌচাকের পাশে গিয়ে বসে, বোকা মৌমাছিগুলো অল্প বিপদদেখে দলবেধে চাক ছেড়ে বেড়িয়ে এসে ভীমরুলটিকে ভয় দেখিয়ে তাড়াতে যায়, এই সুযোগে ঝাঁকে ঝাঁকে ভীমরুল এসে কিছু ঝুঝে ওঠার আগেই মৌমাছির দলে আক্রমন করে। প্রথমে ধারলো দাঁত দিয়ে মৌচাক রক্ষকদের মাথা কেটে ফেলে, তারপর কর্মী ও বাচ্চা লালনপালনকারী মৌমাছিদের মাথা কাটে, সর্বশেষে রানী মৌমাছিকে হত্যা করে। না, তারা কিন্তু সব মৌমাছিদের হত্যা করে না, একটা রানী মৌমাছি যে এখনো মথ এবং তাকে লালন পালন করার জন্য কিছু কর্মী ও বাচ্চা লালনপালনকারী মৌমাছিদের ভবিষ্যতে আবার মাথা কাটার জন্য জীবিত রেখে সব মধু ও বাচ্চা নিয়ে চলে যায়। হুজুর, মিষ্টি হাসির ভীমরুল ভাইদের ডিজিটাল ডাকাতির সাথে মিলে যাচ্ছে না? একটু পরে বকুল আসলো, সবাই মিলে সেনাকল্যান ভবনের বিপরীতে, ডেইলি সানের ব্র্যান্ডিং করা সংবাদপত্র বিক্রয় কেন্দ্রে ’র বামের গলিতে আমদের প্রিয়, আমার প্রিয় কলিগ রাশেদ ভাই ও তার শেয়ার ব্যবসায়ী বন্ধুদের আড্ডাস্থল ”ডিজিটাল চায়ের দোকানে” গরুর খাঁটি দুধের চা খেলাম ।

যদিও সাইনবোর্ড টি এখন আর নেই, তাতে কি নামকরন হয়ে গেছে এটার। বসুন্ধরা গ্র“পের সেন্ট্রাল ব্র্যান্ডিং ডির্পাটমেন্টের দায়িত্বে থাকার সময় ঢাকার সংবাদপত্র বিক্রয় কেন্দ্রেগুলোর ব্র্যান্ডিং করেছিলাম। এগুলোর কন্ট্রাক্টগুলো এখনো বিদ্যমান থাকার মানে হলো আমার এই প্রজেক্টটি সফল এবং পণ্যের ধরন অনুযায়ী স্থান গুলো নির্বাচন সঠিক ছিল। সাধারনত আমাদের বর্তমান কর্পোরেট স্টাইলে নিজকে উপস্থাপন করার জন্য পুর্বোক্ত অফিসারের কাজকে অবমূল্যায়ন করা হয়। মনে হয় বর্তমানে যারা এই ডির্পামেন্টে কাজ করছে তারা এর চেয়ে ভাল কিছু ম্যানেজমেন্টের কাছে উপস্থাপন করতে পারেনি।

যাহোক মাঝে মাঝে নিজের পুরোনো কাজগুলো এখনো টিকে আছে দেখে ভাল লাগে। বকুল, রাশেদ ও আমি বহুদিন পড়ে একসাথে রিক্সায় উঠলাম যথারীতি আমি উপরে, টি এস সিতে ফারক অপেক্ষা করছে। অনেকক্ষন আড্ডা দিলাম। তারপর মা ও মেয়ে’র জন্য ব্যাকুল রাশেদকে বিদায় দিয়ে যার যার গন্তব্যে ফিরে গেলাম। বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার পর আমরা বন্ধুরা সবাই যার যার কর্মের খোঁজে এদিক ওদিক চলে গিয়েছিলাম।

প্র্রায় ১০ বছর পর আবার আমরা একত্রিত হতে শুরু করেছি। জানতে পারছি একে অপরের অবস্থান, কর্মস্থল, পজিশন, পরিবার সম্পর্কে। এরজন্য অবশ্যই মি: মার্ক জাকার বার্গ কে ধন্যবাদ দিতে হবে। ০১/০৮/২০১২ ইয়াঙ্গুনে এখন বর্ষা নেমেছে । আসার পর থেকেই দেখছি কখনো মুষলধারে, কখনো টিপ টিপ বৃষ্টি হচ্ছে।

শহরটা যেন একেবারে সবুজে ঢেকে আছে । ঘাস, লতা, গাছ গুলো যেন বলছে দেখো আমরা কত সুন্দর হতে পারি। মনে হয় এই শহরের ৫০ ভাগ এলাকা জুড়ে আছে শুধু গাছ আর গাছ। একটা শহরের সৌন্দর্যও যে সবুজ গাছপালা হতে পারে তা এখানে না আসলে বুজতাম না। আমরা আমাদের সবুজ বাংলাদেশ নিয়ে গর্ব করি কিন্তু আজ ঢাকা শহরের কতটুকুতে সবুজ বেঁচে আছে? খুব হলে ৫ ভাগ! অথচ আমরা গর্ব করি সবুজ বাংলা নিয়ে ! অর্থনৈতিক উন্নতির নামে আমরা শুধু ঢাকা শহরকেই বৃক্ষ শূন্য করিনি, বাংলাদেশকেও বৃক্ষ শূন্য করেছি।

ছোট বেলায় আমাদের গ্রামে অসংখ্য প্রজাতির ঘাস, উদ্ভিদ, গাছ পালা দেখতাম কিন্তু এখন তা আর দেখিনা। আমাদের লোভে পড়ে গ্রাম্য বন গুলোও আজ উজাড় হয়ে গেছে । গাছ রেখেও যে শহর গড়া যায় তা ইয়াঙ্গুন বাসি করে দেখিয়েছে। এখানে অবশ্য বৌদ্ধধর্ম-এর একটা বিশাল অবদান আছে। এই ধর্মমতের সাথে প্রকৃতি অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে আছে।

ইয়াঙ্গুনে আজ কয়েকদিন ধরে আমাদের কাজের প্রয়োজনে প্রচুর ঘুরতে হচ্ছে, কাজের ফাঁকে ফাঁকে যতটুকু দেখেছি তাতে মনে হয়েছে যা বা যাদের আমি বহুদিন ধরে দেখেনি তা আবার দেখছি, কলমি-লতা থেকে সজনে, নয়নতারা থেকে কাঞ্চন, ভ্যান্না ছেকে সেগুন। আমি তাদের কথাই শুধু লিখতে পারছি যাদের নাম আমি জানি কিন্তু যাদের আমি শুধুই চিনি সেইরকম শতশত প্রজাতির ঘাস, উদ্ভিদ এর কথা লিখতে পারলাম না বলে দুঃখিত। এমনকি একটা বাড়ির উঠানে অনেক বড় একটা ধঞ্চে গাছ দেখলাম যা শুধু আমদের কৃষি জমিতে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে লাগানো হয় জালানি বা জমিতে সার তৈরি হওয়ার জন্য। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার এর মধ্যে প্রকৃতিগত ভাবে ভীষণ মিল। পীত প্রজাতির মানুষ গুলোকে বাদ দিয়ে এই দেশকে দেখলে যে কেউ বাংলাদেশ বলে করে ভুল করবে! একটা ব্যাপারে আমার খটকা লেগেছে, চরুই পাখি ব্যতিত আর তেমন কোন পাখি দেখিনি? ভেবে নিজেই সিদ্ধান্ত নিলাম “হয় অন্য পাখিগুলো বৃষ্টির কারনে চলাফেরা বন্ধ করে রেখেছে, না হয় দেশজুড়ে অনেক গাছ পালা থাকার কারনে তাদের খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে আসতে হয় না”।

এত গাছ আছে অথচ পাখি নাই এটা- এত গাছ আছে অথচ পাখি নাই এটা-তো হতে পারে না? ২০/০৮/২০১২ বাংলাদেশি প্যাকেটজাত দুধে ভেজাল প্রসঙ্গেঃ লেখাটার জন্য লেখককে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমরা কোন দিকে যাচ্ছি? আমরা কি ন্যায়-অন্যায়, ভালমন্দ, মানবিকতা, এমন কি ধর্মীয় মূল্যবোধও হারিয়ে ফেলেছি? দুধে’র মত একটা বিশুদ্ধ ও পবিত্র দ্রব্যে বিষ মেশাচ্ছি? লোভ আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? আপনারা যারা এটা করছেন, তারা কি একবারও ভেবেছেন, আপনার বিষ মিশ্রিত দুধ আপনারই শিশু সন্তানটি খাচ্ছে? বা আপনার আদরের মেয়েটি, যে দুধ তার শিশু সন্তানটাকে আদর করে খাওয়াচ্ছে তাতে আপনিই বিষ মিশিয়ে রেখেছেন? একবার ভাবুন প্লিজ! আমরা, আর যায় হোক এই সব দানবদের হাত থেকে সহজেই মুক্তি পাচ্ছি না! কারণ যারা এদের শাস্তি দিবে তারাই ত এখন ওদের রক্ষক! প্রায় গত ৮-১০ বছর থেকে এই ভেজাল/বিষ শুনছি কিন্তু কোন প্রতিকার কি হয়েছে? একজন একাই একটু চেষ্টা করেছিলো তাকেও সুযোগ মত আমাদের স্বনামধন্য প্রশাসনের লোকজন সামান্য ছুতাই সাইজ করে কম গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ফেলে রেখেছে। অতএব, আসুন, দুধে বিষ মিশ্রণকারী, তা বাজারজাতকারী, পানকারী, চোখ বুজে সহ্যকারী, বিচারের নামে প্রহনশনকারী, ঘুষ খেয়ে অপরাধী ছেড়ে দেওয়াকারী, পাপীদের সঙ্গে নিয়ে এবং জনগণকে জিম্মি করে রাজনীতিকারী, আমরা সবাই অপেক্ষা করি কোন জটিল রোগে মৃত্যুর জন্য! 23/08/2012 ব্যাংকক এয়ারওয়েজ থেকে ইয়াঙ্গুন নামার পর, কাস্টমস ক্লিয়ারেঞ্চের সময় কাঁচের ভিতর থেকেই দেখলাম বাইরে টিপটিপ বৃষ্টি হচ্ছে। লাগেজ গুছিয়ে নিয়ে বাইরে এসে দেখি পলাশ ভাই ও তার লোকজন গাড়ী নিয়ে অপেক্ষা করছে। গাড়ী চলতেই বড় ধরনের খটকা লাগলো, এখানে সব গাড়ী চলে রাস্তার ডানপাশ দিয়ে যদিও গাড়ির স্টিয়ারিং ডান পাশে! সাধারনতঃ এই ট্র্যাফিক সিস্টেমে স্টিয়ারিংটা বাম পাশে হওয়ার কথা।

এয়ারপোর্ট থেকে হোটেলে যাওয়ার রাস্তাটা খুব সুন্দর কিন্তু দু পাশের রাস্তা বিভক্তকারী কনক্রিটের কোন রোড ডিভাইডার না থাকার কারণে বারবারই মনে হচ্ছিলো এই বোধ হয় সামনের গাড়ির সাথে ধাক্কা লাগলো! দুই একবার চমকেও উঠলাম এবং হার্টটা তার কয়েকটা বিট’ও মিস করলো! আমরা সাধারণত ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গাকে বিভিন্ন নামে চিনি যেমন মিরপুর, বারিধারা, গুলশান, মতিঝিল ওরা চেনে বিভিন্ন টাউন-শিপ নামে, পুরো শহরটাই টাউন-শিপ আদলে তৈরি। আমাদের হোটেলটা ছিল “বহন” (আমাদের উচ্চারণ) টাউন-শিপ -এ। ভাষাটা এখানে একটা ফ্যাক্টর, ইংলিশ প্রায় কেউই জানেনা ! আর ইংলিশ অক্ষর দিয়ে কোন জায়গা বা হোটেলের নাম পড়তে গেলে তা নিশ্চিত ভাবে ভুল হবে। যেমন মায়ানমার-এর মুদ্রার নাম “Kyat” কিন্তু উচ্চারণ হবে “চাট”। ১০০ ডলারে ৮৪,০০০ চাট পাওয়া যায় কার্ব মার্কেটে কিন্তু হোটেলে এক্সচেঞ্জ করলে ৭৪,০০০ থেকে ৭৬,০০০ চাট পাওয়া যাবে।

মামুন ভাইয়ের কাছে জরুরি ভিত্তিতে ১০০ ডলার ভাঙ্গানোর পর ৮৪,০০০ চাট পেয়ে নিজেকে যথার্থই বড়লোক মনে হলো। কিন্তু যখনিই মামুন ভাইয়ের কাছে হোটেল ভাড়া জিজ্ঞাসা করলাম তখনি মাথাটা চক্কর দিলো হোটেলের রুম ভাড়া শুনে । প্রতি রাত্রি ৭৫,০০০ চাট প্রতি রুম। পরে আমরা অবশ্য অনেক কমে রুম পেয়েছিলাম। এখানে বিদেশিদের জন্য সব কিছুর দাম ডাবল ।

আমি যে রুমে আছি তার ভাড়া একজন মায়ানমার বাসীর জন্য অর্ধেক । এখানে আসার পর প্রথম প্রথম আমি যখনিই কোনকিছুর দাম জিজ্ঞাসা করেছি বা কোন পণ্য-এর Price Tag দেখেছি তখনি ভড়কে গেছি দাম শুনে বা জেনে। “হোটেল পার্ক রয়াল” –এর কাছে “৩৬৫ রেস্টুরেন্ট”–এ দুপুরের খাওয়ার পর যখন খাইরুল স্যার ও আমার খাওয়া বাবদ ২৫,০০০ চাট বিল আসলো তখন আবার ভড়কে গেলাম! পরে মামুন ভাই একটা বুদ্ধি শিখেয়ে দিলো, বলল “ দাদা, দাম যাই আসুক না ক্যান তাকে ১০ দিয়ে ভাগ করবেন। অর্থাৎ কোন কিছুর দাম ১,০০০ চাট চাইলে আপনি মনে করবেন ১০০ টাকা, তাহলে আর কোন প্রবলেম হবে না, আমাদেরও প্রথম প্রথম খুব সমস্যা হয়েছে”। বুদ্ধিটা খুবই কাজে দিলো।

পরে আর যে কয়দিন ছিলাম এটা নিয়ে আর কোন সমস্যা হয়নি। হোটেল পার্ক রয়াল হচ্ছে ইয়াঙ্গুন–এ সবচেয়ে বড় পাঁচ তারকা হোটেল, কিছু দিন আগেও এর রুম-রেন্ট ৫০-৮০ ইউ এস ডলার এর মধ্যে ছিল কিন্তু মায়ানমার সরকার অং সাং সুকি’কে মুক্তি দেওয়ার পাশাপাশি, তাকে ও তার দলকে গণতান্ত্রিক নির্বাচনে অংশ গ্রহণের সুযোগ দানের পর মায়ানমার –এ যেন পর্যটক-এর ঢল নেমেছে। এর সাথে যোগ দিয়েছে আমেরিকান ও ইউরোপিয়ান ব্যবসায়ী দল । এ যেন এক Gold Rush । এই সুযোগে হোটেলটির রুম রেন্ট ২০০ + ইউ এস ডলারে ঠেকেছে ।

আর “৩৬৫ রেস্টুরেন্ট” টির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্যই হোল, এটা বছরের কখনই বন্ধ হয় না এবং সবধরনের খাবার সবসময় পাওয়া যায়! অবশ্যই বাঙ্গালী বা ইন্ডিয়ান ফুড না! অক্টোপাস থেকে স্যামন মাছের স্তেক, পরক(Pork) থেকে চিকেন আইটেম, ফ্রুটজুস থেকে শ্যাম্পেইন। এছাড়াও সবধরনের কেক, ডেসার্ট মিলবে এখানে। এর সাথে যে মানিয়ে নিতে পাড়বে তার কোন সমস্যা হবে না । যে পারবে না তাকে ভিন্ন চিন্তা করতে হবে কিন্তু মনে হয় কোন লাভ হবে না! ইয়াঙ্গুনের ছোট রেস্টুরেন্ট যেখানে শুধুই স্থানীয় মানুষ খাবার খায়, সেখানে আমরা খেতে পারবোনা। আমার কাছে সবচেয়ে ভাল লেগেছে আমি যে হোটেলে ছিলাম তার রেস্টুরেন্ট এর খাবার, আমি ফুড মেন্যু থেকে ২/৩ টা ভেজ মেন্যু বেছে নিয়ে তা নিজের মত করে মিশিয়ে খেয়েছি।

আফটার অল এখনও অক্টোপাস বা সীস্নেক খাওয়ার মত অবস্থায় নিজেকে উত্তোলন করতে পারিনি! চাকুরীসুত্রে কিন্তু ব্যবসার কাজে এখানে এসে গত কয়েকদিন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে, বিভিন্ন মানুষের সাথে মিশে, কথা বলে বুজলাম, এখানে ব্যবসা শুরু করা কষ্ট হবে কিন্তু একবার শুরু করতে পারলে এবং আমাদের কমিটমেনট ঠিক থাকলে ভবিষ্যৎ খুব ভাল। কারণ অফুরন্ত সম্পদে পরিপূর্ণ এই দেশের বাজারটি এখনও পুরোপুরি ফাকা। যদিও দেশটিতে চীনাদের এবং আংশিকভাবে থাইল্যান্ডের প্রভাব খুব বেশী কিন্তু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুরোদমে চালু হলে এই দেশের জনগণ নিশ্চিত ভাবেই আগের প্রভাব থেকে মুক্ত হতে চাইবে, হতে চাইবে স্বাবলম্বী, আর এখানেই আমাদের সম্ভাবনা। আত্মশক্তিতে বলিয়ান এই জাতি অবশ্যই অর্থনৈতিক ভাবেও পিছিয়ে থাকতে চাইবে না! এই কারনেই আমেরিকান ও ইউরোপিয়ান ব্যবসায়ীর দল ঝাঁপিয়ে পরেছে ব্যবসার খোঁজে, ফলও পাচ্ছে হাতে নাতে, রাস্তায় এখন ব্র্যান্ড নিউ BMW, Mercedes Benz, AUDI, TOYOTA-Lexus গাড়ির ছড়াছড়ি। শুনলাম ৫-৬ মাস আগেও অফিস টাইমে রাস্তা ফাঁকা থাকতো কিন্তু আমরা ভালই ট্র্যাফিক জ্যাম পেলাম।

মনে মনে বললাম, এইতো মুক্ত অর্থনীতির বাই-প্রডাক, বুজবা কয়দিন পর, যখন আমাদের মত ডেইলি ৪-৫ ঘণ্টা জ্যামে বসে থাকবা! সবার কাছেই এক বাক্যে শুনলাম, এই দেশের মানুষ খুবই সৎ, চুরি ডাকাতির কথা নাকি শোনাই যায় না। মনে মনে আবার বললাম, মুক্ত অর্থনীতির বাই-প্রডাক হিসাবে শুধু ট্র্যাফিক জ্যামই এই দেশে ঢুকবেনা? দুর্নীতিও ঢুকবে, এই জায়গাটাও ফাঁকা! অচিরেই দুর্নীতির লিস্টে আমাদের পাশে তোমাদের পাবো বন্ধু! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।