আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি - আগেও ছিলাম দর্শক - এখনও আছি।

যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি ১৯৯৬ সালের শুরুর দিকে ঢাকা শহর প্রায়ই খালি থাকতো। কারন বিরোধীদল প্রতি সপ্তাহে হরতাল ডেকে মানুষকে বাড়ী বসিয়ে রাখতো। তাদের দাবী ছিলো - দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন মানি না - চাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তখনকার সরকারী দলের নেতারা বলছিলো - যা বলার সংসদে এসে বলেন - রাজপথে আন্দোলন করে লাভ নাই। আজ ২০১২ সাল - সরকারী দল একই কথা বলছে আর বিরোধী দল মহাসমাবেশ করে সরকারকে "লুলা ল্যাংড়া" বানানোর প্রক্রিয়ায় আছে।

সেইদিন ক্ষমতায় ছিলো খালেদা জিয়া - যিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীকে তাচ্ছল্য করে বলেছিলেন - "পাগল আর শিশু ছাড়া কেউই নিরপেক্ষ নয়"। উনি আরো বলেছিলেন - একদিন মানুষ এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করবে। সেই সময়ে তথ্যমন্ত্রী নাজমুল হুদা বিরোধীদলের দাবীর প্রতি সমর্থন দেওয়ার কারনে মন্ত্রীত্ব হারিয়েছিলেন। জেনে রাখা ভাল - মাগুড়ার উপনির্বাচনে শাসক দল বিএনপির ভোটকারচুপির ঘটনা থেকেই তত্ত্বধায়ক সরকারের আন্দোলনে জন্ম। অবশেষে খালেদা জিয়া দাবী মেনে ছিলেন।

বিরোধীদলে তিন টার্মের দাবীর জায়গায় উনি এই ব্যবস্থা স্থায়ী করে দিয়েছিলেন সংবিধানে। তা সোজা পথে করেননি। একটা একদলীয় নির্বাচন করে নিজেদের বিতর্কিত করে রাতের শেষ ভাগে সংসদ অধিবেশন চালিয়ে এই বিল পাশ করে তারপর পদত্যাগ করে তবে শেষ রক্ষা পেয়েছিলেন। (২) তারপর আমরা দেখেছি - তত্ত্বাবধায়ক নামক একটা অগনতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভাঙ্গা বেড়া দিয়ে কিভাবে শিয়াল ঢুকেছে গনতন্ত্রের বাগানে। আদালত কর্তৃক অবৈধ ঘোষনা আর বিকল্প ব্যবস্থা আর দুইটার্ম রাখার শর্ত হিসাবে বিচার বিভাগকে সংশ্লিষ্ট না করার বিধান রাখার প্রেক্ষিতে বর্তমান সরকার পুরো ব্যবস্থা বাতিল করেছে।

যেখানে বিরোধীদলকে আলোচনার জন্যে প্রতিনিধি প্রেরনের কথা বললেও এরা তা করেনি। কারন তো পরিষ্কার - ভবিষ্যতে আন্দোলন করা যাবে। আজ সেই খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্যে আন্দোলন করছেন আর শেখ হাসিনা তাদের সংসদে গিয়ে প্রস্তাব দিতে বলছেন। ইতিহাসের এই পুনরাবৃত্তিতে একটাই সমস্যা - তা হলো আওয়ামীলীগের দেখানো পথে বিএনপি হাঁটছে। আর সেই আন্দোলনের প্রস্তুতি হিসাবে বিরোধীদল সংসদ থেকে পদত্যাগ করলেও এখনকার বিরোধীদল সদস্যপদ রেখেই সংসদকে উপেক্ষা করছে।

(৩) ৯০ এর গনআন্ত্রিক বিজয়ের পর যা হতে পারতো - তা হলো সংসদকে কার্যকর করে সেখানে বিতর্ক করে একটা সিধান্ত নেওয়া। কিন্তু বাংলাদেশের দূর্ভাগ্য যে - রাস্তা বন্ধ করে মিটিং আর হরতাল ঢেকে জনজীবন বিপর্যস্থ করে পেশীশক্তির প্রদর্শনীই রাজনৈতিকদলগুলো গনতান্ত্রিক অধিকার হিসাবে মনে করে। সাধারন মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপনকে এখানে করুনা হিসাবে দেখা হচ্ছে। বিষয়টা এমন যে - আমরা ইচ্ছা করলে সারাবছরই হরতাল করতে পারতাম - দয়া করে করছিনা - তাই আমাদের ভোট দাও। ইতিহাসের এই পুনরাবৃত্তি কতদুর যাবে - তা দেখার জন্যে অপেক্ষা করছি।

আওয়ামীলীগও কি বিএনপির মতো একদলীয় নির্বাচন করবে - নাকি একটা আলোচনার পরিবেশ তৈরী হবে। বিরোধী দলকি নিজেদের দায়-দায়িত্বকে উপেক্ষা করে রাস্তায় শক্তি প্রদর্শণ করবে - নাকি আলোচনার জন্যে সংসদে যাবে? ১৯৯৬ সালেও ছিলাম দর্শক - এখনও দর্শক - পার্থক্য শুধু পাত্রপাত্রী বদল। ভিলেন নায়কের ভুমিকায় - আর নায়ক ভিলেন জায়গায়। একই কাহিনী - একই নাটক - শুধু কিছু সংলাপের পরিবর্তন। (৪) দর্শক হিসাবে তেমন কিছু করার অধিকার নাই - কিন্তু ভাবার অধিকারটুকু তো আছে।

তাই ভাবি এই যে অসুস্থ রাজনীতি - এর থেকে কি দেশ কখনই বেরুতে পারবে না? উত্তর হলো - পারবে - তখনই যখন দেশের নতুন প্রজন্ম এই অসুস্থ রাজনীতির মুলে যে বানিজ্যটা চলে তা ধরতে পারবে এবং এর প্রতিবাদ করবে। ধরাযাক - গত ১০ দিন - বাংলাধেমর সরকার ব্য্‌থ রাজনীতি নিয়ে - সংসদে আছে আলোচনার জন্যে - সেখানে আলোচনা না হয়ে হচ্ছে বাইরে - আলোচনা না গালাগালি। লাভ কার হচ্ছে - যারা দূর্নীতি করে বিপুল অর্থের মালিক এরা উভয় পক্ষকে চাঁদা দিয়ে উস্কে দিচ্ছে বিভেদ। গত ৭ই মার্চ আওয়ামীলীগ শো ডাউন করলো - প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়েছে। যারা এই অর্থ যোগান দিয়েছে এরা কেউই হামি মোহাম্মদ মোহসিন না বা কোন আর্দশকে প্রতিষ্ঠার জন্যে জানপ্রান দিয়ে চেস্টা করছে না।

এরা ইনভেস্ট করেছে - এবং লাভসহ তা উঠিয়ে নেবে। ঠিক তেমনি ১২ তারিখের সমাবেশের জন্যে সারাদেশ থেকে লোক নিয়ে আসার জন্যে এবং তাদের খাওয়া দাওয়ার জন্যে যে বিপুল অর্থ ব্যয় হবে - তা নিম্চয় কোথা থেকে আসবে। এই অর্থের যোগানদাতা আর আগের অর্থের যোগানদাতারা প্রায় একই। বড় বড় প্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্ট কর্মকর্তা আছে যারা এই লেনদেনের কাজ করে - বিনিময়ে লাভসহ তা পুষিয়ে নেবার ব্যবস্থা হয়। আলোচনার মাধ্যমে যে সমস্যা সমাধান করা যায় - তাকে নিয়ে আন্দোলন নামে দিয়ে সমস্ত দেশের নজর সেই দিকে ব্যস্ত রেখে একদল লোক নিজেদের বানিজ্য করে নিচ্ছে আর রাস্তায় মার খাবে একদল মাথা গরম তরুন।

যদি একটু লক্ষ্য করি দেখবো - দেশ থেকে মিলিয়ণ মিলিয়ন ডলার কিভাবে চলে আসছে - টরন্টো শহরের উচ্চবিত্ত এলাকায় নগদে বাড়ী কিনে ফেলছে বাংলাদেশের কাস্টমস অফিসার। আর দেশে তরুনসমাজ খালেদা হাসিনা শ্লোগান নিয়ে মারা মারিতে ব্যষ্ত। এই অসুস্থ রাজনীতি আর দূর্নীতিবাজদের মোটাতাজাকরনের প্রক্রিয়া থেকে দেশকে বাঁচাতে তরুন সমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে আর সেই দিনেরই অপেক্ষা আপাতত টিভির দর্শক হয়ে বসে থাকবো। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।