চিত্ত যেথা ভয়শূন্য
বাংলাদেশের মডেল কন্যা মেহজাবিন পাকিস্তানি ক্রিকেটার শহীদ আফ্রিদির সাথে ক্যাট ওয়াক করেছেন। বিষয়টা তিনি উপভোগ করেছেন সেজন্য ফেসবুকে ছবি পোস্ট দিয়েছেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে মেহজাবিন কি অন্যায় করেছেন, অনৈতিক কাজ করেছেন? শহীদ আফ্রিদি কি একজন অস্পৃশ্য মানুষ, পাকিস্তানি মানেই আমাদের কাছে এক পরিত্যাজ্য সত্ত্বা? এই প্রশ্নের উত্তর খুব সহজ নয়।
মেহজাবিনের অপরাধ তিনটাঃ
১/ জাতীয় অবমাননার অমীমাংসিত অধ্যায়ের অবজ্ঞা।
আমাদের লড়াই হয়েছিলো পাকিস্থানের শাসক গোষ্ঠীর সাথে জনগনের সাথে নয়।
পাকিস্থানের জনগণ আমাদের শত্রু নয়। মুশকিল হচ্ছে পাকিস্থানের শাসক গোষ্ঠী কখনোই তাদের কৃত অপরাধের জন্য ক্ষমা চায়নি যদিও জনগনের পক্ষে অনেকেই ৭১ এর অপরাধের জন্য বাংলাদেশের জনগনের কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চেয়েছেন (যেমন হামিদ মীর), সেই ক্ষমা প্রার্থনা আমরাও গ্রহণ করেছি। হামিদ মীর বাংলাদেশে একজন সন্মানিত পাকিস্থানি। তেমনি সন্মানিতা কবি ফয়েজ আহমেদের কন্যা সালিম হাসমি, মালিক গুলাম জিলানি এবং তাঁর কন্যা আসমা জাহাঙ্গির। কিন্তু কোনভাবেই পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী তাদের ভুল স্বীকার করতে রাজী নয়, এমনকি তাদের পরবর্তী প্রজন্মও নয়।
এই অমীমাংসিত বিষয়টি আমাদের সমস্ত অস্বস্তি আর আপত্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই শাসক যতদিন ক্ষমা না চাইবে ততদিন আমাদের লড়াই, আত্মত্যাগ পূর্ণতা পাবেনা। সেই শাসক গোষ্ঠীর সাথে জনতার ঐক্য বা সহমর্মিতা থাকতে পারেনা।
হামিদ মীর আর শহীদ আফ্রিদির মধ্যে তফাতটা তাহলে কোথায়? হামিদ মীর পাকিস্তানি জনগনের প্রতিনিধিত্ব করে, আর শহীদ আফ্রিদি করে পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠীর। হামিদ মীরের সাথে ক্যাট ওয়াক করলে কোন বিতর্কই হতোনা।
পাকিস্তান রাষ্ট্রটির খুব বেশী অর্জন নেই যা সেই রাষ্ট্রকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে, একমাত্র ক্রিকেটই সেই দুর্বল রাষ্ট্রের সবল পরিচিতি। ক্রিকেট আর রাজনীতি মিলে মিশে একাকার পাকিস্তানে। সেই দলের পোশাক হয় তাদের জাতীয় পতাকার রং আর আদলে। দলের বিজয়ে আন্দোলিত হয় সেই দেশের জাতীয় পতাকা।
মেহজাবিন সেই শাসকের প্রতিভুর পায়ে পা মিলিয়ে গর্বিত হয়েছে।
এটা তার প্রথম অপরাধ।
২/ জনতার সার্বভৌম ইচ্ছার সাথে বিচ্ছিন্নতা
শাসকের সাথে শাসকের মোলাকাত হতে পারে, সেখানে জনতার কোন দায় নেই। শাসক আরেক শাসকের সাথে হাত মেলাতে পারে কিন্তু সেই হাত মেলানো জনতার বৈধতা পায়না। পাকিস্তানি শাসকের প্রতিভু আফ্রিদির পায়ে পা মিলিয়ে হেঁটে মেহজাবিন জনতার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছেন। পাকিস্তানি শাসকের সাথে যারা জনতার সার্বভৌম ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে হাত মিলিয়েছেন তারাই জনবিচ্ছিন্ন হয়েছেন, ইতিহাস সাক্ষী।
এটা তার দ্বিতীয় অপরাধ।
৩/ পেশার সাথে অসততা
একজন মডেল যে পণ্যের বিজ্ঞাপনে পণ্যের প্রতীক হয়ে আসেন সেই পণ্যের বিজ্ঞাপনে একটা প্রতিষ্ঠান বিপুল বিনিয়োগ করে মডেলকে পণ্যের প্রতীক করে তোলে একটা লক্ষ্য অর্জনের জন্য। মডেলের উপর একটা স্বেচ্ছা আরোপিত শৃঙ্খলা চেপে বসে যেন সেই পণ্যের বাণিজ্যিক লক্ষ্য তার কারণে ব্যাহত না হয়। মেহজাবিনের জনতার সাথে যে বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছে সেটা তার বিজ্ঞাপিত পণ্যকে বাণিজ্যিক ভাবে অসফল করে ফেলবে। তার পিছনে যারা বিনিয়োগ করেছিলো তাদের প্রত্যাশার পিঠে ছুরি মারা তার তৃতীয় অপরাধ।
মেহজাবিনকেই বুঝতে হতো তিনি এক পাল্লায় আফ্রিদি আর আরেক পাল্লায় জাতীয় অবমাননাকে রাখছেন, আফ্রিদি যতই আকর্ষণীয় পুরুষ হোন না কেন, যত দুর্দান্ত খেলোয়াড়ই হোন না কেন, তার ওজন আমাদের জাতীয় অবমাননার চাইতে বেশী হবেনা।
মেহজাবিনের এই ক্ষণিকের ভালো লাগা তার আফ্রিদি সংক্রান্ত তিনটি অপরাধের জন্য তাকে অনন্তকাল জ্বালাবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।