আমি কিছুই না..... আবার অনেক কিছু । আমি সেইসব মুভি গুলো নিয়ে লিখি, যার পেছনে সত্য ঘটনার ছোয়া রয়েছে. যেই মুভি টি নির্মিত হয়েছে একটি সত্য কে অবলম্বন করে.
ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান ।
স্টিফেন স্পিলবার্গ এর আরেকটি কমেডি-ড্রামা ফিল্ম , লিওনার্দো ডি ক্যাপরিও এবং টম হ্যাঙ্কস অভিনীত ।
কাহিনীটি গড়ে ওঠে একজন কিশোর, ফ্রাংঙ্ক অ্যাবেগনেল জুনিওর [ লিওনার্দো ডি ক্যাপরিও ] কে ঘিরে । তার অপরাধী হিসেবে উথ্থান এবং প্রচন্ড বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সে একাধারে প্যান আমেরিকান এয়ারলাইন্স এর পাইলট, ডক্টর এবং পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে তার ১৯ বছর পূর্ন হওয়ার পূর্বেই প্রায় মিলিয়ন ডলার ভূয়া চেক এর মাধ্যমে ব্যায় করার কাহিনী চলচিত্রের মূল আকর্ষন ।
বিপরীতে, টম হ্যাঙ্কস, এফ,বি,আই এর ব্যাংক ফ্রড এজেন্টের ফ্রাংঙ্ক কে ধরার চেষ্টাও ছিল নামকরনের একটি কারন ।
অবশেষে ফ্রাঙ্ক ধরা পরে এবং তার ১২ বছরের জেলও হয় । কিন্তু ফ্রাঙ্ক এর প্রতিভায় বিস্মিত হয়ে তাকে এফ,বি,আই এই নিয়োগ দেয়া হয় ।
মূল টপিকে আসি ।
চলচিত্রের মূল চরিত্র, ফ্রাঙ্ক আবেগনেল জুনিয়র ।
তাকে নিয়েই তৈরি চলচিত্র টি ।
ফ্রাঙ্ক আবেগনাল জুনিয়র
সুখের সংসারই ছিল, বাবা, মা এবং আবেগনেল নিজে । কিন্তু ১৬ বছর বয়সে তার বাবা মার ডিভোর্স ঘটে এবং এর পর সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান । তিনি কোন দিনও আর বাড়ি ফেরেন নি । তার অপরাধ জীবনের পেছনে তার বাবা মার বিবাহ বিচ্ছেদ একটি বড় ভূমিকা পালন করে ।
এটা তার কিশোর মনের উপড় প্রভাব ফেলেছিল গভীর ভাবে ।
১৬ বছর বয়ষ থেকে তিনি চেক ফ্রডিং শুরু করেন । ১৯৬০ সালে তিনি দূধর্ষ হয়ে ওঠেন এবং ২,৫ মিলিয়ন ডলার তিনি চেক ফ্রডিং করে ২৮ টি দেশ থেকে তোলেন।
তাকে ২ বার পুলিশ হাতের মুঠোয় পেলেও তিনি পালিয়ে যান ফাক গলে।
তিনি বিভিন্ন চরিত্রে অবতীর্ন হতে থাকেন, কখনও ডক্টর, কখনও এটর্নি, কখনও আইনজীবী, কখনও বৈমানিক ।
ডক্টর :
তিনি প্রায় ১ বছর শিশু-রোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে জরজিয়া হসপিটাল এ কাটান । তার জন্য এটা তেমন কষ্টকর হয়নি, কারন তিনি তার সব কাজ ইন্টার্নী ডাক্তার দিয়ে করাতেন । কিন্তু অনেক সময় অনেক ক্রিটিক্যাল কেস তাকে ম্যানেজ করতে দেয়া হত যা তার জন্য ছিলো প্রচন্ড বিপদজনক। তিনি ১১ মাস পর এই পেশা ছেড়ে দেন ।
বৈমানিক :
১৬-১৮ বছরের ভিতর, ফ্রাংক ১০০,০০০ মাইল, ২৫০ টি ফ্লাইটে, ২৬ টি দেশে ভ্রমন করেন বৈমানিক পরিচয়ে ।
এসময় তিনি তার সব খরচ এয়ারলাই সংস্থাটিকেই বর্তে দেন । অনেক সময়, প্লেনের আন্য পাইলট রা ফ্রাংক কে বিমান চালাতে বলতেন এবং ফ্রাংকে তা বিনা বাক্য ব্যয় এ করতে হত । এসম্পর্কে ফ্রাংক বলেন ,
আমাকে খুব সজাগ থাকতে হত, কেননা পুরো বিমানের যাত্রিদের জীবন আমার উপর এবং আমার নিজের টা তো বটেই , বলা বাহুল্য, আমি জীবনে ঘুড়িও চালাইনি ।
ফ্রাংক বিমান চালনার সময় সবার চোখ কে ফাকি দিয়ে অটো-পাইলট মোড সক্রিয় করে দিতেন , যার ফলে কোন দূর্ঘটনার সামনা-সামনি তিনি হন নি ।
শিক্ষক:
ফ্রাংক, কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির একটি ভূয়া সনদপত্র বানান এবং ব্রিগহ্যাম ইয়ং ইউনির্ভাসিটি তে এক সেমিস্টার সমাজবিজ্ঞান ও পড়ান ।
এটর্নী :
তিনি এবার আরও বিশাল একটি জাল সনদ-পত্র তৈরী করেন, হাভার্ড ইউনির্ভাসিটির একটি আইন বিষয়ের ডিগ্রির সনদ এবং ৮ সপ্তাহ পড়ে তিনি নিজ মেধায় বার এক্জামিনেশন দেন এবং কৃতকার্য ও হন ।
১৯ বছর বয়ষে দিনি লুসিয়ানার এটর্নি জেনেরাল এর অফিসে কাজ করেন ।
কিন্তু এ চাকরি তাকে ছাড়তে হয়।
তাকে অবশেষে ১৯৬৯ সালে গ্রেফতার করা হয় এবং তার ১২ বছর এর জেল হয় ।
তারপরের কাহিনী টা চলচিত্রের সাথে মিলে যায় ।
তাকে এফ,বি,আই তাদের এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়। প্রথমে এটা ছিল চুক্তিভিত্তিক । পরে তিনি স্বাধীন ভাবেই চাকুরী করেন।
তিনি এখন তার নিজস্ব সিকিউরিটি কনসালটেন্ট ফার্মে কাজ করেন । তিনি এফ,বি,আই ট্রেনিং একাডেমীর লেকচারার ও ছিলেন এবং একজন এজেন্ট ও ছিলেন ।
তার এক ছেলেও এফ.বি.আই এর এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন ।
তিনি এখন তার নিজস্ব সিকিউরিটি কনসালটেন্ট ফার্মে কাজ করেন । তিনি এফ,বি,আই ট্রেনিং একাডেমীর লেকচারার ও ছিলেন এবং একজন এজেন্ট ও ছিলেন ।
চলচ্চিত্র নিয়ে কিছু কথা:
মুভি টি শুরু হবার কথা ছিল ১৯৮০ সালে কিন্তু এর শুরুয়াত ১৯৯৭ সালে হয় যখন স্পিলবার্গ ফ্রাঙ্কের বইটি কেনেন.
বলে রাখি, এই বইয়ে পেছনে স্পিলবার্গ চাড়াও আরও অনেকেই ভীড় জমিয়েছিলেন যাদের ভেতর ডেভিড ফিনচার অন্যতম. এমন কি ২০০০ সালে তিনি এই ছবির পরিচালনার সাথে যুক্তও হয়ে ছিলেন কিন্তু এটা ছেড়ে দেন তার অন্য ছবি "প্যানিক রুম" এর জন্য. ড্রিমওয়ার্ক বইটির স্বত্ব কেনার পর মোটামোটি সব গোছাতে শুরু করে. স্পিলবার্গ প্রডিউসার হিসেবে থাকেন এবং ডিরেক্টর হিসেবে পাইরেটস অফ দ্যা ক্যারাবিয়ান এবং র্যাঙ্গোর পরিচালক
গোর ভারবিনস্কি কে মনোনীত করা হয়.
পুরো কাস্ট ভিন্ন ছিল, টম হ্যাঙ্কস ছিল না, ক্রিস্টোফার ওয়কার ছিল না. কিন্তু ভারবিনস্কি ও বেশী দিন টিকতে পারেনি. কারন ক্যাপরিও তখন গ্যংস অফ নিউইয়র্ক নিয়ে ব্যাস্ত.
আবার পরিচালকের পরিবর্তন. আসলেন ল্যাসে হলস্ট্রম যার একটি মুভি পরিচিত " হাচিকো: এ ডগ স্টোরী". কিন্তু তিনিও বিদায় হন.
পরিচালকের আসা যাওয়ার খেলা চলছিলো. আগষ্ট ২০০১ সালে স্পিলবার্গ অফিসিয়ালি ঘোষনা দেন, পরিচালনা তিনিই করবেন. বোধহয় তিনি নিজেও বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলেন.
২০০২ তে শুরু হয় মূল কাজ. ফ্রাঙ্ক ছবিটি পছন্দ করেছিলেন. কারন সে মনে করতো স্পিলবার্গ ছাড়া আর কেউ এই ছবি ফুটিয়ে তুলতে পারবে না. এমন কি ফ্রাঙ্ক ছবিতে কোন পরিবর্তন আনা হয়েছে কিনা তাও জানতে চান নি.
ফ্রাঙ্ক অ্যাবেগনলি এবং ক্যাপরিও.
এখানে বলা দরকার, ছবিতে দেখানো হয় যে ফ্রাঙ্ক অ্যাবেগনলে তার বাবা সাথে হোটেলে দেখা করছে. কিন্তু বাস্তবে সে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার পর আর কোন দিন তার বাবা কে দেখে নি.
স্পিলবার্গ এবং ফ্রাঙ্ক দুজনই ছবিটি থেকে চেয়েছেন একটা মেসেজ সবার কাছে পৌছে যাক. ব্রোকেন হোম এবং তার বিপন্ন শৈশব. যা তাকে অপরাধপ্রবন করে তুলেছিল.
বাজেট ছিল: ৫২ মিলিয়ন
ছবিটির আয় ছিল : $৩৫২,১১৪,৩১২
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।