আমার স্ত্রীর নাম বিউটি হাসান। গত ২০০৪ সালে তাঁর সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয় তারই দুর সম্পের্কর এক ফুফাতো বোনের মাধ্যমে। মজার ব্যাপার হলো আমার স্ত্রীর ঐ ফুফাতো বোনের সাথে পরিচয় হয় ভুল নাম্বারে ডায়াল করার মাধ্যমে, সেটা ২০০৩ সালের কথা। তিনি বয়সে আমার থেকে বছর পাচেকের বড় হওয়ায় ও কথায় মুক্তা ঝরানোর কারণে আমাদের মধ্যে একধরনের আলাপচারিতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এটা ছিল কেউ কাউকে না দেখাদেখির আলাপচারিতা।
তবে খুব যে বেশি আলাপ হয়েছে তাও না। হয়তো মাসে ৩/৪ দিন ফোনে কথা হতো। আমি তাকে আপু বলে ডাকতাম। সেই আপুকে আজো পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি। শুনেছি, ঢাকার মিরপুরে এক চাকুরীজীবীর সাথে বিয়ে হয়ে ১টি পুত্র সন্তানের মা হয়েছেন।
যাহোক ২০০৪ সালে তিনি আমাকে তার মামাতো বোনের (বর্তমানে আমার স্ত্রী) সাথে টেলিফোনে পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর যখন ঐ আপুর সাথে কথা বলতাম তখন জিজ্ঞেস করতাম আপনার পাশে কে? প্রায়ই জবাব আসতো "আমার মামাতো বোন বিউটি"।
এর পর বিউটি'র ব্যক্তিগত নাম্বারটা পেলাম। এরপর একিদন দুজনে গোপালগঞ্জের একটি চায়নিজ রেস্টুরেন্টে আমার ছোট আপু ও ভাগ্নেকে সঙ্গে নিয়ে দেখা করি। আস্তে আস্তে সেই দেখা দেখা-দেখি করি।
ভালাসার সম্পর্ক এনে দেয়। ২০০৭ সালে আমার মায়ের সাথে তাকে ফোনে পরিচয় করিয়ে দেই। এরপর দুই পরিবারের সম্মতিতেআমরা সামনে এগিয়ে যাই। ২০০৯ সালের ২৪ জানুয়ারী আমি ভারত সফরে থাকাকালীন সময়ে আমার পরিবারের পক্ষ থেকে বাগদান অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৯ সালের ১লা নভেম্বর আমাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়।
পড়া-লেখার কারনে বিবাহের পর আমার স্ত্রী বেশিরভাগ গোপালগঞ্জে তার বাবার বাড়িতে থাকতো। ২০১০ সালের নভেম্বরে আমার স্ত্রী চুড়ান্তভাবে আমার সাথে ঢাকায় থাকতে শুরু করে এখনো আছে।
আমরা দুজনে প্রচুর ফান করি। বলা যায় আমাদের মাঝে দুঃখের আবেশ নেই বললেই চলে। তবে মাঝেমধ্যে অনেক সুখের ব্যতয় ঘটানোর জন্য আমি কিছু কৃত্রিম দূঃখের পরিবেশ সৃষ্টি করি।
বলা যায় সেটাও একপ্রকার ফান। আমাদের মধ্যে মাঝে মাঝে কাজের হিসাব কষা হয়। সারাদিন কে কত পরিশ্রম করে? আমি জানি যে, আমার স্ত্রী শুধু নয়, সমগ্র বাংলাদেশের সকল স্ত্রীরা স্বমীর চেয়ে বেশি পরিশ্রম করেন। তারপরও নিজে একটু জিতে থাকার জন্য অনেক রকম পশরা সাজাই। গতকাল অর্থাৎ-৬ মার্চ ২০১২, রাত আনুমানিক ১১.৩০ টায় আমার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলাম "আজ টিভিতে কোন কোন অনুষ্ঠান দেখলে?" আমার স্ত্রী বলে উঠলো- কখন টিভি দেখলাম? আমিতো সময় পাই না! এরপরেই আমি বললাম সারাদিন তুমি কি কি কাজ করো তার একটা তালিকা করো।
আমার ছোট খালা শাশুড়ির সামনেই এই কথোপকথোন চলছিল। তিনিও এই তালিকা তৈরীতে সায় দিলেন! যা হোক যে কথা সেই কাজ, তালিকাটি হয়ে গেল নিম্নরূপ;
১. সকালে ঘর ঝাড়ু দেওয়া
২. বিছানা ওঠান
৩. বাসী থালা বাসনপিরষ্কার করা
৪. ২/৩ প্রকারের নাস্তা তৈরী করা
৫. নাস্তা পরিবেশন করা
৬. ঘরবাড়ি গোছগাছ করা
৭. নিরাপদ পানি বোতলে বোতলে রাখা
৮. পানি ফুটানো
৯. দুপুরের রান্নার প্রস্তুতী নেওয়া
১০. ভাত রান্না করা
১১. ৪/৫ প্রকার তরকারী রান্না করা
১২. থালা বাসনপিরষ্কার করা
১৩. কাপড়চোপড় ধোয়া
১৪. বাথরুম পরিষ্কার করা
১৫. দুপুরের খাবার পরিবেশন করা
১৬. থালা বাসনপিরষ্কার করা
১৭. ঘুমানো/টিভি দেখা
১৮. মাঝে মাঝে পরিবারের বিভিন্ন লোকজনকে ফোন করা
১৯. বিকালের নাস্তা তৈরী
২০. ডিনার তৈরী
২১. ডিনার পরিবেশন করা
২২. বিছনা ঝাডু দেওয়া
২৩. বিছানা প্রস্তুত করা
২৪. মসারী টাঙ্গানো
২৫. মোবাইল চার্জে দেওয়া
২৬. এছাড়া সে প্রতিদনি পাচঁ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে।
এই তালকিা দেখে আমি ভড়কে গলোম ও এই কাজ করার পাল্লাপাল্লির বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে অন্য প্রসঙ্গে গেলাম।
আমাদের ছোট্ট সুখের সংসারে স্বামী-স্ত্রী মিলে বেশ ভাল আছি । এই মুহুর্তে আমার স্ত্রী তার ডিগ্রি পরীক্ষার ফল প্রকাশের অপেক্ষা করছে, ফলে দুই জনের সংসারের সবকাজ সে নিজে হাতে করে।
জানিনা মাস্টার্সে ভর্তি হলে আমার কি হবে? বেতনভুক্ত রাধুনীর খাবার আমার একদম পছন্দ নয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।