আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাম নামধারী সংগঠনের কর্মকান্ডের অন্তরালে এনজিও প্রকাশ

শৃঙ্খল হতে মুক্তির লড়াইয়ে যুক্ত থাকতে চাই সংশোধনবাদ হলো শ্রমিক শ্রেণীর কাতারে বুর্জুয়া প্রভাব। মহামতি কমরেড লেনিন আবিষ্কৃত ঐ সত্য এখন আধুনিকায়নের ছোঁয়াতে দুইটি প্রধান ধারায় ক্রিয়াশীল। ধারা দুটি যথাক্রমে ১ শান্তিপূর্ণ উপায়ের পথ তথা সংসদীয় ধারা ২ সন্ত্রাসবাদী ধারা তথা বিলোপবদী ধারা। যে ধারাকে চতুর লুটেরা সাম্রাজ্যবাদ আমাদের মত নয়া ঔপনিবেশিক ও আধা সামন্তবাদী দেশে এনজিও-এর মাধ্যমে সহজেই নিয়ন্ত্রন ও পরিচর্যা করে চলেছে। ফলে বর্তমান প্রেক্ষাপটে ধারা দুটির আলোচনা পর্যালোচনা খুবই জরুরি।

কারন বিশ্বগুরু কমরেড লেনিন দেখিয়েছেন, বিপ্লবী আন্দোলনে সুবিধাবাদ, সংশোধনবাদকে পরাস্ত না করে এক কদমও অগ্রসর হওয়া সম্ভব নয়। সংসদীয় ধারাঃ আমরা জানি, উন্মাদ মুনাফাভিত্তিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সংকটে পৃথিবীর সাধারণ মানুষ ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে নিমজ্জিত। দারিদ্র ও বেকারত্ত মহামারি রূপ পেতে চলেছে। যা আড়াল করতে সুযোগী শ্যামরা সদা বিচিত্র উৎসব আয়োজনে অবিচল। খলঘাতক সাম্রাজ্যবাদ তারই একটি ধারার আধুনিক নাম দিয়েছে এনজিও।

নামটি শুনলে মনে হয়, সেবা কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ব্যুৎপত্তিগতভাবে বিচার করলে দেখা যায়, এনজিও সৃষ্টির উদ্দেশ্য দারিদ্র মুক্তি তথা শোষন মুক্তির বিপ্লব ঠেকাবার জন্য। যার সৃষ্টিও অগ্রগতিতে (সাময়িক হলেও) বিপ্লব থেমে আছে পৃথিবীর দেশে দেশে। ভেসে গেছে (সাময়িক হলেও) বিপ্লবী শিবির তথা সমাজতন্ত্র সাম্যবাদের বিশ্ব বিজয়ের অভিযাত্রা। যে জোয়ারের টানে উজানের মাঝি, মাল্লা অনেকেই দিকভ্রান্ত, ফিরছে ভাটার টানে সিমানার দিকে অথচ মুখে তাদের উজানে চলার সেই গান।

ফলে ওদের কর্মতৎপরতার মৌলিকত্বে এনজিও প্রভাবের সুস্পষ্ট প্রকাশ ঘটছে। বাস্তবে কাদামাটি ঘাটলে দেখা যায়, বিপ্লবী দাবিদার এবং শান্তিপূর্ণ সংসদীয় উপায়ে ক্ষমতা দখলের ঘোষণায় এদেশে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তৃতিয় ধারা সৃষ্টির শ্লগানে জোটবদ্ধ ১১ দল। প্রশ্ন আসে রাজনীতির মৌলিক ধারা দুটি। অর্থাৎ শোষক মালিক শ্রেণীর রাজনৈতিক ধারা ও শোষিত শ্রমিক শ্রেনীর রাজনৈতিক ধারা। কিন্তু ১১ দল তৃতীয় ধারা পেল কোথায়? ঐ প্রশ্নের জবাব জিজ্ঞাসা করলে পাওয়া যাবে না।

খুজতে হবে ওদের কর্মকান্ডের মধ্যে। আমরা জানি, ওদের আদর্শিক অবস্থান, উদ্দেশ্য লক্ষের প্রেক্ষিতে রণনীতি, রণকৌশল ও দেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার বিশ্লেষণ এবং আশু কর্মতৎপরতায় তেমন কোন মৌলিক পার্থক্য না থাকলেও (দীর্ঘ দিন এক সঙ্গে থেকেও) ১১ দলে বিভক্ত। ফলে ওরা বাহ্যিক দৃষ্টিতে ১১ দলে ঐক্যবদ্ধ কিন্তু দ্বান্দ্বিকভাবে দেখলে ওরা ১১ দলেই বিভক্ত। আসলে ভেতরে ভেতরে ওরা কতটা ভয়াবহ স্বার্থপর এবং ব্যক্তিস্বার্থে হিসাবী তা নিরুপন করাই কঠিন। সত্যিকারে একাত্ম হয়ে ওরা কেউ ভাগের অংশ ছাড়তে রাজি নয়।

সে কারণেই প্রতি তিন মাস পর পর জোটের প্রধান নেতৃত্ব বদল করে এবং নেতৃত্বের যোগ্যতা বাড়িয়ে তোলার শ্লোগানে প্রমাণ করে দেয়, আসলে ওরা কেউ কারো নেতৃত্ব গ্রহন করতে পারে না। ইতিহাসের শিক্ষা, নেতৃত্বের যোগ্যতা প্রায় সমান মানের হলেও কখনই সমান সমান হয় না। তার পরেও ওদের ওই প্রচেষ্টা কেন? জবাবের জন্য বাস্তবে লক্ষ্য করুন। একজন অপেক্ষাকৃত যোগ্য নেতৃত্ব প্রধান ভূমিকায় থাকার পর, একজন অপেক্ষাকৃত দুর্বল নেতৃত্ব ঐ স্থানে আসীন হলে, পূর্বে সামগ্রিক কাজের যতটুকু অগ্রগতি ঘটেছিল, পরবর্তিতে ততটুকু ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়। ফলে চলতে থাকে জায়গায় পড়ে পা তোলা পা ফেলা।

এছাড়া নিজেদের সত্যিকারের চরিত্র আড়াল করতে এবং মেহনতি মানুষদের বিভক্ত করে রাখতে, দেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা, বিপ্লবের স্তর, ক্ষমতা দখলের লড়াই, সংগ্রামের ধরণ, শত্রু-মিত্র নির্ধারণ, ১৯৪৭ ও ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা ও বিশ্বে সমজতান্ত্রিক দেশ থাকা না থকা প্রশ্নে কাগজপত্রে সামান্য কিছু বিরোধ দেখিয়ে নিজেদের ১১ অবস্থান ধরে রাখছে। কারণ, বলা যায় না। কখন কার বেশি প্রয়োজন হয়ে পড়তে পারে। এর সঙ্গে ওরা শ্রেণী সংগ্রাম পরিত্যাগ করে শ্রেণী সমন্বয়ের চেষ্টায় এনজিও-দের সঙ্গে মিলে তথাকথিত “সুশীল সমাজ” প্রতিষ্ঠার ফাঁকা বুলি শ্লোগান হিসাবে সামনে আনছে। ফলে ১১ দলের আদর্শিক অবস্থান, ঐক্যবদ্ধতা, নেতৃত্বের ধারা, রাজনীতির তৃতীয় ধারা, শ্রেণী সংগ্রাম এবং তথাকথিত সুশীল সমাজের কোন কিছুই গণমানুষের কাছে স্পষ্ট নয়।

ঐ অস্পষ্টতাই ১১ দলের রাজনৈতিক কৌশল এবং টিকে থাকার ভিত্তি। আর ওটাই হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী লেটেস্ট এনজিও পলিসির সার্থক কৃতিত্ব। আসল কথা ওদের আদর্শিক ভিত্তি সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট নয় বলেই ওরা কখনও সাম্রাজ্যবাদের পুতুল সরকারসমূহের, কখনও এনজও-দের সঙ্গে গায়ে পড়ে লেজুড়বৃত্তি করে বেড়ায় এবং ভিখারীর মত ভিক্ষা করে বেড়ায়। ১১ দলের নেতৃত্বের শ্রেণীগত অবস্থান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, রুশ বিপ্লবও চীন বিপ্লবের জোয়ারে ভেসে আশা ঐসব নেতৃত্ব প্রধানত উচ্চবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আগত এবং দু একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য। শ্রমিক শ্রেণীর থেকে আগত তেমন কোন বড় নেতৃত্বের সন্ধান ১১ দলে পাওয়া যায় না।

সেই সঙ্গে ঐসব নেতৃত্বের বেশিরভাগ রাজধানীতে বসবাস করে এবং ভোগ বিলাসের জীবনযাপন করে। অতঃপর উচ্চ শিক্ষা লাভের অজুহাতে ছেলেমেয়েদের ঐসব সাম্রাজ্যবাদী দেশে পাঠাতে ব্যস্ত থাকে। কারণ ওরা মনে প্রাণে নিজেদের কাজে বিশ্বাস আনতে পারে না, যে এই কাজেই বিপ্লব হবে। সেকারণেই পার্টিতে ছেলে-মেয়ে বউকে একাত্ম করে না। ঠেলে দেয় যে ব্যাবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করে সেই ব্যাবস্থার মধ্যে।

ঐ সব সুনামধন্য নেতৃত্বের আয়ের উৎস খুজতে গেলে পাওয়া যায়। কারও কারও ঘরণী এণজিওতে বড় পদে চাকরি করে। কেউ কেউ দলের স্বার্থের কথা বলে রমরমা আইন ব্যাবসা করে। কেউ কেউ ট্রেড ইউনিয়নের নামে কোন প্রতিষ্ঠানের নেতার আসন দখল করে, ফোঁপর দালালীতে লিপ্ত। দু’একজন লেখালেখি এবং বিভিন্ন অপ্রধান বিষয়ের উপর গবেষণার নামে কখনও এনজিও কখনও সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থ বাগিয়ে নেয়।

কিছু পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া অঢেল অর্থ ব্যবসায়ে বিনিয়োগের মাধ্যমে কেউ নিজে, (কেউ অন্যের মাধ্যমে) উপার্জন করে। বাদবাকিরা চাঁদার উপর নির্ভর করেই চলে। অথচ, ওরা শ্রেণী অবস্থান সম্পর্কে প্রশ্ন উঠলে বলে- “মহান কমরেড লেনিনও ধনী পরিবার থেকে আগত ছিলেন”। আমরা জানি, কমরেড লেনিন অগ্রণী ভূমিকা নেওয়ার কারণে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। আর ওদের অগ্রণী ভূমিকার কারণে, ওরা শোষকদের পাতানো সংসদে আসন পান।

যে সংসদকে লেনিন ‘শুয়োরের খোঁয়াড়’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সেই শুয়োরের খোঁয়াড়ে দু’একজন ঢুকতে পারার আনন্দে ১১ দল মাতোয়ারা হয়ে উঠে। ঐ ক্ষেত্রে নিজেদের মার্কা পর্যন্ত ধরে রাখতে লজ্জাজনকভাবে ব্যার্থ হয়। যা তাদের রাজনৈতিক অবস্থান ও শ্রেণী চরিত্র পরিষ্কার করে দেয়। দলগতভাবে দেখলে, ১১ দলে এমনও দল আছে, যা এক নেতার, এক দল।

ওই নেতা আবার নামের আগে কমরেড লিখতে এবং ঘোষণা করতে অবিশ্বাস্য রকমের যত্নবান। এমন দল আছে, যে দলে সাংগঠনিক তেমন কোন কর্মকান্ড নেই এবং ঐ দলে একজনও পেশাদার নেতাকর্মী নেই। আবার এমন দল আছে, যে দল জন্মলগ্ন থেকেই পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে(যেটুকু কাজ আছে) চালিয়া আসছে কিন্তু আজ অবধি কেন্দ্রীয় কমিটি দাঁড় করাতে পারেনি। এমনও দল আছে, যারা কিছুদিন আগে বিভক্ত হয়েছিল এবং আর আগে এক সময় আওয়ামীলীগে একিভুত হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে ওরা একই জোটে দু’টি দল হিসেবে আছে।

যার এক অংশের প্রধান নেতা কিছুদিন আগেও আওয়ামীলীগের বড় নেতা ছিল। আবার এমন দল আছে, যারা অহর্নিশি শয়নে-স্বপনে ঐক্য ঐক্য জিকির করতে করতে বেহুশ এবং যারা এখন শবযাত্রা দেখলেও ছুটে যায়, ঐক্য আলোচনায়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এতদিনে যতগুলো দল মিলে ঐ দলটি দাঁড় করেছিল, তার চেয়ে বেশি দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে ইতোমধ্যে। আসলে এরা সবাই দল, কেউ পার্টি না। আবার পার্টি গড়তেও চায় না।

ফলে ১১ দলের পক্ষে ঐ নিজ নিজ ঐতিহ্য বিসর্জন দিয়ে পার্টি গড়ে তোলা সম্ভব না। বড়জোর লুটপাটের ভাগের অংশ পেতে (ঐ ধরণের) জোট হতে পারে। সে কারণেই ১১ দলীয় বাম জোট। অথচ মহান কমরেড লেনিন বলেছেন এবং প্রমাণ করে দেখিয়েছেন, বিপ্লবের জন্য প্রয়োজন পার্টির। অর্থাৎ বলশেভিক ধরণের শ্রেণী সংগ্রামের একটি কমিউনিস্ট পার্টির।

কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের আশু দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন সংগ্রামের প্রেক্ষিতে ১১ দলীয় জোটকে দেখা যায় না। যখন খুলনা অঞ্চলে অবৈধ চিংড়ি চাষ হেতু জলাবদ্ধতার বিরুদ্ধে আন্দোলন, যশোরের ভৈরব নদ অবৈধ দখলদার মুক্তকরণ আন্দোলন, পুনঃর্বাসন না করে বস্তি উচ্ছেদ বিরোধী আন্দোলন এবং এনজিও বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে ইজারা বিরোধী ও কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলন তীব্রতর হয় এবং আন্দোলনকারী শক্তির উপর শোষক গোষ্ঠীর সমন্বিত দমন পীড়ন নির্যাতন চলে। তখন ১১ দলীয় জোট ঐ আন্দোলনের মধ্যে হটকারিতার সূত্র আবিষ্কার করতে থাকে এবং প্রতিক্রিয়াশীলদের অপপ্রচারের সঙ্গে একাত্ম হয়ে সকল আন্দোলনকে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড হিসেবে চিহ্নিত করতে চেষ্টা করে। সেই সাথে এনজিও গবেষকদের সঙ্গে একীভুত হয়ে ঐসব ক্ষেত্রে সমস্যা সংকট সৃষ্টি হওয়ার কারণ অনুসন্ধানে ছুটে যায়। তারপর মানববন্ধন, সেমিনার, সিম্পেজিয়াম, সংবাদ সম্মেলন করে বেড়ায় এবং আন্দোলনের বিপক্ষে জনমত সৃষ্টির চেষ্টা চালায়।

অতঃপর আন্দোলনকারী শক্তিকে বিভক্ত করা জনতার দৃষ্টি অন্যত্রে সরিয়ে নেওয়ার জন্য লড়াইকারি শক্তির সুবিধাবাদি অংশকে এনজিও ও শোষক গোষ্ঠির পান্ডাদের সঙ্গে সমন্বিত করে ঐ সংগ্রামী সংগঠনের বিরুদ্ধে লাগায়। আর ঐ অপশক্তি দিয়ে মঞ্চ সাজিয়ে নিজেরা বক্তৃতা দিয়ে ইমেজ সৃষ্টির চেষ্টা চালায়। এবং জোটের নামি-দামি জ্ঞানপাপী বুদ্ধিজীবীরা ঐ অপশক্তিকে বাহবা দিয়ে ও আন্দোলনকারী শক্তিকে অপবাদ দিয়ে প্রবন্ধ রচণা করে ঢাক ঢোল পিটিয়ে প্রচার চালায়। পক্ষান্তরে ওরা গাছ রক্ষা, নারী নির্যাতন, নগর উন্নয়ন, পরিবেশ রক্ষা, মৌলবাদ ও সন্ত্রাস বিরোধী শ্লোগান দিয়ে মাঝে মধ্যে রাজধানীতে ‘মানব বন্ধন’ কর্মসূচী পালন করে। যখন সাম্রাজ্যবাদের অলিন্দের মধ্যে বিশ্বায়ন বিরোধি প্রচন্ড বিক্ষোভ ফেটে পড়ছে।

যখন গণবিক্ষোভ বিশ্বের ধনকুবেরদের আহার নিদ্রা হারাম করে দিয়েছে এবং তাবৎ বিশ্ব জুড়ে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াছে। তখন ১১ দল মৌলবাদ প্রধান বাধা, প্রধান শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করে আওয়ামীলীগের সুরে সুর মিলিয়ে কাওয়ালী গেয়ে চলেছে। যা তাদের শোষক গোষ্ঠীর লেজুড়বৃত্তি ও উন্মাদ দালালী চরিত্র প্রকাশ করে দেয়। সাথে সাথে মৌলবাদ উচ্ছেদের প্রেক্ষিতে এনজিওদের সঙ্গে (এমনকি একই মঞ্চে) বক্তৃতা দিয়ে চলেছে। ফলে এনজিওরা কোথাও ওদেরকে নিজেদের পক্ষে টেনে (সাময়িকভাবে) নিজেদর অপকর্ম ও চড়া সুদের কারবার আড়াল করতে সামর্থ হচ্ছে।

আর প্রভু যুদ্ধবাজ সাম্রাজ্যবাদ আড়ালে বসে জাদুকরের মত জীবন্ত মানুষদের দিয়ে নরকঙ্কালের ঠুলোঠুলি খেলা দেখাচ্ছে। এখানে প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে ওরা সরাসরি বুর্জুয়া দলে অথবা এনজিওতে একিভূত হচ্ছে না কেন? আসলে এখানেই ত রহস্য নিহিত। ঐ কাজটি করা যাবে না। কারণ ওটা করলে, স্পষ্ট হয়ে যেত ওরা কারা। বরং যে তৎপরতায় ওরা লিপ্ত, ওটাই ওদের উপর অর্পিত দায়িত্ব।

আর অর্পিত দায়িত্ব পালন করলে, তাদের চাওয়া পাওয়ার কোন কিছুরই ঘাটতি থাকে না। ফলে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ওরা তৃতীয় ধারা বলতে শোষক গোষ্ঠীর রাজনৈতিক ধারার তৃতীয় প্রতিনিধি হিসেবে নিজেদেরকে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। সাম্রাজ্যবাদের বিশ্বায়ন পরিকল্পনা নিরবে কার্যকরি করে চলা চীন, কিউবা, ভিয়েতনাম, উত্তর কোরিয়া ও ভারতের পশ্চিম বাংলা, কেরালা মার্কা রাষ্ট্র ক্ষমতার কাঠামো দাঁড় করানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। যা সাম্রাজ্যবাদের এনজিও ধারার কাংখিত অভিপ্রায়। ফলে সব দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, ঝেড়ে ফেলে ওদের ঐ এনজিও মার্কা কর্মকান্ড প্রত্যাখ্যান করুন এবং ১১ দলের সত্তিকারের চরিত্রের সঙ্গে বর্ণচোরা এনজিও তৎপরতার বাস্তব চিত্র তুলে ধরুন।

তাহলেই বিপ্লবী ধারা গতিশীল হবে, অগ্রসর হবে শোষণ মুক্তির লড়াই। সন্ত্রাসবাদী ধারা তথা বিলোপবাদী ধারাঃ সুবিধাবাদি সংসদীয় ধারার বাম নামধারী সংগঠনসমূহকে সস্তা দামে বশীকরণ ও নিজেরাই বিপ্লবী ধারার সংগঠনের মত সংগঠন যেমন গণ সাহায্য সংস্থা, নিজেরা করি, কৃষক ফেডারেশন ইত্যাদির মত দাঁড় করিয়ে মহাবিভ্রাট সৃষ্টি করে ওরা থেমে নেই। শুরু করে সশস্ত্র বিপ্লবের ঘোষণায় গোপন পার্টি মানেই সন্ত্রাসি নামে চিহ্নিত করার জোর প্রচেষ্টা। কিন্তু অবশ্যই মনে রাখতে হবে, সশস্ত্র বিপ্লবের ঘোষণা দিয়ে তথাকথিত সশস্ত্র কর্মকান্ডে লিপ্ত হলেই যেমন ঐসব সংগঠন বিপ্লবী সংগঠন হয়ে যায় না। তেমনি সশস্ত্র বিপ্লবের ঘোষণায় গোপন রাজনৈতিক তৎপরতা চালালেই ঐসব সংগঠন চরমপন্থী সন্ত্রাসী হয়ে যায় না।

ইতিহাসের শিক্ষা, শ্রেণী সংগ্রাম মানেই বিভিন্ন রূপের সশস্ত্র লড়াই; উগ্র বল প্রয়োগের ব্যপার। যেমন রুশ বিপ্লব, চীন বিপ্লব, ভিয়েতনাম বিপ্লবসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিপ্লব। এমনকি আমাদের মুক্তিযুদ্ধও সশস্ত্র যুদ্ধ। অতএব আসল বিচারে দেখা যায়, সন্ত্রাসবাদ আর সশস্ত্র লড়াই কখনই এক নয়। কিন্তু বর্তমান যুগে এক করে দেখাবার চেষ্টায় লুটেরা সাম্রাজ্যবাদ মরিয়া।

যে ক্ষেত্রে তার বড় হাতিয়ার ব্যবহার করে চলেছে। সে কারণেই এনজিও রা নতুন নতুন প্ল্যান পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। ওরা প্রচেষ্টা শুরু করে বাম নামধারী হঠকারি সন্ত্রাসী গ্রুপ/চক্রসমূহকে বশীকরণের সঙ্গে বিপ্লবী ধারার সংগঠনের মধ্যে কাজ করার। ঐ প্রচেষ্টায় ওদের প্রধান লক্ষ্য থাকে সংগঠনকে বিভক্ত করা। আবার কখনও একটা ক্ষুদ্র অংশকে ভাগিয়ে নিয়ে এনজিও ধারার বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুনঃর্বাসন করা।

আবার কখনও নিয়ন্ত্রিত সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে শোষক গোষ্ঠীর বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে সমন্বিত করে বিপ্লবী ধারার সংগঠনের বিরুদ্ধে খুনোখুনিতে লাগিয়ে দেয়া। সে সঙ্গে ঐ প্রক্রিয়ার মধ্য থেকে কিছু পেশাদার দালাল সন্ত্রাসি বাছাই করে নেয়া এবং অপতৎপরতা অব্যাহত রাখতে নতুন নতুন মাত্রা যোগে ওদের ব্যবহার করা। ঐ প্রক্রিয়ারই ফসল বরিশাল, পটুয়াখালি, খুলনা অঞ্চলে কামরুল গ্রুপ, যশোর, খুলনা, কুষ্টিয়া অঞ্চলে দিলিপ গ্রুপ, লাল্টু গ্রুপ, মৃণাল গ্রুপ, পাবনা, রাজশাহি, কুষ্টিয়া অঞ্চলে দাদা তপন গ্রুপসহ হরেক নামে গ্রুপ। যাদের কাজ প্রতিপক্ষকে হত্যা, চাদা আদায়, লুটপাট ও ধর্ষণের মত কর্মকান্ড চালিয়ে যাওয়া এবং বিপ্লবী ধারার কর্মী, ক্যাডার, নেতৃত্ব ও সমর্থকদের পর্যন্ত হত্যা করা। যা প্রত্যাশা করে, লুটেরা সাম্রাজ্যবাদ।

ফলে শোষক-শাষক গোষ্ঠী অবাধে লুটাপাট চালিয়ে যাওয়া ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে এবং সব অপকর্মের হোতা সাম্রাজ্যবাদ এনজিও ধারায় সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়ছে। আর লুটেরা সাম্রাজ্যবাদ সর্বস্ব লুটেপুটেও আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। যে খপ্পর থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে, জাতীয় মুক্তি দূরে থাক; আত্মরক্ষাই দূরুহ। উপরের লেখাটি ‘ঘাস ফুল নদী’ থেকে প্রকাশিত ম হ অপূর্ব লিখিত ‘মায়াবী ঘাতকব্যাধির নাম এনজিও’ বইয়ের “বাম নামধারী সংগঠনের কর্মকান্ডের অন্তরালে এনজিও প্রকাশ” শীর্ষক প্রবন্ধ। লেখাটি ২০০১ সালে লিখিত।

আমি পেয়েছি নিম্নের লিঙ্কে। লিঙ্ক নব্বইয়ের গণআলোন্দানের পর দ্বিদলীয় রাজনৈতিক ধারার বিপরীতে তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টি, শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টি, গণফোরাম, সাম্যবাদী দল, বাসদ (খালেকুজ্জামান), বাসদ (মাহবুব), গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, গণআজাদী লীগ, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল ১১ দলীয় জোট। এই ১১ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে ওই সময় এই জোট বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলে ‘এতিম সমিতি’ নামে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। গত সাধারণ নির্বাচনের আগে ১১ দলের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরাম, সাম্যবাদী দল, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি, গণআজাদী লীগ এবং কমিউনিস্ট কেন্দ্র জোটের মৌলিক নীতি অগ্রাহ্য করে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে। অর্থাত্ তারা দল দ্বিদলীয় ধারাকেই আরও শক্তিশালী করে।

এ কারণে সিপিবি, শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দল, বাসদ (খালেকুজ্জামান) এবং বাসদ (মাহবুব) ১১ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যায়। এই লেখাটি তখন (২০০১ সালে) অনেকে গ্রহণ করতে পারেনি, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যের এদের চরিত্র লেখকের ধারণার সাথে মিলে গেল। এরা প্রত্যেকেই স্বরূপ দেখিয়ে দিলো। আজও এদের যে অংশটি এখনও মাঠে আছে তারা চালিয়ে যাচ্ছে তাদের এনজিও মার্কা কার্যকলাপ। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।