পৃথিবীর কাছে তুমি হয়তো কিছুই নও, কিন্তু কারও কাছে তুমিই তার পৃথিবী" মূল লেখাটি লিখেছেন ॥ শফিক রেহমান ॥ এখানে কপি-পেষ্ট মাত্র...।
স্থান : ১৭২৫ লেকপয়েন্ট ড্রাইভ, লুইভিল, টেক্সাস, টিএক্স ৭৫০৫৭, ইউএসএ।
কাল : ২০১২’র মার্চের প্রথম সপ্তাহে এক সকাল বেলা।
চরিত্র : আমেরিকার অবসরপ্রাপ্ত ৪৩তম প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাবলিউ বুশ, আমেরিকার সাবেক সেক্রেটারি অফ স্টেট (পররাষ্ট্র মন্ত্রী) মিস কনডোলিৎসা রাইস।
বুশ (উদ্বিগ্ন।
কপালের রেখা আরো কুচকানো) : কনডি। মেনি থ্যাংকস ফর কামিং। আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছি একটা খুব জরুরি বিষয়ে আলোচনার জন্য।
রাইস : বিষয়টা কি?
বুশ : আপনি জানেন ৬ নভেম্বরে আমেরিকার প্রেসিডেনশিয়াল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য আমাদের রিপাবলিকান পার্টির পক্ষ থেকে মিট রমনি নমিনেশন চাইছেন। সমপ্রতি মিশিগান ও অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে অনুষ্ঠিত প্রাইমারিতে রমনি বিজয়ী হয়েছেন।
মিশিগানে তিনি পেয়েছেন ৪১ শতাংশ এবং অ্যারিজোনাতে পেয়েছেন ৪৯ শতাংশ ভোট। বিশেষত মিশিগানে তাকে খুব হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করতে হয়েছিল। রমনি নিজেই সেটা স্বীকার করে বলেছেন, তিনি বড় ব্যবধানে জয় পাননি। প্রতিদ্বন্দ্বী রিক সান্তোরাম পেয়েছেন ৩৮ শতাংশ। সেটা তার চাইতে মাত্র তিন শতাংশ কম।
অথচ মিশিগান রাজ্যেই রমনির জন্ম হয়েছিল। রমনির বাবাও এই রাজ্যের গভর্নর ছিলেন।
রাইস : হ্যা। আমি রমনির বক্তব্য শুনেছি।
বুশ : এই দুটি প্রাইমারিতে জিতে রমনি রিপাবলিকান পার্টিতে অন্য তিন প্রতিদ্বন্দ্বী রিক সান্তোরাম, নিউট গিংরিচ ও রন পল-এর চাইতে এগিয়ে গিয়েছেন।
আগামী আগস্টে দলীয় কনভেনশনে রিপাবলিকান পার্টিকে সি'র করতে হবে এই চারজনের মধ্যে কে হবেন আমাদের পার্টির চূড়ান্ত প্রার্থী। আর সেখানেই আমার দুশ্চিন্তা।
রাইস : কেন?
বুশ : মিশিগান আর অ্যারিজোনাতে নিজ দলের প্রাইমারিতে জিতলেও দেখা যাচ্ছে রমনি উভয় রাজ্যেই ৫০ শতাংশের কম সমর্থন পেয়েছেন। এটাই আমার দুশ্চিন্তার কারণ। তিনি নিজের দলেই ফিফটি পার্সেন্ট সমর্থন পাচ্ছেন না।
তাহলে প্রেসিডেনশিয়াল ইলেকশনে কি হবে? আমার বিশ্বাস, ডেমক্রেট প্রার্থী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জয় প্রায় সুনিশ্চিত। ওবামা দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হবেন। গত ইলেকশনে শিকাগোর একজন অখ্যাত সিনেটর থেকে ওবামা হয়েছেন বিখ্যাত। মাত্র দুই বছরের ক্যাম্পেইনে হয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। ওবামা চার বছর প্রেসিডেন্ট থাকার পর তাকে ঠেকাবে কে? মিট রমনি নিশ্চয়ই নয়?
রাইস (জিজ্ঞাসু চোখে) : তাহলে?
বুশ : সাবেক প্রেসিডেন্ট ও পার্টির গার্ডিয়ান হিসাবে আমার গুরুদায়িত্ব আছে।
আপনারও দায়িত্ব আছে। তাই আমাদের একটা উপায় ভাবতে হবে। এবং সেটা আমি ভেবেছি। আর সেজন্যই আজ সকালে আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছি।
রাইস (কৌতূহলী স্বরে) : কি সেটা?
বুশ : রিপাবলিকান পার্টির পক্ষ থেকে শেখ হাসিনা ওয়াজেদকে নমিনেশন দেয়ার কথা আমি ভাবছি।
রাইস (বিস্মিত) : ইউ মিন বাংলাদেশের বর্তমান প্রাইম মিনিস্টার শেখ হাসিনাকে? আমি কি ঠিক শুনেছি?
বুশ (দৃঢ়স্বরে) : হ্যা। আপনি ঠিকই শুনেছেন। শেখ হাসিনাই হবেন রিপাবলিকান পার্টির ক্যান্ডিডেট।
রাইস (বিস্ফারিত চোখে) : সেটা কিভাবে সম্ভব? তিনি তো আমেরিকার সিটিজেনই নন।
বুশ : সেটা সবাই জানেন।
সবাই এটাও জানেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে হলে জন্মগতভাবে আমেরিকার সিটিজেন হতে হবে। সেজন্যই আমাদের পার্টির দুজন স্টার, ড. হেনরি কিসিনজার সেক্রেটারি অফ স্টেট এবং আর্নল্ড শোয়ারজেনেগার ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর হলেও, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হতে পারেননি। কিন' টাইমস হ্যাভ চেঞ্জড। সময় বদলে গেছে। ১৯৪৪-এ ব্রেটন উডস কনফারেন্সের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফান্ড, সংক্ষেপে আইএমএফ, এই দুটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
দুটি সংস'াই এখন ওয়াশিংটন ভিত্তিক। আর প্রচলিত ধারা অনুযায়ী, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হয়ে আসছেন একজন আমেরিকান নাগরিক। একইভাবে আইএমএফের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হয়ে আসছেন একজন ইওরোপিয়ান নাগরিক। কিন' এই ট্র্যাডিশন এখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
রাইস : হ্যা।
আমি জানি। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট পদের জন্য শেখ হাসিনা ওয়াজেদ প্রস্তাব করেছেন নোবেল বিজয়ী বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ম্যানেজিং ডিরেক্টর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম। তার আগেই অন্য কিছু দেশের খ্যাতনামা ব্যক্তিদের নাম ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট পদের জন্য আলোচিত যেমন, পাচজন পুরুষ, ইন্দোনেশিয়ার অর্থনীতিবিদ স্যার মুলায়নি ইন্দ্রবতী, ইনডিয়ার পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ, টার্কির সাবেক অর্থ মন্ত্রী কামাল দরবিশ, সাউথ আফৃকার প্ল্যানিং মন্ত্রী ট্রেভর ম্যানুয়েল, ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভা এবং পাচজন নারী, চিলির সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মিশেল বেশেলেট, নাইজেরিয়ার সাবেক মন্ত্রী এনগোজি ওকোনজো- আইওয়েলা, মোজামবিকের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট লুইসা ডিয়েগো, ব্রাজিলের সাবেক পরিবেশমন্ত্রী মারিনা সিলভা এবং আমাদের বর্তমান পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনও আলোচনায় এসেছেন।
এসব আলোচিত নামের পাশাপাশি কেন যে একজন শ্রদ্ধেয় নোবেল বিজয়ীর নাম শেখ হাসিনা জুড়ে দিয়েছেন, তা নিয়ে বিভিন্ন মত প্রকাশিত হচ্ছে। অনেকে বলছেন শেখ হাসিনা বিদ্রূপ করে ড. ইউনূসের নাম প্রস্তাব করেছেন।
ড. ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংকের দৃষ্টান্ত এখন বহু দেশ অনুসরণ করতে চাইছে। খোদ আমেরিকাতেই ২০০৮-এ গ্রামীণ আমেরিকা প্রতিষ্ঠিত হবার এবং এখন প্রায় ৮০০০ ঋণ গ্রহীতা হয়েছে। নিউ ইয়র্ক সিটিতে গ্রামীণ আমেরিকার সব ঋণ গ্রহীতাই নারী। নিউ ইয়র্ক ছাড়াও ডেট্রয়েট, সান ফ্রান্সিসকো এবং ওমাহাতে গ্রামীণ আমেরিকার ব্রাঞ্চ হয়েছে। বিশ্বে বড় ব্যাংকগুলো বড় ঋণ দিয়ে বিপদগ্রস্ত হবার পর পুজিবাদী ইকনমিস্টরা এখন ছোট ঋণ দিয়ে ও ছোট সঞ্চয় নিয়ে নতুন ইকনমিক কালচার সৃষ্টি করতে চাইছেন।
সে ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ঋণের উদ্ভাবক ও প্রচারক যদি তার নিজের দেশেই নাজেহাল হন, তাহলে বিশ্বের অন্যত্র তার থিওরির ভিত্তি দুর্বল হয়ে যায়। আর তাই শেখ হাসিনার ওপর আমেরিকা ও ইইউ চাপ সৃষ্টি করেছে ড. ইউনূসকে আগের সম্মানজনক অবস'ায় রাখতে। শেখ হাসিনা এতে প্রচণ্ড বিরক্ত হয়েছেন। তিনি বলতে চেয়েছেন, ড. ইউনূস যদি বিশ্বের জন্য এতই মঙ্গলজনক ব্যক্তি হবেন, তাহলে আপনারা তাকে বিশ্ব ব্যাংকেরই প্রেসিডেন্ট করে দিন না কেন? অর্থাৎ, এটা এক ধরনের ব্যঙ্গাত্মক প্রস্তাব, যেটা শেখ হাসিনার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। এই মতের বিপরীতে কেউ কেউ বলেছেন, শেখ হাসিনা সিরিয়াসলিই প্রস্তাবটি দিয়েছেন।
ড. ইউনূস অবশ্য স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হতে চান না। দেড় যুগ আগে বিল ক্লিনটনও একই প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক ও সামাজিক ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চান। তিনি শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
বুশ : ড. ইউনূস ইজ এ জেন্টলম্যান।
তার ইসু এবং শেখ হাসিনাকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট করার ইসু, ইন্টাররিলেটেড। সুতরাং আগে বিবেচনা করা যাক, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে হাসিনার নির্বাচিত হবার বাধাগুলো কি? প্রথমত আপনি ঠিক বলেছেন, হাসিনা জন্মগত সূত্রে আমেরিকান নাগরিক নন। এটাই প্রধান বাধা- তবে দূরতিক্রম্য বাধা নয়। আপনি জানেন, আমাদের সুপৃম কোর্টে রিপাবলিকান মনোনীত বিচারপতির সংখ্যা বেশি, যাদের কল্যাণে ২০০০-এ ডেমক্রেট প্রার্থী অ্যাল গোর-এর বিরুদ্ধে আমি আদালতের সিদ্ধান্তে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েছিলাম। তাই তখন অনেকে বলেছিলেন, আমি বাই সিলেকশন প্রেসিডেন্ট হয়েছি - বাই ইলেকশন নয়।
রাইস : সৃপম কোর্ট কী এখনও আমাদের কথায় চলবে?
বুশ : হ্যা, চলবে। এখন সুপৃম কোর্টের মোট নয় জন বিচারপতির মধ্যে পাচ জনকে নিয়োগ করেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টরা- রোনাল্ড রেগান দুই জনকে, আমার বাবা হার্বার্ট বুশ এক জনকে, আর আমি দুইজনকে। বাকি চার জনকে নিয়োগ করেন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্টরা- বিল ক্লিনটন দুই জনকে, বারাক ওবামা দুইজনকে। অর্থাৎ সুপৃম কোর্টে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত বিচারপতিরা এখনও মেজরিটি। সুতরাং আমরা আশা করতে পারি এই সুপৃম কোর্ট আমাদের কথা শুনবে।
আদালতের রায়ে আমেরিকান সংবিধানকে ডিঙ্গিয়ে অন্য দেশের নাগরিককেও আমেরিকার প্রেসিডেন্ট করতে পারবো।
রাইস : অ্যাবসলিউটলি, জর্জ! এবার বলুন শেখ হাসিনার অন্য বাধাগুলো কি হতে পারে?
বুশ : ওবামার ইংরেজি উচ্চারণ খুব ভালো। আমার চাইতেও ভালো। হাসিনার ইংরেজি উচ্চারণ ভালো নয়। ইংরেজি গ্রামারও ভালো নয়।
ওবামা খুব ধীরসি'র। হাসিনা খুব মেজাজি। হিলারির সঙ্গে টেলিফোনেই ঝগড়া বাধিয়ে ফেলেছিলেন।
রাইস : হাসিনার আরেকটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কথা আপনি বললেন না। সেটাও একটা বাধা হতে পারে।
বুশ : সেটা কি?
রাইস : তিনি এক এক্সটৃম থেকে আরেক এক্সটৃমে চলে যেতে পারেন। যেমন, ১৯৯৬-এ বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচনের আগে যে জামায়াতে ইসলামী নেতাদের পাশে বসিয়ে মিটিং করেছিলেন, যাদের সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজপথে যৌথ আন্দোলন করেছিলেন তাদেরই তিনি এখন বলছেন যুদ্ধাপরাধী এবং তাদের জেলবন্দী করে বিচার করছেন। শুধু তাই নয়। এখন হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্তির পক্ষে বলছেন। শেখ হাসিনার এই ধরনের বহু বৈপরীত্যের সর্বশেষ একটি উদাহরণ হচ্ছে তিনি পরোক্ষভাবে ড. ইউনূসকে সুদখোর ও রক্তচোষা বলেন।
কিন' ড. ইউনূস পদচ্যুত হবার পর শেখ হাসিনাই প্রত্যক্ষভাবে ড. ইউনূসের নাম প্রস্তাব করেছেন ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট পদে! তাই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হবার পর হাসিনা কোন দিক থেকে কোন দিকে ফশ করে চলে যান সেটা বলা সম্ভব নয়। খুব রিস্কি সিচুয়েশনে তিনি আমাদের দেশকে ফেলে দিতে পারেন।
বুশ : না। পারবেন না। প্রেসিডেন্ট হবার পরে তাকে টোয়েন্টি ফোর আওয়ার্স ওয়াচে রাখবে সিআইএ-এফবিআই।
বারাক ওবামাও তো অনেক ভালো ভালো কথা বলেছিলেন নির্বাচিত হবার আগে। নির্বাচিত হবার পরে তিনি কি তার সব কথা রাখতে পেরেছেন? পারেননি। কারণ, তাকে সব সময়ই নজরে রাখছে আমাদের সিকিউরিটি সিস্টেম। সুতরাং আমরা শেখ হাসিনাকেও কনট্রোলে রাখতে পারবো।
রাইস : তা হতে পারে।
কিন' শেখ হাসিনার নির্বাচিত হবার পক্ষে অনুকূল বিষয়গুলো কি?
বুশ : অনেকগুলো। এক. শেখ হাসিনা যে আমেরিকায় থাকতে ভালোবাসেন সেটা সর্বজনবিদিত। আপনার হয়তো মনে আছে, ওয়ান-ইলেভেনের পর তিনি আমাদের দেশেই বহু মাস ছিলেন। আমেরিকা থেকেই তিনি নভেম্বর ২০০৮-এ বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে নির্বাচনে দাড়ান। দুই. আমেরিকায় তার ছেলে জয় এবং ছেলের বৌ কৃস্টিনা থাকে।
ওয়াশিংটনেই। সুতরাং ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউজের বাসিন্দা যদি হাসিনা হতে চান, তাতে অবাক হবার কিছু থাকবে না। তিন. ওয়ান-ইলেভেনের দুই কুশীলব মেজর জেনারেল মইন ইউ আহমেদ ও বৃগেডিয়ার ফজলুল বারী এখন আমেরিকাতেই আছেন। প্লাস ওয়াশিংটনে আছেন তাদের বানানো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমদ। মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীন জানেন কিভাবে নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে বিজয়ী করতে হয়।
ওবামার বিরুদ্ধে এদের সবার মূল্যবান উপদেশ পাবেন শেখ হাসিনা। এমন সৌভাগ্য কার হয়? চার. আমেরিকা প্রবাসী সব বাংলাদেশী ভোট না দিলেও তিনি আমেরিকার প্রবাসী সব ইনডিয়ানের ভোট পাবেন। এদের সংখ্যা অনেক বেশি। পাচ. আমেরিকান নারী ভোটাররা কোনো দিনই কোনো নারীকে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি। সেই সুযোগ তারা পাবেন হাসিনা এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে।
অর্থাৎ হাসিনা নারী ভোটারদের অনেক ভোট পাবেন।
রাইস : এসব অনুকূল পরিসি'তি থাকা সত্ত্বেও শেখ হাসিনা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে চাইবেন কি? তার ইনসেনটিভগুলো কি?
বুশ : অনেক। এক. বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী হয়েই তিনি ঢাকার জিয়া ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের নাম বদলে দিয়েছিলেন। এখানে প্রেসিডেন্ট হবার পরই শেখ হাসিনা নিউ ইয়র্কে জেএফকে এয়ারপোর্টের নাম বদলে দিতে পারবেন। বিশ্বের একটি অতি ব্যস্ত এয়ারপোর্টের নতুন নামকরণের সুযোগ তিনি হারাতে চাইবেন না।
দুই. শেখ হাসিনা বৃজের নামকরণে আসক্ত। যমুনা সেতুর নতুন নাম দেয়ার পরে অতিসমপ্রতি পটুয়াখালীতে তিনি একই দিনে তিনটি প্রস্তাবিত সেতুর নাম করেছেন তার প্রয়াত তিন ভাইয়ের নামে। বাংলাদেশে আর কটাই বা বৃজ আছে? হিলারি তো ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের মাধ্যমে আটকে দিয়েছেন পদ্মা সেতুর অর্থায়ন। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হলে শেখ হাসিনার সেতুর অভাব মিটবে। প্রথমেই পূর্বে, নিউ ইয়র্কের কুইন্সস বৃজ, ব্রুকলিন বৃজ, ম্যানহাটান বৃজ, ট্রাইবরো বৃজ, ভেরাজেনো বৃজ প্রভৃতি থেকে শুরু করে পশ্চিমে সান ফ্রান্সিসকোর গোল্ডেন গেইট বৃজ পর্যন্ত সবগুলোর নতুন নাম হাসিনা দিতে পারবেন।
তিন. শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় ইনসেনটিভ হচ্ছে তিনি হিলারির বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে পারবেন। ওবামা যদি নির্বাচনে পরাজিত হন, তাহলে হিলারি আর আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকবেন না। অন্যদিকে হিলারি ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হতেও চাইতে পারেন। সে জন্য শেখ হাসিনা আগেই চাল দিয়েছেন ওই পদে ড. ইউনূসের নাম প্রস্তাব করে। শেখ হাসিনার বুদ্ধি ও দূরদর্শিতার তারিফ করতেই হবে।
রাইস : মানলাম। কিন' এত ইনসেনটিভ সত্ত্বেও শেখ হাসিনা যদি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে রাজি না হন?
বুশ : ইন দ্যাট কেইস, মারিও পুজোর উপন্যাস গডফাদার-এর প্রধান চরিত্র ডন ভিটো করলিওনির ভাষায় বলতে হবে, উই শ্যাল মেইক অ্যান অফার হুইচ শি ক্যানট রিফিউস। আমরা তাকে এমন কিছুর লোভ দেখাবো যেটা তিনি ফেলতে পারবেন না।
রাইস (কৌতূহলী। সামনের দিকে ঝুকে পড়ে) : সেটা কি?
বুশ (ফ্লাস্ক থেকে গ্লাসে পানি ঢাললেন।
একটু পানি খেলেন) : সামপ্রতিক কালে আমেরিকার একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার, একজন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যাল গোর এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হলে শেখ হাসিনার নোবেল প্রাপ্তির সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে। সেটা তিনি বোঝেন। শেখ হাসিনা যদি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হন, তাহলে আমরা সবাই মিলে তাকে নোবেল পুরস্কার পেতে সাহায্যের অফার দেব। দেখুন, এসব নোবেলওয়ালাই ডেমক্রেট।
আই হেইট ইট।
বুশের টেলিফোন বেজে উঠল।
বুশ : হ্যালো।
বুশের প্রাইভেট সেক্রেটারি অপর প্রান্ত থেকে স্যার, বাংলাদেশ প্রাইম মিনিস্টার শেখ হাসিনা ইজ অন দি লাইন।
বুশ (রাইসের দিকে তাকিয়ে) : ঢাকায় শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে আমিই বলেছিলাম।
(তারপর ফোনের দিকে ঝুকে পড়ে) হ্যা। ওনাকে দিন। হ্যালো, প্রাইম মিনিস্টার। গুড মর্নিং...
(সব সংলাপ সম্পূর্ণ কাল্পনিক)
৪ মার্চ, ২০১২
সূত্র: এখানে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।