আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাফিয়া:বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করা সবচেয়ে চৌকশ ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট

এডিটেড ফেইসবুকে কি খেলেছেন মাফিয়া ওয়ার?খেলেন বা না খেলেন,মাফিয়া জগতের কথা আমাদের কম-বেশী প্রায় সবারই জানা আছে। এটি হল বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর কার্যকরী ব্যবসায়িক সংগঠন। এরা ঐক্যবদ্ধ। উদ্দেশ্য পূরণে ক্ষীপ্র,বন্ধুকে রক্ষা করতে সক্ষম বিস্তৃত নেটওয়ার্কের অধিকারী। সেই সাথে আছে সমাজ,রাষ্ট্র,সরকার ও দেশের বাইরে এক নির্বিচ্ছিন্ন প্রভাব।

বন্ধুর প্রতি সদাদ্বায়িত্ববান। পক্ষান্তরে শত্রুর বিরুদ্ধে হিংস্র। কি এই মাফিয়া: কোন কাজ করতে হলে সংঘবদ্ধভাবে করতে হয়। সেটি ভাল হোক বা খারাপ কাজ হোক। তবে এই সংঘবদ্ধ হওয়ার জন্য দরকার হয় একটি প্রতিষ্ঠানের।

প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সংঘবদ্ধ তেমনই একটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে মাফিয়া। তবে সেটি ভাল কাজের প্রতিষ্ঠান নয়। এই প্রতিষ্ঠানটি হচ্ছে অপরাধ ও অপরাধীদের প্রতিষ্ঠান। অপরাধী ব্যক্তিদের সংগঠনের নাম মাফিয়া (Mafia) যা ত্রয়োদশ শতাব্দীতে সিসিলি (Sicily) অঞ্চলে প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সংগঠনের সদস্যরা কোনো সরকারি আইন মেনে চলে না।

তাদের যেকোনো সমস্যা সমাধানের জন্য নিজস্ব আইন রয়েছে। জমির মালিকদের অমানুষিক কার্যকলাপের বিরোধিতা করার জন্যই সর্বপ্রথম এ অপরাধী সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রথমত এটা নিজ দেশে শক্তিশালী হয়ে উঠে এবং পরবর্তীতে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। ইতালির সরকার বহুবার এ সংগঠনটিকে দমন করার চেষ্টা করেছে কিন্তু সফল হতে পারেনি। তৎকালীন সরকারি কর্মচারীরা এদের গরিবের শত্রু বলে ঘৃণা করত।

মাফিয়া নেতারা তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণ করে। কখনও কখনও তারা ধনীর ঐশ্বর্য চুরি করে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিত। তাদের ন্যায়ার্জনের পদ্ধতি ছিল অনেক জটিল। প্রতিশোধ গ্রহণের অধিকার শুধু তাদের মধ্যেই সীমিত থাকতো যাদের পরিবারের প্রতি অবিচার হয়েছে। ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে স্থানীয় বুরবন (Bourbon) রাজবংশ পতনের পর ইতালির সরকার সিসিলি থেকে মাফিয়া অপসারণের প্রচেষ্টায় কিছুটা সফলতা লাভ করে।

কিন্তু ইতিমধ্যেই তা সিসিলি দ্বীপের সমাজের মধ্যে এমনভাবে যুক্ত হয়ে পড়ে যা দমন করা কঠিন হয়ে ওঠে। ১৯২০ সালে প্রথম মুসোলিনীর ফ্যাসিস্ট গ্রুপ সম্পূর্ণভাবে মাফিয়াকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। কিন্তু প্রায় ২৫ বছর পর দেখা যায়, এ ধরনের অপরাধীদের সংঘটিত কার্যকলাপ কখনোই পুরোপুরিভাবে লোপ পায়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভূমি সংস্কার ব্যবস্থার ফলে মধ্য ও পশ্চিম সিসিলির গ্রামাঞ্চলে এটা দুর্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু শহরের শিল্পাঞ্চলে এটা বেশ শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে মাফিয়া সদস্যসহ কিছু কিছু দল সিসিলি ও ইতালি থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দেশান্তরী হয়। যার ফলে ১৯৩০-এর দশকে মাফিয়াচক্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বত্র অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়দের মতে, এটা সর্ববৃহৎ এবং শক্তিশালী সংগঠিত অপরাধী দলে পরিণত হয়। একমাত্র নিউইয়র্ক শহরে এ ধরনের ৫টি দল সক্রিয় হয়ে ওঠে। এরূপ একেকটি দলের প্রধানকে 'বস' এবং 'ডন' বলে আখ্যায়িত করা হয়।

বর্তমানে মাফিয়া আন্ডার ওয়ার্ল্ডের সবচেয়ে বড় সংগঠন। সমগ্র বিশ্বের অপরাধ জগৎ এরা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। MAFIA একটি শ্লোগানের abbreviation যা থেকে এই নামটি প্রতিষ্ঠিত হয় । MAFIA - "Marti Ala Francia Italia Anila" যার অর্থ হলো ফ্রান্সের মৃত্যু ইটালীর কাম্য। সে সময়টাতে ইটালী ফ্রান্সের অধীনে ছিল।

সংগঠন(পরিবার)ব্যবস্হাপনা: ১। মাফিয়া প্রধানত বসভিত্তিক সংগঠন বা পরিবার। এই বসকে ডন বা গডফাদার বলা হয় যার অধীনে একাধিক আন্ডারওয়ার্ল্ড বস কাজ করে। তিনি সংগঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি। তাঁকে সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।

ব্যবস্হাপনা,অপারেশন,মিটিং,নীতিনির্ধারণ সবকিছুই তিনি কখনও আড়াল থেকে কখনও দরকার পড়লে সরাসরি এসে নিয়ন্ত্রণ করেন। ২। বসের পরেই কনসিলিয়েরী। তিনি এককথায় বসের মন্ত্রণাদাতা। আমরা আমাদের দেশে দেখি কোন সংগঠনের প্রধানের ব্যাক্তিগত সচিব বা উপদেষ্টা থাকে।

মাফিয়াতেও কনসিলিয়রীর অবস্হান সেরকমই। এরা বসের সবচেয়ে নিকটবর্তী এবং পরামর্শদাতা। খুবই চতুর ব্যবসায়িক এবং পরিকল্পনা বুদ্ধিসম্পন্ন না হলে কেউ এই পদে আসতে পারে না। সাধারণত ইতালী থেকে আমেরিকায় আগত মাফিয়া নেতারা চতুর সিসিলিয়ানদের এই পদে নিযুক্ত করতেন। এরা বসের এতই নিকটবর্তী যে এদের দেওয়া প্রায় সব তথ্যের উপরই বসকে নির্ভর করতে হয়।

তাই কনসিলিয়রী বেঈমানী করলে বসকে ভালই বিপদে পড়তে হয়। তবে কনসিলিয়রীর সাথে বস ব্যাতীত সংগঠনের কেউ সরাসরি দেখা করতে পারেনা। কনসিলিয়রী কি করে বা না করে তা বস ব্যাতীত সংগঠনের অন্যরা খুব কমই জানে কিন্তু সংগঠনের উপর নজরদারিতে বসের মতই সেও সমান নজর রাখে। কনসেলিয়রীরা আত্মরক্ষাব্যতীত কোন সশস্ত্র যুদ্ধে লিপ্ত হয়না। ২।

সহকারী বস কনসিলিয়রীর মতই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাবান। তবে এই সহকারী বসের মাধ্যমেই সংগঠনের নিচের ধাপের লোকেরা বসের সাথে যোগাযোগ রাখে। সহকারী বস অন্য কথায় বসের ডামি। সাধারণত উচ্চ ব্যাক্তিত্বসম্পন্ন অপরাধীদের এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ৩।

কনসিলিয়রীর এবং সহকারী বসের পরের ধাপেই থাকে সব যোদ্ধারা। মাফিয়া সংগঠনের তৃতীয় ধাপটির নাম হল ক্যাপো বা ক্যাপ্টেন। একাধিক ব্যাক্তি নিয়ে গঠিত এই ধাপ বিভিন্ন এলাকায় বা দেশে সংগঠনের জন্য তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রথিষ্ঠা করে এবং কাজের জন্য সহকারী বস অথবা ক্ষেত্রবিশেষে বসের কাছে জবাবদিহি করে। যুদ্ধ পরিকল্পনায় দক্ষ এবং সাংগঠনিক প্রতিভার অধিকারী ব্যাক্তিরাই এই পদে আসে। সাধারণত এই পদে পেশাদার ডাকাত সংগঠনের নেতা,পুলিশ,প্রতিরক্ষাবাহিনীর দক্ষ লোকজন যারা কোনভাবে বাহিনী থেকে বিতাড়িত,অবসরপ্রাপ্ত অথবা সমাজ,রাষ্ট্র,সরকার হতে কোনভাবে অন্যায়ের শিকার-এই ধরণের ব্যাক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হয়।

তাদের বাহিনীগত দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন দল গঠন করে ক্যাপো বা ক্যাপ্টেন পদে অভিষিক্ত করা হয়। ৪। চতু্র্থধাপ হল যোদ্ধা যারা ক্যাপোর ঠিক নিচের ধাপ। অন্য কথায় ভাইস ক্যাপ্টেন। এরা সরাসরি বস,সহকারী বস বা কনসিলিয়েরীর সাথে দেখা করতে পারে না।

যে কোন কাজ,তথ্য সবকিছুই ক্যাপোদের সাথে শেয়ার করতে হয় এবং ক্যাপোদের পরবর্তী নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এরা এলাকাভিত্তিক। সদরদপ্তরে অর্থাৎ বসের অফিসে এদের যাতায়াত খুব প্রয়োজন না হলে হয়না। বিভিন্ন ধরণের দক্ষ অপরাধীদের এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং প্রয়োজন পড়লে যে কোন মুহূর্তে এদের ক্যাপ্টেন পদে প্রমোশন দেওয়া হয়। ৫।

পঞ্চমধাপ হল বন্দুকবাজ বা ফিল্ডকর্মী বা এসোসিয়েটস। এরা কোন নীতিনির্ধারণে অংশ নেয় না। মূলকাজ হল বন্দুক নিয়ে ব্যবসা পাহাড়া দেওয়া এবং প্রয়োজনে প্রতিদ্বন্দী সংগঠনের লোকদের হত্যা করা। ক্যাপ্টেন দ্বারা বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের এই পদে নিযুক্ত করা হয়। ***এদের বাইরে কিছু পেশাদার খুনী বা খুবই দক্ষ কাউকে বিশেষ অপারেশনের জন্য রাখা হয় যারা শান্তির সময়ে বসের ব্যাক্তিগত নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ এবং প্রয়োজনে বসের জীবনের প্রতি হুমকিস্বরূপ কাউকে হত্যা করতে প্রস্তুত থাকে।

এরা খুবই বিশ্বাসী,বসভক্ত বা প্রভুভক্ত এবং বসের নিকটবর্তী হয়। সাধারণত বেঈমানী করবেনা এমন সৎ,দক্ষ ব্যাক্তিদের এই পদে রাখা হয়। এছাড়াও বিশেষ কমান্ডো অপারেশনে তাদের পাঠানো হয় যেখানে ক্যাপো বা তার দলবলকে পাঠালে ক্ষতির পরিমাণ বেশী হবে। যেমনটা বিন লাদেনকে হত্যা করতে ওবামা নেভীসিলদের পাঠিয়েছিলেন। এরা বসের সাথে থাকে সবসময়।

কোন নীতিনির্ধারণে অংশ নেয় না। "সরকার" সিনেমায় অমিতাভ বচ্চন এবং অভিষেক বচ্চন সংগঠনের কেউই কখনও পরিবার বা সংগঠনের বিরুদ্ধে যাব না এই নীতি কঠোরভাবে মেনে চলে। তবে নিজের পরিবারের সাথে বেঈমানী করলে তাকে হত্যা করা হয়। কসানোস্ট্রার প্রতি নিয়মকানুন মাফিয়াদের দশটি নিয়ম কঠোরভাবে মেনে চলতে হয়। এ নিয়মের একটু পরিবর্তন করলেই জবাবদিহিতা করতে হয় এবং কাজ অনুসারে শাস্তি প্রয়োজনে হত্যা করা হয়।

নিয়মগুলো হল: -কেউ সংগঠনের বন্ধুদের সাথে সরাসরি দেখা করতে পারবেনা। অবশ্যই তৃতীয় কোন ব্যাক্তির উপস্হিতি থাকতে হবে। -কেউ বন্ধুর স্ত্রীর দিকে নজর দিতে পারবেনা। -কখনও পুলিশের সাথে প্রকাশ্যে দেখা যাওয়া চলবে না। -পাব'স এবং ক্লাবে যাওয়া চলবেনা।

-কোসানস্ট্রার(সংগঠন) জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে। এমনকি স্ত্রীর বাচ্চা প্রসবের সময়েও। -সাক্ষাৎকারীকে সর্বদা শ্রদ্ধা করতে হবে। -স্ত্রীদের অবশ্যই সম্মান করতে হবে। -প্রাপ্ততথ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে অবশ্যই সত্য কথা বলতে হবে।

-অন্য পরিবারগুলোর টাকার ব্যাপারে সদা সচেতন থাকতে হবে,অন্য পরিবারের টাকা সঠিক নাও হতে পারে। -তারাই সংগঠনে ভর্তি হতে পারবে না: *যার পুলিশে কোন নিকটাত্মীয় আছে। *যদি কোন মাফিয়া পরিবারে কারও দুই-টার্মের আত্মীয় থাকে। *যে দুর্ব্যবহার করে এবং উপদেশ অগ্রাহ্য করে। বিচরণক্ষেত্র: মাফিয়া একটি ব্যবসায়িক সংগঠন।

এদের নির্দিষ্ট কোন দেশীয় সীমারেখা নেই। একএকেকটি নেটওয়ার্কের সীমানা যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিয়ে ইতালী সহ আরব বিশ্ব,এশিয়া,পূর্ব এশিয়াসহ তথা সারা পৃথিবীতে বিস্তৃত। এরপরেও নির্দিষ্টভাবে বললে ব্যবসা,রাজনীতি,খেলাধূলা,বিনোদন জগৎ,সরকার সব জায়গাতেই প্রভাব বিস্তার এবং নিজের মুনাফা লুটতে খুব পারংগম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,ইতালী,ভারত,পাকিস্তান,সংযুক্ত আরব আমিরাত,ব্রাজিল,দ:কোরিয়া,থাইল্যান্ড,রাশিয়া এসব দেশে মাফিয়ারা প্যারালেল সরকার। উদ্দ্যেশ্য মূলত শান্তিমত ব্যবসা-বাণিজ্য ও বৈধ-অবৈধ যে কোন পথে মুনাফা অর্জনই এদের প্রধান কাজ।

বাধা আসলেই আক্রমণ,গুপ্তহত্যা। "ওমের্তা" বা "মুখবন্ধ" এখানকার মূলমন্ত্র। এখানে রিক্রুটমেন্টের মূলমন্ত্র হল কিছু নির্দিষ্টব্যাক্তিব্যাতীত যে কেউ চাইলেই ভর্তি হতে পারবে,কিন্তু অবসরে যেতে পারবেনা। এ জগতে যোশ বা খ্যাতির কোন মূল্য নেই। এখানে মূল্যবান হল টাকা আর ক্ষমতা।

কার্যপদ্ধতি তারা সাধারণত তেল,অস্ত্র,মাদক,সোনার খনি,হীরার খনি,পরিবহন খাত,বিনোদন জগৎ,তারকা হোটেল,তারকা রেস্টুরেন্ট,প্রয়োজনে রাজনীতি,অর্থনীতি,ব্যাংক ব্যাবসা,শেয়ার মার্কেটসহ প্রায় সব ধরণের লাভজনক ব্যাবসায় করে থাকে। মাফিয়ারা সাধারণত ঝামেলা এড়িয়ে চলে। শত্রুকে হত্যা করা তাদের কার্যক্রমের অন্যতম প্রধান কাজ। এছাড়াও শত্রুকে জেলের ভাত খাওয়ানো,ব্যবসায় বিঘ্ন তৈরী করা,বন্ধুত্ব নাহলে হানাহানির প্রস্তাব দেওয়া,বিনোদন জগতে সেলিব্রেটিদের প্রভাব খাটিয়ে পুরষ্কার পাইয়ে দেওয়া এবং বিনিময়ে চুক্তির মাধ্যমে কিস্তিতে সেই সেলিব্রেটির কাছ থেকে মুনাফা ইনকাম করা,খেলাধুলায় ক্রীড়াতারকাদের টাকা দিয়ে কিনে নেওয়া ও রাজী না হলে হত্যার ব্যবস্হা করা সহ এই দুনিয়ায় এমন কোন কাজ নেই যা তারা করে না। মাফিয়ারা সাধারণত একচেটিয়া ব্যবসায় বিশ্বাস করে।

তবে তাদের যেটি সবচেয়ে বড়গুণ তা হল বন্ধুত্বের মর্যাদা। আপনি যদি কানা,খোড়া,অকর্মা কাজের বেলায় দুইও হন একবার তাদের বন্ধুত্বের সাধ পেয়ে গেলে ওরা আপনার জন্য কিনা করবে। আপনি কোন সরকারী কর্মকর্তার কাছ থেকে অনেকদিন ধরে কোন ফাইল সাইন করাতে পারছেন না। বোঝাই যাচ্ছে আপনাকে দুর্বল ভেবে সে ঘুষ চায়। আপনি আপনার মাফিয়া বন্ধুটিকে গিয়ে ব্যাপারটি খোলাসা করে বলবেন।

বিনিময়ে সে আপনাকে নিশ্চিন্তে থাকতে বলবে। কিছুদিন পরেই হয়ত দেখা যাবে সেই কর্মকর্তা আপনাকে নিজ দ্বায়িত্বে আপনার বাড়িতে এসে সাইনসহ ফাইলটি দিয়ে যাবে। তবে মাফিয়ারা এটাই চায় আপনি যেন ওদের কাজের পদ্ধতি বা কি করল সেটা যেন জানতে আগ্রহ না দেখান। ঐ যে বললাম ওমের্তা,এটি তারই অংশ। এলাকার কোন প্রভাবশালী সংসদসদস্যের দুলাল ইভটিজারছেলে আপনার বোনকে উত্ত্যক্ত করছে।

স্কুল কলেজে যাওয়া প্রায় বন্ধ। জীবন দুর্বিষহ। সেই দুলালের খুব বিশ্বাস তাকে কেউ কিছু করতে পারবে না কারণ তার বাবা মন্ত্রী। আপনি পুলিশে নালিশ করেও কোন ফল পেলেন না। শেষমেশ আপনার মাফিয়া বন্ধুটিকে ব্যাপারটি জানিয়ে দেবেন।

এরপরে যা করার তাই সে করবে। হয়ত এক সপ্তাহ পরে দেখবেন সেই দুলাল আপানাকে রাস্তায় দেখলেই দাঁড়িয়ে সালাম দেয়। দেখা যাবে সে তার লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিয়র মতো রাখা লম্বা চুল গায়েব করে পুরোদস্তুর আর্মিস্টাইলে চুল কেটে ভদ্রবেশে রাস্তায় ঘুরছে। হয়ত দেখেবেন যে মন্ত্রী কখনই আপনার দিকে তাকায়নি,এখন থেকে তিনি আপনার দিকে একটু বিরক্ত হয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকান। আপনি একজন চিত্রনায়ক।

এই বছরটা এমনভাবে যাচ্ছে যে সেরা পুরষ্কারটি পেলে আপনার তারকাখ্যাতি উঠবে শীর্ষে এবং আপনাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। আপানার মাফিয়া বন্ধুটিকে ব্যাপারটি বললে দেখা যাবে পুরষ্কার বিতরণী মঞ্চে ঠিকই আপনার নাম এসে গিয়েছে। বিনিময়ে হয়ত বন্ধুটি আপনার সাথে এমন একটি চুক্তি করতে চাইবে যার ফলে আপনি প্রথম চার-পাঁচ বছরে আপনার আয়ের ৩০% তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পৌঁছিয়ে দেবেন এবং তিনি চাইলেই তার দেওয়া পার্টিতে অংশ নেবেন। এছাড়া আর কিছুই তার চাওয়ার নেই। বন্ধুর প্রতি যেমন দ্বায়িত্ববান তেমনি শত্রুর বিরুদ্ধে তারা সদাসোচ্চার।

মাফিয়ারা একচেটিয়া ব্যবসায় বিশ্বাস করে। একই শহরে ওরা কোন সিমেন্ট ফ্যাক্টরি বানালে আপনাকে ফ্যাক্টরি তৈরী করতে দেওয়া হবে না যদি আপনি তাদের শত্রু হোন। আপনার ট্রাক মাল পরিবহনের সময় রাস্তাতেই হাওয়া হয়ে যাবে। আপনার ঘরে অস্ত্র পাওয়া যাবে যা আপনি জীবনেও স্পর্শ করেন নি। ফলে জেল-জরিমানা অন্য কথায় জীবনে চলার স্বাভাবিক পথে বাঁধা।

ডন-২ সিনেমায় শাহরুখ খান বাস্তব জগতে দাউদ ইব্রাহিম,কোন এক স্টেডিয়াম থেকে মাফিয়ারা শত্রুকে কখনও ছাড় দেয় না। আপনি যদি তাদের সংগঠনের কাউকে হত্যা করেন অথবা পুলিশে ধরিয়ে দেন তাহলে আপনি যদি পুলিশপ্রধান,প্রেসিডেন্টও হন তাহলেও আপনাকে তারা হত্যা করবে। জেল-আদালতে ওদের কিছু নিজস্ব পুলিশ,উকিল,জর্জ থাকে যারা তাদের মত করে কেইস সাজায় ও রায় দেয়। ফলে কোনদিক থেকে তাদের ব্যবসায় বাঁধা আসেনা। আমাদের সমাজ জীবনেও অপরাধীরা যুগে যুগে ঐ ইতালী,মার্কিনী মাফিয়াদের দেখিয়ে দেওয়া পথেই অপরাধ করছে এবং পার পেয়ে দিনকে দিন নিজের ব্যবসা প্রসারিত করছে।

কিছু কার্যক্রম: -মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি হত্যা। -১৯৯৭ সালে বালিউড সংগীত পরিচালক গুলশান কুমার হত্যা। -২০০০ সালে বলিউড অভিনেতা আমির খানকে ডি-কোম্পানীর লোকজন হত্যা করতে আসে। তবে বডিগার্ডদের গুলিতে তারা মারা যায়। -বাংলাদেশে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা।

-ভারত,পাকিস্তানে,দ:আফ্রিকার মত দলগুলোর ম্যাচফিক্সিংয়ে জুয়াড়িদের আয়কৃত অর্থের ভাগবাটোয়ারা নিয়ন্ত্রণ। -২০১১ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতের জয়ের পেছনে মাফিয়াচক্রের জড়িত থাকার কথা শোনা যায়। -এছাড়াও বিশ্বজুড়ে সিআইএ,মোসাদের মত গোয়েন্দা সংস্হাগুলো এলাকাভিত্তিক অপারেশন চালাতে মাফিয়াদের সাহায্য নেয়। বিনিময়ে তাদের বিরুদ্ধে চলতে থাকা আইনী বাঁধাগুলো থেকে মুক্ত হতে গোয়েন্দাসংস্হাগুলো সহায়তা করে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইটালী কতৃপক্ষের হাতে গ্রেফতাকৃত কিছু মাফিয়া বস মাফিয়া নিয়ে তৈরী করা বিখ্যাত চলচ্চিত্র হল দ্য গডফাদার।

দ্য গডফাদার ছবিতে মাফিয়া ডন ভিটো কর্লিয়োনির চরিত্রে মার্লোন ব্রেন্ডো দ্য গডফাদার ছবিতে মাফিয়া ডন মাইকেল কর্লিয়োনির চরিত্রে আল পাচিনো "কোম্পানি" সিনেমায় দাউদ ইব্রাহিমের চরিত্রে অজয়দেভগন এবং ছোটা রাজনের চরিত্রে বিবেক ওবেরয় বাস্তব জগতের মাফিয়া ডনরা: আল ক্যাপোনি(যুক্তরাষ্ট্র) স্যামিয়ন যুদকোভিক(রাশিয়া) দাউদ ইব্রাহিম(ভারত) সংগঠন: রথ শিল্ডের কথা কম-বেশী সবাই জানি। ইহুদী বংশদ্ভূত এই ব্যাংক ব্যবসায়ীর ইউরোপে প্রভাব বিস্তার তার পরিবারকে নিয়ে গিয়েছে সবার শীর্ষে। এছাড়াও ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত মাফিয়া ডন আল ক্যাপনি। রাশিয়ার স্যামিয়ন যুদকোভিক,ভারতের দাউদ ইব্রাহিমের ব্যবসাও বিশ্বজুড়ে প্রভাববিস্তারকারী। মেক্সিকান ড্রাগস কিং জোয়াকুইন গুজম্যান বিশ্বের অপরাধ জগতে সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যাক্তিত্ব মাফিয়ারা দিনকে দিন নিজের প্রভাব বিস্তার করতেই থাকে।

এছাড়া এ জগতে টিকে থাকা কষ্টকর। নিজের প্রয়োজনে তারা আমেরিকার প্রেসিডেন্টকেও হত্যা করতে পিছপা হয় না। আরও পড়তে পারেন: বিশ্বের ভয়ংকরতম দুর্ধর্ষ সংগঠনসমূহ ইসরাইলী গোয়েন্দা সংগঠন মোসাদ  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৫১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।