দেখিয়া শুনিয়া চরম বিরক্ত
আমাকে যে প্রথম শিংগাড়া খাইয়েছিল তার নামটা আজও আমার স্পষ্ট মনে আছে-তা হচ্ছে এরশাদুল বারী। তার আগে কবে কিভাবে আমি সর্বপ্রথম শিংগাড়া খেয়েছিলাম এতদিন পরে তা যেন আজ আর মনে পরতে চায় না। সিদ্ধান্ত: পূর্বাপর সবস্মৃতি বাদ, সিংগাড়া স্মৃতি শুরু এরশাদুল থেকে।
মফঃস্বলের একটা স্কুলে আমরা দুজনেই তখন ক্লাস ওয়ান বা টু এর ছাত্র। বলাই বাহুল্য এরশাদুল ছিল আমার সেই সময়ের জানিদোস্ত ! আমরা দুইজন কেউ যেন কাউকে ছাড়া বাঁচি না।
তো এরশাদুল কিভাব যেন একদিন বাসা থেকে পুরো একটি ১ টাকার নোট নিয়ে স্কুলে এসে হাজির। ক্লাসের ফাঁকে আমাকে দেখাতেই আমি তো পুরো 'থ' । আজব ব্যাপার! এই জিনিস রোজ আব্বা আম্মার হাতে দেখি! আজ এরশাদুলের কল্যাণে সেই একই জিনিস আমার চোখের সামনে? আমি কি স্বপ্ন দেখছি নাতো? কিভাবে পেল এরশাদুল এই টাকা?
এবার আসল কথায় আসি। সেদিনই স্কুল ছুটির পরে সেই মহামূল্যবান টাকাটি দিয়ে দুই বন্ধুর যৌথ উদ্যোগে একখানা শিংগাড়া খরিদ করা হয়েছিল। তবে কোন দোকান থেকে কিভাবে আমরা তা কিনেছিলাম সেসব কথা আজ আর মনে করতে পারছি না।
তবে এটা আমার স্পষ্ট মনে আছে খাবার আগে সেই শিঙ্গাড়া সমান দুই ভাগ করা হয়েছিল। আর কাজটি সুনিপুণ ভাবে সমাধা করছিল আমার বন্ধু এরশাদুল। এরশাদুল যখন হাতের চাপে শিঙ্গাড়াটি দুইভাগ করছিল, তখন আমি অবাক হয়ে সেই দৃশ্যটি অবলোকন করছিলাম! কি আজব জিনিসরে বাবা এই শিংগাড়া! বাহিরটা যেন ভাজা রুটি দিয়ে তৈ্রী করা একটা মোড়ক, যার ভিতরে ঠাসাঠাসি করে পোরা আছে সুগন্ধী মশলা মাখানো সুস্বাদু আলুর টুকরো! প্রতি কামড়ে কামড়ে যখন সেই শিঙ্গাড়া ভাগ ভাগ হয়ে আমার মুখে ঢুকছিল, আমি তখন বুঝতে পারছিলাম পেয়াঁজ-মশলা মাখানো আলুর টুকরোগুলো রুটি সমেত আমার মুখে মোমের মত গলে যাচ্ছে। আহা কি অনুভব! কি স্বাদ!আজো মনে পড়ে, সেই আধাখানা শিংগাড়া যখন আমার হাতে দেওয়া হয়েছিল- তখন তা যেন আমার গোটা হাতের তালু প্রায় দখল করে নিচ্ছিল! চোখ বড় বড় করে আমি হয়ত তখন ভাবছিলাম , "আরিব্বাস, শিংগাড়া!এত্ত বড়!"
তবে সেই শিঙ্গাড়াভোজন পর্ব কোন এক অদ্ভুত কারনে যেন একটি দেয়ালের নীচে লুকিয়ে লুকিয়ে সম্পন্ন করা হয়েছিল। কারনটা আজ আর আমার মনে নেই,তবে হতে পারে এরশাদুলের মনে আছে।
কিন্তু কোথায় সেই এরশাদুল?
এরশাদুল কে আমি হারিয়ে ফেলি ক্লাস টু বা থ্রী এর দিকে। আমি জানি না আজ সে কোথায় কিভাব আছে। তবে বেঁচে আছে এরশাদুল আমার মনের মনিকোঠায় আমার প্রিয় আরো অনেক স্মৃতির সাথে এই শিঙ্গাড়ার-স্মৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে। একটা কথাই বলবো, যেখানেই থাকো, ভালো থেকো বন্ধু।
(অনুপ্ররণা ফেবু তে অমি রহমান পিয়াল ভাইয়ের শিংগাড়া বিষয়ক একটি স্ট্যাটাস) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।