আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

Ice & Snow festival- Harbin, China

ভুল করেছি,প্রায়শ্চিত্য করবো না, তা তো হয় না হারবিন শহরে প্রতিবছর বরফ ও তুষার মেলা বসে,ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে শুরু হয়ে চলে ফেব্রুয়ারী অবধি.এই শহরটা চীনের সর্বউত্তরের প্রদেশ হেই-লোং-জিয়াং এর রাজধানী. শীতের সময় -৪০ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়। আর -২০ থেকে -৩০ যেন একটা স্বাভাবিক ব্যাপার.এরকম তীব্র শীতে মরার উপর খাড়ার ঘা হল বাতাস বা শৈত্যপ্রবাহ,বাতাস যখন মুখে লাগে দাঁতগুলো তখন কাঁপতে থাকে,গালের চামড়া কুঁচকে যেতে চায়, ঠোঁট শুকিয়ে চৈত্র মাসের ফসলের মাঠের মত ফেঁটে চৌচির হয়, এখানকার বাতাসে পানি না থাকায় মানুষের শরীর থেকে যেন পানি চুষে নেয়.প্রথম প্রথম যখন এই শহরে আসি তখন রুম থেকে জানালা দিয়ে বাইরে কটকটা রোদ দেখে ভাবতাম বাইরে বোধ হয় শীত তেমন নেই তাই জ্যাকেট [বাংলাদেশের মত জ্যাকেট ] পরে বের হতাম, ওমা! বাইরে গিয়ে পুরাই থ...জম্মের শীত. আকাশে রোদ থাকুক আর নাই থাকুক শীতের ব্যাপারে কোন ছাড় নাই. বাইরে বের হলে রীতিমত যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বের হতে হয়, সাইবেরিয়ার লোকজন যে ধরনের শীতের কাপড় পড়ে ওরকম.এখানে নাক টানা ব্যাপারটা খুবই কমন, আমাদের দেশে যারা নাকের পানি টেনে ভেতরে নেয় তাদের আমরা নোংরা বলি কিন্তু এই শহরে সবাই নাক টানার শব্দ করে. বিস্ময়কর ব্যাপার হল নাকের পানি বাইরে বের হতে পারে না, নাকের মাথায় আসার সাথে সাথেই বাতাস সেটা চুষে নেয়. দোকানদারদের বিদ্যুৎ খরচ করে ফ্রিজে কিছু রাখতে হয় না;আইসক্রিম,কোক,বিয়ার এমনকি মাছ-মাংস দোকানের সামনে ফুটপাতে রেখে দেয়.দিনের পর দিন পরে থাকলেও নষ্ট হওয়ার কোন চান্স নাইক্ক্যা বরফ ও তুষারের জমজমাট আয়োজন দেখার জন্য এই ধরিত্রীর নানা প্রান্ত থেকে মানুষের ছুটে আসা দেখে আমি আর বাদ থাকবো কেন! গেলাম,সে এক এলাহী কারবার! বরফ আর স্নো দিয়ে মানুষ এত কিছু করতে পারে! আর হ্যাঁ যাওয়ার সময় সেই মাপের প্রোটেকশনতো বটেই,প্রথমে পায়ের পাতা ফুড র্যাপিং পেপার দিয়ে মুড়িয়ে তার উপর পাতলা মোজা তার উপর মোটা মোজা আর ওয়াটার প্রুফ জুতা; এত প্রস্তুতির কারন আবহাওয়া এমনিতেই ঠান্ডা এর উপর ঐ মেলার সব স্ট্রাকচার বরফ দিয়ে বানানো বিধায় মেলাপ্রাঙ্গনে বেশিক্ষণ টেকা যায় না,পা ঠান্ডায় জমে অবস হয়ে যায়.আর আমরা যারা গ্রীষ্মকালীন দেশের বাসিন্দা তাদের যেন ঠান্ডা একটু বেশিই লাগে. তবে এত ঠান্ডার মধ্যেও আপনি বিমোহিত হতে বাধ্য যখন দেখবেন বরফ দিয়ে কোকাকোলোর বোতল বানানো,হারবিন বিয়ারের ইয়া লম্বা বোতল!এখানে বিয়ার আর পানির দাম সমান. বাংলাদেশে ১০টাকার পানির বোতলের সমান সাইজের পানির বোতলের দাম ১ ইউয়ান কোথাও কোথাও ২ ইউয়ান আর ১০ টাকার পানির বোতলের দ্বিগুন সাইজের কাচের বোতলে বিয়ারের দাম ২ ইউয়ান বা ২৬ টাকা. মেলাপ্রাঙ্গনের সীমানা প্রাচীর বরফের দেয়াল দিয়ে ঘেরা আর ওর ভিতরে হরেক রঙের বাতি, কিছুক্ষণ পরপর কালার চেঞ্চ হওয়া; সব মিলিয়ে এক অন্যরকম পরিবেশ যার শোভা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়! ছবি এখানে এক ছোট মাটির টিলাকে ঘিরে মায়াবী সুরের তালে তালে এক্রোব্যাটদের ছন্দময় স্কি প্রদর্শনী. বরফ দিয়ে বানানো মেঝের উপর ডিজে ড্যান্স,নাচতে গিয়ে বারবার মেঝেতে পড়ে ব্যাথা পেয়েও কেউ দমে যাচ্ছে না! কপোত কপোতীদের বলরুম ড্যান্স,পা পিছলে যুগলদ্বয় মেঝেতে লুটিয়ে পড়ছে… সব মিলিয়ে এক অবর্ণনীয় মজার পরিবেশ ছেড়ে মনো নাহি আসিতে ন চায়, তবু আসিতে হয় কারন বরফময় পরিবেশে হাঁড়কাপানো ঠান্ডায় মেলাপ্রাঙ্গনে একটানা ৪৫ মিনিট বা ১ ঘন্টার বেশি থাকা যায় না. এন্ট্রি টিকেট ফি - ৩০০ ইউয়ান বা ৪০০০ টাকা ছাত্রদের ক্ষেত্রে ১৮০ ইউয়ান ক্যাবল কার ,স্লাইডিং,DJ dance সহ সব রাইড এই ফি’র অন্তর্ভুক্ত সাপ্তাহিক ছুটির দিনে student ID card দেখিয়ে কোন লাভ নেই, ছাড় নেই; শুধুমাত্র কর্মদিবসে প্রযোজ্য

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।