আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চায়না.....১

জিয়া ওরফে ঢাকা ওরফে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবেশ করেই দেখলাম এক প্রাচীন ভাই। বহুদিন আগে খাতির ছিল কিন্তু নাম মনে করতে পারলাম না। নাম ভুলে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমার পারদর্শীতা অসাধারণ। তবে নিমকহারাম অর্থে এটি প্রযোজ্য নয়। কাধে হাত রাখলাম।

সে তাকাল এবং সহাস্যে সালাম বিনিময়। এমনভাবে কথা বললাম যাতে তার নামটি ভুলে গেছি সেটি প্রকাশিত না হয়। জানতে পারলাম তার গন্তব্য চীনের শেনঝেন। উভয়েই একই বিমানে চীনের কুনমিং পর্যন্ত যাচ্ছি। এটা তার প্রথম বিদেশ সফর,তাই তার পিতা,স্ত্রী সকলে এসেছেন তাকে বিদায় জানাতে।

তার পিতাকে বললাম আমি তাকে চিনি আর আমরা একসাথেই যাচ্ছি ফলে কোনো সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন। কিন্তু কোনো সমস্যা না থাকলেও পিতা-মাতারা তাদের সন্তানের ব্যাপারে চিন্তিত থাকেন। এটা হল তাদের স্বভাব। আর সন্তানরা এভাবে তাদেরকে নিয়ে সদা চিন্তিত থাকেনা, এটা হল পিতা মাতার নিয়তি।

খানিক কথা হল। তারপর আরও কথা হল। এবং কথা চলতেই থাকল। আলোচনার যে পর্যায়ে নিজের দোষ স্বীকার করলে কোনো সমস্যা হয়না,সেরকম একটি পর্যায়ে বললাম ভাই আমি কিন্তু বহু বন্ধুর নাম মনে রাখতে না পেরে জঘন্নসব গালাগালির মুখোমুখি হয়েছি। তিনি বললেন-আমি ফারসিন।

আমি বললাম,আমার নাম মনে আছে ? তিনি বললেন-মুন্নাভাই। আমার নামের সাথে ভাই শব্দটা- লেজের সাথে গোবরের যেমন( মানিকজোড়ের চাইতেও আপন)। বাইরে কেউ ডাকলে সাধারনত: মুন্না ভাই বলেই ডাকে। অতীত-বর্তমানের প্রচুর আলাপ হল। এবার আমি বেশ ওজনদার ব্যাগ নিয়ে এসেছি যার ভেতর প্রয়োজনীয় সবকিছু আছে যাতে চায়না থেকে কিছু কিনতে না হয়।

আমরা এদেশে চায়নার তৈরী অনেক সস্তা জিনিস কিনতে পারলেও সেখানে গিয়ে অনেক দাম দিয়ে কিনতে হয়। এর কারন হল,বড় বড় দোকানপাটকে অনেক বেশী ভাড়া গুনতে হয়(এক শহরের একটি ছোট দোকানের ভাড়া জানতে পারলাম মাসে দেড় লক্ষ টাকা,বসুন্ধরা সিটিতে এই দোকানটির ভাড়া হবে ৪০ হাজার টাকা),তারা কোম্পানী থেকে যে মূল্যে কিনে আনেন তা বৈদেশিক রপ্তানী মূল্যের চাইতে বেশী,বহু দূরের কোনো প্রদেশ থেকে কেনার কারনে স্থল পথে পরিবহন ব্যয় অত্যধীক এবং সরকারী ট্যাক্স। কিন্তু যখন কোনো পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কিছু রফতানী করে,তখন তারা সরকারী সুবিধা পায়,ট্যাক্স কমে আসে আর বৈদেশিক আমদানীকারক একবারে বেশী কেনার কারনে দামে বেশ সস্তা হয়,সমুদ্র পরিবহনে খরচ কমে আসে। এবং আমরা এভাবে বাংলাদেশে থেকে চায়নিজ জিনিস সেখানকার খুচরা বাজারের তুলনায় সস্তায় পেয়ে থাকি। তবে কখনও কখনও অনেক জিনিস সেখানকার বাজারে খুব সস্তায় পাওয়া যায়।

এটি উক্ত প্রতিষ্ঠানের বিশেষ সঙ্কটের কারনে হতে পারে আবার বিশেষ মূল্যহ্রাসের কারনেও হতে পারে। যেমন- আমি এক টেরাবাইটের একটি পোর্টেবল হার্ডডিস্ক বর্তমান বাজার মূল্য দশ হাজার টাকার স্থলে মাত্র সাড়ে তিন হাজারে পেয়েছিলাম এবং একটি ৩৯ইঞ্চী স্মার্ট টেলিভিশন কাম মনিটর চায়নার অন্যান্য স্থানের বাজার মূল্য প্রায় ৭০ হাজারের বদলে ১৬হাজারে পেয়েছিলাম। উল্লেখ্যঃ সঙ্গত কারনে দুটোর একটাও কেনা হয়নি। বোর্ডিং কার্ড নেওয়ার সময় বললাম আমাদের দুজনকে একস্থানে দিতে। রাত দুইটায় আমাদের ফ্লাইট টাইম।

সে সময় পর্যন্ত প্রচুর গল্প হল। তিনি একটি চায়নিজ টেলিকম সার্ভিস কোম্পানীতে কর্মরত এবং বিশেষ প্রশিক্ষনের জন্যে তার এ যাত্রা। শুনলাম ইতিপূর্বে বাংলাদেশের টেলিকম ক্ষেত্রে এরিকসন,সিমেন্স একচেটিয়া সার্ভিস দিয়ে প্রচুর পয়সা পকেটে ভরেছে কিন্তু চায়নিজ এই কোম্পানী এসে তদের বাড়াভাতে ধুলো,ছাই দিয়েছে। এখন এই কোম্পানী এ ব্যবসার প্রায় ৯০% নিয়ন্ত্রণ করছে। অর্থাৎ এরিকসন,সিমেন্স এর বাড়াভাতে ৯০% ছাই।

অতি দ্রুত তাদের এ সাফল্যের কারন হল,সস্তায় চমৎকার সার্ভিস দেওয়া। তারা শুধু ভাল সার্ভিস দিয়েছে তাই নয় বরং নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশাল বিশাল কর্মকান্ডগুলোকে সংক্ষিপ্ত করে কোম্পানীর ঝামেলা,লোকবল,পয়সা সব বাঁচিয়ে দিয়েছে। তাদের সার্ভিস চার্জ পূর্ববর্তী কোম্পানীগুলোর প্রায় দশ ভাগের একভাগ। একটি কোম্পানী যা চায় বা যা পেয়ে সন্তুষ্ট তার সবটাই এখন এই চায়নিজ কোম্পানী দিচ্ছে। প্লেনের ভেতর খাওয়ার সময় তার চোখ-মুখের ভাব দেখে বুঝলাম এ জিনিস তার পছন্দ নয়।

বললাম,এটা কিন্তু অমৃত খাচ্ছেন। বড় চমক অপেক্ষা করছে সেখানে যাওয়ার পর। আমরা কিছু খাবার বদল করলাম। আমি এবার মনকে বেশ শক্ত করে ফেলেছি। হিসাব করে ফেলেছি যে, যত কুখাদ্য আসবে সব গিলে ফেলব।

কোনো অভিযোগ করব না। আমার কথা আমি রেখেছি,তবে কয়েকবার ছাড়া। একটা সিস্টেম শিখিয়ে দিচ্ছি- মনকে শান্তনা দিবেন যে,এই খাবার শরীরের জন্যে খুবই উপকারী ওষুধসম। শরীর ,মন দুটোই প্রস্তুত হবে। এবার ধুমধাম করে খেয়ে ফেলবেন,একটুও থামবেন না এবং চিন্তা করার সময় নিবেন না, তাহলে একটা ঝোকে সব খেয়ে ফেলতে পারবেন।

পেটের মধ্যে একবার পাঠাতে পারলে স্বাদের কথা চিন্তা করা অর্থহীন। এর অর্থ এই নয় যে, সকল চায়নিজ খাবারের স্বাদ আমাদের কাছে খারাপ। চায়নাতে বিভিন্ন ধরনের রান্নার পদ্ধতি আছে। কিছু খাবার খানিক তেল মশলা সহকারে অনেকটা ভারতীয় স্টাইলে রান্না হয়। তবে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তারা কোনো রকম সিদ্ধ করে বিদঘুটে স্বাদের সস্ এবং সশলা সহকারে পরিবেশন করে।

চলবে... ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।