লিখে খাই, সবার ভাল চাই
চারদিকে গুমোট অবস্থা। গাঢ় অন্ধকার। উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা দেশজুড়ে। কি হতে যাচ্ছে? একদিকে সরকার অপরদিকে বিরোধী দল। এরই মধ্যে এসে যোগ দেয় মুক্তিযুদ্ধ আর যুদ্ধাপরাধ।
গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল। কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রায়ের পরই পাল্টে যেতে থাকে দৃশ্যপট। সামনে চলে আসে জামায়াত-শিবির। তাদের একের পর এক তাণ্ডবে কেঁপে ওঠে বাংলাদেশ। অন্যদিকে জেগে ওঠে শাহবাগ স্কয়ার।
হাজার হাজার মানুষ স্বউদ্যোগে যোগ দিতে থাকে ব্লগারদের নেতৃত্বে নতুন প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধের ডাকে। গণজাগরণ মঞ্চ হয়ে ওঠে দেশের কেন্দ্রবিন্দু। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা বাংলাদেশ। এরই মধ্যে খুন হয় ব্লগার রাজীব। দ্রুত পাল্টে যেতে থাকে পরিস্থিতি।
গণজাগরণ মঞ্চ থেকে যুদ্ধারপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি ছাড়াও একের পর এক দাবি আসতে থাকে। এরই মধ্যে ব্লগে লেখা রাজীবের ধর্মবিরোধী নিবন্ধ প্রকাশ করা হয় একটি পত্রিকায়। বিদ্যুৎ গতিতে তা ছড়িয়ে পড়ে দেশে-বিদেশে। সামনে চলে আসে নাস্তিক আর আস্তিক প্রসঙ্গ। এর রেশ গিয়ে পড়ে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে।
তারা বিব্রত হয়, বিতর্ক এ নিয়ে। উঠতে থাকে নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তির দাবি। পক্ষে-বিপক্ষে বক্তৃতা, বিবৃতি। সবকিছু ছাপিয়ে হেফাজতে ইসলাম ডাক দেয় আন্দোলনের, লংমার্চের। ১৩ দফা দাবি উত্থাপন করেন তারা।
সরকারের পক্ষ থেকে পর্দার আড়ালে চলতে থাকে সমঝোতার চেষ্টা। এক মন্ত্রীকে দায়িত্বও দেয়া হয়। কোন কাজ হয়নি। ওই মন্ত্রীকে ব্যর্থ হয়ে চট্টগ্রাম থেকে ফিরতে হয়েছে। এরই মধ্যে চট্টগ্রামে ছুটে যান জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
তিনি হেফাজতের লংমার্চকে সমর্থন দিয়ে আসেন। ইতিমধ্যে বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন দল, সংগঠন এ লংমার্চে সমর্থন দিয়েছে। কাল হেফাজতে ইসলামের সে লংমার্চ। উত্তেজনা যখন তুঙ্গে তখন ব্লগারদের গ্রেপ্তর শুরু হয়। মঙ্গলবার ৩ জনকে গ্রেপ্তারের পর বুধবার গ্রেপ্তার করা হয় আলোচিত ব্লগার আসিফকে।
তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। গণজাগরণ মঞ্চ থেকে জানানো হয় তীব্র প্রতিবাদ। এরই মধ্যে বুধবার রাতে এসে এ বিতর্কে অংশ নেয় সেক্টর কমান্ডারর্স ফোরাম। তারা আজ শুক্রবার রাত থেকে কাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত হরতালের ডাক দেয়। আগুনে যেন ঘি ঢেলে দেয়ার মতো অবস্থা।
দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে। পাল্টা হুমকি দেয়া হয় হেফাজতের পক্ষ থেকে। এ হরতাল প্রত্যাহার না হলে রোববার থেকে লাগাতার হরতাল। অপর দিকে ক’টি পরিবহন মালিক সমিতি গাড়ি না চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সব মিলিয়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থা লংমার্চকে ঘিরে।
অবশ্য পুলিশ ১২ শর্তে অনুমতি দিয়েছে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশের। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, লংমার্চে বিশৃঙ্খলা হলে নেয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল হানিফ বলেছেন, লংমার্চের নাশকতা ঠেকাতে আওয়ামী লীগ প্রস্তুত। ওদিকে সাতক্ষীরার জনসভায় বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছেন, হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত হলে জবাব দিতে হবে। জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ লংমার্চে আসা জনতাকে পানি খাওয়ানোর ঘোষণা দেন।
সব মিলিয়ে লংমার্চ ঘিরে উত্তাপ উত্তেজনা. উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা দেশজুড়ে। ইতিমধ্যে হেফাজতে ইসলামের প্রধান আল্লামা শাহ আহমেদ শফী বুধবার রাতেই ঢাকায় অবস্থান নেন। গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে জানান দেন লংমার্চ হবেই। ঘোষণা দেন কোন প্রতিবন্ধকতাই তাদের রুখতে পারবে না। অন্যদিকে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, হেফাজতে ইসলামের কাছ থেকে মানুষকে ইসলাম শিখতে হবে না।
ইসলামকে হেফাজতকারী স্বয়ং আল্লাহ। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ উল্লেখ করে ইনু বলেন, সংবিধান প্রত্যেক ধর্মকে হেফাজত করে। এখানে আলেম-উলামাদের উত্তেজিত ও উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। হেফাজতের লংমার্চের দিনই আবার ডাকা হয়েছে গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশ। এ সমাবেশেরও প্রস্তুতি চলছে।
এ অবস্থায় দেশ কোন দিকে যাচ্ছে? সরকার আর বিরোধী দল নয়, কিংবা মুক্তিযুদ্ধ আর রাজাকার নয়, গণজাগরণ মঞ্চ আর জামায়াত-শিবির নয়। একে একে এর সঙ্গে জড়িয়ে গেছেন সব মহল। একটি বল নিয়ে খেলছেন তারা। এ মুহূর্তে বল এখন কার কোর্টে? এ বল দিয়ে কেউ আত্মঘাতী গোল করে বসে কিনা এ প্রশ্নও সামনে চলে এসেছে। যদি এমনটাই হয় তাহলে কি হবে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।