কিছুই লিখার নাই। মাসুদ বিষন্ব চোখে জানালার বাইরে তাকায়। ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে বাইরে, বিরক্তিকর। অসহ্য। অথচ এমনটা ছিল না।
একসময় বৃষ্টিতে ভিজতে ভালবাসত মাসুদ। ভালোলাগাগুলো বৃষ্টির সাথে মিলিয়ে নিত সে। অথচ এখন আর ভাললাগাই যেন নেই। এক বছর আগেও এমনটা ছিলনা। কিন্তু আজ যেন সব বদলে গেছে।
৬ বছর আগে এমনি এক বৃষ্টির দিনে আশার সাথে দেখা। অনেক দিন অসহ্য গরমের পর আজ বিকালে দখিনা বাতাস বইছে। সাইকেলটা নিয়ে বের হওয়া যায়। সেতু শালাটা কোথায় কে জানে? কাজের সময় তো পাওয়াই যাবেনা। দেখা যাক চেষ্টা করে।
-কই তুই?
-আছি...
-কই আছস?
-আছি বাসায়। কেন?
-সাইকেলটা নিয়া বাইরা, ঘুইরা আসি।
-এখন??? কই যাবি।
-বাইম মাছের মতো লাফাইতাসস কেণ? আইতে কইসি আয়।
-দাড়া আইতাছি।
মহারাজা আসতেছে তাইলে। আজকে দূরে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। অনেকদিন সাইকেল নিয়ে দূরে যাওয়া হয়না।
-শালা, তোর লগে আসাটাই ভূল হইসে। এর থাইকা বাসায় ঘুমাইতাম।
-আমি কী জানি যে বৃষ্টি আবো???
-একটা দিমু কানের নিচে। চল একজনের বাসায় যামু।
-কার?
-তোর নানীর। আর মাথা খাইসনা। চল।
ওর বন্ধুর বাসা... একসাথে নাকি প্রাইভেট পড়ে সুমন সারের বাসায়। নাম আশা। শালা তুই যাবি যা। আমারে কেন টানিস।
দুইবার বেল দেওয়ার পরে দরজা খুলল।
দরজা খুলার পর যে বের হয়ে আসলো তাকে দেখে মাসুদের মনে হল-
কাকে দেখলাম??? ও কী আসলেই এতো সুন্দর। নাকি বৃষ্টিতে চোখে ধান্দা লেগে গেছে।
বৃষ্টিতে পুরো ভীজেকাক হয়ে আছে ওরা । চূল থেকে টপটপ করে ফোটা পড়ছে। একফোঁটা পানি মাসুদের চোখে এসে পরল।
সেটা মুছতে মুছতে একচোখে আবার দরজার দিকে তাকাল সে। বৃষ্টিস্নাত বিকেলের কচি সবুজ পাতার মত স্নিগ্ধ একটা মুখ। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল সে। চুলের পানি আবার চোখে পড়ে সব ঝাপসা হয়ে উঠলো। ঝাপসা চোখ নিয়েই তাকিয়ে থাকল সে।
মনটা কেমন জানি ভাললাগায় ভরে গেল। ঐদিকে সেতু কথা বলছে-
-আরে??? তুমি এখানে??? হঠাৎ???
-না,মানে সাইকেল নিয়ে আসছিলাম। বৃষ্টি আসলো। তাই...
-হুম। আসো ভিতরে আসো।
সাথে উনি কে???
-ও হ্যাঁ। ও আমার বন্ধু... মাসুদ। আমরা তো পুরাই ভিজা। ঢুকবো???
-সমস্যা নাই। আসো...
এই প্রথম কোন মেয়েকে দেখে অন্যরকম লাগছে।
মনে মনে বলল মাসুদ- আমি মনে হয় গেলাম।
এর দুইদিন পর। এক বিকালে মাসুদ আর সেতুর কথা...
-সুমন সার মনেহয় ভালই পড়ায়। নারে???
-হুম।
-আমি চিন্তা করতেসি যাবো পড়তে।
-আসল কাহিনী বল।
-(একটু থতমত খেয়ে) আসল কাহিনী???মানে কি???আমি পড়তে পারিনা সারের কাছে???
-চান্দু আমি তো সবই বুঝি। আশারে তোমার মনে ধরসে।
-তুই যে আজেবাজে কথা কস, এইটা তার একটা প্রমান।
-লাথথি মাইরা প্রমানগিরি ছুটাইয়া দিমু।
কাল্কে যাবি আমার সাথে পড়তে।
সারের বাসায় গিয়ে কি পরিয়েছে কিছুই বুঝেনি মাসুদ। একটাই চিন্তা- এত সুন্দর মানুষ হয়???
রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছে। না, আর দেরি করা সম্ভব না। তারাতারি মনের কথাটা বলতে হবে।
-ইয়ে সেতু। তোর লগে আশার খাতির কেমন???
-হুম ভালই। কেন???
-না মানে, বুঝসনা??
-হুম বুঝছি, আর তোর কাজও আগাইয়া রাখসি।
-মানে???
-আশারে কইছি তুই যে অরে ভালবাসিস।
-তারপর...
-বলসে তরে সামনাসামনি দেখা করতে।
-ইয়াল্লাহ।
-ভয় পাওয়ার কিছু নাই। যা মনে হইল আশাও তরে লাভ করে।
এড় পরে সারের বাসায় আশার সাথে দেখা। সামনাসামনি কথা হল।
মাসুদের মনে হচ্ছিল আজ একটা কাহিনী হবেই। কিন্তু অবাক করে দিয়ে আশা বলল-
-এতো ভয় পাও কেন??? আমি কি তোমাকে মারবো নাকি?? আর হ্যাঁ। আমার উত্তর হল হ্যাঁ।
পায়ের নীচের মাটি মনে হয় সরে গেলো মাসুদের। ঠিক শুনছে তো???
ক্রিং ক্রিং ।
অসময়ে কে ফোন দিল আবার? সেতু...
-বল
-বাইর হবি আজকে???
-নাহ।
-আয়না বেটা। একসাথে লাঞ্চ করবো।
-নারে আরেকদিন।
আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোন রেখে দিল মাসুদ।
আবার সেই চিন্তা।
সপ্নের মত তিনটা বছর কেটে গেল। কিন্তু সময় তো ভাল থাকার পাত্র না। দুঃসময় এল, ভালভাবেই।
-ধরা খাইলা কেমনে?
-আম্মু আমার খাতার ভেতর তোমার চিঠি পাইসে।
-তো এখন???
-এখন আর কি??? রিলেশন রাখা সম্ভব না।
-ভাইবা বলস???
-হুম।
-ওকে ভাল থাইকো।
রাতের বেলা ফোন।
-এত সহজে ভুলতে তো পারব না।
তবে একটা কথা,পারিবারিক ভাবে আমি অবশ্যই চেষ্টা করবো আমাদের বিষয়টা নিয়ে। তুমি কি করবা???
আমি কিছু বলি না।
-যাই হোক, মাঝে মাঝে যোগাযোগ রাইখ????আর সিগারেটটা কমাইয়া খাইয়ো। বাই।
কি জানি বলতে চেয়েছিল মাসুদ সেদিন,আজঅব্দি সেটা বের করতে পারলনা ভিতর থেকে...
যোগাযোগ হত মাঝে মাঝে।
তবে আগের মত কথা হত না।
দুবছর পর হঠাৎ একদিন রাতে ফোন। রিয়াল আর বার্সার খেলা ভালই জমে উঠেছে তখন...
-কি কর???
-কিছুনা। খেলা দেখি।
-তোমরা সবাই আমাকে ভুল বুজতেস... একদিন সবাই আমাকে বুঝবা।
কিন্তু সেইদিন আর আমি থাকব না।
বলেই লাইন টা কেটে দিল। সাথে সাথে ফোন ব্যাক করল মাসুদ। বন্ধ। ফজরের ওয়াক্ত পর্যন্ত চেষ্টা করল।
পেল না।
দুই-তিনদিন পর তামান্নার ফোন পেয়ে ঘুম ভাঙল মাসুদের...কান্নাকাটি করছে।
-দোস্ত,আশা আর নাই।
-(লাফ মেরে ঊঠে) কি বলস আঊলফাঊল।
-হ্যাঁ দোস্ত, আজকে সকালে......
আর কিছুই শুনতে পায়নি ও ।
সেতুকে ফোন দিল।
-শুনছিস???
-হুম
-আয়।
আজকেও বৃষ্টি। কবরস্থানে ওরা এসেছে আশাকে কবর দিতে। বিশ্বাস করাটা কষ্টকর লাগছে।
কবরে মাটি দিতে গিয়ে চূল থেকে কয়েকফোটা পানি বেয়ে পড়ল। প্রথম দিনটাতে ফিরে গেল ও।
ভাগ্যিস ঐদিন বৃষ্টি ছিল। বন্ধুমহলে মাসুদ একটু শক্ত টাইপের। সহজে কাঁদেনা।
ঐদিন বৃষ্টিটাই ওর মানরক্ষা করল।
কি সহজেই না দিন চলে যায়। আজ এক বছর পার হয়ে গেলো। নাহ, অনেক হয়েছে। বৃষ্টির তো দোষ নেই।
হাত প্রসারিত করে নেমে গেলো মাসুদ। উদ্দেশ্য বৃষ্টিবিলাস করা।
পরম করুণাময়য় কখনো সামনে এসে ভালোবাসা প্রকাশ করেন না। প্রকৃতির অপরূপ সুন্দরের মাধ্যমে বুঝিয়ে দেন," হে মানবসন্তান, পৃথিবীর এই সমস্ত সুন্দর তোমাদের জন্য আমার তরফ থেকে উপহার। এই সুন্দরকে ভালোবাসো।
তাতেই আমাকে ভালোবাসা হবে। "
আজ বৃষ্টিতে ভিজতে গিয়ে সেই না বলা কথাটা বের হয়ে এলো। আস্তে করে মাসুদ বলে উঠলো " আশা, অনেক ভালোবাসি তোমাকে, সারাজীবন ভালোবেসে যাবো। "
আজকের বৃষ্টিটা বোধহয় আশার জন্য জন্মদিনের উপহার।
অনেক ভালো থেকো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।