আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এই ভাষার মাসেও আমরা পেলাম না স্বয়ংসম্পূর্ন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট

মুক্তমত প্রকাশের প্লাটফর্ম ব্লগ। তাই ব্লগে বসতে ভা্ল লাগে....। বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় ভাষার মাস শেষ হলেও শেষ হয়নি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের কাজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের বাস্তবায়ন পরিকল্পনা আর প্রতিশ্রুতির মধ্যেই আটকে আছে। সরকারি ভাবে বিরাট আকারে উদ্যোগ নেয়া হলেও এখনো পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি এর কার্যক্রম। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে এর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।

অথচ চলতি বছরে ভাষার মাস শেষ হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু শেষ হয়নি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের কাজ। ইতিমধ্যে এই ইনস্টিটিউটের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে সর্বমহলে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট নাম দেয়া হলেও নিজ ভাষা নিয়ে গবেষণার কোন উদ্যোগ নেই এখানে। নেই জনবল কাঠামো। নেই রিসার্চ সেল বা আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভাষা নিয়ে গবেষণার পরিকল্পনা থাকলেও নেই কোন গবেষণা ল্যাব। ইনস্টিটিউট সচল করার জন্য কমপক্ষে ৯১ জন জনবল দরকার। কিন্তু আছে মাত্র ৮ জন। এর মধ্যে একজন মহাপরিচালক, একজন পরিচালক, একজন উপ-পরিচালক, একজন কম্পিউটার অপারেটর, একজন একাউন্ট সহকারী ও দু’জন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। ২০০১ সালের ১৫ই মার্চ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কফি আনান। এরপর একে একে ১২টি বছর চললেও এখনও কাজই শেষ হয়নি। সরকার পরিবর্তনের পরিক্রমায় থেমে যায় ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম। অথচ এ প্রতিষ্ঠানের মুখ্য পৃষ্ঠপোষক সরকারের প্রধানমন্ত্রী। প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বললে তিনি মন্থর গতিতে কাজ করার কথা জানান।

অথচ বহু স্বপ্ন নিয়ে শুরু হয়েছিল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম। ২০০৩ সালের ৬ই এপ্রিল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। কিন্তু সরকার পরিবর্তন হওয়ায় ২০০৩ সালের ১লা অক্টোবর ইনস্টিটিউটের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। ২০০৮ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি আবারো ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১০ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ১২ তলা ভিতের উপর ৩ তলার নির্মাণ কাজ শেষ হয়।

ওইদিনই ইনস্টিটিউট ভবনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্বিতীয় পর্যায়ে ৪র্থ, ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলা নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ পর্যায়ে ৪র্থ তলায় আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র, রেস্ট হাউজ, অফিস স্টাফ, ৫ম তলায় ল্যাঙ্গুয়েজ ল্যাব, রিসার্চ সেল, শিক্ষকদের কক্ষ, শ্রেণীকক্ষ ও কম্পিউটার ল্যাব এবং ৬ষ্ঠ তলায় উপদেষ্টা অফিসসহ সব অফিস নির্মিত হবে। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পর অতিবাহিত হতে চললেও একটি গবেষণা কার্যক্রমও হয়নি। সংশি¬ষ্টরা জানান, ইনস্টিটিউটের প্রাণ হলো একাডেমিক কার্যক্রম।

এজন্য প্রয়োজন অবকাঠামো ও জনবল। কিন্তু এসবের কিছুই নেই। একজন কর্মকর্তা জানান, এসব ছাড়া কিছুই করা সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের মধ্যে রয়েছে- দেশে ও দেশের বাইরে বাংলা ভাষার প্রচার ও প্রসারে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও ক্ষুদ্র জাতিসমূহের ভাষা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা।

বাংলাসহ অন্যান্য ভাষা আন্দোলন বিষয়ে গবেষণা ও ইউনেস্কোর সদস্য দেশসমূহের মধ্যে ভাষা সংক্রান্ত ইতিহাস প্রচার। বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিকীকরণের লক্ষ্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ, বাংলা ভাষার উন্নয়নে গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গ্রহণ ও পরিচালনা, ভাষা ও তথ্য প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন। ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি সংরক্ষণ। বিভিন্ন ভাষা বিষয়ে অভিধান বা গ্রন্থ প্রকাশ এবং হালনাগাদকরণ।

পৃথিবীর সব ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর ভাষার লেখ্যরূপ প্রবর্তন। বাংলা ভাষাসহ পৃথিবীর সব ভাষার বিবর্তন বিষয়ক গবেষণা। ভাষা বিষয়ে গবেষণা-জার্নাল প্রকাশনা, সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন। ভাষা বিষয়ে গবেষণার জন্য দেশী-বিদেশীদের ফেলোশিপ প্রদান। ভাষা ও ভাষা বিষয়ক গবেষণায় অবদানের জন্য দেশী ও বিদেশীদের পদক ও সম্মাননা প্রদান।

ভাষা বিষয়ে শিক্ষা ও গবেষণার জন্য বৃত্তি প্রদান। ভাষা বিষয়ে আন্তর্জাতিক ভাষা প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও সংশি¬ষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা। সরকারের অনুমোদ সাপেক্ষে কোন রাষ্ট্র, দেশী বিদেশী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করা। বিভিন্ন ভাষা ও বর্ণমালার জন্য একটি আর্কাইভ নির্মাণ, সংরক্ষণ ও পরিচালনা করা। ভাষা বিষয়ে জাদুঘর নির্মাণ।

আন্তর্জাতিক মানের লাইব্রেরি ও গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনা। ভাষা বিষয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়া চ্যানেল স্থাপন। পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার ইতিহাস, নমুনা ও তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করা। ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক জীনাত ইমতিয়াজ আলী বলেন, এটি আমাদের জাতীয় প্রতিষ্ঠান। নতুন হলেও আমাদের মধ্যে আশা জাগিয়েছে।

আমরা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে বিশ্বের সকল মাতৃভাষা ও জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি চর্চার একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান হিসেবে একে দেখতে চাই। তিনি বলেন, আমরা জানি মন্থর গতিতেই ইনস্টিটিউটের যাত্রা শুরু করেছে। এই সীমাবদ্ধতা থেকে আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটকে মুক্ত করতে চাই।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।