শারদশশীর অনন্ত অপেক্ষায় তোর চোখের সবুজ রঙ আকাশনীল হয়ে গেলে ঠিক ধরে নিস আমি হারিয়ে গেছি ঘাসেদের দলে...
এবারে কেনা বইয়ের একাংশ
বইমেলা শেষের পথে প্রায়। এখনো মানুষের উপচে পড়া ভীড়। বইমেলায় যেতে ভালো লাগে বেশ। প্রতিবারই অনেক বার যাওয়া হয়। এবার গিয়েছি নয় বার।
আরো হয়তো একবার যাবো কাল-পরশু। এতোবার বই মেলায় যাবার কারণ এখানে আসলে বেশ ভালো লাগে আমার। পরিবেশটা ক্যানো যেনো খুব ফেভার করে। বইমেলায় সবধরণত সব রকম মানুষজন পাওয়া যায় না। এটা ভালো লাগার একটা কারণ হতে পারে।
আমি আবার ক্রাউডে খুব বেশি মজা পাইনা।
মূল কথায় যাবার আগে চট করে বইমেলা সম্পর্কে কিছু কথা বলে নেয়া যেতে পারে। এবারে বইমেলায় স্টল বিন্যাস বেশ ভালো লেগেছে আমার। হাটাচলা করে আরামে বই দেখা যাচ্ছে। যদিও উইকেন্ডে তিল ধারণের যায়গা থাকেনা এটাও সত্যি।
এবারে ইনকোয়্যারী সার্ভিস ও আগের চেয়ে অনেক ভালো কাজে দিচ্ছে। জিজ্ঞেস করার আগেই ইনফরমেশন পাওয়া যাচ্ছে একরকম! নিঃসন্দেহে ভালো ব্যপার। বইমেলার বাইরে কোয়ান্টামের রক্তচোষা ভ্যাম্পায়ার গুলো বাদে বাকি সবকিছু মোটামুটি ভালোই হয়েছে এবার।
এবারের বই মেলায় দারুণ দারুণ কিছু বই এসেছে। অনেক কেই আগ্রহ নিয়ে বই কিনতে দেখেছি।
কিন্তু সেসব ছাপিয়ে একতরফা ভাবে ডোরেমন এর কমিক আর বই বিক্রি দেখে মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেলো। বইমেলার বেস্টসেলার বইয়ের নাম ডোরেমন! ড্যাম ম্যান! তাও মন্দের ভালো অধিকাংশ বইগুলোকে বাংলা করে ছাপা হয়েছে।
বইমেলায় সবচেয়ে ভীড়-ভাট্টা কম থাকে লিটল ম্যাগ চত্বরে। এখানে আড্ডা দিয়ে তাই বেশ শান্তি আছে! এখানেই দেখা হয়ে গেলো শশী হিমু ভাই, অপরিণীতা আপু সহ আরো বেশ কিছু ব্লগারের সাথে। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে ওনাদের কে বেশি সময় দিতে পারিনি।
পরে জানলাম ওনারা বেশ ভালো আড্ডা দিয়েছেন। এতদিন মেলায় গেলেও ভালোভাবে আড্ডা দেয়া হয়েছে কেবল এক দিনই। রানা দা'র বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হলো যেদিন, ২২ তারিখে। বাপ্পা দা এসেছিলেন মোড়ক উন্মোচন করতে। ম্যাশ ভাই ও তন্ময় ভাই এসেছিলেন, এসেছিলেন "ডুন্ট ডিস্টাপ" বিজি ম্যান সোহান ভাই ও, উইথ ভাবী উনি অবশ্য বই কিনে অটোগ্রাফ নিয়েই ভেগে গেলেন! রানা দা ছিলেন বাপ্পা দার সাথে, আমি আর ম্যাশ ভাই বইমেলাটা ঘুরে দেখলাম।
ম্যাশ ভাই বেশ কিছু বই কিনলেন। সেখানে আরেক ঘটনা। আমি তো ভাবতাম ছোটরাই কেবল ডোরেমন পছন্দ করে। কিন্তু মাওলা ব্রাদার্সে বই কিনতে গিয়ে আমি আর ম্যাশ ভাই ডোরেমন নিয়ে কথা বলছিলাম তখন একটা ছেলে ডোরেমন কে ডিফেন্ডই করে ফেলল! আজিব ঘটনা। ছেলেটার বয়স ১৬-১৭ হবে।
তার কাছে নাকি ডোরেমন ভালোই লাগে! এরপর আবার লিটল ম্যাগে ফিরে রানা দা'র সাথে আড্ডাটা ভালোই জমল। আরো কিছু ব্লগার এসেছিলেন। বইমেলায় হামা ভাইয়ের সাথে দেখা হলো না এট একটা বিশেষ দুঃখজনক ঘটনা! ওনার বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের দিন যেতে পারিনি। পরে বই সংগ্রহ করেছি ঠিকই কিন্তু একটা অটোগ্রাফ পেলে মন্দ হতো না! উনি শুক্রবার ছাড়া আসেন না আর আমি শুক্রবারে যাই না! এত ভীড় ঠেলে শুক্রবারে যেতে ইচ্ছে করে না!
এবারে কেনা বইয়ের আরো কিছু
ভীড় ঠেলে ধুলোবালি হজম করে কিছু বই কেনা হয়েছে। নামগুলো নিচে দিচ্ছিঃ
স্টিফেন কিং এর গল্প ৩ - হাসান খুরশীদ রুমী সম্পাদিত - ঐতিহ্য
শুদ্রমুখে রুদ্র বচন - আখতারুজ্জামান আজাদ - বাসভূমি
দুস্টু বাহিনী - রোহিত হাসান কিছলু - কাকলী
হা হা প গে - অনিক খান ও সৈয়দ রাকিব সম্পাদিত - উন্মাদ
সামরিক কবি, বেসামরিক প্রেমিক - আখতারুজ্জামান আজাদ - বাসভূমি
প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত - হাসান মাহবুব - কাঠপেন্সিল
আজ তোমার মন খারাপ মেয়ে - রানা - অন্বেষা
মেঘের ওপর বাড়ি - হুমায়ূন আহমেদ - অন্যপ্রকাশ
আমরা কেউ বাসায় নেই - হুমায়ূন আহমেদ - মাওলা ব্রাদার্স
কেপলার টুটুবি - মুহম্মদ জাফর ইকবাল - তাম্রলিপি
না মানুষি জমিন - আনিসুল হক - সময়
গ্রিক লিজেন্ড - ক্যাথেলিন লাইন্স সম্পাদিত - ঐতিহ্য
ডিজিটাল ফটোগ্রাফি - সুদীপ্ত সালাম - আমার প্রকাশনী
দেশী বিদেশী ঘরোয়া রান্না - সিদ্দিকা কবীর - শিমুল
মৌনমুখর বেলায় - রেজওয়ান তানিম - জাতীয় গ্রন্থ প্রকাশ
কিশোর গল্পসমগ্র - শাহরিয়ার কবির - চারুলিপি
একাত্তরের দিনগুলি - জাহানারা ইমাম - সন্ধানী
বিবর্তন - রুমানা বৈশাখী - জাগৃতি
একজন স্বদেশ চলে গেলে কার কি আসে যায় - স্বদেশ হাসনাইন - ভনে
সে এক আশ্চর্য জলপ্রপাত - মাহী ফ্লোরা - ভনে
চলচিত্র যাত্রা - তারেক মাসুদ - প্রথমা
কালাশনিকভের গোলাপ - ওয়াসি আহমেদ - শুদ্ধস্বর
পারভার্ট - ফয়সল কবীর চৌধুরী - শৈলী
সোনামুখী সুঁইয়ে রুপোলী সুতো - আবদূর রাজ্জাক শিপন - শুদ্ধস্বর
বাংলা ব্লগের ইতিবৃত্ত - একরামুল হক শামীম - শুদ্ধস্বর
ঘৌড়দৌড় - সরসিজ আলীম - সাম্প্রতিক
সূর্য্যের হাত পা - শাহান কবন্ধ - আজব
মেঘেরা উদ্বাস্তু হও, এখানে থিম পার্ক হবে - অভ্র পথিক - শুদ্ধস্বর
চতুর্মাত্রিক ব্লগ সংকলন - রকমারি
এছাড়া একসময়ের দারুণ প্রিয় তিন গোয়েন্দা আর মাসুদ রানার তিনটে করে বই কেনা হয়েছে।
পুরনো বই। নতুন গুলো পড়ে আর মজা পাইনা।
আরো কিছু বই লিস্টে ছিলো, কিন্তু আমি এখন নিঃস্ব! টাকা পয়সা না! তাই কারো বই বাদ গেলে নিজ দ্বায়ীত্বে একটা সৌজন্য সংখ্যা দিয়ে যাবেন। নাহলে ভালো হবে না!
আর সামুর ব্লগারদের খবর আছে! বলি মেলা কি এই একটাই ছিলো নাকি!!! সবাই এত্তগুলো বই বের করেছেন কোনটা ছেড়ে কোনটা কিনি! আগামী বইমেলায় আপনাদের প্রকাশিতব্য বইগুলো থেকে এক কপি করে আমার জন্য বরাদ্দ রাখবেন, নচেৎ মামলা ঠুকে দেবো!
এবারে প্রকাশনী গুলোর মধ্যে শুদ্ধস্বরের নাম আলাদা করে বলতে চাই। ওদের বইয়ের কালেকশন দারুণ।
এছাড়া প্রেজেন্টেশন, বাধাই, অলঙ্করণ সব যায়গাতেই দারুণ মুন্সিয়ানার ছাপ। বইয়ের দাম কমবেশি বেড়েছেই। তবে বইয়ের দাম সবচেয়ে বেশি প্রথমা প্রকাশনী তে।
বইমেলা নিয়ে বাংলা একাডেমীর কাছে কিছু প্রস্তাবনা আছে আমার। আগামী বইমেলায় শিশুদের উপযোগী করে বাংলা ভাষা আর একুশে ফেব্রুয়ারীর সঠিক ইতিহাস নিয়ে ভালো কিছু প্রামাণ্যচিত্র তৈরী করা যেতে পারে।
সেগুলো মেলায় সারাক্ষণ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতে হবে। ওদের কে সঠিক ইতিহাস টা জানানো জরুরি। মুখের কথা বা ছাপার কালিতে না রেখে চলচিত্রের মাধ্যমে শেখালে শিশুরা বেশি আগ্রহী হবে বলে আমি মনে করি। আর বইমেলায় একটা অংশে প্রতিদিন মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলন নিয়ে তৈরী বিভিন্ন চলচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা যেতে পারে। টিকেট কেটে হলেও অনেকেই এতে অংশ নেবে।
উইকেন্ডে মানুষের উপচে পড়া ভীড় সামলাতে অতিরিক্ত প্রবেশ ব্যবস্থা রাখা উচিত। আর মেলায় বাথরুমের ব্যপারটা খেয়াল রাখা উচিত কর্তৃপক্ষের। বইমেলার বাইরে প্রবেশপথে কোন কোন সংগঠন থাকতে পারবে সেটা লক্ষ্য রাখা দরকার। ব্লাড ক্যাম্প হলে রক্তগুলো যেন যথাযথ পরীক্ষার পর নিশ্চিত হয়ে সঠিক উপায়ে সংরক্ষণ করা হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার। সর্বোপরী মেলার নিরাপত্তা রক্ষায় ক্লোজ সার্কিট সার্ভিলেন্স সিস্টেম রাখা যেতে পারে।
সব শেষে এসে একটা টাস্ক। বানান করে পড়ুনঃ
যারা বইমেলায় বইয়ের বদলে বউ খুঁজতে যায় তারা হয় আবাল।
যারা বেশ কয়েক বার বইমেলায় যায় কিন্তু কোন বই না কিনে ফিরে আসে তারা হয় আবাল।
যারা অন্য যেকোন মেলায় ধেই ধেই করে নাচতে নাচতে যায়, কিন্তু বইমেলার কথা শুনলে নাক সিঁটকায় তারা হয় আবাল।
যারা বইমেলায় বাচ্চাদের নিয়ে যায় এবং দেশী কোন বই কিনে দেবার বদলে শুধু ডোরেমনের বই কিনে দেয় তারা হয় আবাল।
যারা বইমেলায় পুকুরপারে বসে ডেটিং করার জন্যে যায় তারা হয় আবাল।
* কিছু মানুষের কাজ কর্মে বিরক্ত হয়ে উপরের কথাগুলো লিখেছি।
* শব্দচয়ন ভালো না লাগলে দুঃখিত।
* সংযোজন করতে পারেন।
* বাচ্চাদের পড়ার দরকার নাই।
আর তিন দিন পরই শেষ হয়ে যাচ্ছে মেলা। মেলায় যাদের বই এসেছে তাদের সবাকেই অনেক অভিনন্দন ও শুভকামনা। বই হোক নিজেকে জানবার, দেশকে বদলাবার হাতিয়ার। একুশের চেতনা জাগ্রত হোক সবার মাঝে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।