আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কী বলব এদের?

নানা কারণে মন মেজাজ ভালো না। আজকের এই লেখাটা অনেকদিন ধরে লিখব ভাবছিলাম। আজ যখন লিখতে বসেছি, ঠিক তক্ষুণি মেজাজ খারাপের আরও কিছু কারণ ঘটে গেল। লেখার উপর তার প্রভাব পড়তে পারে, সেজন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। বিষয়টা হল গর্ভপাত করা নিয়ে।

আমাদের দেশে অনেক মহিলা এমন আছে (মহিলা বললাম, মা বললাম না, এরা 'মা' নামের যোগ্য না), যারা গর্ভের সন্তান অবলীলায় নষ্ট করে। কারণ হিসেবে বলে, আমার তো আগের বাচ্চা অনেক ছোট, এখুনি আরেকটা বাচ্চা নিব না, অথবা, আমার বাচ্চা-কাচ্চারা সবাই বড় হয়ে গেছে, এখন আর বাচ্চা নিব না। আমার প্রশ্ন, তাহলে নিয়েছ কেন? পেটের ভিতর তো হাওয়া থেকে এসে বাচ্চা ঢুকে যায়নি। তখন তাদের উত্তর, বুঝতে পারিনাই, ভুলে ভুলে হয়ে গেছে। মনে হয় যেন এটা আদিম যুগ, জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বলে কিছু জানা নেই।

তাই বাচ্চা না চাইলে গর্ভের সন্তান নষ্ট করতে হবে। নষ্ট করা শব্দটা আমার পছন্দের না। এটাকে বলে খুন করা। নিজের নাড়ীর সাথে বাঁধা নিজের সন্তান খুন। তাও সেটা নিজের ভুলের জন্য।

অথচ চাইলেই এটা এড়িয়ে যাওয়া যায়। জন্মনিয়ন্ত্রণের অনেক রকম ব্যবস্থা এখন আছে। যার যেটা পছন্দ বা যার জন্য যেটা উপযুক্ত, সে সেটা গ্রহণ করতে পারে। তার উপর সরকার থেকে সব ধরণের ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেয়ার ব্যবস্থা করা আছে। তারপরও এই মহিলাদের পছন্দের ব্যবস্থা হল গর্ভপাত।

এতে শুধু একটা বাচ্চার জীবনই ধ্বংস হয় না, সেই সাথে ঐ মহিলা যাকে বাচ্চার মা বলবে অন্যরা, তার জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। নানা ধরণের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। জরায়ু ছিদ্র হয়ে যেতে পারে, সেপটিক হয়ে যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে মৃত্যুও হতে পারে। তবু তাদের ঐ এক কথা।

ব্যবস্থা নিতে পারে না, ঐসব ভালো লাগে না। এটা ঠিক যে জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে যেগুলো হরমোনাল, সেগুলো ব্যবহার করতে গেলে শুরুতে শুরুতে কিছু সমস্যা হয়, যেমন মাথা ঘোরা, বমি লাগা, হঠাৎ গরম লাগা (হট ফ্লাশ)। কিন্তু এগুলো এমন কোন বড় ধরণের সমস্যা না, আর ধীরে ধীরে শরীরে মানিয়েও যায়। বিশেষ করে এখনকার লো ডোজ পিলগুলোতে এ ধরণের লক্ষণ খুবই সামান্য হয়। কিন্তু এটুকু কষ্টও তারা সহ্য করতে পারে না।

তার চেয়ে সন্তান গর্ভে এলে তাকে খুন করে ফেলাটাই সহজ মনে হয় তাদের কাছে। কিছু মহিলার হয়তো সমস্যা খুব বেশি হয়, কোন হরমোনাল ব্যবস্থাই শরীরে মানায় না। সেক্ষেত্রে স্বামীকে ব্যবস্থা নিতে হয়। কিন্তু সে আশা করাও মনে হয় নিষেধ। স্ত্রীর গর্ভে সন্তান এলে সেটার কী ব্যবস্থা করতে হবে সেটা নিয়ে তাদের কোন মাথাব্যথা নেই।

সন্তানকে খুন করতে গিয়ে স্ত্রীর জীবন গেলেও সমস্যা নেই, আরেকটা বিয়ে করে ফেললেই হল। এমনও মহিলা আমার কাছে এসেছে যে জীবনে কতবার গর্ভপাত করিয়েছে নিজেও হিসাব রাখতে পারেনি। এখন চরম রক্তশূণ্যতাজনিত লক্ষণ নিয়ে ডাক্তারের কাছে এসেছে। ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম এই মহিলার কথা শুনে। এখন এরকম মহিলারা, যারা ওষুধের দোকান থেকে নিজেরা ওষুধ নিয়ে খেয়ে গর্ভপাত করে, কিন্তু কিছু অংশ জরায়ুতে রয়ে যায়, এরা আমার কাছে ঐ রয়ে যাওয়া অংশটুকু পরিষ্কার করাতে এলে তাদের একটা ছোট শাস্তি দিয়ে দিই।

এই শাস্তি একটা নিষ্পাপ শিশুকে হত্যার শাস্তি হিসেবে কিছুই না। তবু কিছুটা হলেওতো হয়, অন্তত এই শাস্তি পাওয়ার পর ঐ মহিলারা আমার কাছে মাফ চেয়ে বলে, আপনার পায়ে পড়ি, আর কোনদিন এমন কাজ করব না। আমি বলি, আমার কাছে মাফ চাওয়ার দরকার নাই, নিজের সন্তানের কাছে মাফ চাও। লেখাটা গুছিয়ে লিখতে চেয়েছিলাম। পারলাম না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।