'কিছু মাতাল হাওয়ার দল... শুনে ঝড়ো সময়ের গান... এখানেই শুরু হোক রোজকার রূপকথা... / কিছু বিষাদ হোক পাখি... নগরীর নোনা ধরা দেয়ালে কাঁচ পোকা সারি সারি... নির্বান নির্বান ডেকে যায়...' আইনস্টাইন আংকেলের সাথে আমার খাতির বেশ ভালো। আমি পদার্থ বিজ্ঞানের আগা মাথা কিছুই বুঝি না। তারপরেও নতুন কিছু আবিষ্কার করলে আংকেল আমাকে সব বোঝানোর চেষ্টা করেন।
আমার মাথায় কিছুই ঢুকে না। তবে যেখানে মাথা নাড়ানো দরকার সেখানে মাথা নাড়াই, যেখানে চোখ সরু করা দরকার সেখানে চোখ সরু করি।
বেশিরভাগ সময়ই এসব করতে গিয়ে প্যাচ লাগিয়ে দেই। যেমন যে যায়গায় এসে চোখ সরু করার কথা সেখানে এসে দেখা যায় আমি "হে হে" করে হেসে দিয়েছি।
আমার বোকামী দেখে আইন্সটাইন আংকেল বেশি রাগ করেন না। তবে মাঝে মাঝে ভ্যাংচি কাটেন এভাবেঃ
আংকেল হাসিখুশি মানুষ। রসিকও বটে।
এতো জটিল জটিল জিনিষপত্র নিয়ে গবেষণা করেন, কিন্তু তাকে খুব একটা চিন্তিত দেখা যায়না। তবে কিছুদিন যাবত উনাকে বেশ চিন্তিত মনে হচ্ছে। আমি মূর্খ ছেলে, তাকে তার চিন্তিত থাকার কারণ জিজ্ঞেস করিনি সাহস করে। উনি বিজ্ঞানী মানুষ। চিন্তা ভাবনা তো করবেনই।
উনি না করলে করবেটা কে?
ভেবেছিলাম এসব নিয়ে উনাকে ঘাটাবো টাটাবো না। কিন্তু একদিন সন্ধ্যায় আইন্সটাইন নিজেই আমাকে ডাকলেন, - "রাজি, একটা সাংঘাতিক জিনিষ আবিষ্কার করে ফেলেছি মনে হয় রে!"
আমি অত্যান্ত কৌতুহলী ভঙ্গীতে জিজ্ঞেস করলাম, - "কী? কী?"
হালকা উদাস গলায় আইন্সটাইন আংকেল বললেন, - "সময় ধ্রুব নয় হে বালক। এটা একটা আপেক্ষিক ব্যাপার। "
আমি কিছুই বুঝলাম না। তারপরেও বললাম, "কী সাংঘাতিক! কী সাংঘাতিক!!"
- দাড়া তোকে বুঝাই।
আংকেল খাতা আর কলম নিয়ে আমার সামনে বসলেন।
-ধর দুটি জড় কাঠামো... এর মাঝে একটা স্থির। একটির সাপেক্ষে অন্যটি ধ্রুব বেগে গতিশীল। "
হালকা থামলেন আইনস্টাইন - "কি রে! কিছু বুঝলি?"
আমি কিছুই বুঝলাম না, তারপরেও বললাম,- "ক্লিয়ার। একদম ক্লিয়ার।
আপনে বলতে থাকেন। "
- গুড বয়। তাহলে এবার ধর c হচ্ছে আলোর গতি।
আইনস্টাইন আংকেল কিছুক্ষন অংক করলেন। সব শেষে একটা অত্যান্ত জটিল সমীকরণ লিখলেন।
আমি বরাবরের মতোই কিছুই বুঝলাম না। কিন্তু অনেক জোরে মাথা নাড়ালাম। আমার মাথা নাড়ানো দেখেই হয়তো আইনস্টাইন আংকেল জিজ্ঞেস করলেন "কী বুঝলি বল দেখি!"
খাইছে! এভাবে বিপদে পড়ে যাবো বুঝিনি। আমি আমতা আমতা করা শুরু করলাম।
আমার অবস্থা দেখে আইনস্টাইন আংকেল আবার ভ্যাংচি কাটলেন।
তার সেই বিখ্যাত ভ্যাংচি।
তারপর বললেন, - "তুই কিছুই বুঝিসনি গাধা। দাড়া। সহজ করে বলি। ধর, তুই আর আমি জমজ ভাই..."
আমি কপাল কুচকে বললাম - "আপনি আমি যমজ ভাই হতে যাবো কোন দুঃখে?"
- "আরে বলদ ধরে নে না! এখন ধর তুই আলোর কাছাকাছি গতির কোন রকেটে করে পুরো এক বছর মহাশূন্যে চক্কর দিয়ে আসলি।
এসে দেখবি আমি বুড়া হয়ে গেছি। কিংবা আমি হয়তো বুড়ো হতে হতে মরে গেছি। আপেক্ষিক সময় তত্ত্বের এটাই হলো মুল কথা। "
আমি সব বুঝে গেছি এমন ভাব করে বললাম, "আপনি তো এমনিতেই বুড়ো। বুড়োরা তো আগে আগে মরবেই।
সোজা হিসাব। এখানে আপেক্ষিক ফাপেক্ষিকের কী হলো?"
আইনস্টাইন এবার বিরক্ত হলেন মনে হয় কিছুটা।
- তোর মাথায় কী গোবরও নেই নাকি রে বলদ? এই জিনিষ বুঝিস না ক্যান!"
আইনস্টাইন আমার দিকে হতাশ ভঙ্গিতে তাকালেন এভাবেঃ
আমি লাজুক ভঙ্গিতে হাসলাম।
আইনস্টাইন আংকেল আবার বুঝানো শুরু করলেন। আমি তার এনার্জি দেখে অবাক হলাম।
বিজ্ঞানীদের এতো ধৈর্য্য!
- আচ্ছা তোকে সহজ করে বলি শোন"
- আচ্ছা বলেন।
- ধর তুই কোন সুন্দরী মেয়ের পাশে বসে আছিস। তখন তোর এক ঘন্টা সময়কে মনে হবে পাঁচ মিনিট। আবার যদি আগুনের উপর হাত রাখিস তাহলে পাঁচ মিনিট সময়কে মনে হবে এক ঘন্টা। এটাই হলো আপেক্ষিক সময় তত্ত্ব।
এবার বুঝলি?"
আমি চোখে বড় বড় করে বললাম, - "এবার বিষয়টা পুরো ক্লিয়ার। আসলে ঘড়ি নষ্ট থাকবে। এ জন্যই এক ঘন্টাকে মনে হবে পাঁচ মিনিট। আর পাঁচ মিনিটকে মনে হবে এক ঘন্টা। হে হে।
"
আমার কথা শুনে গর্জে উঠলেন আইনস্টাইন আংকেল।
"- খামোশ! তোকে আমি আর বুঝাতে পারবো না। আমার দ্বারা তোকে এই জিনিষ বুঝানো সম্ভবও না। তোকে ২০১২ সালে এই জিনিষ বুঝিয়ে দিবেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ৪৮ ঘন্টা যে কতো লম্বা হতে পারে হাড়ে হাড়ে টের পাবি তখন।
এখন আমার সামনে থেকে ফুট। "
*********************************************************************
>>> ঘুরে আসতে পারেনঃ
** স্বল্পদৈর্ঘ্য বাংলা সাইন্স ফিকশনঃ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, দা হোম মিনিস্টার
** টান টান উত্তেজনাময় গল্পঃ হিমুর হাতে কয়েকটি নোবেল প্রাইজ
** এক কপি রাখলাম পার্সোনাল ব্লগে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।