আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টু ডে ইজ ২১শে ফেব্রুয়ারী - হাউ ফানি!

ইলম অর্জনের জন্য বাবা আমাকে ভর্তি করলেন কওমী মাদরাসায়। যেহেতু বাংলা ভাষায় এলেম নেই তাই আমাদেরকে কষ্ট করে শিখতে হলো উর্দু এবং ফার্সি! অর্থাৎ কোরান-হাদিসের মর্মবাণী বুঝার জন্য বা আরবী ভাষা আয়ত্বকরার জন্য প্রথমে শিখতে হলো উর্দু-ফার্সি! বাংলা ভাষায় ইলমের দৈন্যতা কতো প্রকট তা টের পেলাম কৈশোরে মাদরাসায় গিয়ে। অবশ্য এখন যুগ পাল্টাইছে! ইলমের অনেক শাখা-প্রশাখা বাংলায় রূপান্তরিত হয়েছে! তবে বাংলা ইলমে 'নূর' আছে কি-না তা আল্লাহ মালুম! কৈশোরে যখন হুজুরদেরকে বলতাম, এই কিতাবগুলো যদি বাংলায় পড়তাম তাহলে তো আমরা সহজে বুঝতে পারতাম বা হৃদয়ঙ্গম করতে পারতাম। তখন বলা হতো, ইলমে নূর থাকবে না! মানুষ তার অযোগ্যতাকে কতোভাবেই না ঢেকে রাখার চেষ্টা করে। উর্দু তো একটি জাতির ভাষা।

সেই জাতির পণ্ডিতগণ কোরান-হাদিসের ইলমকে মাতৃভাষায় প্রকাশ করে আপন জাতিকে বুঝার জন্য সহজ করে দিয়েছেন। তাতে কি ইলমের নূর আকাশে উঠেগেছে? নাকি তাদের সন্তানেরা বড় বড় আলেম হয়েছে? শত শত বছর পূর্বে তাদের আলেমগণ যা করেছেন তা আমাদের আলেমগণেরও করা উচিত ছিল। আমি কওমী মাদরাসার বিরোধিতা করছি না। তবে আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান বা বুঝ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে যা দেখেছি তাতে মনে হয়েছে আমাদের দেশের আলেমগণ অনেক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করে ফেলেন! এ তো মুদ্রার এক পিটের কথা বললাম। আরেক পিটের অবস্থাও খুব যে ভালো তা না।

বরং তারা আরো জটিল এবং কঠিন। তারা রেডিও-টিভিতে একুশের চেতনা বিতরণ করে বেড়ান আর দিন রাত ইংলিশে জাবর কাটেন! এমন কি একুশের অনুষ্ঠানেও ইংরেজীতে বয়ান দেন! হায়রে চেতনা! দেশের এক প্রধান নেতা গতকাল বললেন, একুশের চেতনাবিরোধীরা স্বাধীনতার শত্রু অথচ তার পরিবারের অর্ধেক সদস্য যেভাবে বাংলা বলেন তাতে মনে হয় বাংলা ভাষা করাতের চিপায় পড়ে ক্যাঁত-কুঁত করতেছে! এই যদি হয় চেতনাধারীদের অবস্থা তাহলে যাদের মধ্যে চেতনা নেই তাদের অবস্থা তো আরো শোচনীয় মানে হিন্দির রঙ্গীন জিন্দেগী! আমাদের দেশের ইংলিশওয়ালারা তো ইংলিশ না জাননেওয়ালাদেরকে অচ্ছুত মনে করে। তারা দূরত্ব বাজায় রেখে চলে। কি জানি বাবা পিছনে আবার বাংলা মূর্খদের স্পর্শ লেগে 'জাত' চলে যায়! বিপদে পড়লে আবার ঠিকই বাংলা বলে, তবে এমনভাবে উচ্চারণ করে যা শুনলে মনে হয় তাদের জন্ম হইছে ইংরেজীতে! এই শ্রেণীটাই আবার আমাদের দেশের উন্নয়নের চাবি কোমরে লটকিয়ে মোড়লিপনা করছে! বাংলার নাড়ীর সাথে যাদের সম্পর্ক নেই তারা বাংলার উন্নয়ন করবেন কেমনে? তারা দু'টাকা কামাই করলে তিন টাকা রেখে আসেন দেশের বাইরের কোনো ব্যাংকে! ভাবখানা এমন যে বাংলাদেশটা তাদের বাথান! এরা এবং এদের পরিবারবর্গের সদস্যরা ইংলিশ মিডিয়ামে জীবন যাপন করেন। পোষাকে-পরিচ্ছদে, চলনে-বলনে, খাবার-দাবারে ইংলিশ ষ্টাইল।

হাল জামানায় মোম্বে ষ্টাইল! অথচ একুশ এলে সালাম-বরকত-জব্বারদের জন্য এদের মায়া কান্না দেখলে গা জ্বালা করে। শহীদ মিনার নিয়ে এদের মাতামাতি আমার কাছে ভণ্ডামি মনে হয়। একুশের চেতনা কি শুধু শহীদ মিনারে সীমাবদ্ধ? তাও আবার একদিনের জন্য? সারা বছর শহীদ মিনার থাকে গরু-ছাগল আর গঞ্জিকাসেবীদের দখলে! জাতি হিসেবে আমাদের মানসিক দৈন্যতা ভয়ঙ্কর। একজন বিদ্যান, যত বড়ো পণ্ডিতই হউক না কেন কথায় কথায় ইংরেজী না বললে আমরা তাকে সম্মান করি না! আবার একজন ক অক্ষর গো মাংস দু'চার লাইন মুখস্ত ইংরেজী বললে আমরা লাফিয়ে উঠে সেলূ্ট করি! ভিতরে 'মাল' থাকুক আর নাই থাকুক একজন বাচাল কথায় কথায় উর্দু-ফার্সি-আরবী আওড়ালে আমরা বলি বাব্বা কত্তো বড়ো মাওলানা! অথচ একজন বড়ো আলেম এসব না আওড়ালে আমরা পাত্তা দেই না! একুশ আমাদেরকে মায়ের ভাষাকে ভালোবাসতে শেখায়। দেশকে ভালোবাসতে শেখায়।

দেশের মানুষকে ভালোবাসতে শেখায়। দূর্নীতিকে ঘৃণা করতে শেখায়। হীনমন্যতা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে মাথা উঁচু করে দাড়াতে শেখায়। গোলামীর প্রাচীর ভেঙ্গে স্বাধীনচেতা ব্যক্তি হিসেবে বুকটান করে দাড়াতে শেখায়। একুশ সকলের অধিকার নিশ্চিত করতে শেখায়।

সকল অন্যায়-অবিচার বুকের রক্ত দিয়ে প্রতিহত করতে শেখায়। একুশ আমাদেরকে ধর্মীয় অধিকার রক্ষা করতে শেখায়। আসুন আমরা সবাই একুশের এসব চেতনার রঙ্গে রঙ্গীন হই। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।