ফয়েজ ভাই চলে গেছেন। সাংবাদিক কলামিস্ট ফয়েজ আহমেদ। আমরা যারা আজ নবীন, দু-একপাতা লিখেই নিজেদের সাংবাদিক বলে দাবি করি, তারা অনেকেই হয়তো প্রবাদতূল্য এই মানুষটিকে সামনাসামনি দেখিনি। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি বেশীরভাগই আমরা নামটির সাথে পরিচিত। আমাদের মতো মানুষদের সামনে যারা পাহাড়সম অভিজ্ঞতা, সাহসী-নির্ভীক আর সৎ সাংবাদিকতার উদাহরণ হিসেবে ছিলেন বা আছেন তাদেরই একজন এই ফয়েজ আহমেদ।
অনেকটা নিরবে, নিভৃতে চলে গেলেন তিনি।
সকালে যখন তার চলে যাওয়ার খবরটা পেলাম, তখন থেকেই উসখুস করছে মনটা। আর কিছু করতে পারি আর না পারি দু-এক লাইন এলিজি-তো লিখতে পারি তার জন্য। কিন্তু মনটা দমে গেলো ফেবুতে বন্ধু সাংবাদিক কাম সাহিত্যিক দেবব্রত মুখোপাধ্যয়ের একটি স্ট্যাটাস দেখে। দেবু বলছে :'ফয়েজ আহমেদ, শ্রদ্ধভাজনেষুর বিদায়ে আজ অনেকে টেবিল চাপড়াবেন; শোকবাণী আসবে বিস্তর।
চাইকি দু একটা সভা-সেমিনারও হবে। আজ ফয়েজ আহমেদের দরদীতে এক দিনে ভরে উঠবে উঠোন; সে উঠোনে খ্যাত-অখ্যাত বুদ্ধিজীবিরা ফ্যানা তুলবেন।
আসলে শেষ বেলায় কেমন ছিলেন বৈচিত্রময় জীবন কাটানো মানুষটি?'
একটু কৌতুহলী হলাম। কারন, স্ট্যাটাসটার নিচে একটি লেখার লিংক দেয়া। ফয়েজ আহমেদের একটি সাক্ষাতকারের লিংক।
সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন শ্রদ্ধাস্পদ ব্রাত্য রাইসু। এক নিশ্বাসে পড়ে ফেললাম। দমে গেলাম। প্রচন্ড দমে গেলাম। এলিজি লেখার সাহস কিংবা আগ্রহ, যেটাই বলুন হারিয়ে ফেললাম মুহুর্তেই।
কি ছিলো সেই লেখায়? রাইসু ভাইয়ের অনুমতি ছাড়াই ক্ষমাপ্রার্থনাপূর্বক:
ফয়েজ আহ্মদের সঙ্গে আলাপ
ব্রাত্য রাইসু | ১৮ অক্টোবর ২০০৭ ৫:১৩ অপরাহ্ন
[সাংবাদিক ফয়েজ আহ্মদের জীবন বিচিত্র অভিজ্ঞতায় পূর্ণ। ১৯৪৮ সাল থেকে ৩৫ বছর তিনি সাংবাদিকতা করেছেন। ১৯৫২ সালে অসাম্প্রদায়িক লেখক সংগঠন ‘পাকিস্তান সাহিত্য সংসদ’-এর প্রথম সম্পাদক ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের পরে জাতীয় সংবাদ সংস্থার (বি.এস.এস.) প্রথম প্রধান সম্পাদক নিযুক্ত হন। তিনি সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
ফয়েজ আহ্মদ আশির দশকে গঠিত জাতীয় কবিতা উৎসবের প্রথম পাঁচ বছর আহ্বায়ক ছিলেন। পিকিং রেডিওতে বাংলা ভাষার প্রোগ্রাম চালু করার জন্য ১৯৬৬ ও ’৬৭ এ দু বছর কাজ করেন।
ওপেন হার্ট সার্জারি ও চোখ অপারেশনের পরে তিনি বাসায় থাকেন এবং অনুলেখকের মাধ্যমে লেখালেখি করেন। সাক্ষাৎকারটি নেওয়া হয় ২০০৬ সালের ডিসেম্বর মাসে, তাঁর ধানমণ্ডির আবাসস্থলে। ]
ফয়েজ আহ্মদ : আমার ছয়টা ক্যামেরা আছিল, দিয়া দিছি।
এখন একটা ক্যামেরা হাতে রাখার জন্য, মৃত্যুর আগে…
ব্রাত্য রাইসু : মৃত্যুর আগে ক্যামেরা রাখবেন কেন?
আমি কোথাও যাইতে পারি না, বারো পদের ছবিটবি তুইলা সময় নষ্ট করতাম আর কি। আর রেকর্ডার আমার ছিল চাইর পাঁচটা। একেক সময় একেকটা ছিল রেকর্ডার। এগুলি এত ভাল ছিল না তখন। তখন একটু বড় ছিল, একটু বড়।
ভালোই কাজ করতো। তারপরে সেগুলা তো ছেড়ে দিলাম। রিপোর্টিংও ছাড়লাম। আস্তে আস্তে গেল। ভাইয়ের বেটা বোনের বেটাগো দিলাম।
ক্যামেরা ছিল ছয়টা। ভাইয়ের বেটাগো দিয়া এখনো আছে একটা। এইটা আমার একটা মেয়েকে দিয়ে দেব। ছোট ক্যামেরা একটা কিনব। কত টাকা দামে পাওয়া যায়?
ছোট… ভালো ক্যামেরা তো বিশ হাজার টাকার কাছাকাছি।
হুর মিয়া, মরণের আগে আমি বিশ হাজার টাকা দিয়া দেব? মরণের আগে আমি বিশ হাজার টাকা দিয়া ক্যামেরা কিনব!
তো মরণের আগে আপনি এত টাকা দিয়া করবেন কী?
আমার টাকা কোথায়, বলো?
আপনের টাকা নাই?
নাহ। আমাকে বলো, বইলা দেও যে আপনের… আমার তো আয় নাই কোনো।
আপনি নাকি আগে অনেক ক্যালেন্ডারের বিজনেস করতেন, ওইখানে আয় হইছিল না, ঐ টাকা নাই?
সে তো আজকে থেকে পনের বছর বিশ বছর আগে। যখন আন্ডারগ্রাউন্ডে ছিলাম। ওই সময়টা আমি তিন-চার বছর আন্ডারগ্রাউন্ডে ছিলাম।
তো আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকার সময় পারিবারিক…সংসার চালানো, নিজেকে চালানো অনেক কঠিন ছিল। তখন আমি তিনটা না চারটা ক্যালেন্ডার করছিলাম। কুড়ি বছর আগে।
ক্যালেন্ডার বিজনেস ছাড়ছেন কবে আপনি?
ওই কুড়ি বছর আগে। তিন বছর করছিলাম।
এখন কি টাকা-পয়সা কম নাকি আপনের?
হ্যাঁ, আমার তো টাকা-পয়সা কমই। লিখে-টিখে পাই কিছু। লিখে-টিখে কয় টাকা হয় বুঝতেই পারো। কয় হাজার টেকা দেয় একটা লেখা লিখলে?
আপনি কোন কোন পত্রিকায় কত টাকা পান?
আমি পাই এখন যুগান্তর আর আমার দেশ…আর আজকের কাগজে কিছু পাইতাম। সেটা কম দিত।
ওরা দেড় হাজার টাকা দিত। বাড়ায়-টারায় নাই। আমিও আর লেখি না এখন। বছর খানেক যাবত লেখি না। কারণ একই লেখা যদি আমি লেখি আমার দেশ বা যুগান্তরে আমি পাই আড়াই হাজার তিন হাজার টেকা।
আমি ওইখানে দেড় হাজার টেকায় কেন দিব। লেখা তো একই, শ্রম তো একই। আমি কেন দেব, কী কারণে দেব বলো।
ভালোবাইসা দিলেন।
ভালোবাইসা বড়লোক করব তারে আমি।
টাকা তো পরেরটাই চায় সে। সব বড়লোকই পরের টাকা চায়। আমার কোনো আয়ব্যয় কিছু নাই। আমি মিনিমাম কস্ট-এ থাকি। আর খাওয়া-দাওয়া করি অল্প কইরা।
এই। পত্রিকা-টত্রিকায় লেইখা-লুইখা কোনো মাসে ১০ তারিখে কেউ দিল, ১৫ তারিখে কেউ দিল, এইটা তো চাওয়াও যায় না বারে বারে। জনকণ্ঠে আমি লেখলাম ১০ বছর অন্তত। এই জনকণ্ঠ এখন আমার কাছে লেখা নেওয়ার জন্য লোকও পাঠায় না! সে কয় আমাদের লোক নাই, টাকা দিয়া রাখতে পারব না, আপনি লিখে পাঠায় দেন। এক বছর আগ পর্যন্ত লেখছি, তারপর আর লিখি না এখন।
কারণ আমার কাউকে রাখার মতো টাকা নাই। ওরা এখন এক বছর পরে বিল দেয়।
এইটা তো ঠিক না। আপনের হয়তো সব টাকা না পাইয়াই মইরা যাইতে হবে।
আমার তো এখনও জনকণ্ঠের কাছে বিশ-পঁচিশটা লেখার টাকা পাওনা।
ওইটা দিতেছে না কেন, এক বছর পরে দিবে?
না দেয় আর কি, যখন যা ইচ্ছা। হয়তো দুই হাজার, এক হাজার, তিন হাজার। তাও কম। যা হওয়া উচিত তার চেয়ে কম। এখন কী করব।
এইজন্য আর লেখি না।
তো এখন কী লিখতেছেন আপনি?
এখন ওই আমার দেশ-এ কারেন্ট এফেয়ার্স-এ লিখতেছি, আর অতীতের কাহিনী-টাহিনি কিছু। আর যুগান্তরে কারেন্ট এফেয়ার্সে লিখি। আর আমার কাছ থিকা মানবজমিন নেয় দুয়েকটা লেখা। আরেকটা জানি কোন কাগজ নেয়, ভুইলা গেলাম।
জনকণ্ঠে আর লেখি না। আর একটা লোক কতই বা লেখতে পারে, তুমি বলো।
এখন কি লেখা ছাড়া আপনের উপার্জনের আর কোনো পথ নাই।
আর এখন নাই। কারণ আমাকে তো কেউ চাকরি দেবে না এই বয়সে।
প্রশ্নই ওঠে না। আমি কেমনে বলব যে এই বয়সে আমাকে একটা চাকরি দেও। কইতে পারুম না, তারাও আমার কাছ থিকা বাঁচতে গেলে পারে না বয়সের জন্য। কয় একটা লেখা লেখেন টেকা দেই, দুইটা লেখা লেখেন টেকা দেই। প্রতি সপ্তাহে লেখেন টেকা দেই।
তো প্রতি সপ্তাহে তুমি লেখলে, আড়াই হাজার টেকা কইরা পাইলে চাইর সপ্তাহে চাইরটা পাইলা…জনকণ্ঠের টেকা পাইলা। তোমার বাড়িভাড়া কত?
এইখানে কত দেন আপনে?
খুব কম। বাড়িওয়ালা নেয় ১২ হাজার না কত। ইলেক্ট্রিসিটির টেকা তো আমি দেই না। খুশি হইয়া দেয় যে আমি তার বাড়িতে থাকি।
তার ধারণা আমি নাকি খুব ভালো মানুষ। এইজন্যে সে মনে করে যে টাকাটা আমি না দিলেই কী…বলে, ‘দেন যে আপনে এই তো বেশি। এবং আপনে আমাকে মিনিমামটা দেন। ’ তো মিনিমামটা দেই। আর খাওয়া-দাওয়া আছে না।
আর চিকিৎসা…পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকার ওষুধ আমার লাগে। এই তো কয়দিন আগে আমি জুন মাসে ছিলাম হাসপাতালে দশ দিন। অজ্ঞান অবস্থায়ই ছিলাম পাঁচ দিন। আর ফিরা নাও আইতে পারতাম। আমি হয়তো অজ্ঞান হইয়াই মারা যাইতাম।
ফিরত আইছে জীবনটা পাঁচ দিন পরে ছয় দিনের দিন। তারপরে আমি দশ দিন পর্যন্ত থাইকা চইলা আইছি। চইলা আসতেছি তখন আমাকে বলে আপনে একজন নার্স নিয়া যান। তো আমাকে একজন নার্স দিল। মাসের বেতন দিছি, খাওয়া দিছি, থাকতে দিছি ওই নেক্সট রুমে।
এইখানে একটা হাসপাতাল আছে কী জানি…?
‘শমরিতা’।
হ, শমরিতা হাসপাতালের নার্স। ময়মনসিংহে বাড়ি, উপজাতীয় মহিলা। আমার এক আত্মীয়ের রিকোয়েস্টে সে নার্স হইয়া আইল, চাইর মাস থাইকা এই তো গত মাসে গেছে। এখন অষুধ কইমা গেছে বইলা আমার এইখানে যে ছেলেমেয়ে দুইটা কাজ করে তারা এখন আমারে খাওয়াইতে পারে।
সুতরাং তারে বাদ দিছি। আর হে-ও থাকতে চায় না। কণ্ট্রাাক্টই ছিল তিন মাস, এক মাস অতিরিক্ত ছিল। কারণ তার তো পারমানেন্ট জবে যাইতে হবে। সেইজন্য।
আপনের কি যোগাযোগ নাই আর কারো সঙ্গে, আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে?
নাহ্। আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ খুব কম।
হেরা পয়সা দেয় না আপনেরে?
পয়সা দেবে কেন?
হেগোরে দেন নাই আপনে কহনো টাকাপয়সা?
টাকা দেবে কেন? কারো আত্মীয়স্বজন টেকা দেয় নাকি? তোমাকে দেয় তোমার আত্মীয়স্বজন?
না দেয় না।
হাঃ হাঃ। কিন্তু আপনি তো দিছেন।
আমি তো সারা জীবন দিয়া গেছি। সারা জীবন দিয়া এক্কেরে ফকির হইয়া আমি একা থাকি।
কেমন লাগে একলা থাকতে?
খুব ভালো লাগে আমার। মাঝে মাঝে ভালো লাগে না। মাঝে মাঝে খুব ভালো লাগে।
কে-উ নাই কিছু আসে যায় না। এই ছেলেমেয়ে দুইটা অশিক্ষিত, গ্রামের, ফাইভ সিক্স পর্যন্ত পড়ছে, দুই ভাইবোন…।
কী নাম ওদের?
কী কী জানি নাম। আছিল অন্য অন্য দল। ঘুরতে ঘুরতে ঘুরতে ঘুরতে এরা আইছে আর কি।
এরা আছে বছর খানেক যাবত। আবার এরা চইলা যাবে, তখন নতুন দল আসবে।
২.
আপনের সঠিক জন্মতারিখ জানেন নাকি আপনে?
হ্যাঁ, তারিখ জানি। এখন তারিখটা নিয়া গণ্ডগোল আছে একটু। তারিখ বোধহয় দোসরা মে।
অনেক আগে বাইরাইয়া গেছে। আমি দেই নাই কাউরে, কীভাবে কীভাবে জানি বাইরাইয়া গেছে। একটা ডেট আছে থার্টি, আরেকটা টুয়েন্টি এইট-ঠেইট সেভেন-টেভেনের দিকে। ফ্যামিলি ট্রি আছে আমার বাড়িতে একটা। কে কবে জন্মগ্রহণ করছে।
তাতে পুরাতন খবর পাওয়া গেছে একটা। তাতে আমার দেখা যায় বেশি। আর আমি যেইটা জানি অফিসিয়ালি সেইটা থার্টি।
আপনে কোনটা পছন্দ করছেন?
পছন্দ…যেইটা হয়। এই বয়সে আর কী?
তাইলে আপনের বয়স কত হইল হিসাব অনুসারে?
হিসাব অনুসারে আমার বয়স তো প্রায় সাতাত্তর চলছে।
একটা হিসাবে। আরেকটা হিসাবে বাড়লে আমার আশি হয়-ঊনআশি।
এখন আপনে কীভাবে দেখতেছেন দুনিয়াদারি? বিয়া তো করেন নাই আপনে।
নাহ। বিয়া তো দুই রকম।
দুই রকমে অবিবাহিত হয় মানুষ। এক রকম না। এইটা জানো তো?
না, আমি জানি না।
আচ্ছা, এক রকম হচ্ছে সে বিয়া করে নাই। অকৃতদার।
কোনো সময়েই সে বিয়া করে নাই। তার তো এই সম্পর্কে জ্ঞান নাই। আরেকটা হইল, সে বিয়া করছিল। সেই বিয়া তালাক হইয়া গেছে, একটা বাচ্চা আছে। বা আদৌ বাচ্চা নাই।
বউ মইরা গেছে…?
বউ মইরা গেছে। তারপরে কয়, দুর আর করুম না। এই রকম আছে। নানা রকম। দুইটা বাচ্চা নিয়া স্বামী।
স্ত্রী ভাইগা গেল গা। আরেকজনের সাথে। সেইটা বড় সাংঘাতিক। আরেকজনের সঙ্গে ভাইগা যাওয়াটা…
রবীন্দ্রনাথের গল্প আছে তো এই রকম। এক অধ্যাপকের স্ত্রী ভাইগা যায় গা যে।
তো আছে না? পৃথিবী সারা জীবনই চলছে এই রকম। খালি একজনই ঠিক মতন তার বউকে রাখতে পারছিল। বিকজ অন্য পুরুষ আর পৃথিবীতে ছিল না তখন।
আদম সাহেব?
হ, আর পুরুষ ছিল না বইলা রক্ষা। কারণ আর পুরুষ থাকলে আর থাকেনি অত সুন্দর বউ।
আদমের বউ অত সুন্দর ছিল তার কি কোনো রেকর্ড আছে?
যাই হোক, আমরা কল্পনা করি এইটা। আমরা ধইরা নেই এই লোকটা সুন্দরই হবে। এই রকম দাড়ি হবে তার। ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি। এবং তার বউটি অসাধারণ হবে।
এবং নাক তার লম্বা…অমুক তমুক এই সমস্ত হবে। এইগুলি আমরা কল্পনা কইরা করি। কল্পনা কইরা যা দেখছি তাতে দেখা গেছে যে সে খুব সুন্দর।
কে, মিসেস হাওয়া?
মিসেস এনিবডি। এখন আমরা সৌন্দর্য পরিমাপ করি…কার কত সৌন্দর্য, কে কত সুন্দর, কেন সুন্দর, এটা-ওটা…নানা রকম বিচার-আচার করি আমরা।
আমার ইচ্ছা আমি করি, তুমি আমাকে মানা করার কে?
না, সেইজন্যেই জিগ্যেস করলাম, আপনি বিয়ে করলেন না কেন?
হ্যাঁ, তুমি আমাকে বিয়ে করতে বলারও কে?
না, বিয়ে করতে বলতেছি না। কোনো কারণ আছে কিনা, জিগ্যেস করলাম। আপনের ইচ্ছা হইলে বলবেন।
সব কিছু কারণে ঘটে না। কোনো কারণে ঘটে নাই।
আমি মনে করি এইটাই ঘটছে…কারণ আমি যখন জেলে যাই প্রথমবার তখন আমার বয়স আটাইশ।
বিয়ে করার বয়স।
এক্কেরে পরিপূর্ণ বয়স। তখনকার দিনে পঁচিশ থেকে আটাইশই ছিল পরিপক্ক বয়স। আইজকালকার যে তিরিশ থিকা পয়ত্রিশ বত্রিশ হইছে, আগে তো আটাইশ যথেষ্ট।
তো আমার আটাশ হইছিল, জেলখানার সময়। তো আমার সঙ্গে যাগো সম্পর্ক হইছিল তারা তো নানা রকম মহিলা। একজন কি দুইজন ছাড়া সবাই সেই বছরই ইউনিভার্সিটি পাশ কইরা বাইরাইয়া গেল।
এইটা কত সালের ঘটনা?
এইটা হইল ফিফটি এইটে।
কয় বছর জেলখানায় ছিলেন?
চাইর বছর।
কী কারণে?
ধইরা নিয়া গেছে। কম্যুনিস্ট। বইলা দিল তারা আর কি। আমার তো কিছু কওয়ার নাই। তারা মনে করল এইটা।
আপনি কম্যুনিস্ট ছিলেন না?
আমি তো কম্যুনিস্ট ছিলামই। কিন্তু তারা মনে করল আমি কম্যুনিস্ট-সাংঘাতিক বিপজ্জনক কম্যুনিস্ট। আসলে আমি বিপজ্জনক কম্যুনিস্ট ছিলাম না। আমি পড়াশোনা এইটা-ওইটা, ডেনজারাস কাজ আমাকে দিয়ে কিছু হয় নাই তা না। কিন্তু আমি ওই রকম ডেনজারাস ছিলাম না, যেইটা রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
তাইলে জেলখানায় ঢোকার আগে মেয়েদের সাথে আপনার একটা সম্পর্ক ছিল?
হ্যাঁ, তাতো থাকবেই। সবারই থাকবে। মেয়েদের সাথে সম্পর্ক, মেয়েদের পিছনে ঘোরা এইটা আমার আরম্ভ হইছে যখন আমার বয়স ষোল কি সতের।
মানে আপনি যে সাত্ত্বিক পুরুষ তা না?
না। আচ্ছা সাত্ত্বিক পুরুষ কারে কও তোমরা?
যে কোনো মেয়ের দিকে তাকায়ই নাই।
দুরো মিয়া, মানুষ নাকি সে! সাত্ত্বিক বইলা কোনো জিনিস নাই তো। কোনো মেয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয় নাই, মিছা কতা কয়। ঢাহা মিছা কতা কয়।
তার মানে মেয়েদের সঙ্গে সংসর্গও ঘটছে আপনার?
না, সংসর্গ বলতে তুমি কতদূর মনে করো?
মানে যৌন সম্পর্ক হইছে কিনা?
না। কোনো সম্পর্ক হয় নাই।
আমার মেয়েদের সাথে সম্পর্ক ছিল অনেক। সেই মেয়েরাই পরবর্তীকালে, ক্রমান্বয়ে, আস্তে আস্তে দুয়েকজন ক্লোজার হইছে। জেলখানায় চইলা গেছি। চাইর বছর পরে এই মেয়েগুলাই কলেজ থিকা ভার্সিটি থিকা, বাইর হইয়া তারা কি আমার জন্যে বইসা থাকতে পারে!
পরবর্তী জীবনেও তো মেয়েদের সঙ্গে আপনের সম্পর্ক হইছে, নাকি?
হ্যাঁ, ছিল। মেয়ে বা মহিলা।
মেয়ে এবং মহিলা দুই রকম।
ব্যাখ্যা করেন।
মেয়ে বলতে সাধারণভাবে যাদের ব্যাখ্যা করা হয় সেটি হচ্ছে, সে মেয়েটির বিবাহ হয় নাই। এবং উপযুক্ত হইয়া উঠতে আছে। এবং বারো-চৌদ্দ বছর হইয়া গেছে।
তারপর কৈশোর পার হইয়া সে যৌবনে গেছে। এবং উনিশ-কুড়ি পার হইয়া গেছে। এই রকম এরা মেয়ে। আর মহিলা হচ্ছে যারা ষোল বছরে হউক, আঠারো বছরে হউক, বাইশ বছরে হউক, বিশ বছরে হউক তার বিয়াশাদী হইছে। দে আর কল্ড উওম্যান।
এইটা আপনে গাজী শামছুর রহমানের মত কইরা বললেন। উনি এইভাবে কথা কইতেন। মানে সংজ্ঞা নির্ধারণ কইরা নিতেন।
কোন শামছুর রহমান।
বিচারপতি শামছুর রহমান।
ও-ও-ও আছিল। তো সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হইব না? সংজ্ঞা নির্ধারণ তো অনেক রকম আছে। আমি, দাঁড়াও তোমাকে…আমি গেছিলাম, কুড়িগ্রামের বুড়িমারী। লংমার্চে। তো আমাকে এরা ধরে-টরে নিয়ে গেছে।
ডাক্তার জামান-টামান এরা। দুই বছর আগে। খুব ঘুরাঘারি। এর আগে তো মওলানা ভাসানীর সাথে আমি রাজশাহী গেছি লংমার্চে।
ছিয়াত্তরে না?
হ।
তারপরে এই লংমার্চটাও হইল একটা। তখন আমাকে ধরল যে আপনার যাইতে হবে। কয় যে চলেন, মানুষ উপকৃত হবে। নিউইয়র্ক থেকে লোক আইছে। আমি বললাম যে আমাকে রক্ষা কইরা যদি নিয়া যাইতে পারো তো চলো।
তো তারা আমাকে রক্ষা কইরা আইনা বাইত্তে পৌঁছায়া দিছে এক দিন পরে। তারপরে গেছি বহু দূর। এক্কেরে সীমান্ত তো। ব্রহ্মপুত্রের সীমান্ত। মাঝখানে ব্রহ্মপুত্র।
সেই ব্রহ্মপুত্রের চরে মিটিংটা করছে। তো আমরা যে মিটিংটা করছি এইটা অদ্ভুত। আমরা বোঁচকাবাচকি রাইখা রেস্টহাউসে যখন গেলাম তখন দেখি নদীর মাঝখানে একটা চর পইড়া রইছে, বিরাট চর। তো চরের উপরেই মিটিং করছে। সেখানে বাড়িঘর নাই।
এক্কেরে ধুলাবালি দিয়া চর। নিউ ইয়র্ক কমিটি ঢাকায় আইছিল। ডক্টর জামান-টামান এরা ছিল।
ডক্টর জামান কে?
ডক্টর জামান হইল কমিউনিটি হাসপাতালের হেড এইখানে।
কামরুজ্জামান।
হ, কামরুজ্জামান। নিউ ইয়র্ক থিকা আসছিল দুইজন। একজন হইল টিপু সুলতান। ওইখানে সে প্রচুর রুজি করে আর এই সমস্ত কমিটি-টমিটিতে প্রচুর কাজ করে। ও হচ্ছে নিজে ফার্মাসিস্ট।
সে এমএ পাশ করছে ফার্মা নিয়া। তার বউও করছে তাই। তারা ওইখানে বাড়িঘর কইরা এখন ঘণ্টায় পায় তিরিশ ডলার।
কোন জায়গায় বাড়ি করছে?
নিউ ইয়র্কে বাড়ি করছে, ঢাকায় বাড়ি করছে, গ্রামে বাড়ি করছে।
এখন ঘণ্টায় তিরিশ ডলার কীসে থিকা পায়?
সে কাজ করলে পায়, না করলে পায় না।
এইটা হইল মিনিমাম। এখন বোধহয় বাড়ছে। পাঁচ বছর আগের কথা আমি কইতাছি। ঘণ্টায় তিরিশ ডলার…
নিউ ইয়র্কে কাজ করলেই তিরিশ ডলার পায় ঘণ্টায়।
না।
যদি ফার্মাসিস্ট হয়। সবাই এই জিনিস পায় তা না। তার বউও এই দেশে ফার্মাসিস্ট হইয়া পরে গেল। দুইজনে মিলা এহন তিরিশ তিরিশ কইরা ষাইট ডলার ঘণ্টায়। এহন দুইজনে যদি চাইর ঘণ্টা কইরা কাজ করে চাইর তিরিশে…সোয়া শ ডলার ধরো।
সোয়া শ ডলার কইরা এহেক জনে রুজি করে। তো তহন কয়ডা বাড়ি হয়?
বহুত বাড়ি, বাড়ির তো শেষ নাই।
তাও একটা বাড়ি করছে বি-রা-ট বাড়ি।
আমেরিকায়?
হ, তার দুইটা মেয়ে। সে পড়াইছে।
গত বছর দুইটা মেয়ে পাশ করছে, হায়ার ডিগ্রি নিছে, দুইটাই ফার্স্ট ক্লাস পাইছে।
না, এইটা কইলেন কেন? এই ঘটনাটা কেন বলতেছেন? আপনে তো বুড়িমারীর কথা বলতে নিছিলেন।
বুড়িমারীতে টিপুই হচ্ছে মেইন ম্যান।
হ্যাঁ, তার সঙ্গে আপনে গেলেন দুই বৎসর আগে।
লইয়া গেল আমাকে।
তো অরা আমাকে ভালোবাসে খুব। কয় যে আপনাকে যেতে হবে। লইয়া গেল। আমিও যাইয়া-টাইয়া আইলাম। যখন আমি…যেই কথা বলতে চাই হেই কিন্তু অনেক দূরে।
যখন আমি…আমার লগে গল্প করতে আইছো.. টেরই পাইবা…যখন আমি কনফারেন্সের পরে বিকাল বেলা চাইরটার দিকে চরের থিকা ফিরা গেস্ট হাউসে আসি বুড়িমারীতে…না চিলমারী বলে…না কী জানি বলে…ওই চরের অঞ্চলটার অন্য মারী আছে একটা নাম। বুড়িমারী অইল সাবডিভিশন।
আদিতমারী নাকি?
না, আছে আর কি। নাম আছে। নামকরা।
তো আমরা যখন আসলাম…আসার পরে আমরা যখন খাইয়া-দাইয়া এক ঘণ্টা পরে ঢাকার দিকে রওনা দেব দেখা গেল আমাগো লগে একটা ছেলে। আমার তো প্রশ্ন করার অভ্যাস সারাজীবনের। সেই অভ্যাস হইছে রিপোর্টিং থিকা। এখনো পুরাপুরি যায় নাই। থাকে, কতগুলি জিনিস থাইকা যায়।
যেমন ধরো কোথাও গেলে খালি এনকোয়ারি করি। যেগুলি জানি না। আমি সেই ছেলেকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার বাড়ি কোথায়। বলে এই দিকে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তোমাদের এইখানে মঙ্গা হয়? কেন তুমি দেখতেছি দিব্যি ভালোই আছো।
তোমগো এদিকে তো ধান দেখতেছি ক্ষেতভরা, সবুজ। এর মধ্যে মঙ্গা হয় কেমনে? কেমনে তিনমাস তোমরা কষ্ট করো? এইভাবে কোশ্চেন আইসা পড়ে। আমার মনের মধ্যে এগুলি ছিল। তো আস্তে আস্তে তারে কইলাম, এই দেশে মানুষ কী রকম? কৃষকরা কী করে। কয় কৃষকদের ছেলেমেয়ে আছে, কারো বাড়িটুকু আছে।
আর একটাও ধানী খামার তাদের না। এই যে আপনেরা দেখতেছেন হাজার হাজার খামার, একটাও তার না। কৃষকদের না। কার? বলে, মহাজনদের। ভূস্বামীদের।
কারো পঞ্চাশ বিঘা, কারো একশ বিঘা, কারো পাঁচশ বিঘা, কারো দশ বিঘা আছে। শীত আসলেই টাকাটা ধারটা উঠাইয়া বাকিটা বিক্রি কইরা দেয়। নিজেরা কাচারিতে থাকে আরাম কইরা। অথবা ইলেকশন করে। ওরা ঢাকায় আইসা যখন ফুর্তি করে আর গুলশানে বড় দোকানে খায় যখন পোলাপাইনে তখন কৃষকরা ওইখানে মঙ্গায় মারা যায়।
এই হইল খবরটা। এখন আমি কইলাম, লোকগুলি কী রকম তোমাদের দেশের যে তারা এই প্রতিরোধ আর করে না। আজকা পঞ্চাশ বছর যাবৎ এই-ই শুনতেছি-মঙ্গা! মঙ্গা! এই ছেলে। ছেলে চটপটে ছেলে, ওইজন্যই জিগ্যেস করছিলাম। তো কয় যে আমাদের দেশে অনেকগুলি ভাগ আছে।
এই জমি যেমন আমাদের একটাও না। আমি থাকি চরের ছাপড়ায়। ধান বানবো-টানবো, দিয়া আসবো, কিছু পাবো। খাইয়া-টাইয়া নয় মাস চলে। আর তিন মাস চলে না।
ওই তিন মাসই মঙ্গাটা হয়।
মঙ্গাটা হয়। এবং অরা সব ঢাকায় পইড়া থাকে, মালিকরা। তারা আর আসে না। আবার বোনার সময় আসে।
তখন না বুইনা পারি না আমরা। করুমটা কী। ‘ছেলেমেয়েগুলি কী করে তখন?’ কয় যে ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন রকম ক্লাসিফিকেশন আছে। সে কইল, কইতে কইতে এক জায়গায় আইসা কয় যে আমাদের এইখানে মহিলা আর মেয়ে আছে। কইলো।
‘মহিলা আর মেয়েটা কী?’ কয় কি যে মহিলা হচ্ছে যাদের বিয়া হইয়া গেছে। আর যাদের বিয়া হয় নাই তারা হচ্ছে মেয়ে। ব্যাস। ‘তো বিয়া হয় কবে?’ এই বারো থিকা চইদ্দ। চইদ্দ বছরে বিয়া হইয়া যায়।
বিয়া বইতে বাইধ্য হয়। না বইলে লইয়া যাইব গা মাইয়ারে।
কে নিয়া যাবে?
আরেকজন, পাশের বাড়ির। মেয়েটাকে নিয়া যাবে তো, দুই তিনজনে মিলা আইসা। এ এক সমস্যা।
যার জন্য সবাই মেয়েকে বিয়া দিয়া দেয়। বারোতে কথাবার্তা কয়, চৌদ্দতে বিয়া দিয়া দেয়। ম্যাক্সিমাম। তো ওই বয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যে মেয়েরা হচ্ছে মহিলা আর যাদের বিয়া তখনো হয় নাই তারা মেয়ে। আমি কই, তোমগো এইখানে মহিলা বেশি না মেয়ে বেশি? কয় মহিলা বেশি।
তো মেয়েদের মইধ্যে দুইটা ভাগ, হাঃ হাঃ হাঃ। ওইখান থিকা আমি এইটা পাইছি। তো এই একটা নলেজ আর কি।
তো, জিনিসটা হইতেছে, আপনে জেলখানা থিকা বের হইয়া আর মেয়েদের সঙ্গে সংসর্গ মানে সম্পর্ক করেন নাই?
করছি।
প্রেম ছিল?
না, প্রেম না।
তোমরা প্রেম কাকে কাকে বলো আমি জানি না। তোমরা কথা বললেই ‘প্রেম’ বলো। এইটা হচ্ছে ভাষাগত দিক আর কি। আসলে এটা কী, বলা বড় মুশকিল।
এটা নাকি কেউই নাকি বলতে পারে না প্রেম কী জিনিস।
অথচ সবাই নাকি করে।
করে।
আপনে সেই রকম কিছু করেন নাই।
না, আমার তো আছিলই। এই তো মাস ছয়েক আগে আমার এক বান্ধবী মারা গেল।
সে মারা গেল একলা একলা থাকতে থাকতে…
সেও একলা থাকত?
হ, তার আর বিয়া হয় নাই। সে ছিল বনানীতে তার বাড়িতে। একটা দোতলা বাড়িতে। আমার লগে আলোচনা করছিল বাড়িটা কী করব। ভাড়া দিব কিনা।
খাওয়া-দাওয়া করত নিচতলায়। আর ওপর তলায় থাকত দুইটা রুমে। একা। এবং তার খুব জিদ। তো বিভিন্ন ধরনের ক্যারেক্টারের মেয়েকে আমি চিনি আর কি।
এ একটা জিনিস। সে কারো লগে কোনো গণ্ডগোল করব না। যাকে সে ডাকবে না, ডাকবে না। যাকে ডাকার সে ডাকবে। এ এক অদ্ভুত।
কাউরে কইল যাইতে, আইজকা বিকাল বেলা পাঁচটার সময় আসবেন। যদি সে ডাকে, যাইতে হবে।
আপনি গেছিলেন পাঁচটার সময়?
আমি গেছি বহুবার। হে যখন আমারে অর্ডার দিত আমি গেছি। তা না হইলে একটা ভীষণ তুলকালাম কাণ্ড করবে।
এই বয়সেও। তার তো বয়স তখন ষাইট হইয়া গেছে গা।
যখন মারা গেছে?
হ। রিটায়ার করল তো সে। কলেজে পড়াইত।
সে মারা গেল। তাও সে রইছে একা। দোতলায় থাকত। একটা চাকর ছিল, একটা গার্ডেনার ছিল, একটা ড্রাইভার ছিল। তিনটা।
সে ভাইবোনদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখত না। ভাইবোন যদি তার সঙ্গে না রাখত, সে রাখত না।
তার সঙ্গে আপনের সম্পর্ক কত দিনের?
যাহ। সেই সম্পর্ক তো আমার এই রকম অনেক কয়েকজন আছে। এই হিসাবে সম্পর্ক ফিফটি ফাইভ থিকা।
তাইলে মানুষ যে আপনেরে চিরকুমার ভাবে?
আমি তো চিরকুমারই।
তো আপনের সঙ্গে তো মেয়েদের সম্পর্ক আছেই।
মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকাতে কি কৌমার্যের ক্ষতি হয়?
আপনের কি কৌমার্যের ক্ষতি হয় নাই। আপনের কি কারো সঙ্গে কোনো যৌন সংসর্গ ঘটে নাই। এইটা আপনি বলতে পারেন?
নাহ।
আগ্রহ হয় নাই কখনো।
আগ্রহ তো অন্য জিনিস। তোমরা তো ভুল বুঝতাছো। তোমাদের এই এক্সপিরিয়েন্স নাই বইলা…তোমাদের এই এক্সপিরিয়েন্স নাই যে একটা মেয়ে তোমাদের সঙ্গে আছে… তোমার সাথে আড্ডা দেয়, তোমার বাড়িতে আসে বা তুমি যাও, বা দুই মাসে দেখা হয়, একমাসে দেখা হয়, সেই মেয়েটার সঙ্গে তোমার কোনো সম্পর্ক হইতাছে বা হইতাছে না এইটা সম্পর্কে তোমার জ্ঞান কম। বোঝো নাই তোমরা।
সাধারণ পুরুষ হিসাবে একটা বা দুইটা বা তিনটা বা চারটা মেয়ের প্রতি আগ্রহ বোধ করছো ঠিক আছে। আপত্তি নাই তো কোনো। চলো তুমি ইউনিভার্সিটির মেয়েদের সঙ্গে কিন্তু প্রাইভেটলি তার কাছে দুর্বল, এইটা হইতে পারে তো? সে মেয়েটি লেখাপড়া কম করছে বা আইএ বিএ পাশ করছে বা মেট্রিক পাশ করছে, তার বাপ-মা চেষ্টা করতেছে বিয়া দেওনের জন্যে। তোমার লগে হইতেছে না, কিন্তু চেষ্টা করতেছে বিয়া দেওনের জন্যে। তুমি যাওয়া-আসা করো।
ক্ষতি কী? ক্ষতি নাই তো কিছু। এই রকম একটা পরিস্থিতির মধ্যে যে থাকে আর যে সিদ্ধান্তই নেয় বিয়ের ব্যাপারটা আসতেছেই না প্রশ্নের মধ্যে…কয়েকটা মেয়ের সঙ্গে আমি মিশছি এইভাবে। তো সেই মেয়েটার কী হইল জানো?
সেই মেয়েটা হঠাৎ সকালবেলা একদিনকা নিউজপেপারে দেখি সে গতকাল রাত্রে মারা গেছে। ট্রাজেডি হচ্ছে, সে তার নিজের বাসায় ছিল। একটা ড্রাইভার, সে প্রায়ই তাড়ায় দেয়, বুড়াকালে মেয়েদের তো হইতে পারেই খারাপ ব্যবহার…আরেকটা ইয়াং ছেলে, সেই ছেলেকে বলছে তুমি আমারে একটা গার্ডেনার আইনা দেও, বাগান করার লোক।
লোক গেছে গা। তো আনছে। আনছে পরে সে এইবার আনছে একটা সন্ত্রাসীরে।
সন্ত্রাসীরে?
সন্ত্রাসীরে ভাড়া পাওয়া যায় তো। তো আনার পরে বেগম সাহেবার লগে সকাল বেলা দিনের বেলা একবার দেখা হয়, ইন্সট্রাকশন দেয় আবার সন্ধ্যার সময় বোঝায় দিয়া চইলা যায়।
গেটের কাছে আইসা। এই তার কাজ। তারে হয়তো পাঁচ শ টাকা বা তিন শ টাকা দেয়। খেয়াল কইরো। ওই ড্রাইভারটা বদমায়েশী কইরা তাকে ডাকাতি করানোর জন্যে ওই সন্ত্রাসীটাকে আনছে।
আনার দুই দিন পরেই সন্ধ্যার সময় ওনার সঙ্গে দেহা করছে, মাইজী এই রকম আছে, এই রকম আছে, কইয়া চট কইরা থাবা দিয়া ধরছে দোতলায়। ধইরা তারে মুখ বন্ধ কইরা দিছে। তারে গলায় ফাঁস দিয়া, তার কাপড় দিয়াই, মাইরা ড্রয়ারে-ট্রয়ারে যা ছিল সোনার অলঙ্কার, টাকা-পয়সা কিছু ছিল এগুলি সব নিয়া তাকে দোতলার রুমে রাইখা ফিফটিন মিনিটস-এ চইলা গেছে। তার পাওয়া যায় নাই খবর। পুলিশে কেইস হইছে, পরবর্তী কালে ভাইরা করছে।
তাতে কোনো লাভ হয় নাই। এই যে এই মহিলা, এই মহিলা আমার খুবই ক্লোজ ছিল। তারও চয়েস ছিল, ইচ্ছা ছিল, আকাক্সক্ষা ছিল। তার হাজবেন্ড কী রকম হবে, তার একটা ধারণা ছিল তার। এগুলি হয় নাই আর।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।